ঠোঁট বিশ,

0
357

#ঠোঁট

বিশ,
চারজন লোক হাতে দরি ও কালো কাপড় নিয়ে ভেতরে ঢুকে। আমি বুঝতে পারি যে আমাকে এখন বাধা হবে। কিন্তু বাধার পরে আমাকে কি করা হবে সেটা এখনো বুঝতে পারছিলাম না। তারা কাছে আসার পরে আমাকে চেয়ার থেকে খুব জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।একজন আমাকে উবু করে আমার পিঠের উপরে খুব শক্ত করে চেপে বসে। আর একজন চেপে ধরে আমার মুখ। আমার হাত বেঁধে দেওয়া হয় খুব শক্ত করে। মুখ আর চোখ বেঁধে দেওয়া হয় সেই কাপড় দিয়ে।তারপর আমাকে টেনে হিঁচড়ে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আমি বুঝতে পারছিলাম না। অনেকক্ষণ পরে আমাকে একটি জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। পাকা মেঝের উপরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল আমাকে।
হয়তো কোন একটি ঘর হবে।

তারপরে আমাকে খুব মারধর করা হয়। সম্ভবত ওখানে যারা ছিল তারা যে যেভাবে পেরেছে, গায়ের শক্তি দিয়ে মেরেছিল। আমার পড়ে জ্ঞান ঠিক থাকেনি। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। তারপর আমার সাথে কি করা হয়েছে আমি সেটাও বলতে পারবো না।

জ্ঞানটা আস্তে আস্তে ফিরতে থাকে আমার। খুব ধীরে ধীরে চোখ খুলছিলাম। কিন্তু তখন খেয়াল ছিল না যে, আমার চোখ বাঁধা। আমি চোখ খুলে ও কোন কিছু দেখতে পারবো না।
কিন্তু কানের মধ্যে আমি কিছু শুনতে পেলাম। বেশ অনেকটা দূরেই আমাকে নিয়েই সম্ভবত আলোচনা হচ্ছে। মেয়ের কন্ঠ ও আছে।

কিছুটা কান লাগিয়ে ভালো করে শুনতে চেষ্টা। তবে যতটুকু বুঝতে পারলাম। আমাকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। তবে আজকে নয়। আগামি কালকে। কিন্তু মেয়েটা কোন ভাবে না কোনোভাবে বোঝাচ্ছিল, আমাকে এখানে রাখা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।

হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম এই কন্ঠটা আমার চেনা পরিচিত। চেনা পরিচিত বলতে আমি বেশ কয়েকদিন এই কন্ঠের সাথে মিশেছি।
হালকা হালকা কারো নাম ও চেহারা মনে পড়লেও পুরোপুরি আমার মনে পড়ছে না তখন। মার খেয়ে আমি প্রায় অনেকটা অচল হয়ে পড়েছি। মগজ ধোলাই করতে পারছি না নিজের ভিতর।

একজন লোক এসে আমার সামনে বলে। তোমার কি এখন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না কি আমরা যা খেতে দেবো তাই খাবে?

উত্তর নেওয়ার আগে অবশ্য মুখটা আমার খুলে দেওয়া হয়েছিল।

আমি তখন বললাম, একটা সিদ্ধ ডিম চার গ্লাস গ্লুকোজ। আর রুই মাছের মাথা দিয়ে ভাত।

লোকটা একটা ” টু ” শব্দ পর্যন্ত করলো না।
যা খেতে চেয়েছিলাম। তা সব কিছু এনে দিলো প্রায় আধা ঘন্টা কিংবা তার চেয়ে একটু বেশি সময়ের মধ্যে।

আমার সামনে খাবার এনে আমার চোখ আর হাত খুলে দেওয়া হয়। চোখ খুলে পড়ে অনেকটা মাথা ঘুরে উঠলো আমার। তবুও নিজেকে শক্ত করে বসিয়ে রাখলাম।

লোকটাকে আমি সময় জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু সময় শোনার পরে আমার ভিতরের রক্ত গুলো যেন বাহিরে ছিটকে বের হয়ে আসতে চাইছিল।

