ঠোঁট একুশ,

0
781

#ঠোঁট
একুশ,
কিন্তু মোবাইলের রিংটোন শোনার পরেও ইমতি গাড়ি চালানো থামায় না। সোজা টানতে থাকে। তবে গাড়ি হাইওয়েতে উঠানোর পরে বুঝতে পারে, তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নাটোরের লালপুর এলাকায়। এখান থেকে বগুড়ার রাস্তা খুব একটা বেশি দূরে নয়। যদিও ঘন্টাখানেকের ব্যাপার।
কিন্তু ইমতির মনে হচ্ছিল এই পথ মনে হয় আর শেষ হবে না। হয়তো ঝরনার সাথে আর কোনদিন দেখা হবে না। এমনটাই মন বারবার বলছিল।
তবে বাহিরের চলন্ত সবুজ মাখা নিঃশ্বাস ঠিক কতক্ষণ কত ঘন্টা পরে নিচ্ছে কত দিন পর তা সহজে হিসাব মিলিয়ে নিতে খুব কঠিন হচ্ছিল।
তাৎক্ষণিকভাবে ভুলেও গেছিল যে, তাকে কি বারে এবং কখন ধরে নেওয়া হয়েছিল।
অনেকক্ষণ গাড়ি চালানোর পরে যখন বুঝতে পারে বগুড়াতে সে ঢুকতে যাচ্ছে। তখন গাড়িটা কোন একটা রেস্টুরেন্টের সামনে পার্ক করে।
এদিক ওদিক তাকিয়ে নেই একবার। তারপর ধীরে সুস্থে সেই স্যুটকেসটা খুলে। খোলার পর অবাক হয় না। কারণ তাকে আগেই বলা হয়েছে ্সযুটকেসের ভিতর অনেক টাকা আছে।
কিন্তু চার পৃষ্ঠার সেই চিঠিটা তো পড়তে হয়।
তবে সব পড়া সম্ভব না সময়ের কারণে।
এদিকে ওদিকে উল্টিয়ে যা বোঝায়।এই মেয়েটা ইমতি কে চিনত অনেক আগে থেকেই। মেয়েটার আসল নাম জ্যাকলিন, রাধিকা নয়। খ্রিষ্টান মেয়ে। তবে এই হাতের লেখা ও নামটা পূর্বের অনেক কিছু মনে করিয়ে দেয়। চিঠির ইতিহাস পড়তে হয়না আর।
জ্যাকলিন হলো অন্য এক এজেন্সির এজেন্ট ছিল। কিন্তু তখন যত গুলো চিঠি আমাকে দেওয়া হতো। সব গুলো আমি একটা টোপ মনে করতাম। প্রেম নিবেদন সহ কেমন যেন একটা করুনা করতে বলা হতো। কখনো বা বলা হতো তাকে বাঁচাতে।
কিন্তু আমি এসব কিছুই বিশ্বাস করতাম না। এজেন্সি থাকা অবস্থায় আমার কাছে প্রেম মানেই ছিল একটা অবিশ্বাস যোগ্য কাজ। এটা প্রেম হতে পারে না, হাই ছলনা আর না হয় টোপ হিসেবে এটা আমার উপরে প্রয়োগ করছে।
সেইজন্য কোনদিন কোন মেয়ের প্রেমের প্রস্তাব কে আমার বিশ্বাস হয়নি।
তবে আমি কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু এই বিষয়ে না ,অন্য বিষয়ে। আমি যখন এর সামনে বললাম ঝরনা আমারে স্ত্রী হয়। তখন ওর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছিল। অবশ্য একদিন আমাকে ও বলেও ছিল। এই বয়সে এত তাড়াতাড়ি বিবাহ না করলে কি তোমার হত না। আর একটু ওয়েট করলে তোমার কিবা এমন বয়ে যেত। বরং ওয়েট যদি করতে তাহলে আরো অনেক ফলাফল দেখতে পেতে।
তখন তো আমি এই কথার ইঙ্গিত বুঝিনি। কিন্তু এখন মনে পড়ছে এই সেই জ্যাকলিন।
এখানে জ্যাকলিন অবশ্য সব কিছুই স্বীকার করেছে। সে কেন এই কলেজে ভর্তি হল,কেন পরিচয় গোপন করে আমার সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করছিল। সবকিছুর কারণটাই সেই চিঠির মধ্যে স্বীকার করে ফেলেছে। আর আজকে কেন সে আমাকে ছেড়ে দিল, সেটাও বলেছে।
ঝরনার কারণে আমি আজকে প্রাণে বেঁচে গেলাম ঠিক এমনটাই বুঝিয়েছে সে। ঝরনা আমাকে যা যত্ন করে যতটা ভালোবাসে। এসব কিছুই জ্যাকলিন কে খুব মুগ্ধ করেছে।
সেইজন্য ঝর্নার দিকে বিবেচনা করে এসেই নিজের জীবন বাজি রেখে আমাকে ছেড়ে দিল।
আমার তখন কিছুক্ষণের জন্য দমটা একটু ভারী হয়ে আসলো। হয়তো তখন এই মেয়েটাকে আমি বাঁচাতে চাইনি বিশ্বাস করি না বলে। কারণ এজেন্সি থাকা অবস্থায় কোনটা ভালোবাসা কোনটা ছলনা কোনটা টোপ। এসব কিছুই বোঝার উপায় ছিল না।
