Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
. Part – 25……………………
★
হতভম্ভ মায়া অলোকের প্রস্থান পথের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।। যেন তার চরম মুহুর্তে তার ঈশ্বর তাকে রক্ষা করেছে।। না হলে মায়া কখনোই নিজেকে মাফ করতে পারতো না।। বিশ্বাস ঘাতকতা করা হত কালক এর পবিত্র ভালোবাসার সাথে।। চোখ টা ঝাপসা হয়ে আসছে তার।। হয়ত পানি আসতে চাইছে।। কিন্তু যেন মন খুলে কান্না করার মতও স্বাধীনতা তার নেই।। কান্না চেপে রাখাতে তার হাত পা কাপছে।। ঠান্ডার কারনে হাত কাপছে নাকি অপরাধবোধে সেটা মায়া জানে না।। শুধু জানে তার কালক এর সাথে সে অন্যায় করতে যাচ্ছিল।।
বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে মাথা উপরে তুলেই যেন স্বগতোক্তিতেই মায়া বলে উঠল
.
—- আমাকে কখনো মাফ করো না কালক।। আমি পাপী।। অনেক বড় অন্যায় করছি তোমার সাথে, তোমার পবিত্র ভালোবাসার সাথে।। আমাকে মাফ করিও না তুমি।।
.
দুফোটা অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল।। ধীরে ধীরে লাগোয়া বাগান টার দিকে এগিয়ে গেল।। চারদিকে রজনীগন্ধা ফুলের সুবাস ভেসে বেড়াচ্ছে।। মধ্য রাতে আকাশে বাঁকা চাঁদটা যেন তার দিকে তাকিয়ে হাসতে বলছে।। কিন্তু কিভাবে সে হাসবে?? চাঁদের আশে পাশে তার মেঘরা আর তারারা ঘুরছে, খেলা করছে।। কিন্তু মায়ার পাশে তার কালক নেই।। শুধু কালক না।। তার বিভীষা, মা, বাবা কেউ নেই মায়ার পাশে।। এই স্বার্থপর পৃথিবী তে মায়া ভীষন একা।। দু হাতে নিজেকে জড়িয়ে ধরল সে।। তার প্রচুন্ড ভাবে কালক এর কথা মনে পড়ছে।।
ধপাস করে ঠান্ডা মেঝেতে বসে গেল মায়া।। সমস্ত শক্তি তার নিঃশেষ হয়ে গেছে।। যেন যাওয়ার আগে অলোক তার সমস্ত শক্তি শুষে নিয়ে গেছে।।
হু হু করা বাতাস মায়ার শরীরে আরো ঠান্ডা লাগিয়ে দিচ্ছে।। গায়ের ভেজা কাপড় গুলো বাতাসে গায়েই শুকিয়ে যাচ্ছে।। অথচ মায়ার সে দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।। সে হাসি মুখ ওয়ালা চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।। দেখছে কতক্ষণ পর পর চাঁদ টা মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে।। কিন্তু মেঘ বেশিক্ষণেরর জন্য আড়াল করতে পারছে না।। চাঁদ আবার তার হাসি মুখ নিয়ে দুনিয়ার সামনে উদয় হচ্ছে।। ঘোর লেগে এলো মায়ার।।
.
কিছু একটা ভাবলো সে।। সামনে সবকিছুই যেন ভাসা ভাসা আর স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে।। যেন কোনো রঙিন দুনিয়া।। মায়া আরেকটু খেয়াল করল।। চারদিকে কেমন যেন আলো ঝলমল করছে।। আর আকাশের এক কোনে একটা আলোর দ্যুতি দেখতে পেল।। দ্যুতি টা যেন তার দিকে এগিয়ে আসছে।। টলতে টলতে উঠে দাড়ালো মায়া।। আরেকটু সামনে এগিয়ে গেল।। এরপর দ্যুতি টা উজ্জল আকারে তারই সামনে প্রকট হল।। এতটাই উজ্জল দ্যুতি যে মায়া চোখ খুলে তাকাতে পারছে না।। অনেক কষ্টে সামনে তাকালো সে।। মনে হচ্ছে একটা উজ্জল দ্যুতির মানুষ আকারের অবয়ব।। যেন দ্যুতি টা তাকে টানছে।। হাত বাড়ালো মায়া। দ্যুতি টাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করল।। দ্যুতিটা খানিক টা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগলো।। সে একটু খানি স্পর্শ করতেই অবয়ব টা পরিবর্তন হতে লাগল।। পরিবর্তন হতে দেখে মায়া খানিকটা ঘাবড়ে পিছু হটে গেল।। দেখতে লাগল কি হচ্ছে।। সামনের অবয়ব টা ধীরে ধীরে একটা মানুষের আকার নিতে লাগলো।। দ্যুতিটা ও কমে গেল।। তবে উজ্জলতা তখনও চার পাশে বিরাজ মান করছে।। মায়া চোখ কচকালো।। খানিকটা ঝাপসা ও লাগছে আবার অস্পষ্ট ও লাগছে।। কারন অবয়ব টা তার কাছে কালক এর মত বলে হচ্ছে।। একটু পরেই অবয়ব টা স্পষ্ট হল।। মায়া তাকিয়ে দেখল কালক মৃদু হাসি নিয়ে তার সামনে দাড়িয়ে আছে।। কালক কে দেখে মায়া বিন্দু মাত্র চিন্তা করল না।। চিৎকার করে ডেকে উঠল।।
.
—– কালক!!!
.
দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে কালক কে জড়িয়ে ধরল।। তারপর শক্ত চেপে ধরে তার বুকে মাথা গুজে ফেলল।। কালক ও তাকে জড়িয়ে ধরেছে।। মায়া বিষাদ কন্ঠে ফুপিয়ে বুকে মুখ গোজা অবস্থায় বলতে লাগল
.
