তুমিময়_নেশায়_আসক্ত #পর্ব- ১২

0
630

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ১২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
নিজের চোখের সামনেই নিজের ভালোবাসার মানুষটি অন্য কারো হয়ে গেলো। ভাবতেই মাথা আগুন চড়ে যাচ্ছে আমানের।

আমান অস্ট্রেলিয়ার বিশাল একটা কক্ষে বসে মনোযোগ দিয়ে সামনের মনিটরে চোখ মেলে চেয়ে রয়েছে। মনিটরের স্ক্রিনে বড় বড় করে দেখানো হচ্ছে অয়ন এবং রিমির বিয়ের দৃশ্যটি। আমান ফুলের টবটা নিয়ে ছুড়ে মারে মনিটরের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙ্গে চুড়মাড় হয়ে যায়। আজ আমানের ছোট্ট একটা ভুল পদক্ষেপ এর জন্যেই সে তার রিমিপাখিকে হারিয়ে ফেলেছে চিরতরের জন্যে। কথাটি ভেবেই আমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

___________

রিমি হসপিটালের কেন্টিনে বসে আনমনে কিছু ভেবে চলছিলো। জয়িতা রিমির পিঠে হাত চাপড়ে বসে পড়ে। রিমির কোন হেলদোল নেই। সে নিজের জগতে বিভর। তার অর্ডারকৃত কফিটি যে ঠান্ডা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে সেইদিকে তার খেয়াল নেই। শীতের সকাল তার মধ্যে গরম ধোঁয়া উঠা কফি। ব্যাস আর কি চায় তখন? জয়িতা নিজের জন্যেও অর্ডার করলো একটা কফি। বেশ তৃপ্তির সাথে কফিটা পান করলো সে। তাদের ক্যান্টিনের কফিটা বেশ মজাদার। ক্যান্টিনের ছেলেটা ঢিলাঢিলা পোষাক পড়ে আছে এতো শীতের মাঝেও। যদিও শীতে কাঁপছে কিছুটা তবুও কি সুন্দর চমৎকার হাসি ফুটিয়ে সবাইকে সবার অর্ডারকৃত খাবার পরিবেশন করছে। জয়িতা সকলের দিকে একপলক তাকিয়ে,
রিমির দিকে তাকিয়ে রিমির মতিগতি বুঝার চেস্টা করলো কিন্তু বরাবরের মতো জয়িতা ব্যর্থ। জয়িতা রিমির কাধে হাত রেখে বললো,

‘ কি ভাবছিস এতো? ‘

রিমি এইবার খানিক্টা নরেচড়ে বসলো। সামান্য কেশে জবাব দিলো,

‘ মা ফোন করেছিলো রে। কেমন সংসার করছি জিজ্ঞাসা করছিলো। জামাই নিয়ে কেন আসছি না তা নিয়েও কথা বলছিলো। মামুর শরীরটাও ভালো না। আমাকে দেখতে চাইছে খুব। সঙ্গে উনাকেও নিয়ে আসতে বলছে। ‘

‘ তা তুই কি বললি জবাবে? ‘

জয়িতার সোজা প্রশ্ন। রিমি কফির কাফে চুমুক দিতে দিতে বললো,

‘ বলেছি সুখেই আছি। উনি এখন ব্যস্ত তাই আসতে পারবে না। আমি এসে দেখা করে যাবো। আমার বড্ড ভয় হচ্ছে রে। মা এবং মামা যখন জানবে আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে কয়েকদিন এর মধ্যে। এমনকি উনার বিয়েও কয়েকদিন পর। তখন কি হবে রে? আমি কি জবাব দিবো তখন তাদের? ‘

জয়িতার রিমির কথা শুনে মুখ পানশে হয়ে গেলো। মুখ কালো করে জবাব দিলো,
‘ সেইটা তো তোর এই বাড়িতে আসার আগে ভাবা উচিৎ ছিলো। আংকেল আন্টি তো সব জেনেই যাবে। তখন কি করবি? কীভাবে লুকিয়ে রাখবি সব? ‘

রিমির হঠাৎ কফি কাপটা রেখে দিলো। কান্না এসে তার গলায় দলা পাকানো শুরু করলো। কান্নাকে কোনরকম নিয়ন্ত্রন করে অভিমানের সুরে বলে উঠলো,

‘ আজ যদি আমান আমাকে ছেড়ে চলে না যেত। তাহলে এই দিনটা কখনোই দেখতে হতো না রে। আজকে যা সব হচ্ছে সবকিছুর মুলে রয়েছে আমান। আমান কখনো আমার সামনে এলে আমি আমানকে প্রশ্ন করবো ও কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলো? আমানকে আমার সেই প্রশ্নের জবাব দিতেই হবে। আজ যা হচ্ছে সব আমানের জন্যে। আমানকে কখনো আমি ক্ষমা করবো না। ‘

শেষের কথাটি একপ্রকার বিড়বিড় করে আওড়াতে আওড়াতে রিমি উঠে দাঁড়িয়ে চলে গেলো। জয়িতাও
ব্যাগ নিয়ে রিমির পিছনে পিছনে ছুটলো।

