#ঠোঁট
তেরো,
বাসায় আসার পরে ঝরনা আমার সাথে কোন কথা বলেনি। আমি বুঝতে পেরেছি সে চরমভাবে রাগ করেছে। কিন্তু তার রাগটা এখন কি করে ভাঙবো সেই চিন্তায় আমার মাথা ঘুরছে। যদি এখন তাকে জড়িয়ে ধরি নিশ্চয় কিল-ঘুসি খেতে হবে। আর যদি সরাসরি চুমু খায় তার ঠোঁটে। তাহলে হয়তো পুরোপুরি চুমু খেতে দেবে না।
চুমু খাওয়ার আগেই ছাড়িয়ে দেবে।
আমি ঘরের চুপ করে বসে আছি। আসামির মতো বলতে গেলে।
কিছুক্ষণ পরে দেখি ঝরনা নিজেই আমার জন্য ঠান্ডা এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে আসলো। ব্যাপারটা আমাকে খুব অবাক করলো।
এটা কি আমার জন্য নেগেটিভ হবে নাকি পজিটিভ হবে তা অবশ্য বুঝতে পারছি না।
আমি তার দিকে না তাকিয়ে গ্লাসটা ধরে অর্ধেক গিলে নিলাম ।অর্ধেক খাওয়া পরে তাকে বললাম। এ বাকিটুকু আপনি খান।
ও আমার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে সুন্দর করে আমার পাশে বসলো। তাও আবার আমার গায়ের সাথে ঘেশে।
এমন কাহিনী দেখে আমার শরীর বিদ্যুৎ চমকে ওঠে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। ওর রাগ কি তবে ভেঙ্গে গেছে। নাকি ঝড়ের আগে পূর্বাভাস দিচ্ছে।
আমিও তবুও মনে মনে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করছি। যদি সত্যি ঝড় হয় তাহলে আমাকে ঝড়টা সইতে হবে। ঝড়ের বিপরীতে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই আমার।
ঝরনা গ্লাসের অর্ধেক শরবত শেষ করার পরে আমার দিকে ধীর চোখে তাকায়। তেমন চাহনি দেখে আমার ভিতরে করে যেটা আঁতকে ওঠে। মাগো মা, যেন পুরোটা গিলে ফেলতে চাইছে আমাকে।
তারপর আবার ধীরকন্ঠে আমাকে প্রশ্ন করে।
ক্লাসে কি মেয়েটার সাথে আর কোন কথা হয়েছিল?
না হয়নি।
মেয়েটা কি এর আগে আপনার সাথে কোনদিন কথা বলেছিল?
না এর আগে কখনো কথা হয়নি।
তাহলে আজকে ডেকে বসলো কেন?
জানিনা আমি ,বলতে পারবো না।
আপনি কালকে আমাকে মিথ্যা কেন বললেন?
কি মিথ্যা বললাম?
মেয়েটা নাকি দেখতে অত সুন্দর না।
এটা আবার মিথ্যা বললাম কখন সত্যিই তো বলেছি। ওকি দেখতে খুব আহামরি সুন্দর। একদমই তো সুন্দর না।
দেখেন, কথা উল্টাবেন না। বিয়ের আগে আপনার এসব ছলচাতুরি দেখলে সহ্য করতাম। কিন্তু এখন এসব সহ্য করার মতো না। আমি যদি আর ফারদার দেখেছি ওই মেয়েটার দিকে তাকাতে কিংবা ওই মেয়েটার সাথে কথা বলতে। ছেড়ে যাবো না । তোর মিটার বক্স ব্লাস্ট করে দেবো একদম। কথা যেন মনে থাকে। আর আজকের জন্য ছেড়ে দিচ্ছি।
ঝরনা আমার সামনে থেকে উঠে চলে যায়। কিন্তু এমন একটা হুমকি দিয়ে যায়। যেটা ভবিষ্যতের জন্য খুব মারাত্মক একটা দুর্যোগ বলা যায়। তাকাবো না তো অবশ্যই। কিন্তু যা হুমকি দিয়েছে বাপরে বাপ। এমন হুমকি আমার বন্ধুরাও কোনদিন দেয়নি।
সেই দিন আর একসাথে গোসল করা হয় না। ঝরনা মন খারাপ হয়ে আছে। এখন কিছু থেকে কিছু করেই এই মন ভালো করা যাবে না। এমনি সে এখন উষ্ণতা ও নেবেনা।
তবে দুপুরে আমাকে খাইয়ে দিয়েছিলো। যতই রাগ থাক। এই আদর থেকে অন্তত আমাকে বঞ্চিত করে না সে।
এই দিকটা সে খুব খেয়াল রাখে।
সকালে দুজনেরই খুব ভালমতো ঘুম হয় না। যা ঘুম হয় কিছুটা উষ্ণতা হয় দুপুর বেলায়। সকালে হয় তবে সব দিনগুলোতে না। ক্লাসের জন্য সম্ভব হয় না।
ঠিক এখন দুপুরবেলা তেও সে আমাকে তার বুকের মধ্যে টেনে নিয়েছে। ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে পরম যত্নে। আমিও চুপ করে থাকি নি। খুব শক্ত করে চেপে ধরি তাকে। মনটা চাইছিল তাকে একটু উষ্ণতার দিয়ে যদি তার মনটা ভালো করতে পারি। কিন্তু চেপে ধরার সাথে সাথে ঝর্না আমার কানের কাছে এসে বলে। না এখন না। এখন আমার বুকে আপনি ঘুমান। এসবের জন্য অনেক সময় আছে।
কথাটা শুনে আমি একটু মুচকি হাসি হাসি। যাক অন্তত তার মনটা একটু হলেও গেলছে।
সন্ধ্যেবেলায় আবার তার কাছে নিত্য নিয়ম অনুযায়ী পড়তে বসি। তখন আমার তাকে একজন মাস্টারনী লাগে। কি দারুণ করে পড়ায় আমাকে।
এভাবেই সময় গুলো খুব সুন্দর ভাবে আনন্দের সাথে কেটে যায়।
তারপর আসে রাত। আর এই রাতে তাকে আমি বুকে ঘুমিয়ে দি পরম যত্নে। রাতটা কাটে তার আমার বুকে।আমি তো তেমন কোনো কাজই করি না বলতে গেলে ক্লাস ছাড়া।
মাসে একটা আউট সাইট থেকে আমার বেতন গুলো আসে। আর সেই বেতন গুলো দিয়ে আমার ছোট্ট এ সংসারটা খুব আরামে চলে যায়।
কিন্তু তার তো খাটনির অভাব নেই। এই পুরো বাসা, রান্নাবান্না, আমার যত্ন নেওয়া। আরো কত কাজ তার উপরে। এইসব সারাদিনের সামলে রাতে একটু ক্লান্ত হয়ে পড়ে সে। আর সেই ক্লান্তির ঘুম টা কাটিয়ে দেয় আমার বুকের ভেতর। তার সুখ মানে আমার সুখ। আর এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আনন্দের।
তবে এই রাতটাও যে আমার জন্য অন্য রকম একটি ঘটনা নিয়ে আসবে। সেটা আমি ঝর্ণাকে বুকে নেওয়ার সময় ভাবিনি।
চলবে
Written by-Ibna Imtiaj