তখন সময় প্রায় সকাল দশটা ।

আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমার জ্ঞান কি তাহলে এতক্ষণ ছিল না।
কিন্তু আসলে তা নয়।

লোকটি আমাকে সব খুলে বলে। আমি গতকাল রাত্রে যে মহিলা কিংবা মেয়েটার সাথে ওরকম ব্যবহার করেছি। সে হলো ভারতীয় এক এজেন্সির এজেন্ট। আমার কাছে বেশ কিছু তথ্য আছে যেগুলো ওদের জন্য খুব জরুরী। এমনকি সে অনেক বড় অফিসার লেভেলের একজন। আর আমি তাকে মেরেছিলাম।আর তার সেই রাগটা আমার উপরে পুরোপুরিভাবে ঝাড়ার জন্য তার লোক পাঠিয়ে আমাকে মারধর। তারপর যখন আমার জ্ঞান হারিয়ে যায়। তখন সে কৌশলগতভাবে আমার উপরে একটা ইনজেকশন প্রয়োগ করে।আসলে তার ইচ্ছা ছিল সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমাকে চুরি করে নেওয়া। কিন্তু আমি তো বাংলাদেশী এজেন্সির হাতে বন্দি। সুতরাং বাংলাদেশি এজেন্সিত চাইবে না আমাকে সিকিউরিটি দিয়ে ফেলে রাখতে। আর সেই জন্য আমাকে চুরি করা তাদের পক্ষে কোনো ভাবে সম্ভব হয়নি।
বরং তারা চলে গেছে, এবং তারা চুক্তির মাধ্যমে নাকি আমাকে নিয়ে যাবে তাদের এজেন্সিতে।

আমি এ সব শুনে বুঝে গেলাম আমাকে নিয়েও এদের একটা বেচাকেনা চলছে।
এত কিছু না ভেবে আমি খেতে শুরু করলাম। আগে আমার শক্তি দরকার তারপর না হয় মাথা খাটাতে হবে।

খেতে খেতেই সে চিন্তা গুলো আমার, ভেসে উঠলো চোখের সামনে।
যখন আমি ইরানি এজেন্সিতে কাজ করতাম। তখন এই এজেন্সিকে ভারত ও তুর্কির এজেন্সি রা খুব ভয় পেত। কিন্তু কোনো এক গাদ্দার এর কারণে ইরানি এজেন্সির অনেকগুলো তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।যার কারনে ইরানি এজেন্সি বাংলাদেশ থেকে তাদের অফিস গুটিয়ে ফেলতে চাইছিল।কিন্তু তারা সবকিছু গুটিয়ে ফেললেও আমি কিছু ডাটাবেজ ও কোড লিস্ট সেখান থেকে সরিয়ে ফেলি। আর আমার এটাও জানা ছিল যে, যে গাদ্দারি করছে তার জন্য এটা অনেক বেশি জরুরী ছিল। আর এটা যদি সে না পায় তাহলে তার অনেক কিছুই অপূরণীয় থেকে যাবে।
ঠিক তাই হয়েছিল। ইরানি এজেন্সি নিজেকে গুটিয়ে ফেললেও তাদের শেষ যে ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল সেটা আর হয়নি। এদিকে ইরানি এজেন্সির মিশনটাও সাকসেস হয়ে গেছিল বাংলাদেশে।

কিন্তু আমার কাছে যেগুলো সংরক্ষণ করা ছিল সেগুলোর দাম কখনোই শেষ হয়নি। আমিও কোনো-না-কোনোভাবে চেয়েছিলাম এগুলো দিয়েই নিজের কোন একটা অবকাঠামো তৈরি করতে।
কিন্তু তার আগেই আমাকে এত বড় একটা বিপদে পড়ে যেতে হল।
জানি না ভাগ্যে আমার কি আছে।

এভাবে প্রায় দুটো দিন কেটে যায় কিন্তু সেই রুম থেকে আমার বাহির হওয়া হয় না।
আমার সাথে কি হবে তাও জানিনা।

