Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera Part – 28

0
616

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
Part – 28…………………..

অলোকের মুচকি হাসিতে মায়ার চারদিকে যেন পিন পতন নিরবতা নেমে এলো।। যেন তার ভিতর কিছু ভেঙে চুড়ে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।। মুগ্ধা মায়া অলোকের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে।। তার কানে শুধু একটাই লাইন বাজছে
.
—- অভিনন্দন আমার সম্রাজ্ঞী!!! তুমি হেরে গেছো!!!
.
যেন মধুর একটা সুর বাজছে মায়ার কানে।। এরকম টা আগে অনুভব করেনি।। একটা চুল চোখে পড়ে খচখচালে মায়ার হুশ এলো।। হুশ আসতেই মায়া তাড়াতাড়ি খোলা চুল গুলো বেধে ফেলল।। তারপর অলোকের দিকে তাকিয়ে বলল
.
—- স সম্রাট এ-এটা তো ধোকা!! ধোকা দিয়ে জিতেছেন!!
.
কথা শুনে অলোক অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।। অলোকের হাসি দেখে মায়া কিছুটা ক্রুদ্ধ হল।। কিন্তু প্রকাশ করল না।। মুখে হাসি ফুটিয়ে বিনীত স্বরে জানালো
.
—- সম্রাট আমি খুব ক্লান্ত।। কোনো প্রয়োজন না থাকলে মহলে যাওয়ার অনুমতি কি পেতে পারি??
.
অলোক হাসতে হাসতে বলল
.
—- অবশ্যই মায়া।। যাও বিশ্রাম কর।।
.
মায়া চলে এলো।। অলোকের হাসির কারন টা তার মাথায় আসছেনা।। মায়া এমন কি বললো যাতে এভাবে হাসতে হয়।। ভেবে কূল পেলো না।। গোসল সেরে কক্ষে আসতেই তার হাতে আবারো বেনামী পত্র এলো।। চিহ্ন দেখেই তড়িগড়ি করে মায়া সব দাসী দের পাহারায় রেখে আড়ালে চলে গেলো।। তারপর পত্র টা খুলল।। পত্র টা ঠিক এরকম ছিল।।
.
রাজকুমারী মায়া
—————————
আমার অভিবাদন গ্রহন করবেন।। আপনার কথা মত আমি সৈন্য যোগাড় করেছি।। তাদের কে বার্বান সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।। আপাতত অনেক গোপনীয়তার ভিতর করতে হচ্ছে।। যা অনেকটা ঝুকি রয়েছে।। তাছাড়া সীমান্ত এলাকা গুলোতে বার্বান সম্রাটের নির্দেশে দূর্গ তৈরি করা হচ্ছে।। যা আমাদের জন্য অনেক বড় দুঃসংবাদ।। আমরা ঈরানভার দক্ষিণের জঙ্গলে অবস্থান করছি।। বিদ্রোহী হিসেবে পুরো ঈরানভাতে আমাদের খোজা হচ্ছে।। আমাদের কেউ ধরা পড়লে তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হচ্ছে।। রাজকুমারী এটা আর সহ্য হচ্ছে না।। আমাদের সুযোগ দিন।। আমরা আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনি।। আমাদের এই মুহুর্তে প্রধান সমস্যা হচ্ছে বার্বান সৈন্যরা এখানে কিছু দূরেই ঘাটি পেতেছে।। যেটার জন্য আমাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।। তাছাড়া প্রয়োজনীয় অর্থের এবং অস্ত্রের খুবই অভাব দেখা দিয়েছে।। বার্বান দের সাথে লড়াইয়ের যথেষ্ট অস্ত্র আমাদের নাই।। তবে আশার কথা হচ্ছে ঈরানভার সব মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে।। তারা গোপনে দলে দলে যোগ দিচ্ছে এবং সাহায্য করছে।। পরবর্তী করণীয় কি তা সম্পর্কে নির্দেশেরর অপেক্ষায় রইলাম।।
.
সমাপান্তে
—————–
আপনার অনুগ্রহ পার্থী শুভাকাংখী
.
