Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera Part – 20

0
714

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
Part – 20……………………

রাতে শোয়ার আগে লিয়া কে পাহারায় রাখল।। লিয়া কে জানালো যে সে একটা কবিতা লিখতে চাই।। তাতে যেন কেউ ব্যাঘাত না ঘটায়।। সুতরাং লিয়া তার কাজ করতে লাগল।। আর এ ফাকে মায়া বেনামী পত্র টা বের করল।। পত্র টা ছিল ঠিক এরকম
.
রাজকুমারী মায়া
—————————
আমার অভিবাদন গ্রহন করবেন।। পর সমাচার এই অনেক গোপনীয়তার মধ্যে আপনাকে পত্র টা পাঠাচ্ছি।। জানি না আপনি কেমন আছেন?? শুধু জানি ঈরানভা তে আপনার খুবই প্রয়োজন।। এখানে বার্বান রা ঈরানভার লোকদের উপর খুবই নির্যাতন চালাচ্ছে।। কিছুদিন আগেও আপনার পিতা মহামান্য মৈনাকের মূর্তিটা তারা ভেঙে ফেলেছে।। তাছাড়া সবাই বাধা দিলে সেখানে তারা অনেক লোক কে হত্যা করে।। এছাড়া প্রাসাদের সবাই এক প্রকার বন্দি হয়ে আছে।। প্রজাদের কাছ থেকে জোর পূর্বক খাজনা আদায় হচ্ছে।। রাজকোষের সমস্ত অর্থ সরিয়ে নেয়া হয়েছে।। বিভীষা পুত্র বীর আপনার উদ্দেশ্য বার্বান রাজ্যে যাত্রা করেছিল।। কিন্তু আজ পর্যন্ত খবর পাই নি তার।। তবে গুপ্তচর খবর দিয়েছে বীর কে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে।। আমরা জানি আপনি খুব কষ্ট পাবেন আমাদের কষ্ট দেখে।। আমরা আপনাকে রাণী হিসেবে চাই।। যত দ্রুত সম্ভব উত্তর দিবেন।।
.
সমাপান্তে
—————–
আপনার অনুগ্রহপ্রার্থী শুভাকাঙ্খী
.
পত্র টা হাতের মুটোয় চেপে ধরল মায়া।। টপ টপ করে চোখের পানি ঝড়ছে তার।। তার প্রজারা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে আর সে রাজকুমারী হয়ে কিছুই করতে পারছেনা।। সে খুবই খারাপ রাজকুমারী!! খুব-খুব বেশি খারাপ!!! মায়া মনে মনে বার্বান সম্রাট কে অনেক ভালো মনে করেছিল।। কিন্তু সে ভুলেই গিয়েছিল এ বার্বান সম্রাট।। একজন নিষ্টুর সম্রাট।। যার মনে কোনো দয়া মায়া নেই।।
আবারো চোখ বন্ধ করে ফেলল মায়া।। গাল বেয়ে অশ্রু ঝড়ে যাচ্ছে।। ঠিক তখনি অলোকের আসার আগমন ধ্বনি শুনলো।। তাই তাড়াতাড়ি পত্রটা লুকিয়ে ফেলল।। তারপর আস্তে করে বিছানায় শুয়ে পড়ল।। কিছুক্ষনেরর মধ্যে অলোক কক্ষে প্রবেশ করে সরাসরি মায়ার কাছে চলে এলো।। তারপর তার পাশে বসে তাকে স্পর্শ করতে চেয়েও কোনো এক অজানা কারনে মায়া কে স্পর্শ করল না।। উঠে গেল সেখান থেকে।। তারপর রাজকীয় পোশাক পাল্টে বিছানায় মায়ার পাশে শুয়ে পড়ল।। মায়া ঘুমাচ্ছে অঘোরে।। নিঃশ্বাসের সাথে বুকটা হালকা উঠানামা করছে।। এক গাছি চুল চোখের উপর পড়ে আছে।। অলোক ফু দিয়ে চুল গুলোকে সরিয়ে দিল।। তারপর মায়া কে দেখতে দেখতে তার চোখে ঘুম নেমে এলো।।
.