ওদিকে ঝরনার অবস্থাও প্রায় অনেকটা কাহিল হয়ে গেছে। বিরিয়ানি রান্না করে সে এখনও অপেক্ষা করছে ইমতির জন্য। কাঁদতে কাঁদতে অনেকটা ভেঙে পড়েছে। ঝর্না বুঝতে পারছে না ইমতিকে কি বলবে সে আসলে। সেকি ঝর্নাকে ফেলে একদম নিজের উদ্দেশ্যে উধাও হয়ে গেল, নাকি কোথাও কোনো বড়সড় বিপদে পড়লো তাও ঠিক করতে পারছে না। অপেক্ষায় থেকে শুধু চোখের পানি ফেলছে।
নামাজে দাড়িয়ে অনবরত কেঁদে কেঁদে দোয়া করছে স্বামীর ভালোর জন্য। দুই দিন না খাওয়া শরীর তার। শরীরে শক্তি নেই। তবুও মনের ভয় বারবার বলছে খোদাকে। সে যেন জীবন থেকে না হারিয়ে যায়।

হয়ত প্রিয়তমা স্ত্রীর এই প্রবিত্র দোওয়াটাই কাজে লেগে যায়।

রাত তিনটার সময় ইমতি, হালকা ঘুমে বিভোর ছিল। হঠাৎ করে দরজা খুলে। দরজা খোলার পরে দেখে ,রাধিকা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

ইমতির ঘুম ভাঙার সাথে সাথে এতটাই রাগ তার মাথায় চেপে বসে। যেন সে খুন করে ফেলতে চাইছিল তখন।

কিন্তু রাধিকা হঠাৎ করে তার সামনে একটা কালো সুটকেস ও কয়েক পৃষ্ঠা কাগজ দিয়ে বলে তুমি আমার পিছন পিছন এস। ইমতি, কিছু বুঝে উঠতে পারে না। রাধিকার পিছন পিছন যায়।কিছুদূর যাওয়ার পরে রাধিকা দুজন লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। লোক দুটো ইমতিকে এখান থেকে বের করে দেওয়ার জন্য সাহায্য করবে। বের হওয়ার পরে চাবি সহ একটি গাড়ি পাবে‌
ইমতি।

ব্যাপারটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেল, ইমতির মনে হচ্ছিল সে যেন স্বপ্ন দেখছে এখন।
কিন্তু পুরো ঘটনাটা তার জন্য জানা এখন কোনভাবে সম্ভব না। একটু দেরি করলে অনেক বেশি দেরি হয়ে যাবে।

ইমতিকে নিয়ে সেই দুটি লোক হাটা শুরু করে। আর পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে যায় রাধিকা।ইমতি, পেছনে ঘুরে তাকায় একবার। কিন্তু এই তাকানোর পরে যেই চেহারাটা সে দেখতে পায়। সেই চেহারা দেখে বোঝা যায়, অনেক না বলা কথা যেন থেকে গেল।
হাঁটতে হাঁটতে রাধিকা চোখের আড়াল হয়ে যায়।

গাড়ির সামনে চলে আসে তারা তিনজন। এর মধ্যে একজন লোক ইমতিকে বলে। সুটকেস এর ভিতর মোটা অংকের অনেক টাকা আছে। আর কাগজের ভিতর লিখে দেওয়া আছে রাধিকার অনেকগুলো কথা।
তুমি এখান থেকে সোজা দশ মিনিট গাড়ি ড্রাইভ করে বাম দিকের রাস্তায় চলে যাবা। তারপরে পেয়ে যাবা হাইওয়ে।
তখন তুমি নিজেই বুঝে যাবে তুমি কোন এলাকাতে ছিলে এবং এখন তোমার গন্তব্য কোথায়।

কথা শেষ করে লোক দুটো চলে যায় ইমতিকে একা করে।

ইমতি কিছুক্ষণ লোক দুটোর দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর গাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়।
আর কোন দিকে তাকায় না। গাড়ি চালানো শুরু করে সোজা ভাবে।

পাঁচ মিনিট গাড়ি চালানোর পরে হঠাৎ করে ইমতির মোবাইল বেজে ওঠে সুটকেস এর ভিতরে। নিজের মোবাইলের রিংটোন শুনে নিজেই যেন চমকে ওঠে।

চলবে*

Written by-Ibna Imtiaj

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here