ঠোঁট ষোল,

0
313

#ঠোঁট

ষোল,
আমি চিরকুটের লেখা দেখে তখনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।আমি ভেবেছিলাম মেয়েটা হয়তো এই নোট দেওয়ার পর থেকে আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ কিংবা কথা বলতে আসবেনা অথবা আমাকে মারাত্মকভাবে ইগনোর করে চলবে। কিন্তু মেয়েটা আমাকে সরাসরি এই চিরকুটে লিখে দিয়েছে যে, দুপুরে আপনার সাথে লাঞ্চে যাব। যে করে হোক ম্যানেজ করে নেন।

আমি রাগে গজগজ করে উঠলাম ভেতর থেকে। ওকে আমি দিতে চাইছি ছাতার কাপড়, আর ও কি না পুরো ছাতাটা নিয়ে যেতে চাইছে। এটাতো আমার জন্য দেওয়া সম্ভব না।

আমি তখন সামনের দিকে তাকিয়ে জোরে করে বললাম। আমার জন্য এটা সম্ভব না।

আর আমি তখন এটাও বুঝে ফেলেছি যে, ও আমার দিকে স্পষ্ট ভাবে তাকিয়ে আছে। সুতরাং সে আমার উত্তরটা খুব ভালো করেই পেয়ে গেছে।
সেই দিনের মত ক্লাস করে বাসায় চলে গেলাম। এরপর থেকে আমি নিজে হালকা টুকটাক কথা বলতাম তার সাথে। আস্তে আস্তে তার নাম তার ঠিকানা ও তার বাবা কি করে তার সবকিছু জেনে নিচ্ছিলাম।
কিন্তু আমি যা অনুভব করতে পারছিলাম। তার চলাফেরা ও কথার মধ্যে কিছু কোড আছে। যে কোডটা কোন অক্ষর কিংবা কোন শব্দ নাই।এই কোডটা হল আন্ডারকভার এজেন্সি কিংবা আন্ডারগ্রাউন্ডের কোনো এজেন্ডা কথার মধ্যে ব্যবহার করে থাকে। যেটা কে বোঝায় কথার মধ্যে পরিমাপ কিংবা কথার সাধুকতা। এই পরিমাপের বাহিরে কোন কথা বলা যাবে না।
তাকে নিয়ে দিন দিন আমার সন্দেহ করছিল। আর আমার মনে হচ্ছিল। আমি তার সাথে যতটাই মিশছি , ততটাই নিজেকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছি।

এভাবে সবার অজান্তে চলতে থাকে তার আর আমার সম্পর্ক। আমার দিকে না বুঝে ঝরনা, আর তার দিকে না বুঝে অন্য কেউ। কিন্তু আমি মিশছি আমার স্বার্থের কারণে। যেটা উদ্ধার না করতে পারলে আমার অনেক কিছু ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

তবে আমি জানি না এই খেলাটা খেলে ভুল করছি নাকি ঠিক করছি।

সামনে এইচ এস সি পরীক্ষা। খুব জমিয়ে পড়ছিলাম। এই পড়ার চাপে কারণে বিভিন্ন জায়গায় আমার অনেক ধার বাকি হয়ে গেছিল। আর এই ধার বাকি শোধ করার জন্য আমাকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছিল রাধিকা। হ্যাঁ মেয়েটা নাম রাধিকা। তবে এটা তার আসল নাম নাকি নকল নাম সেটা আমার জানা নাই।

তার সাথে লেনদেন করতে করতে আমার যখনই টাকা লাগত আমি তখন তার কাছে হাত পেতে বসতাম। আর ও আমার মুখ থেকে টাকা চাইতে দেরি, কিন্তু ও টাকা বের করতে দেরি করত না।এমনকি যে অংকের টাকায় আমি চাইতাম সে অংকের টাকাটা আমাকে দিতো। এই কারণগুলো আমার মারাত্মক সন্দেহ তো। কারণ আমিও একজন ট্রেনিংপ্রাপ্ত এজেন্সির এজেন্ট।

পরীক্ষাটা আমি খুব ভালো করে দিলাম। কারন আমার সাপোর্ট ছিল ঝরনা।এত কিছুর পরেও তাকে আমি কখনো ভালোবাসা দিতে অবহেলা করিনি। অন্যদিকে গেম খেলছি,কিন্তু তার ভালোবাসায় আমি কোন কমতি না রেখে সম্পূর্ণটাই দিচ্ছি।যাতে ও কোনদিন বুঝতে না পারে কিংবা বলতে না পারে আমি সবকিছু ছেড়ে আসার পরেও আপনার কাছে আমি ভালোবাসা তেমন ভাবে পাইনি।

ঝর্নাকে আমি একদিন বলি। বিয়ের পরে আপনার সাথে আমার হানিমুন যাওয়া হলো না। দুইটা বছর কেটে গেল। না ঘুরেছি আপনাকে নিয়ে না আমি ঘুরেছি। সেজন্য আপনাকে বিপুল বিপুল বিপুল ভালোবাসা দিতে হানিমুনে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম।
রাজি আছেন?