—- আমার খুব কষ্ট হচ্ছে কালক।। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান।। আমি এখানে থাকতে পারছি না।। এরা ভালো না।। খুব খারাপ!! খুবই খারাপ!!
.
কালকে মায়া কে আলতো করে ধরে মাথা হাত বুলাতে বুলাতে বলল
.
—- মায়া!! আমার রাজকুমারী!! কান্না বন্ধ কর।। তোমার চোখের পানি দেখলেই আমার কষ্ট হয় জানই তো।।
.
মায়া এবার কালক এর দিকে তাকালো।। কালক বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মায়ার চোখের পানি মুছে দিল।। মায়া নিজেও মুছল।। তারপর বলল
.
—– আমার চোখের পানি দেখলে যদি কষ্ট হয় তাহলে কেন ফেলে গেলে আমাকে?? কেন চলে গেল আমাকে একা রেখে?? কেন নিয়ে গেলে না তোমার সাথে??
.
কালক একটু হেসে বলল
.
—– আমি তো তোমাকে একা ফেলে যাই নি।। তোমার সাথেই আছি!! তোমার আশে পাশেই আছি।। হয়ত তুমি খেয়াল করি না!!
.
মায়া ঠোট উল্টিয়ে কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল
.
—- মিথ্যা কথা।।
.
শুনে কালক শব্দ করে হাসল।। তারপর হাসি থামিয়ে বলল
.
—- এদিকে আস আমার সাথে।।
.
মায়া জিজ্ঞেস করল না কোথায়।। এ মুহুর্তে কালক যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই সে যাবে।। কালক মায়ার হাত ধরে সামনে কোথাও নিয়ে যেতে লাগল।। মায়া বুঝতে পারলো না কোথায় যাচ্ছে সে!!
নরম ঘাসের বুকে কালক এর পাশে মায়া বসলো।। তারপর কালক এর হাত শক্ত করে চেপে ধরল।।
যাতে তাকে ছেড়ে কালক কোথাও যেতে না পারে।। সে আরো ঘনিষ্ট হয়ে বসল কালক এর পাশে।। কালক শুধু মিষ্টি করে হাসল।। তারপর মায়াকে ডাকলো
.
—- রাজকুমারী??
.
—- হুম!!!
.
—- তুমি কে জান??
.
—- জানি!!
.
—- বলত কে তুমি??
.
—- আমি মায়া!!
.
—- উহু!! তুমি রাজকুমারী মায়া!! ঈরানভার রাজকুমারী মায়া।। এটাই তোমার সবচেয়ে বড় পরিচয়।।
.
মায়া আবারো তাকালো কালক এর মুখের দিকে।। কালক আবারো বলল
.
—- তোমার পিতার কথা মনে আছে??
মায়া মাথা নাড়লো।। হ্যা তার মনে আছে।। কালক বলল
.
—- তিনি হার না মানা এক রাজা ছিলেন।। যখন তার দেশের প্রশ্ন আসলো তখন তিনি বিন্দু মাত্র পরোয়া করতেন না।। আবার যখন তার রাজকুমারীর কথা আসল তখনও তিনি কারো পরোয়া করলেন না।। লড়ে গেছেন সবার সাথে।।
.
মায়া এক নাগাড়ে হা করে কালক এর কথা শুনে।। তার কাছে খানিকটা ধোয়াসা লাগছে চারপাশ টা।। নেশার মত টানছে সবকিছু।।
কালক বলছিল।। মায়া কিছু শুনছিল কিছু শুনছিল না।।
.
—– জানো মায়া!! যারা তোমাকে ভালোবাসবে তারা কখনোই তোমার জন্য পিছ পা হবে না।। তোমার জন্য নিজের জান টা দিয়ে দেবে।।
শুনে আমার চোখের পানি টল টল করতে লাগল।। কারন তার ভালোবাসার মানুষ রা সবাই প্রাণ দিয়েই গেছে।।
.
—– তুমি রাজকুমারী!! একজন রাজার মেয়ে।। রাজার পরে রাজ্যের সবাই তাদের রাজকুমারীর উপর ভরসা করে থাকে।। আর তোমার রাজ্যও তোমার দিকে চেয়ে আছে মায়া।। তারা তোমাকে ভালোবেসে অবিরত লড়াই করে যাচ্ছে।। প্রতিনিয়ত প্রাণ বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে।। এত নরম হলে চলবে না মায়া একটু শক্ত হও।। দেখবে তোমার রাজ্য তোমারই হবে।।
.
—- সত্যি!!!
.
—- সত্যি রাজকুমারী।। একটা কথা সব সময় মনে রাখবে মায়া।। যারা তোমাকে ভালোবাসে তাদের কে কখনো একা ছেড়ে দেবে না।। তাদের কে ঘৃণা করবে না।। তাদের কে তাদের ভালোবাসার প্রতিদানে প্রয়োজনে নিজের প্রাণ টা দিতেও কুন্ঠিত বোধ করবেনা।।
.
—- কা-কালক!!! আ-আমমি””””
.
—- রাজকুমারী পুরো ঈরানভা তোমাকে ভালোবাসে।। যদি হার মেনে যাও তাহলে তাহলে তাদের ত্যাগের বিনিময়ে কি দিবে?? জীবন ভর সহ্য করার জন্য অশ্রু!! নাকি পরাধীনতার শৃঙ্কল??
.
(চলবে)
.
🙁
Home “ধারাবাহিক গল্প” Every Thing Is Fair In Love And War Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer –...