ঠোঁট দশ,

0
311

#ঠোঁট

দশ,
আমি বারান্দা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ভেবেছিলাম। কাগজটা হয়ত সেই জায়গাতেই পাব। কিন্তু এখন দেখি কাগজটা সেই জায়গাতেই নেই। আমার মাথা ঝিম ধরে উঠলো। চোখের সামনে সব আবছা হয়ে আসছে।

কিন্তু যখন গ্রিলের দিকে তাকিয়ে দেখি। সেই চিকন দড়িটা তখনো ঠিক একই আছে। তখন একটু টনক নড়ে ওঠে আমার।
আমি আবার খুঁজি পুরো বারান্দা।
তবে অনেকক্ষণ পর আমার স্বস্তি মিলে। বারান্দার একটি চেয়ারের কোনে সেই কাগজটা লেগেছিল। হয়তো বাতাসে উড়ে গেছিল। কিন্তু এই ছোট কাগজটা যে আমাকে কতটা হয়রান করল। তা বোঝানো সম্ভব নয়।

আমি তখন সেই কাগজ আর চিকন দড়িটা। বারান্দার চেয়ারের পাটাতনের নিচে লুকিয়ে রাখি। যেন ঝর্ণা কোনভাবে বুঝতে না পারে।

ঘরে এসে লুঙ্গি পরি আমি। নিজেকে হালকা গুছাতে চায়। ঝরনা এমনিতেই আমার চেহারা দেখে বেশ চিন্তিত। ও ভাবছে আমার না জানি কি হয়ে গেছে।
কিন্তু নিজেকে এত টেনশন থেকে মুক্ত করবো কি করে আমি। সম্ভবত আমার জন্য হচ্ছে না। কৃত্রিম ভালোবাসায় কি আর সব কিছু লুকানো যায়। লুকানো যায়না। কারণ সে সব সময় পেয়ে এসেছে প্রকৃত ভালোবাসা। এখন সে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে তার সেই ভালোবাসার কমতি ঘটে গেছে। অথবা সে সেই টানটা পাচ্ছে না। যেটা আগে ভালোবাসার মধ্যে ছিল। আমিও তো চাই তাকে সে ভালোবাসাটা দিতে। কিন্তু সেই ভালোবাসার মাঝখানে আমার দেওয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই চিন্তাটা। যাকে ফেলাও যাবে না। গিলা ও যাবে না।

এসব ভাবতে ভাবতে ঝরনা বাহির হয়ে আসে বাথরুম থেকে। গোসল করেনি। তবে তার শরীরটা হাল্কা ভেজা। পানিতে ধোয়া নতুন মুখ। ঘুমের সেই আভাস। অসম্ভব সুন্দর লাগছিল তাকে।
এখন মনে হচ্ছিল তাকে জড়িয়ে ধরে খুব উষ্ণতায় ডুবে যেতে। কিন্তু তাকে তো আমি বলেছিস সাজতে। হয়তো তাকে সাজানোর পরে আমি উষ্ণতায় ডুবে যাব।

ঝর্নাকে আমি তখন বলি। যেভাবে হালকা সাজে সাজতে বলেছি। ঠিক তেমনই যেন আমি ফ্রেশ হয়ে আসার পরে দেখতে পাই।
এই কথা বলার পরে আমি চলে যায় বাথরুমে। নিজেকে হালকা পানিতে মুক্ত করি কিছুটা চিন্তা থেকে। তবুও ভেবে পাচ্ছি না কি উত্তর দিব সে কাগজে। নাকি দুপুরের মধ্যেই চলে যাবে ঝর্নাকে নিয়ে এই এলাকা থেকে। চলে গিয়ে লাভ যে হবে মনে হয় না। হয়তো ওরা আবার পিছু নিয়ে নিতে পারে।
কিছুই ভেবে পাচ্ছি না আমি। একা যেটা সিদ্ধান্ত নিব। সেটার উপরে কোন ভরসা পাচ্ছি না। যদি আমার সিদ্ধান্ত না ঠিক হয়। অথবা ঝরনার সাথে পরামর্শ করে যদি এমন একটা সিদ্ধান্ত পায়। যা আমার একার সিদ্ধান্ত থেকে তার সিদ্ধান্তটাই অনেক বড় হবে। এই চিন্তা থেকে কিছু করতেও পারছি না। এমনকি ঝরনা কেউ বলতে পারছি না। এটাতো ঝর্নাকে বলা কোনভাবেই সম্ভব না।
পারছি না আমি এখন আর ভাবতে।