ও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। মনে হচ্ছে যেন আমার কথাগুলো গভীরভাবে গিলছে।

ও আমার কথার উত্তর না দিয়ে উল্টো আমাকে প্রশ্ন করল।

এত তাড়াতাড়ি বাচ্চার বাবা হয়ে যাবেন। তাহলে কি আমি আমার বাবাকে দেখাতে পারবো না?

তারা এমন প্রশ্ন শুনে আমার ভিতর চুপসে গেল। মুখটা আমি ফ্যাকাশে করতে যেও করিনি।
মুখের মধ্যে হাসি টেনে তাকে বললাম।
ধুর পাগলী, এতদিন আদর করলাম। কই আমি কি আপনাকে মা বানিয়ে ফেলেছি। হানিমুনে গেলে কি আপনাকে মা বানিয়ে ফেলবো এটা কেমন কথা। মন মেজাজ একটু ঘুরতে চায় না। সেই জন্য আপনাকে ঘুরতে নিয়ে যাব।

কিন্তু এখানে অনেক টাকা পয়সার ব্যাপার আছে। এখন থাক। আপনি অনার্স কমপ্লিট করেন। তারপরে অনেক টাকা পয়সা হবে। তখন আমাকে নিয়ে যত খুশি যেখানে ইচ্ছা ঘুরতে নিয়ে যাবেন। এখন আপাতত এই সময় গুলো আমাকে দিন। দুটো বছর আপনার খেটেছি। এখন চব্বিশ ঘন্টা আমাকে আদর দিয়ে এসব পুষিয়ে দেবেন। অনেক আদর পাওনা আছে আপনার কাছে আমার।শুধু পড়ার জন্য আর ক্লাসের জন্য কলেজ এর জন্য আপনাকে কিছু বলিনি। এখন প্রতি ঘন্টায় প্রতি মিনিটে ওসব চুকিয়ে দেবেন।

আমি মনে মনে হাসছি। ভেবেছিলাম, ঝরনা হয়তো এই দুই বছরে কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রথম কয়েক দিনের মতো উষ্ণতার মধ্যে আর পাব কিনা সন্দেহ ছিল। কিন্তু ও যে সব রস কস জমিয়ে রেখেছে ভেতরে আমার জন্য। সেটা তো আমার মধ্যে বিন্দুমাত্র চিন্তা ছিল না। এমনকি জানতাম না আমি।
তবে ভেতরে ভেতরে একটি পরিকল্পনা করলাম। যেটা ওকে সারপ্রাইজ হিসেবে দিব ভাবছি। আর যাই হোক, আমার জন্য যথেষ্ট বন্দি হয়েছিল এত দিন। ওর ঘোরার প্রয়োজন। হয়তো আমার টাকা-পয়সা দিকে তাকিয়ে বলছে না। কিন্তু তাকে সারপ্রাইজ হিসেবে দিতে ক্ষতি কি আমার।

আমি সেই জন্য রাধিকার কাছে টাকা চাইতে গেলাম। কিন্তু রাধিকা আমাকে উল্টো একটা প্রস্তাব দিয়ে বসলো। ও আমাকে বলল। দুজনে একটা ব্যবসা দাঁড় করাবে। সবাই জানবে ব্যবসাটা আমার। কিন্তু এর মধ্যে শেয়ারে রাধিকা ও থাকবে। তবে আমি রাধিকাকে বললাম। এমনিতে আমার কাছে এখন টাকা নেই। তার উপর আমি এত বড় ইনভেস্ট করতে পারব না। ও আমাকে যা বলল।
ব্যবসার টাকা সে সম্পূর্ণই দিবে। কিন্তু মালিকানা থাকবে আমার। আর সবার অজান্তে সে শেয়ারের ভাগ পাবে।

ব্যাপারটা আমার কাছে মন্দ লাগলো না। আমার তখন অবস্থা হয়ে গেছিল, আমি কিছুক্ষণের জন্য তাকে বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। কারণ তার কথাগুলোর ভাঁজ ছিল একদম বিশ্বাস করার মতো।

সে আমাকে পরেরদিনেই ডাকলো টাকাগুলো নেওয়ার জন্য। কোন নোট বা চেক দিবে না, সরাসরি ক্যাশ। আর ব্যবসাটা ছিল হচ্ছে ক্যাফে, সাইবার ক্যাফ। আর টাকার অংকটা আসলেও অনেক বড় ছিল ,প্রায় দশ লাখের মতো। আমি কোন কিছু না ভেবে বিশ্বাস করে তাকে হ্যাঁ বলে দিলাম। আমি পরের দিন তার সাথে টাকাগুলো আনতে যাব। আর সে আমাকে অমুক জায়গা থেকে নিয়ে যাবে।
এই ব্যাপারটা আমি ঝর্ণাকে ও জানালাম না।