মায়া পত্রটা পুরো পড়েই দেরী করল না।। মোমের উজ্জল আলোতে পত্র টা ছাই করে ফেলল।। কোনো রুপ প্রমান থাকা চলবেনা।। এরপর দর্পনের সামনে বসে ভাবতে লাগল এবার কি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।।
.
অলোক বসে বসে লাইব্রেরিতে কিছু গুরুত্ব পূর্ন কাজ করছে।। পাশেই দারাহ দাড়িয়ে।। তাকে সম্রাটই ডেকে পাটিয়েছেন।। কিন্তু প্রায় অনেকক্ষণ হয়ে এলো সম্রাট এখনো কিছু বলছেনা।। উসখুস করতে লাগল দারাহ।। সম্রাট বিরক্ত করা যাবেনা জেনেও অতি বিনয়ী গলায় সম্রাট কে ডাকলো
.
—- সম্রাট!!
.
—- হুম
.
—- বিরক্ত করার বেয়াদবি মাফ করবেন।। কেন ডেকেছিলেন যদি জানাতেন!!
.
অলোক হাতের কাজ বন্ধ করে দারাহের দিকে তাকালেন।।
.
—– ওহ দারাহ!! আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।। আজ সন্ধায় জলসার আয়োজন কর।। আর প্রাসাদের সবাইকে সেখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য বল।।
.
—– আপনার যেটা ইচ্ছা সম্রাট।। আমি এক্ষুনি ব্যবস্থা করছি।।
.
দারাহ চলে গেলে অলোক মনে মনে চিন্তা করতে লাগল।। ইদানিং ঈরানভার কিছু দুষ্কৃতকারী তার চিন্তার মূল কারন।। এরা ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে।। তাদের কে ধরার জন্য জায়গায় জায়গায় অলোক অভিযান চালাচ্ছে।। তারপরও যেন কাজ হচ্ছে।। অলোক চেষ্টা করছে যাতে ঈরানভা তার বশ্যতা স্বীকার করে।। ঈরানভাতে বিভিন্ন বিদ্যালয়, চিকিৎসা কেন্দ্র এমন কি যোগাযোগ ব্যবস্থার ও উন্নতি করার চেষ্টা করছে অলোক।। যে কাজ গুলো রাজা মৈনাক সম্পুর্ন করতে পারেন নি অলোক সেগুলো সম্পুর্ন করছে।। এমন কি বলা কম হবে না যদি বলা হয় ঈরানভা আগের চাইতে বেশি উন্নত হয়েছে।।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দু হাতে মাথা গুজলো অলোক।। এতসব দুশ্চিন্তার মধ্যে তার একমাত্র প্রশান্তি হল মায়া।। সে চায় মায়া তাকে গ্রহন করুক।। এতটুকু ভালোবাসা তাকে দিক।। তার সমস্ত চাওয়া পাওয়া পূরন করুক।। মায়া যদি তার কোলে মাথা রাখতে দিয়ে পরম মমতায় অলোকের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তার বিনিময়ে মায়ার হাতে নিজের জীবন টাও তুলে দিতে অলোক কুন্টিত বোধ করবেনা।। দুর্ভাগ্য অলোকের।। এরকম যেন মনে হচ্ছে স্বপ্নই থেকে যাবে।।
আরো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালো অলোক।। আজ সন্ধায় জলসা ডেকেছে সে।। অনেক কাজ বাকি আছে।। মায়ার জন্য সে অনেক বড় চমক তৈরি করে রেখেছে।। মায়া চমক টা পেয়ে নিশ্চয় খুশি হবে।। এই ভেবে অলোকের মন টাও ভালো হয়ে গেল।।
.