ফ্রেশ হয়ে ঘরে যায় আমি। ঘরে এসে দেখি। ঝরনা আমার পছন্দ মত সেজেছে। দারুন লাগছে তাকে।

আমি তখন ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। তার পাশে আস্তে করে বসি। তারপর খুব নরম চোখে তার দিকে তাকায় একবার। তাকিয়ে দেখি। কত গভীর ভালোবাসা মাখানো হয়েছে এই চেহারাতে। যার সব হক এবং অধিকার আমার। একটু একা চিন্তা করলে খুব হিংসা হয় আমার। এই ঝরনা কে যদি আমি না পেয়ে অন্য কেউ পেত। তাহলে কি হতো আমার। আমিও তো হতাশ হয়ে নিজেকে দুর্ভাগ্য বলে শেষ হয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমার খোশ নাসিব। এমন ভালোবাসাটা শুধু আমি পেয়েছি।

আমি তখন ঝরণার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি।

তারপর হাসতে হাসতে নিচের দিকে তাকায়। আবারও কিছু ভাবতে যায় আমি। কিন্তু তা আর ভাবা হয় না।

ঝরনা তার হাতটা দিয়ে আমার হাত টেনে নেয় তার হাতের মুঠোয় । তারপর আমার হাতের উপরে আদর দিতে থাকে তার হাত দিয়ে। খুব শক্ত করে চেপে ধরে আমার হাতটা। এটার দ্বারা বোঝাতে চায়। আমি আপনাকে কোনদিন ছাড়বোনা। এমন শক্ত বাঁধনে বেঁধে রাখবো আপনাকে সারা জীবন।

আমার চোখ দুটো তখন ঝিলিক মেরে উঠে। হয়তো ভেতর থেকে আমার কান্না আসতে চায়। কেন আসতে চাই তা হয়তো ভেঙ্গে বলা যাবে না। তবে খুব গভীর অনুভব এর একটি কারণে।

ঝরনা তখন আমার কানের কাছে এসে বলে। আমাকে কি একটু খুব শক্ত করে চেপে ধরা যায় না।
এই সুন্দর সকালটা আপনার হতে চাচ্ছিলাম আমি। আপনাকে খুব ভিতরে নিয়ে। একদম ভিতরে।

আমি তখন তাকে চেপে ধরে খুব শক্ত করে। ও আমার চাপ অনুভব করে হালকা মৃদু সর বাহির করে। যা খুব স্পর্শ কাতর। কিন্তু আর কিছু বলতে চায় না। নিজেকে ছেড়ে দিচ্ছিল আমার ওপরে। যার মানে দাঁড়ায়। আপনার মন মত আমাকে আদর করুন। যার গভীরতা অনেক।

আমি তখন ধীরে ধীরে তার কানের দিকে যায়। আমার দুই ঠোঁট দিয়ে তার ঘাড়ের কাছে খেলছিলাম আস্তে আস্তে। উষ্ণ নিঃশ্বাস ছাড়ছি বারবার। তাকে পাগল করে দিতে ইচ্ছা করছিল ‌। কোন বাধা নেই সামনে।
তারপর ধীরে ধীরে ঠোঁট নিয়ে যায় তার গালের দিকে। হালকা ভিজিয়ে দি। আর অনুভব করতে পারি। তার গলা থেকে ভেসে আসা গঙ্গানির শব্দ। যা আমার ভেতরে ঝড় তুলছিলো এক উষ্ণতার।

খুব আস্তে করে ডুবিয়ে দি তার ঠোটের ভিতর। পাগল করে দিতে থাকি তার ভালোবাসায়। সে যেন আর ছাড়তে চায় না। আমাকে খুব গভীরে ঢুকিয়ে নিতে চায় সে।
আমি আস্তে আস্তে তার ভিতরে ঢুকে যেতে চায়। গভীর ভালবাসায়। ভালোবাসাগুলো উষ্ণতায় মাখিয়ে দি তার বুকের ভেতর। ধীরে ধীরে আরো গভীরে যায়। যার গভীর এর কোনো শেষ নেই। কিন্তু চরম একটি তৃপ্তি আছে। ঝরনা এর মাঝে একটি বার কথা বলে।

