#ঠোঁট
চোদ্দ,
মাঝরাতে আমি আর ঝর্ণা দুজনে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার ঘুম বরাবরের মতই হালকা ছিল।তবে কোন একটা কারণে সেই সময় আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি তখন ঝর্ণার বুকে হাল্কা ভাবে হাত বুলিয়ে দিতে থাকি। ও ঘুমের মধ্যে আমার হাতটা চেপে ধরে তার বুকের সাথে।ঠিক এমন সময় বাহির থেকে আচমকা কোন একটা কুকুরের শব্দ ভেসে আসে। তবে এটা আসল কুকুরের শব্দ নয়। কোন একটা সংকেত। যা আমার কাছে খুব পরিচিত শব্দ বা সংকেত মনে হচ্ছে। আমি খুব অবাক হয়ে যায়। আজ রাতে হঠাৎ করে এই শব্দ টা আবার কেন আসছে?
আমি তখন ঝরণার বুকে হাল্কা করে চাপ দিয়ে উঠে পড়ি। বারান্দায় গিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করি।শব্দ টা আসলেই কি কোনো সংকেতের জন্য নাকি কেউ কাউকে কোন হবে ডাকছে।
কিন্তু না আমার ধারণাটা সঠিক। এই ডাক এবং সংকেত আমার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এতক্ষণ ধরে।
তবে যেই লোকটা বাসার সামনে থেকে এমন শব্দ করছিল। সে যখন দেখলো আমি বারান্দায় এসে গেছি। ঠিক তখন একটা সাদা কিছু ছুড়ে মারে আমার বারান্দার দিকে। আর সেটা আরেকটু জন্য আমার মুখে লাগতে যেও লাগেনি। তবে সেটা পাশে গিয়ে পড়েছে
আমি সেটা হাতে তুলে নিলাম। সেটা একটি কাগজ। আর ভেতরে একটি ছোট্ট ইটের ঢেলা।
কাগজটা খুলে দেখি। ভিতরে মাত্র কয়েকটা শব্দের কিছু লেখা আছে।
সেগুলো হলো-
তোমাকে পরীক্ষা শেষ পর্যন্ত সময় দেয়া হলো। এর মধ্যে তুমি যদি আত্মসমর্পণ না করো।তাহলে পরীক্ষার পরে তোমার জান নিয়ে টানাটানি হয়ে যাবে।
আমি কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলাম। তবে এই স্বস্তি আমার কাজে লাগলো না।
আমি তখনই কাগজটা বাথরুমে নিয়ে যেয়ে ফ্লাশ করে দিই। যেন এই কাগজের আর সেই লেখাটার কোনো অস্তিত্বই না থাকে।
তারপর মুখ ধুয়ে এসে ঝরনার পাশে মাথা এলিয়ে দি। শান্তি পাচ্ছিলাম না কিছুতে। এর মধ্যে ঝরনা ঘুমন্ত চেহারাটা বেশ কয়েকবার দেখা হয়ে গেছে আমার। তবুও তার দিকে কোন টান পাচ্ছি না ভেতর থেকে। একবার ভেবে দেখলাম। এখন যদি তাকে উষ্ণতার জন্য পাগল করে দি, তাহলে কি ভেতরের অস্বস্তিটা কাটতে পারবে।
মনে হয় না।
তবুও তার বুকটা নগ্ন করে ফেললাম। আদর দিতে থাকলাম ধীরে ধীরে। এক পর্যায়ে ঝরনার ঘুম ভেঙে যায়।
ঝরনা তখন আমার মুখের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে।
আপনি ঘুমাননি?
ঘুমিয়ে ছিলাম তবে ভেঙ্গে গেছে।
তাহলে কি এখন আমাকে লাগবে ভাবছেন?
