ঠোঁট বারো,

0
283

#ঠোঁট

বারো,
বেশ কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি। আমার দিকে একটা মেয়ে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে থাকে। খুব অস্বস্তিকর লাগে আমার। যদিও আমি কখনো তাঁকাই না। তাও মাঝেমধ্যে চোখ পড়ে যায়। আর যখনই চোখ পড়ে, তখনই দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা একটা গা জ্বলা ব্যাপার।

এই কথাগুলো বলার পরে খেয়াল করলাম। ঝরনার চেহারাটা কেমন যেন হয়ে গেল। বলতে গেলে কুঁচকে গেছে। এই কুচকানো টা রাগের জন্য হতে পারে। অথবা আমাকে জেরা করার জন্য।

ঝরনা তখন আমাকে গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করে। মেয়েটা দেখতে কেমন?

আমি এমন প্রশ্ন শুনে একটু ভয় পেয়ে যায়। সেই মেয়ের চেহারা হালকা মনে করতে থাকি। সুন্দর নাকি কুৎসিত। সুন্দর তো কোন ভাবে বলা যাবে না। ঝরনা সামনে অন্তত সুন্দর বললে আমার খবর আছে রাত্রে।তাও আবার অন্য মেয়েকে।

ঝরনা কে তখন বলি। আরে ধুর,তেমন ভালো না দেখতে।

একদম মিথ্যা কথা বলবেন না। যা সত্যি সেটাই বলেন। কেমন দেখতে।

সত্যি বলছি আমি। সুন্দর না। আর আপনার কাছে তো ও কিছুই না।

ওহ আচ্ছা। তার মানে মেয়েটাকে ভালো করে দেখা হয়েছে তাই না।

আরে ধুর। চোখের সামনে যতটুকু পড়েছে ততটুকুই এর চেয়ে বেশি না।আপনাকে তো সবকিছু শেয়ার করতে বলেন বলেই এ কথাটা শেয়ার করলাম ।এমন মেজাজ করছেন কেন।

ঝরনা আমার সামনে থেকে উঠে চলে যায়।
আমি ভাবলাম। কথাটা বলা নিশ্চয়ই ভুল হয়ে গেছে আমার। এটা একদম বলা ঠিক হয়নি। কেন যে মাঝেমধ্যে এতোটাই আহাম্মকগিরি করি। নিজেও বুঝতে পারি না।

আমি বারান্দায় গেলাম। যেদিকে সে সোফাতে বসে আছে। তার পাশে বসতে ওখান ভয় লাগছে আমার। খুব রেগে আছে মনে হচ্ছে।
তবুও সাহস করে তার পাশে বসে।

পাশে বসে বলি। এমন করছেন কেন। এই কথাটা আপনার থেকে লুকাতাম না বলেই তো আপনাকে বলে দিয়েছি।

ঝরনা তখন রেগে উত্তর দেয় ।

এই জন্য আপনাকে আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না। আচ্ছা মেয়েরা আপনার মধ্যে পাই টা কি বলেন তো আমাকে। কি পাই আপনার মধ্যে। বিয়ের আগেও আমি এমন একটা টেনশনে থাকতাম। এই বুঝি আপনাকে কেউ নিয়ে চলে গেল। বিয়ের পরেও যদি আমাকে ঠিক একই চিন্তায় থাকতে হয়।তাহলে আমি ঠিক থাকব কি করে আর আপনাকে বিশ্বাস করব টা কি করে। বিয়ের পরেও আপনাকে মেয়েরা ছাড়ছে না।

ঝরনা, এখানে আমার দোষ কি বলেন। আমি তো দেখতে অতটা সুন্দর না। তাও আমার দিকে মেয়েরা তাকাই। এটা কি আমার দোষ।

হ্যাঁ অবশ্যই আপনার দোষ। আপনাকে এত সেজেগুজে কে যেতে বলে হ্যাঁ। আপনাকে না বলেছি আমি। যত হ্যান্ডসাম গিরি শুধু আমার সাথে চলবে।
কেন আপনার সাধারন পোষাক পরে চলাফেরা করতে সমস্যা নাকি।
এত হ্যান্ডসাম গিরি দেখান বলেই তো মেয়েরা আপনার দিকে তাকায়।

