ঠোঁট আট,

0
336

#ঠোঁট

আট,
আমি তখন ঝর্নাকে ডাকতে গিয়েও ডাকতে পারি না। গলার ভেতর থেকে আমার শব্দগুলো আটকে যাচ্ছে। তখন নিজেকে কন্ট্রোল করে ঘরের ভিতরে যায়। তবে এখন আগের সেই অবস্থা আমার ভিতরে নেই। ঘরে ঢোকার পরে ঝরনার চেহারাটা সামনে আসার পরেই আবারো আতঙ্কে দুমড়ে যেতে শুরু করি। এখন আমার সত্যি মনে হচ্ছে। আমি অনেক বড় ভুল করেছি। ঝরনা এখন আমার কাছে সেফ মনে হচ্ছে না। এমনকি আমার জীবনটা সম্ভবত আতঙ্কের ভিতরে পড়ে গেছে। আমি আমাকে নিয়ে ভাবছি না। আমি ভাবছি ঝর্ণাকে নিয়ে। আমার কিছু হয়ে গেলে ওর অনেক বড় ক্ষতি হবে। এমন কি তার নিজের ক্ষতি মানেও তার অনেক বড় ক্ষতি। তাৎক্ষণিকভাবে আমার মাথায় কিছু আসছিল না। মুখের ভিতর হাসিটাও টানতে পারছিলাম না। সবকিছু যেন আমার ভিতরে জ্বলছে।

বিছানায় বসার সময় ঝর্না আমাকে বেশ কয়বার দেখেছিল। তার চোখমুখ দেখে বুঝতে পারছিলাম। আমাকে সে পরোক্ষ করছে। কিন্তু তখন হয়তো কিছুই বলেনি।
সেও যখন সবকিছু গুছিয়ে বিছানায় আসে। আমার মাথাটা টেনে নেয় তার বুকের ভেতর। আমি তখন তাকে বলি।

ঝরনা, আপনার উরুতে আমি মাথা রাখি।

ঝরনা তখন হেসে বলে। এটার জন্য অনুমতি চাওয়ার কি দরকার। আসেন মাথা রাখেন।

মাথাটা রাখার পরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। ঝরনা তার হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আমার মাথার উপরে।
আমি চোখ বন্ধ করে বুঝতে পারছি। সে আমাকে খুব গভীর ভাবে দেখছে। হয়তো কিছু বুঝার চেষ্টা করছে। আমি হঠাৎ এভাবে চুপ হয়ে গেলেন কেন।
কিন্তু সত্যি যদি প্রশ্ন করে বসে। আমি কোন উত্তর দিতে পারবো না। এর কোন উত্তর আমার কাছে নেই।

বেশ অনেকক্ষণ পর। ঝরনা আমাকে বলে।
ইমতি, একটা কথা বলবো?

হ্যাঁ বলেন। মাত্র একটা কেন।

আপনার মুখটা হঠাৎ করে এভাবে অফ হয়ে গেল কেন। কি হয়েছে আপনার এই মুহূর্তে।

আমি জানতাম। এমন কোন একটা প্রশ্ন আমাকে কিছুক্ষণের মধ্যে শুনতে হবে। তখন আমি। একটা কৃত্রিম হাসি মাখিয়ে বলি।
আরে না। এমনি একটু চুপ করে আছি। খেয়ে উঠলাম তো।

আপনি কি আমাকে নতুন করে জানতে বলছেন আপনাকে ?

আরে না। সত্যি বলছি আমি।

ঠিক আছে। আমি আর কিছুই জিজ্ঞেস করবো না। কখনো না কখনো আমি সত্যি ঠিকই জানতে পারবো। কখনো তো আমাকে কিছু লুকাতে পারেননি আপনি। পারলে না হয় একটা কথা ছিল।

আমি তখন তার কথাগুলো কানের মধ্যে বারবার বাজাতে শুরু করলাম। হ্যাঁ তা তো অবশ্যই। কোন না কোন এক সময় তাকে জানাতেই হবে। তবে সেটা আমি এখন বলতে পারছি না।

তুমি তখন থেকে আমার ভেতরটা কেমন যেন হয়ে গেল। সেদিন আর নিজেকে জাগিয়ে তুলতে পারিনি। তাই বলে ঝর্নাকে যে ইগনোর করেছি তাও নয়। তাকে ভাসিয়ে রেখেছে আমি কৃত্রিম ভালোবাসার মধ্যে। যা আমার জন্য খুবই একটা অসহ্যকর ব্যাপার ছিল। তখন নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছিলাম। আমি এইভাবে ঝর্ণাকে ধোকা দিচ্ছি না তো। তার কৃত্রিম ভালোবাসা পাওয়ার কথা না। তাহলে তাকে আমি এই ভালোবাসাতে কেন বসিয়ে রেখেছি।
আমার ভেতর থেকে কোনো উত্তর ফিরে আসেনি।

নিজেকে দু-একদিনের মধ্যে গুছিয়ে তুলতে পারলেও। ঠিক সেই উষ্ণতা ভালোবাসা ফিরিয়ে আমি কোন ভাবে আনতে পারছি না। বারবার ভেতরটা আতঙ্কে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে আমার।