তবে আমার সাথে এখন যা ঘটতে যাচ্ছে, তা হল। তীরের মুখে যখন পড়া হয়, আর সে যদি কোন গাছের সাথে দড়ি বন্ধন অবস্থায় থাকে। তাহলে সেই তীরের গতি কিংবা রেখা বদলানো যায় না। সেটা সেই মানুষের গায়ে গেঁথে যায়।
আমার অবস্থা এখন ঠিক তেমনি হয়েছে।
পরের দিন যে ঝরনার সাথে আমার শেষ দেখাও হতে পারে এই ধারণা কিংবা চিন্তাটা আমার মাথায় আসেনি। আমি তখনও বিশ্বাসের উপরে অটল ছিলাম। যে, হ্যাঁ রাধিকা আমাকে মোটা অংকের টাকা দিবে ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য। আর আমি সেই টাকা দিয়ে সত্যিই কোন ব্যবসা শুরু করব।

সেই দিন মনটা আমার খুব ভাল ছিল। ঝর্নাকে আমি একের পর এক বিশাল সারপ্রাইজ দিয়ে তাকে চমকে দিব। এই ভাবনাটা ভাবল ভিতরে আমার যা আনন্দের জোয়ার বইছে তা বলে বোঝানো সম্ভব না।

সেই দিন রাত্রে আমি ঝর্ণাকে পাগলের মত উষ্ণতায় মাতিয়ে দিয়েছিলাম।তার ঠোট নিয়ে এমন খেলায় মেতে উঠে ছিলাম যেন ছাড়তে ইচ্ছা করছিল না আমার। রসে জবজব করে ভিজিয়ে দিয়েছিলাম তার দুই ঠোঁট।
তার নগ্ন বুকে আঁচড় বসিয়েছিলাম আমার হাতের। কামড়ের দাগ লাগিয়ে দিয়েছিলাম নাভির নিচে।
যেন এক অন্যরকম উষ্ণতায় পেয়েছিলাম আমি তখন। যার কোন শেষ হচ্ছিল না।

পরেরদিন সকালবেলায় দুজনে নগ্ন অবস্থায় ঘুম ভাঙ্গে। ঠোঁট দুটো মিলিয়ে আদর দেয় আমাকে ঝর্ণা। কি হাসিমাখা মুখ তার। কিন্তু এই হাসিটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগলো।মনে হচ্ছিল এরকম হাসি আগে কখনো দেখেনি কিংবা আজ শেষ অথবা প্রথম দেখছি। হঠাৎ করে মনটা খারাপ হয়ে যেতে যেতে শুরু করল। কিন্তু খারাপ হতে দিই কি করে।
এখন তো আমি ভালোবাসা তে লিপ্ত হয়ে আছি। সঙ্গে তার রস রসে উষ্ণতা।

আমি তখন ঝর্নাকে বলে বসলাম।
আজ আপনার হাতে গরম গরম বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে। মানে আপনি রান্না করবে না সেটা আমি খাব।
ঝরনা খুশিতে খুশিতে রাজি হয়ে যায়।

সকালবেলায় দুজনের নাস্তা করে গল্প করছিলাম। তবে আজ বিরিয়ানি খেতে চেয়েছি বলে তার কাজ টা একটু বেশি। সেজন্য সে বলছিল তাকে এখন কাজের জন্য ছেড়ে দিতে।
আমি ও বাহিরে যেতে চাইলাম কিছু কিনে আনার জন্য। আসলে তো যাচ্ছি টাকাটা আনার জন্য।

তবে গেটের কাছে যখন তার কাছে বিদায় নিতে আসলাম আমি যাচ্ছি বলে। সে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখলো। ওর মুখটা হঠাৎ করে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আর অজান্তেই বলে বসলো, আমার ভালো লাগছে না। খুব তাড়াতাড়ি আসবেন।

আমি তখন তাকে হেসে বললাম। আরে নিশ্চয়ই আর বেশি দেরি হবে না আমি যাব কিছু কিনব আর চলে আসব।

ও তখন জোর করে আমার ঠোঁটের উপরে চুমু খেয়ে দেয়। ভিজিয়ে দেয় একদম। তবুও যেন তার মুখ থেকে ফ্যাকাশে রংটা সরছিল না।

আমি হাসতে হাসতে চলে গেলাম।

তবে সামনে যে আমার সত্যিই কোন একটা বিপদ অপেক্ষা করছে কি না। আমি তখনো জানি না। ঝরনার ব্যবহারটাও আমার খুব ভালো লাগলো না। এটা ভাবলে বুকটা আমার ব্যথা হয়ে উঠছে।
জানিনা এখনও কিছু ,কি হতে যাচ্ছে।

চলবে*

Written by-Ibna Imtiaj

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here