ঠোঁট আঠারো,

0
264

#ঠোঁট

আঠারো,
আমার ঘাড় শক্ত করে বাঁধা মোটা দড়ির সাথে । উপরের দিকে মাথা ঘুরিয়ে ভালো করে কিছু যে দেখবো। সেই সুযোগটা কোন ভাবে রাখেনি। কিন্তু আমার এখন আফসোস হচ্ছে ঝরনার সেই রস মাখানো চুমুটার জন্য। কেন আমি তার সেই চুমুটার রহস্য বুঝতে পারলাম না, এর জন্য আমার প্রচন্ড আফসোস হচ্ছে। যদি বুঝতে পারতাম, তাহলে হয়তো ঝর্নাকে এখন একা করে ফেলতাম না।
খুব ভয় লাগছে ভেতরে আমার। এতটা ভয় এর আগে কখনো পাইনি আমি। ভয়টা ঠিক আমার জন্য না। ঝরনার জন্য। আমি হয়তো মরে যাব কিংবা তারা মেরে ফেললে মরে গেলাম, কিন্তু আমার অবর্তমানে ঝরনার কি হতে পারে এই চিন্তাটা আমি করতে পারছিনা।
আর কিছু ভাবার আগে আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠি।

আমার মাথায় এটাও ছিল না, আমার উপরে একটা হুমকি আছে। কিন্তু সেই হুমকিটা যে রাধিকার ভিতরে লুকানো। সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি কখনো।
চোখের সামনে ঝরনার অনেক কিছু ভেসে উঠছে আমার।ঠিক যেমন মৃত্যুর আগে মানুষের অনেক কাজ অনেক কর্ম অনেক স্মৃতি ভেসে ওঠে তার চোখের সামনে। আমার সাথে ও ঠিক এমনটাই হচ্ছে।

ঝরনা আমাকে প্রায়ই বলতো, আমি যদি মরে যাই এখন আপনার কি কোন আফসোস হবে ?

আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিয়েছিলাম। না আমার তেমন কিছুই হবে না।কারণ আপনি এখন মরে গেলে আমি নিশ্চিত আপনাকে আমি আমার জান্নাতে পেয়ে যাব। সেই জন্য এখন অতটা চিন্তা আমার হয়না।

এই উত্তরটা ঝরনার তখন পছন্দ হয়নি। ও একদম রেগে যায়।রেগে গিয়ে আমার কোল থেকে উঠে একদম সোজা বারান্দায় গিয়ে হপ করে বসে পড়ে।

আমি তখন পাশে গিয়ে বসি। খুব শক্ত করে চেপে ধরি বুকের সাথে। যেন ছুটতে না পারে।

ও তবুও নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে। আমাকে জড়িয়ে ধরছেন কেন, আমাকে মেরে ফেলে তো অন্য মেয়ের সাথে শোয়ার ধান্দা আপনার। আমি জানিনা মনে করেছেন। সব জানি আমি। আমাকে তো ভালো লাগেনা। পুরাতন হয়ে গেছি।

আমি তখন আস্তে করে ঘাড়ে একটা কামড় দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলি।
এই পৃথিবীতে আমি একটা ছেলে, যার কাছে কখনো মনে হয় না যে, তার স্ত্রী তার কাছে পুরাতন হয়ে গেছে। আরো থাকলেও আমি জানিনা। আমি শুধু আমার কথাই বললাম। আপনাকে দেখলে তো আমার বারবার নতুন করে প্রেম উপচে পড়ে।তাহলে কেন বলছেন যে আপনি পুরাতন হয়ে গেছেন বলে আমি আপনাকে আর ভালোবাসি না মেরে ফেলতে চাই।

ঝরনা দহন বুকের ভিতর গুটিসুটি হয়ে ঢুকে বলে। থাক আর বানিয়ে বলতে হবে না আমি সব জানি।

এই শুনেন না, আপনাকে না মারাত্মক হট লাগে।

ঝরনা তখন একটা মুচকি হাসি দেয়। তারপর বলে, যা শয়তান। খালি মিথ্যা কথা।

ও আমি হট বললাম তাই গায়ে কোন কথাই লাগলো না। এখন যদি একটা দেবর থাকতো বা অন্য কেউ থাকতো ভাবি ভাবি ডাকে। শুনতে খুব ভাল লাগত আপনার তাই না।

ধুরু, কি যে বলেন। ওসব ফালতু কথা রাখেন।
আমি মোটেও হট না।

হয়েছে অনেক হয়েছে। আমার ভালোবাসাকে আমি হট বলেছি। আপনাকে এত মাথা ঘামাতে হবে না। আমার সুন্দরী জান টা।