আপনাকে আমার সব সময় লাগে। আপনি হয়তো বুঝেন না তাই।
আহারে আমার ভালোবাসাটা রে। আচ্ছা বুক থেকে কাপড় সরিয়ে ফেলছি। আসেন বুকে ঘুমাবেন।
আমি আর তখন কোন কথা বাড়ালাম না। কারণ বুঝতে পারছি আমি আর কিছু করতে পারবো না। ভেতর থেকে কোন টান আমি আর পারছি না। সুতরাং তাকে উত্ত্যক্ত করে আমার কোনো ফায়দা হবে না।
আমি তখন লক্ষ্মী সোনার মতো তার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করি অনেকক্ষণ ধরে।
কোন এক পর্যায়ে তার নগ্ন বুকে আমি ঘুমিয়ে যাই।
তারপর থেকে দিন আসে রাত যায়। সময়ের বিবর্তনে আমিও কিছুটা ভালো হয়ে আসি। আবার সেই খুনসুটিতে মেতে উঠি ঝরনার সাথে। ভালোবাসায় মাঝে মাঝে তলিয়ে নিয়ে যায় অনেক গভীরে। কখনো কখনো উষ্ণ তাই মেতে উঠি তার খোলা পিঠে। কখন আবার নগ্ন বুকে। কখনো বা তার ভেজা দুই ঠোটের ভিতর।
এভাবে দেখতে দেখতে প্রায় একটা বছর শেষ হয়ে আসতে চাই।
কিন্তু বছরের শেষের দিকে আমি বলতে গেলে সবার সাথে একদম ফ্রী হয়ে যাই। এখন অনেকেই আমার বন্ধু হয়ে গেছে। কেউ কেউ নোটের ধান্দায় বান্ধবী ও হয়ে গেছে। তবে ক্লাসে আমি ভালো ছাত্র ছিলাম। সব কারণ এর পেছনে ঝর্ণা আছে। সে যদি পাশে না থাকতো তাহলে এতো ভালো ছাত্র হতে পারতাম কিনা সন্দেহ আছে।
তবে এত কিছুর ভিড়ে ও সে মেয়েটা আমার পিছু ছাড়তো না। ওর চাহনি কিংবা কথা বলার ধরন গুলো আমার খুব চেনা চেনা লাগতো। কিন্তু আমি কখনো মনে করতে পারতাম না। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় একে আমি আগে কোথাও দেখেছি। কিন্তু কোনদিন কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করিনি আপনাকে আমি এর আগেও কোথাও না কোথাও দেখেছি। কারণ ঝরনার কড়া নির্দেশ ছিল তার সাথে কথা না বলার।
তবে ঝর্নার কাছে এসে একদিন অনুমতি চাই আমার সাথে কিছু কিছু সময় কথা বলার জন্য।আর সেই কথাগুলো নোট কিংবা পড়াশোনা মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। যদি সমস্যা হয় তাহলে ঝর্না নিজেই সামনে থাকবে।
ঝরনা ঠান্ডা মাথায় অনুমতি দিয়ে দিলেও আমি তাকে কোনভাবে পাত্তা দিতাম না। আমার সন্দেহ হতো তাকে।
কিন্তু ঝরনা অনুমতি দেওয়ার পর থেকে তার সাথে আমার কথা টুকটাক হতে থাকে। আমি কেমন আছি না আছি। বাসায় ঝরনার সঙ্গে আমার সময় কেমন কাটে। সে আমাকে কতটা ভালোবাসে। কতটা আমি তাকে ভালবাসি।
কথাগুলো এতো দূর পর্যন্ত গড়িয়ে যায়।
তবুও আমি চেষ্টা করতাম কোন না কোন ভাবে কথাগুলো আমাদের মধ্যে যেন সীমাবদ্ধ থাকে।কিন্তু মেয়েটা আমাকে কোন সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাখতে দিত না।
এই সীমাবদ্ধতা যেন সে লুফিয়ে নিতো নিজের সময় মনে করে। এটা আমার কাছে খুব অস্বস্তিকর অবস্থা লাগতো।
একদিন ক্লাসের মধ্যে আমার কাছে মেয়েটা কিছু নোট চাই যেগুলো ঝর্ণা নিজে করে দিয়েছে আমাকে।
আমি তখন তাকে বলি, আজকে দিতে পারব না কারণ আজকে আমি নিয়ে আসিনি কালকে দিব তোমাকে।
ও এ কথার উত্তর না দিয়ে আমাকে বলে। ক্লাস শেষে সরাসরি বের হয়ে যাবেন না আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আমি আমার চোখ মুখ রাঙ্গিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে।
তবুও বললাম ঠিক আছে অপেক্ষা করব।
ক্লাস শেষে তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম গেটের বাইরে। সে আমার দিকে তখন মুচকি হাসি হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছিল।
কাছে এসে সরাসরি বলে। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করব?