মায়া তৈরি হচ্ছে জলসার জন্য।। অলোকের হুকুম সেখানে সন্ধায় সবাইকে উপস্থিত হতে হবে।। মায়া যেতে চায় নি।। কারন পত্রের উত্তর পাঠানো হয় নি।। তথাপি মায়া অলোক কে রাগাতে নারাজ।। সে চায় অলোক তার উপর খুশি থাকুক।। এরই ফাকে চেষ্টা করবে পত্রের উত্তর দেয়ার।। এটা ঈরানভার জন্য অতি জরুরি।। ঈরানভা কে বার্বান সম্রাটের অধীনে কোনো মানে হয় না।। প্রয়োজনে সে সব সীমা লঙ্গন করবে।। দরকার হলে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দেবে।। ঈরানভার জন্য সে সব করতে পারবে।। একটা মানসিক শক্তি অনুভব করল।। যে শক্তি টা আগে কখনো অনুভব করে নি।।
উঠে দাড়ালো মায়া।। উঠে দাড়াতেই লিয়া হন্ত দন্ত হয়ে মায়ার ঘাঘরার নিচের অংশ টুকু পরিপাটী করে গুছিয়ে দিচ্ছে।। আরেকবার নিজেকে দর্পনে দেখে নিয়ে হাটা শুরু করল মায়া।। সাথে আছে লিয়া।।
সন্ধা প্রায় হয়ে এসেছে।। উৎসব নিশ্চয় শুরু হয়ে গেছে।। কারন জলসার সুরের মূর্ছনা এখানেও হালকা ভেসে আসছে।। এগুতে এগুতে মায়া সামনের লাগোয়া বিরাট জানালায় এসে দাড়ালো।। দাড়াতেই ঝির ঝিরে বাতাস মায়ার শরীর কে নির্দেশের তোয়াক্কা না করে ছুয়ে গেল।। বাতাসের স্পর্শে কিছুক্ষন এর জন্য মায়া মোহিত হয়ে গেল।।
মায়া কে থামতে দেখে লিয়া জিজ্ঞেস করল
.
—- রাজকুমারী মায়া আপনি থামলেন কেন??
.
—- রাণী বল আমাকে!!!
.
—- রাজকুমারী মা”””””
.
—- লিয়া!!!
.
লিয়া মায়ার এ পরিবর্তনে খানিক টা অবাক হল।। কেননা মায়া তাকে নিষেধ করেছিল রাণী না বলতে আর আজ হঠাৎ করে নিজে থেকেই বলছে রাণী বলার জন্য।। অদ্ভুদ!!! রাজকুমারী মা”””” না না।। রানী মায়া!!! কখন কি বলে লিয়া বুঝতেই পারে না।।
মায়া আবারো ডাক দিল
.
—- লিয়া!!
.
— রা-রাণী মায়া আপনি থেমেছেন কেন??
.
—- কেন?? থামতে পারি না।।
.
—- না মানে”””” এমনিই””””
.
—- ওই যে দেখ।। সুর্য্য টা কেমন লাল হয়ে আছে।। এখনি টুপ করে ডুবে যাবে।। ভারী মজার একটা দৃশ্য। এই দৃশ্য দেখার লোভ আমি ছাড়তে পারি না।। আমার খানিকটা সময় এখানে দাড়াতে ইচ্ছা করছে।।
.
—- যথা আজ্ঞা রাণী মায়া।। তবে জলসার জন্য আমাদের দেরি হয়ে যাবে।।
.
—- দেরি হবে না।। ব্যস একটু করেই দেখবো লিয়া।।
.
লিয়া আর কোনো কথা বলল না।। অপেক্ষা করতে লাগল সূর্য ডোবার।।
মায়া বাইরে তাকাতে গিয়ে খেয়াল করল দূরে একদল সৈন্য দেখা যাচ্ছে।। কিছুটা দূর হলেও মায়া স্পষ্ট দেখতে পেল বার্বান সম্রাট কে। কোন কিছুর জন্য নির্দেশনা দিচ্ছে।। তাদের সামনে সারি সারি অনেক গুলো ঘোড়ার গাড়ির বহর সাজানো।। সেখানে কিছু একটা তোলা হচ্ছে।। মায়ার মনে হল সেগুলো অস্ত্র জাতীয় কিছু হবে।। সাথে অনেক সৈন্য সামন্ত।। ভ্রু কুচকে ফেললো মায়া।। সূর্য থেকে দৃষ্টি সরে এলো তার।। ভালো করে তাকিয়ে দেখলো বহর গুলো ওই বার্বান সম্রাটের নির্দেশে চলা শুরু করেছে।। মায়া কিছু একটা ভাবলো।। অতঃপর চুপচাপ জলসার দিকে রওনা হল।।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here