পরদিন মায়ার মাথায় তার রাজ্যের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল।। সে কি করবে?? কি করে তার রাজ্যে কে সে কিভাবে বার্বান দের নাগপাশ থেকে মুক্ত করবে?? তার প্রজারা তাদের রাজকুমারীর উপর ভরসা করে আছে যে তাদের রাজকুমারী তাদের উদ্ধার করবে!! কিন্তু সে কিইবা করতে পারে?? রাজ্যে চালানোর অভিজ্ঞতা নেই তার।। পিতার পাশে থেকে শিকারে যাওয়া, মাঝে মাঝে দরবারে বসা, সামান্য অস্ত্রচালনা করা ছাড়া মায়া আর কিছুই জানে না।। তার উপর বীর কোথায় কে জানে?? তার কোনো খোজ খবর নেই।। তাকে কি ছেড়ে দেয়া হয়েছে নাকি মায়া মিথ্যা খবর পাচ্ছে।। কিছুই জানে না মায়া।।
.
নাহ্!!! সব নিজের হাতে করতে হবে।। কারো উপর বিশ্বাস করা যাবে না।। নিজের রাজ্যের এতটুকু ক্ষতি হতে সে দেবে না।।
অনেক ভেবে চিন্তে মায়া একটা পত্র লিখল।। তারপর সেই দাসীর হাতে দিল যে দাসীর হাতে এই বেনামী পত্র টা এসেছিল।। তারপর মায়া অলোকের কাছে যেতে লাগল।। অলোক তখন তার দপ্তরে বসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র দেখছিল।। সাথে ছিল তার মন্ত্রি আর প্রধান পরামর্শক।। দাসী এসে জানালো রাণী মায়া এসেছে তার সাথে দেখা করতে।। অলোক ভ্রু কুচকালো।। মায়ার এমন কি প্রয়োজন যেটার জন্য তাকে তার দপ্তরে আসা লাগে??? অনুমতি দিল মায়া কে আসার।। ভিতরে মায়া প্রবেশ করতেই অন্যান্য সবাই বেড়িয়ে গেলো।। মায়া অলোক কে নিচু হয়ে অভিবাদন জানালো।। অলোক তখন মায়া কে জিজ্ঞেস করল
.
—- কি হয়েছে মায়া?? এমন কি হয়েছে যার জন্য তোমাকে আমার দপ্তরে আসতে হল??
.
—- সম্রাট আমি ঈরানভা যেতে চায়।।
একথা শুনে অলোক দাড়িয়ে গেল।।
.
তারপর চোখ বড় বড় করে অলোক বলল
.
—- হঠাৎ ঈরানভা কেন??
.
—- আমার ঈরানভার কথা খুব মনে পড়ছে।।আমাকে অনুমতি দিন।।
.
—- অসম্ভব মায়া।। এই মুহুর্তে তোমার কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।।
.
—- স-সম্রাট”””””
.
—- মায়া আমার প্রচুর কাজ আছে।। তুমি যেতে পার।। এটা নিয়ে পরে কথা বলবো।।
.
অগত্য মায়া চলে এল।। তার কিছুই ভালো লাগছে না।। কি করবে সে?? এভাবে হেরে যাবে?? পরাধীনতা বরন করে নিবে??
দুপুর গড়িয়ে এলো।। অলোকের আসার সময়।। মায়ার সাথে এক সাথেই দুপুরের খাবার খাবে।। তাই মায়া হঠাৎ করে একটা সাহসী সিগ্ধান্ত নিয়ে ফেলল।। সে আবারো একটা পত্র লিখল।।
এবং সেই শুভাকাংখী কে নির্দেশ দিল অত্যন্ত গোপনে দল গঠন করার।। সেনাবাহিনী কে পুনর্গঠন করার।।
যাতে রাষ্ট্রের রক্ষায় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার বা প্রয়োজনে বার্বান দের সাথে লড়ার শক্তি যেন তাদের থাকে।। পত্রটা পাঠিয়েই মায়া খুব গভীর ভাবে সবকিছু চিন্তা করল।। তার কি করা প্রয়োজন?? ভবিষ্যতে কখন কি করবে সবকিছুর একটা পরিকল্পনা করল।। এবং এও বুঝল যে ঘূর্নাক্ষরে ও যেন ওই বার্বান সম্রাট জানতে না পারে।। যদি জানতে পারে যে মায়া সৈন্য গঠন করছে বিদ্রোহ করার জন্য তাহলে হয়ত মায়া কে কিছু করবে না কিন্তু তার রাজ্য কে ছাড় খার করে দিবে।। তাই মায়া কে ভাব রাখতে হবে ওই সম্রাটের সাথে।।
.