এই ভাবনাটা শেষ হওয়ার পরে আমি আরো জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করলাম। ভাবতেই অবাক লাগছে ঝর্ণাকে আমি আর বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না। আর ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে উষ্ণতায় ভিজিয়ে দিতে পারবো না। পারবো না সেই নগ্ন বুকে আমার বুকটা লেপ্টে দিতে। সবকিছু যেন নিমিষেই আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেল।

এমন সময় একটা লোহার দরজা খোলার শব্দ পাই আমি। সম্ভবত তিন থেকে চার জন বা তার অধিক কেউ ঢুকছে ভেতরে।

আমার বাঁধনের সব দড়ি গুলো খুলে দেওয়া হলো।
পেছনে থাকার কারণে এই লোক গুলোর সংখ্যা আমি নির্ধারণ করতে পারেনি। কিন্তু তারা মোট ছয় জন।
এদের আমি কাউকে চিনি না।

তবে একজন আমার মোবাইলটা আমার সামনে ধরে বলছে। তোর বউটা অনেক কষ্টে আছে রে।তাকে শান্ত করার জন্য তো তোকে বাসায় যাওয়া প্রয়োজন। আর না হয় এখানে বসে থেকে বিদায় নেওয়া।

এই কথা শোনার পর আমি খুব কাকুতি করে জানালাম। দেখুন একটুর জন্য হলেও আমার স্ত্রীর সাথে আমার কথা বলতে দিন। সে খুব চিন্তা করছে আমার জন্য। কেঁদে কেঁদে তাদের কাছে আহাজারি করলাম। কিন্তু তাদের মন একটু গলেনি।

তাদের চাহিদা হল। আমি যখন এজেন্সি ছেড়ে দিয়েছিলাম, তখন যেসব ডাটাবেজ ও কোড লিস্ট নিয়ে চলে গেছিলাম। সেগুলো তাদের হাতে সোপর্দ করে দিতে।কিন্তু এগুলো যদি আমি তাদের হাতে দিই তাহলে আমাদের দেশের একটা অংশের অনেক বড় ক্ষতি হবে। আর আমি চাই না সে ক্ষতিটা আমার হাতের দারাই হোক। এটাই করে যদি আমার জান যায় যাক তবু আমি সেটা দিতে পারবো না।

আমার কথা আমি সাফ সাফ জানিয়ে দিলাম।কিন্তু মরেই যখন যাব ,তাহলে শেষ বারের মত ঝরনার সাথে আমার নিশ্চয়ই কথা বলতে দেওয়া উচিত। কিন্তু তারা আমাকে তা হতে দিলো না। আমাকে পাঁচ ঘন্টা সময় দেওয়া হলো। এ পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে যদি আমি আত্মসমর্পণ করি। তাহলে আমাকে অনেক মোটা অংকের টাকা সহ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর যদি সময় শেষ না হওয়ার আগে কিছু না করি,তাহলে সময় শেষ হওয়া মাত্রই আমাকে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলা হবে।

এই কথা শেষ করে তারা চলে গেল।
তারা চলে যাওয়ার পরে আমার মৃত্যুচিন্তা টাও আসছে না আত্মসমর্পণ করার চিন্তাটাও আসছে না। শুধু আমাকে চিন্তাটা ঘিরে রেখেছে ঝরনার সেই অবস্থাটা। এখন বাজে রাত দুইটা। আজ সারাদিন আমাকে না পেয়ে তার ভেতরের অবস্থাটা ঠিক কেমন হয়ে গেছে তা বোঝার শক্তি আমি এতক্ষণে হারিয়ে ফেলেছি।

সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত এখনো ঠিক নিতে পারছি না।এতটা দিন দেশের ভিতরে আন্ডারকভার এজেন্সি গেম খেলে দেশের জন্য কাজ করেছি। আর আজ কিনা আমাকে দেশের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর জন্য মেরে ফেলার হুমকির সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।

আমি তখন তায়াম্মুম করে নামাজ দাঁড়িয়ে গেলাম।

নামাজ শেষ করে আল্লাহর কাছে খুব কান্না করলাম। শুধু এটাই বললাম যে, আমাকে আমার ঝর্ণা থেকে বিয়োগ করিও না। দেশের বিরুদ্ধে ও যেন আমাকে কিছু না করতে হয় সেই ব্যবস্থা টাও তুমি করে দিও আমাকে। আমি এসব থেকে মুক্তি পেতে চাই।

কারণ আমি জানতাম। খুব বিপদের সময় আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করে। আর সেই দোয়া টা এমন ভাবে কবুল হয়। যাকে অবিশ্বাস্য বলা যায়।

দুই ঘন্টা হয়ে গেল চুপ করে বসে আছি। ঠিক এমন সময় দেখি, সামনের দরজা দিয়ে কালো টাইট ফিট ড্রেস পড়ে একটা মেয়ে ঢুকছে।

চলবে*

Written by- Ibna Imtiaj

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here