কিন্তু আজ এই মেয়েটা আমাকে রক্ষা করল।
হয়তো এটাই নিয়তি।
আমাকে কাগজে কোন এক জায়গায় বলা হয়েছিল গাড়িটা বাসা থেকে নিম্নে আধা কিলোমিটার দূরে কোথাও পার্কিং করে ফেলতে। তারপর হেঁটে হেঁটে বাসায় যেতে। এমনকি সেদিনই কোথাও না কোথাও হারিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এলাকার থাকতে মানা করা হলো।
গাড়িটা পারকিং করে আমি হাঁটছি হাতের মধ্যে টাকার সুটকেস নিয়ে। খুব আনন্দ হচ্ছে মনের ভেতর। কিন্তু যতগুলা কদম ফেলছি তার চেয়ে বেশি আতঙ্ক আমাকে ঘিরে ধরছে।
ঝর্নাকে গিয়ে কি আগের অবস্থায় দেখব, নাকি অন্য রকম একটা অবস্থায় যে আমার মেনে নেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব হবে না।
খুব ভয়ে ভয়ে দরজার কড়া নাড়লাম।
অনেকক্ষণ হয়ে গেল। কিন্তু দরজা খুলল না। আমার ভেতরটা তখন আস্তে আস্তে দুমড়ে-মুচড়ে যেতে শুরু করছে।
শেষবার যখন আঙ্গুলটা তৈরি করেছি দরজায় বাড়ি দেওয়ার জন্য। ঠিক তখনই দরজাটা খুলে যায়।
আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে আমার প্রিয় তমা, আমার নিঃশ্বাস ঝরনা।
কিন্তু ও যখন আমাকে দেখে। বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। চোখটা হালকা বন্ধ করতে করতে পেছনদিকে ঢুলে পড়ে যায়। আমি যদি তাৎক্ষণিক থাকে না ধরতাম। বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারত।
ঝরনা ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। দাঁতের সাথে দাঁত লেগে গেছে শক্তভাবে।
আমি তখন তাকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় নিয়ে যায়। পানি নিয়ে আসি। মাথায় পানি দিয়ে মুখে পানি ছিটায়। কিন্তু কোন ভাবে জ্ঞান যেন ফিরে আসতে চাচ্ছেনা। মারাত্মক ভয় পেতে শুরু করি আমি।
হাতে পায়ে মালিশ করতে থাকি। মালিশ করা অবস্থায় একটা জিনিস খেয়াল করি।
ঝর্নার শরীর চেহারা সম্পূর্ণরূপে বদলে গেছে।
এই অবস্থা দেখে আমি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারি না। চোখ দিয়ে আমার অনবরত পানি পড়তে থাকে।
আমার মনে হয় ও এই কদিন খাইওনি।
আস্তে আস্তে ঝরনার শরীরটা কিছুটা হালকা অবস্থায় ফিরে আসে। ও চোখ মেলে।তবে জ্ঞান টা ফিরা মাত্রই ও আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য পাগল হয়ে যায়।
কিন্তু আমি তাকে উত্তেজিত হতে দেইনা। ওর শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই এটা আমি খুব ভাল করেই বুঝতে পারছি। কিন্তু মনের জোরে ও এতটা ছটফট ছটফট করছে।
আমার গালে কপালে ঠোঁটের কোণে কিছুটা রক্ত জমাট হয়ে আছে। তবুও এসব খেয়াল না করে আমি ঝর্ণার উপরে নিজেকে বিছিয়ে দি। পুরো শরীরের ভর টা চাপিয়ে দি ঝর্ণার উপরে।ও এতদিন পরে আমাকে পাওয়ার পরে কান্না করছে নাকি ভালোবাসা হঠাৎ করে পাওয়ার জন্য কান্না করছে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। কিন্তু ঝরনার এই কান্নাটা আমার ভেতরটা পুরো ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছিল। ও হয়তো মুখ থেকে কথা হারিয়ে ফেলেছে। জিজ্ঞেস করতে পারছেনা আমি এতদিন কোথায় ছিলাম। আমার এমন অবস্থা কেন। আমিও চাচ্ছিলামনা এখন সে কথা বলুক। কারণ তার শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি এখন নেই। এই মুহূর্তে যদি নিজেকে খুব বেশি উত্তেজিত করে ফেলে। তাহলে তার মারাত্মক কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আমি চুপচাপ নিজের শরীরটা ভর দিয়ে রেখেছিলাম তার ওপরে। ও কাঁদুক। কেঁদে হালকা হোক। তারপর নাহয় কথা বলুক। কিন্তু এখন আমি কথা বলতে দিতে পারিনা।