আচ্ছা কালকে থেকে তাহলে সাধারন ভাবে চলাফেরা করব। নো সাজুগুজু নো হ্যান্ডসামগিরি।

তবুও আপনাকে আমি বিশ্বাস করবো না। আমি কালকে আপনার সাথে যাবো। মেয়েটাকে আমাকে দেখায় দিবেন। তারপর ক্লাসে যাবেন।
এখন তো ইচ্ছা করছে আপনার সাথে আমিও ক্লাস করি। না জানি ভিতরে কার সাথে কি ইটিশ পিটিশ করে বসেন। আগে জানলে আপনার সাথে আমি আবার কলেজে ভর্তি হতাম।

আমি তখন হাসি একটু। তারপর ঝরনার গালদুটো ধরে জোর করে চুমু বসিয়ে দি। ও যদিও নিতে চায় না। আমি তাও জোর করে আরো অনেকগুলো দি। এতে করে অন্তত তার রাগটা তো ভাঙবে।

সেই দিনের রাতটা ভালোবাসায় কেটে গেছিল। রাতগুলো আমার ভালোবাসাতেই কাটে। কোন রাত ভালবাসা ছাড়া হয় না আমার। তবে এখন একটু চিন্তা মুক্ত আমি। আমার মনে হয় তারা আমার পিছু ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এখনো আমার মাথায় অনেকগুলো প্রশ্নের জট বাঁধিনি। যেগুলো উত্তর খুঁজতে গেলে আমাকে অনেক বিপদে পড়তে হতে পারে।
এমনকি সেই প্রশ্ন গুলো আমার মাথাতেও আসেনি এখনো।

পরদিন সকালে ঝর্ণাকে নিয়ে কলেজে গেলাম। তবে ক্লাস শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু মেয়েটাকে দেখতে পাইনি। তাই তাকে দেখানো হয়নি।
ক্লাস শেষ করে ঝর্ণার কাছে আসলাম। তখন ঝরণার জিজ্ঞেস করল। মেয়েটা এসেছে কিনা ক্লাসে। কিন্তু আমার উত্তরটা না হলো। কারণ মেয়েটা আজকে ক্লাসে আসেনি।

পরপর দু’দিন ক্লাস এ এল না।

তিনদিনের দিন ঝরনা আর আমি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম। ঠিক এমন সময় পেছন থেকে একটি মেয়ে আমাকে ডাক দিয়ে বসে।

আমি তখন আকাশ থেকে পরি। তখন আমার মনে হচ্ছিল সর্বনাশ এর মাথায় বাড়ি। আমার আগে ঝরনা পেছনে তাকায়। একটা মেয়ের কন্ঠে আমাকে ডাক দিল এতটাই মিষ্টি সুরে। কে হতে পারে মেয়েটা।
আমিও পেছনে পেছনে তাকায়। তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটা। আমার তখন মনে হচ্ছিল। আমি মনে হয় মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছি।

ঝরনা তখন সে মেয়েটার দিকে একবার আর আমার দিকে তাকাচ্ছে।
এর মধ্যে আমাকে একবার প্রশ্ন করে ফেলেছে। এই মেয়েটা কি সেই মেয়েটা। আমি চুপ করে ছিলাম কোন উত্তর দিইনি।

মেয়েটা যখন সামনে চলে আসে। তখন ঝরণার সামনেই আমাকে প্রশ্ন করে। ভাইয়া, ক্লাসে যাবেন না। এখানে দাঁড়িয়ে কি করছেন। আর এই মেয়েটা কে আপনার সাথে।

আমার তখন ঠোঁট কাঁপছিল। ঝরনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ও যেন আমার ভয় করছে। মনে হচ্ছে আমি আজরাইলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি এখন। যে কোন মুহূর্তে জান কবজ হয়ে যেতে পারে।
তবুও তোতলাতে তোতলাতে বলি। হ্যাঁ ক্লাসে তো যাবো একটু পরে। আর এই মেয়েটা হল, তারপর বাকিটুকু মুখেই আটকে যায় আমার।