তারপর সময় চলে আসে কলেজে ভর্তি হবার। ঝরনা ও বারবার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি তার প্রতিউত্তর দিচ্ছি না। আমার এখন কেন যেন মনে হচ্ছে। এই শহরটা আমার জন্য খুব বিপদজনক হয়ে গেছে। আমার জন্য নয়। আমার সঙ্গিনী ঝরনার জন্য।আমার কিছু হয়ে যাওয়া মানে ঝরনার একা হয়ে যাওয়া। তারপরের পরিস্থিতি আমি কল্পনা করতে চাই না। আর আমার কিছু হয়ে গেলে সে যাবে কোথায়। এটা ভাবলে আমার মাথা পুরো ব্যথা হয়ে ওঠে। আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি। এমন একটা মুহূর্তে এরকম একটা বিপদ চোখের সামনে ভেসে উঠবে।

ঝরনা আমাকে সন্ধ্যায় নিয়ে বসে। সে জানতে চাই আমি পড়াশোনা কেন করতে চাচ্ছি না। তার সাথে তো আমার এটা কথা ছিল না। কথা ছিল বিয়ের পর আমি পড়াশোনা চালু রাখব। তাহলে এখন কেন পিছু হচ্ছি।

আমি ছোট বাচ্চার মত তখন নিশ্চুপ হয়ে ছিলাম। কোন জবাব পাচ্ছিলাম না খুজে আমি।

তাও ছোট বাচ্চার মত কান্নার একটা ভান করে বসি।

খুব আহলাদী সুরেই বলতে থাকি। না ঝর্না না। আমি আর পড়াশোনা করব না। আমি আপনার কাছে চব্বিশ ঘন্টা থাকতে চাই। আপনাকে একা রেখে আমি একমুহুর্ত নরবো না।

ঝরনা তখন আমার গালে হাত রাখে।
তারপর মুচকি হাসি দিয়ে বলে।

ইমতি, আপনি আমাকে কি ওয়াদা করেছিলেন ভুলে গেছেন। আপনি না আমাকে বলেছেন। আপনি অনেক বড় হবেন। আমাকে একজন গর্বিত স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি করবেন। আপনি কি আমাকে বলেননি।আপনি অনেক বড় হয়ে আমাকে গর্ব করার মতো অনেক কিছু অর্জন করে দিবেন। এসব কি তাহলে এখন ঢোকাতে দিয়ে যাচ্ছেন।

আমি ঝর্ণার দিকে তাকায়। তার মুখে তখনও মুচকি হাসি লেগে আছে। বুঝতে পারছি সে আমাকে সাপোর্ট দিচ্ছে। কিন্তু আমি কেন চাইছি না তাকে ছাড়তে সেটা তো সে বুঝতে পারছে না।

আমি তখন তাকে বলি।

তাহলে আমার সাথে প্রতিদিন কলেজে যেতে হবে। আমার যতক্ষণে ছুটি হবে। যতক্ষণ না ক্লাস শেষ হবে। ততক্ষণ আপনি কলেজে অপেক্ষা করবেন আমার জন্য।

ঝরনা তখন হেসে বলে।
ওরে পাগল। আপনাকে সব বলতে হবে না। আমি আগে থেকে ভেবে রেখেছি। পাগল নাকি। আপনাকে আমি একা ছাড়বো। কখনোই না। মাঝে মাঝে ক্লাসে যেয়ে চেক দিয়ে আসবো। কোন মেয়ের দিকে তাকাতাকি করছেন কিনা বা কথা বলছেন কিনা।
নিয়ে যাব সঙ্গে। নিয়ে আসবো সঙ্গে। বুঝলেন আমার পাগল টা।

এবার যেন একটা তৃপ্তির হাসি ছাড়লাম আমি। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে। এই হাসিটা অনেকদিন পরে হাসছি।

আমি তখন ভাবলাম। ঝরনা একজন ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে। আর কিছুদিন পরেই হয়তো তার অনার্স কমপ্লিট হয়ে যেতো। কিন্তু সে আমার জন্য সেটা বিসর্জন করেছে। পুরোপুরি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে নি। এমন কি যেটা আমি জানতাম না সেটা ও জানে। তবে এর মধ্যে বিশাল একটা অজানা কথা ছিল।যেটা ছিল আমার ধারণা ও আমার পরিবারের কথা। আর সেটা হলে আমার বয়স নিয়ে।কিন্তু এই নিয়ে ঝরনার সাথে আমার দ্বিতীয় বার কোনো কথা হয়নি আমার জানা হয়নি সে এসব কথা জানলো কোথায় থেকে। এখন এসব ভাবতেও চাচ্ছি না।

সেদিন রাত্রে ঝরনা আমার কাছে উষ্ণতা চাই। খুব করেছে নিয়েছিল। আমি না করিনি তাকে। দিয়েছিলাম ভালবাসা মাখিয়ে।

তবে রাতে একটি ঘটনা ঘটে যায় আমার সাথে।

চলবে*

Written by-Ibna Imtiaj ( Abdullah bin imtiaj)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here