হ্যাঁ করতে পারো।
ইসলামে কি দুটো বিয়ে করা কিংবা তার অধিক বিয়ে করা জায়েজ নাই?
আমি তার এমন প্রশ্ন শুনে আকাশ থেকে পরি।
আচমকা সুরে বলি।
কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
না তেমন কিছু না। এমনি এই প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে করছিল তো তাই আপনাকে দাঁড়াতে বলেছিলাম।
আমি তখন উত্তর না দিয়ে সোজা হন হন করতে করতে বের হয়ে যায়। তারপর ঝরনা কে নিয়ে সোজা বাসার দিকে।
সেদিন বাসায় যাওয়ার পরে ঝরনার সাথে রাগের মাথায় উষ্ণতায় মেতে উঠি। যেন আমার শরীরে উপর রাগ জমে গেছে। আর সেই রাগটা ঝাড়ছিলাম উষ্ণতার মাধ্যমে ঝর্নার উপরে।
রাগটা হলো আমার এই জন্য যে। আজ ঝরনার অনুমতির কারণে সেই মেয়েটা আমার মাথার উপরে উঠে বসতে চাইছে। সেটা মেয়ের কথাটা শুনলেই বোঝা যায়।
তারপরে বেশ কয়েকদিন আমার সামনে মেয়েটা আর আসেনি। শুরু হয় বার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে খুব ভালো রেজাল্ট করি আমি। পুরো কলেজে আমার একটা সুনাম বয়ে যায়। আর এর পুরো কৃতিত্ব টা ঝরনার জন্যই বলতে গেলে।
তারপর শুরু হয় আবার নতুন একটি বছর। এর মধ্যে আমি অনেক কিছু ভুলে গেছি কিংবা নতুন করে শুরু হতে যাচ্ছে আমার জন্য ।
তবে আর যাই হোক সুখে আছি।
বছরের শুরুর দিকে মেয়েটা একদিন হঠাৎ করে এসে আমাকে বলে।
একটা বছর হয়ে গেল। আপনার সাথে বলতে গেলে সবারই কোন না কোন ভাবে সাক্ষাৎ হয়ে পরিচয় হয়ে গেছেন। কিন্তু আপনার সাথে আমার কোন ভাবে পরিচয় হওয়া হয়নি।
সেই সুযোগটা কি আমাকে দেওয়া যাবে না?
আমি তার এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। কি উত্তর দিব তাকে।
আমি তখন কথা কাটানোর জন্য বলি।
আচ্ছা আজকে না হয় থাক কালকে আপনার সাথে কোন এক সময় কথা বলব।
ও তখন আমার উত্তর শুনে মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়।
তবে পরের দিন ও সকালবেলায় আমার আগে এসে কলেজ গেটে দাঁড়িয়ে ছিল।
আমি আর ঝর্ণা যখন রিকশা থেকে নামছিলাম।
তখনই মেয়েটা দৌড়ে এসে ঝরনার সামনে দাঁড়িয়ে ঝর্ণাকে সালাম দেয়।
তারপর ঝরনার হাতে ছোট্ট একটি বাক্সের মধ্যে কিছু একটা ধরিয়ে দেয়।
ঝর্ণা তখন মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে।
এর মধ্যে কি আছে?
মেয়েটা হাসতে হাসতে বলে। আমি আপনাদের জন্য বিরিয়ানি রান্না করে নিয়ে এসেছি। শুধু আপনাদের জন্যই। হটপট এর ভিতরে গরম থাকবে। সময় করে খেয়ে নিবেন।
এমন কাহিনী দেখে ঝর্না একবার আমার দিকে আমি একবার ঝরনা দিকে বারবার চাওয়াচাওয়ি করি। ব্যাপারটা ঠিক কিছুই বুঝতে পারি না।
তারপর মেয়েটা ক্লাসের অজুহাত দিয়ে ভিতরে চলে যায়।
ঝরনার কাছে আমিও বিদায় নিই ক্লাসে যাওয়ার জন্য।
তবে দুটো ক্লাস শেষে হঠাৎ করে পিয়ন এসে আমাকে বলে। আপনাকে জরুরী ভিত্তিতে এখনই বাসায় যেতে হবে।
আমি এই কথাটা শুনে একদম চমকে উঠি। আতঙ্কে ঘিরে ধরে আমাকে।
চলবে*
Written by-Ibna Imtiaj