সেটা আমার আর বলতে হয় না। ঝরনা নিজেই বলে বসে। আমি ওর স্ত্রী হই।

এই কথাটা শোনার পরে মেয়েটার চেহারা টা কেমন যেন হয়ে গেল। ও তখন বোধহয় কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু আর বলেনি। শুধু বলল, ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে।

মেয়েটা চলে যায়। কিন্তু ঝরনার চোখ যে আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে। সেটা বলা সম্ভব নয় কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে। যদিও ওর মুখটা ঢাকা। শুধু চোখটাই খোলা। তবুও আমি বুঝতে পারছি ওর মুখের অবস্থাটা ভেতরে কেমন হয়ে আছে।আমাকে আজকে ব্লেন্ডারের সাথে ব্লেন্ড করে মশলা বানিয়ে ভুনা করে খাবে। এটা বুঝা বাকি নেই আমার।

শুধু আমাকে ঝরনা এটাই বলল। এখন ক্লাসে যান। আমি বসে আছি সেই জায়গায়।

আমি তখন ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করতে করতে ক্লাসে গেলাম। আজকের পুরো ক্লাসে শুধু আমার একটাই চিন্তায় মাথা ঘুরছে। বাসায় যাওয়ার পরে আমার আজকে কি হতে পারে।

কল্পনা করতে থাকলাম দ্বিতীয় ক্লাসে।

বাসায় ঢুকলাম দুজনে। ঝরনা আমায় কর্কশ কন্ঠে বলল। তোকে আজকে আমি টুকরো টুকরো করে মাটি চাপা দিয়ে দেবো।
অথবা বলবে, শয়তান সব জামা কাপড় খোল। তোকে বেঁধে আজকে ব্যাঁত দিয়ে ঠাস ঠাস করে পিটাবো। আমাকে মিথ্যা বলা তোকে এতটা বড় সাহস কে দিলো।
অথবা বলবে, তুই আমাকে ছুঁতে আসবি না। যদি আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিস। তোর সবকিছু কেটেকুটে তোর হাতে ধরিয়ে দেব।
অথবা বলবে, আজকে তোর শাস্তি বাথরুমে ১৫ ঘণ্টা ঢুকিয়ে রাখা।
অথবা শেষমেষ বলবে, তোর আর কলেজে যাওয়া হবেনা তোর কলেজ বন্ধ।

অথবা একটা কাজ করতে পারে, দুজনে ঘরে ঢোকার পরেই ঝরনা আমাকে বেদম পিটাবে। এমন পেটানো পেটাবে নিতম্ব পুরো লাল করে ফেলবে। পিঠে খামচির দাগ বসিয়ে দেবে। আরো কত কি যে করবে কে জানে। ঝগড়া তো আছেই মাশাল্লাহ।

ব্যাস তাহলেই হয়েছে কাহিনী।

ক্লাসের মধ্যে ওই মেয়েটার দিকে আমি তাকাই নি। ক্লাস শেষে সোজা ঝর্ণার কাছে এসে বাসার জন্য রিক্সায় উঠে গেছি।

রিকশায় বসে আছি দুজনে। ঝরনা অবশ্য আমার সাথে লেগে বসে নেই। ও একদিকে সরে বসে আছে। তাকিয়ে আছে অন্যদিকে। আমি এখনই বুঝতে পারছি বাসায় যাওয়ার পরে আলামত আমার খারাপ হতে পারে।
আমি তখন করলাম, ঝরনার বাহুর ভিতরে আমার হাতটা ঢুকিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম। ঝরনা এমনভাবে একটা ঝাঁটকী মারল। আমার জান বলতে গেলে ওখানে খুলে পড়ে গেছে।

চলবে

Written by-Ibna Imtiaj (Abdullah bin imtiaj)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here