দুপুরে মায়া আর অলোক একসাথে খেতে বসল।। মায়া চুপচাপ খাচ্ছে।। অলোক আড় চোখে ওর দিকে তাকাচ্ছে।। কারন মায়া ঈরানভা যেতে চেয়েছিলো আর তা অলোক যেতে দেয় নি।। কিছুক্ষন পর অলোক নিজ থেকে কথা বলতে শুরু করল
.
—- মায়া??
.
—- জি??
.
—- আজ রাতে আমি ফিরবো না।। তোমার কি একা থাকতে কোনো অসুবিধা হবে??
.
—- না সম্রাট!!
.
অলোক খানিকটা অসন্তুষ্ট হল।। সে চেয়েছিলো মায়া বলুক….. না সম্রাট!!! আমি একা থাকতে পারবোনা।। আমার ভয় করে।। আপনি কোথাও যাবেন না।।
রুষ্ট গলায় অলোক বলল
.
—- ঠিক আছে তাহলে।।
.
অলোক উঠে চলে গেল।। সে চাইছিল মায়াও তার মত করে তাকে ভালোবাসুক।। কিন্তু মায়া যথাসম্ভব তাকে এড়িয়ে চলছে।। নাহ!! সবকিছু এমন ভাবে চলকে পারে না।।
অলোকের না থাকার প্রশ্নে মায়া বিন্দু মাত্র ঘাবড়ালো না।। বরং এ সুযোগ টাকে সে ভালো ভাবে কাজে লাগাবে বলে চিন্তা করল।। সে বীর কোথায় সেটা খোজ নেবে বলে ঠিক করল।।
.
সন্ধায় মায়া লিয়া কে মহল টা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল।। উদ্দেশ্য মহলটার আশ পাশ ভালো করে জানা।। যাতে প্রয়োজনে কাজে আসে।। ঘুরতে ঘুরতে রাণী ইরাভের কক্ষ পড়ল সামনে।। সামনে পড়তেই মায়া ভাবলো উনার সাথে কথা বলা যাক।। উনার সাথে তেমন কথা হয় না।। মায়া যখন রাণী ইরাভের কক্ষে প্রবেশ করল তখন তিনি কোনো একটা বই পড়ছিলেন।। মায়া কে দেখে কিছুটা অবাক হলেন।। মায়া রাণী ইরাভ কে নিচু অভিবাদন জানালো।। রাণী ইরাভ বই বন্ধ করে বলল
.
—- রাণী মায়ার আগমন হঠাৎ করে আমার কক্ষে??
.
—- আপনাকে দেখতে এসেছি!!
.
কথা শুনে রাণী ইরাভ হাসলো।। তারপর মায়া জে বসতে দিল।। বসেই মায়া বলল
.
—- আপনি জানেন কি যে সম্রাট আমাকে জোর করে তুলে এনেছিল??
.
—- অবশ্যই জানি!!
.
—- আপনি কিছু বলেন নি??
.
—- ও সম্রাট!! ওর যা ইচ্ছা তা সে করতে পারে।। তাছাড়া ঈরানভা তার বিজিত রাজ্য।। পুরো টা রাজ্য টা যখন তার তাহলে রাজ্যের রাজকুমারী কেন নয়??
.
মায়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো রাণী ইরাভের দিকে।। খুব ধুরন্ধর মহিলা বোঝায় যাচ্ছে।। মায়া একটু হেসে জবাব দিল
.
—- তাতো বটেই!!! যে সম্রাট তার পিতা কে হত্যা করতে পারে এবং মাতা কিছুই বলেনা তার কাছে তো কোনো কিছুই নিষ্টুর বলে মনে হবে না।।
.
মায়ার কথা শুনে রাণী ইরাভ কিছু বলতে চেয়েও পারলো না।। শুধু হা করে তাকিয়ে রইল।।
মায়া উঠে দাড়ালো।। এখানে থাকার আর কোনো মানে হয়না।। তার আরো অনেক জরুরি কাজ রয়েছে।। সেগুলো শেষ করতে হবে।।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here