তবে খুব উত্তপ্ত উত্তেজনা হয়ে।

ইমতি, ভালোবাসি। আরো ভিতরে চাই আপনাকে আমি আরও ভিতরে।

আমি তখন তাকে নিয়ে যায় খুব গভীর ভালবাসায়। যা সে চেয়েছিল।

বুঝেনা তৃপ্তিকর ভালোবাসা শেষে একসাথে লেপ্টে আছি।
আমি তখন হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তার নগ্ন বুকে। মাঝে মাঝে চুমু খাচ্ছি তার নরম গালে।
অনেকক্ষণ পর তার কানের কাছে একটা কথা বলি।

ঝরনা, আমরা যদি কোনদিন এ দুজনের সাক্ষাৎ না পেতাম। তাহলে কি হতো আমাদের।

আমার এমন কথা শোনার পর ঝরনা অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ঠোট দুটো হাল্কা বাকিয়ে বলে। জীবনটা অপূর্ণতায় ভরে থাকতো। যার আফসোস হয়তো আমি জীবনেও শেষ করতে পারতাম না।

আমেরিকা তৃপ্তি করে হাসি মাখা মুখ তার দিকে ছড়িয়ে দিই।
হালকা করে ছুয়ে দিই তার ঠোঁটটা।

সেদিনটা আমার খুব ভালোই কেটেছিল। সারাদিনই বলতে গেলে ভালবাসায় ডুবে ছিলাম। আর যাই হোক। জীবনে যে আমার এমন একটা মানুষ পাবো। আর সে মানুষটা আমাকে সারাটা দিন সুখের মধ্যে রাখবে। সেটা কল্পনা খুব কমই করেছি।
কিন্তু আমি তখনো ভাবি নি। আমার জন্য একটা ভয়ঙ্কর মুহূর্ত অপেক্ষা করছে।

রাতে শুরুর ভাগে আমি এটা চিন্তা পরে গেলাম। ঠিক কি উত্তর দিব তাকে। আমার মাথা ঘেমে আসছিল।
কোন চিন্তা করে উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
ঝরনা এতক্ষণে আমার বুকে ঘুমিয়ে গেছে। সারাদিনের ক্লান্তি শরীর তার। এতকিছুর পরে তাকেও আমি জোর করি না উষ্ণতার জন্য। সে আমার বুকে শান্তির ঘুম ঘুমাক। এটাই অনেক কিছু।কিন্তু এখন ঝর্ণাকে বুক থেকে সরিয়ে কিছু একটা লিখব সেই কাগজে। সেই সুযোগটা পাওয়া আমার জন্য দুষ্কর ব্যাপার।

ঘুমা তখনও আসছিল না। তবে ডাইনিংয়ের ঘড়ির শব্দ বোঝা যায়। এখন রাত বারোটা বেজে গেছে।
আর কিছুক্ষণ পরে হয়তো সেই লোকটা হাজির হবে উত্তর নেওয়ার জন্য।

তবে কি উত্তর দিব।
হঠাৎ আমার মনে পড়ে। ধরি মাছ না ছুঁই পানি। এমন একটা উত্তর দিতে হবে।

কিন্তু ঝরনা?
তাকে তো বুক থেকে সরিয়ে খুব একটা বেশি সময় পাবনা। তার ঘুম ভাঙ্গার পরে যদি তার পাশে আমাকে না দেখে। সে মারাত্মক চিন্তায় পড়ে যাবে।

তবে উত্তরটা আমাকে দিতে হবে।
আমি তখন ধীরে ধীরে ঝর্ণাকে বুক থেকে সরিয়ে বালিশের মাথায় রাখি।
আস্তে করে বিছানা থেকে নিজেকে সরাই।

চলবে*

Written by-Ibna Imtiaj ( Abdullah bin imtiaj)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here