অনেকক্ষণ কাদার পরে সে আমাকে বলে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল আজকে আপনি আসবেন। আমি তখনও নামাজের সেজদায় পড়ে ছিলাম। শেষ সেজদায় আমি বলেছিলাম। আজ যেন দরজা খুলে আমি আপনারই দেখা পাই। খোদা আমার কথা রেখেছে। আমি আপনাকে পেয়েছি। কোথায় ছিলেন কি হয়েছে, আজকে আমি কিছুই জিজ্ঞেস করবো না। আজকে শুধু আমাকে সারাটা দিন জড়িয়ে ধরে থাকবেন এভাবে। আমি আজকে আপনাকে কোনভাবে ছাড়তে পারবো না কোনভাবে না। আমি জানিনা আপনার শরীরে শক্তি আছে কিনা। তবুও আমি আপনার কাছে আজকে মারাত্মক আদর চাই। আমি কিছুতেই এখন নিজেকে মানাতে পারছি না।
ঝরনা কথা বলছিল। মনে হচ্ছিল মুখ থেকে যেন মুক্তা বেরোচ্ছে। আর আমি তাকিয়ে ছিলাম তার দু’টি চোখ আর ঠোঁটের দিকে। সবকিছু আগের চেয়ে বেশি মায়াবী হয়ে গেছে। কিন্তু দাগ পড়ে গেছে ঠোঁটের উপরে। কালো দাগ গিলে ফেলেছে চোখের নিচে। চেহারাটাও ফ্যাকাসে করে ফেলেছে চিন্তা আর হতাশাতে।
চোখের পলক পরছে ঝরনার খুব দুর্বলতা নিয়ে। তবুও যে শরীরে এত টা শক্তি নিয়ে আমাকে চেপে ধরে আছে। টা খুব অবাক কর।
তার ঠোঁটের খুব কাছে আমার ঠোঁটটা। বারবার চোখের দ্বারা ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমার ঠোঁটটা ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য।
কিন্তু ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগল আমার কাছে।
এতদিন পরে আসলাম কোথায় ছিলাম কি হয়েছিল আমার সাথে এখন কেমন আছি কোথায় থেকে আসছি। এসব তো জিজ্ঞেস করার কোন নাম নেই, তাও আবার চেয়ে বসল হঠাৎ করে আদর। কিছুই বুঝলাম না ব্যাপারটা।
কিন্তু তার শরীরে মেশার পর আমার শরীরে যতগুলো ক্লান্তি ছিল সব মুহূর্তে যেন উধাও হয়ে গেছে।
তবে তাৎক্ষণিক চিন্তা করলাম। গল্পকথা তো আরো অনেক বাকি। সেগুলো নাহয় পরে বলা যাবে। এখন না হয় ঝর্ণাকে শান্তি দিয়ে আপাতত একটা মুহূর্ত শেষ করলে ক্ষতিটা কি।
কথাটা ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করলাম। ঝর্নাকে চেপে ধরলাম দুই হাত দিয়ে আরো শক্ত করে।তারপর ধীরে ধীরে ঠোঁটটা ডুবিয়ে দিলাম তার ঠোঁটের অন্তর গহীনে। ঠোঁটের প্রথম রসটা আমার জন্য ছিল এক অন্যরকম কিছু। যার স্বাদ ও আদর আমার ভেতরটা পুরো কাঁপিয়ে তুলেছিল।
জিব্বা আর ঠোঁটের ঘর্ষণে তাকে আমি কতদিন পরে যে পাগল করতে থাকলাম। তা আমার মনে নেই।মাঝের সময়টা আমার কাছে মনে হচ্ছিলো দীর্ঘ কয়েক হাজার বছর। যে সময়টা ঝরনার সাথে আমার মিলন হয়নি।
হাতের তলা টা ঘুরিয়ে দি ঝরনা কে শান্তি দেওয়ার জন্য অন্য কোথাও। ঠোঁট আর ঘামে ভেজা নাকের ঘর্ষণে পাগল করে দিতে থাকি ঝর্ণাকে। এভাবেই ধীরে ধীরে আদর দিতে দিতে তাকে তুলে নিয়ে যায় অন্য কোন সাগরে।
ঠোঁটটা তার ভেতর থেকে বের করে শেষ একটা ভেজা চুমু খায় ঠোঁটের উপরে।
তারপর তাকে ভালোবাসা দিতেই হারিয়ে ফেলি দুজনের ঠোঁটের মাঝে।
এর মাঝে আমি আর কিছু ভাবতে চাইছি না। যেহেতু গল্প এখনো আরো অনেক বাকি। এখন না হয় ঝরনার ঠোঁটের মাঝে নিজেকে হারিয়ে সে কথাগুলো পাশেই রাখি।
সমাপ্ত*

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here