___________

অয়নকে চুপ থাকতে দেখে রুহানা চৌধুরী এইবার তেতে উঠলেন। ক্ষিপ্ত গলায় বলে উঠলেন,

‘ কি হলো অয়ন? উত্তর দিচ্ছো না কেন? আমি তোমার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করছি। ‘

অয়ন খুব৷ ভয়ংকরভাবে শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রুহানা চৌধুরীর পানে। রুহানা চৌধুরী ভরকে গেলেন। অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর ভর দিয়ে রুহানা চৌধুরীর দিকে ঝুঁকে খুবই শীতল গলায় জবাব দিলো,

‘ ট্রাস্ট মি গ্রেন্ডমা! আজকে তোমার জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো তাহলে আমার রিমিপরীকে সামান্য মেয়ে বলার অপরাধে তার অবস্হাও মিঃ শেখ এর থেকেও করুণ হতো। আর তুমি মিঃ শেখ এর কথা বলছো? সে আমাদের কিচ্ছু করতে পারবে না। সেই ব্যবস্হা করে ফেলেছি আমি। ‘

কথাটি বলেই বাঁকা হাঁসলো অয়ন। রুহানা চৌধুরীর অবিশ্বাসের নয়নের চেয়ে রইলেন অয়নের দিকে। এ তিনি কাকে দেখছেন? যার কথাতে অয়ন আগে উঠতো বসতো আজ সামান্য দুইদিনের মেয়ে রিমির জন্যে অয়ন তাকে শাসাচ্ছে। এইটাও সম্ভব? রুহানা চৌধুরীর কথার মাঝে তার ফোন বেজে উঠে। ফোন রিসিভ করে তিনি যা শুনেনে তাতে তার মাথা ঘুড়ে যাওয়ার উপক্রম! মি শেখের অবস্হা নাকি খুবই করুণ! প্যারালাইজড হয়ে গেছে কিন্তু মার খেয়ে কেউ প্যারালাইজড হয়ে যায়? রুহানা চৌধুরী অয়নের দিকে তাকাতেই, অয়ন আরেকদফা মুচকি হেসে বলে,

‘ কোন কিছুই অসম্ভব নয় গ্রেন্ডমা! আমার রিমিপরীকে রক্ষিতা বলার শাস্তি তো আজীবন পেতেই হবে। আমি চাইলেও পারতাম মেরে ফেলতে কিন্তু না আমি ওকে মারবো না। আমি ওর এমন অবস্হা করেছি যে সারাজীবন ওকে বন্ধ ঘরেই কাটাতে হবে। আমিও ডক্টর গ্রেন্ডমা। সবকিছুই ছোট্ট একটা ইঞ্জেকশন এর কামাল! আমি তো কিছুই করেনি।’

কথাটি বলেই অয়ন হেসে শিষ বাজাতে বাজাতে বাইরে চলে গেলো। রুহানা চৌধুরীর মাথায় হাত! এ কি করছে অয়ন? অয়ন তো দিনের পর দিন বদ্ধ উম্মাদ হয়ে উঠেছে প্রতিনিয়ত।

_________

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

রিমি এবং জয়িতা ক্লাসে ঢুকতেই শুনতে পায় ডক্টর আসিফকে নাকি হসপিটাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কথাটি শুনেই বেশ রাগ উঠে রিমির। এমনিতেই লোকটার এতো খারাপ অবস্হা করেছে অয়ন তার মধ্যে চাকরী থেকেও বের করে দিলো। এই লোকটা কি শুরু করেছে? কিছুক্ষন এর মধ্যেই একজন নার্স এসে জানায় ডক্টর এয়ারসি রিমিকে জরুরী তলব করেছে। কথাটি কানে আসতেই ক্লাসের সকলের রিমির দিকে কেমন করে তাকালো। যেন তাদের ভাষ্যমতে রিমির জন্যেই আজ তাদের আসিফ স্যার তাদের সাথে নেই। রিমি হতভম্ব হয়ে গেলো। জয়িতা মুচকি হেসে রিমির কানে ফিসফিস করে বলে,

‘ তোর বরের তলব এসেছে তাড়াতাড়ি যা। নাহলে ক্লাসের সকলের সামনে তোকে তুলে নিয়ে যাবে। ‘

জয়িতার কথা শুনে রিমির চোখ বড় বড় হয়ে যায়। সে মাথা নাড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেটে অয়নের কেবিনের সামনে যায়।

‘ মে আই কামিন স্যার? ‘

অয়ন মাথা তুলে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

‘ ইয়েস কাম! ‘

রিমি অয়নের কাছে গিয়েই রাগ দেখিয়ে বললো,

‘ কি শুরু করেছেন কি আপনি? পাগল লোক একটা। সাইকো পুরো সাইকো আপনি। মাথার চিকিৎসা করান। সামান্য একটা কারণে কেউ এতো কান্ড করে? আপনার জন্যে সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকাচ্ছিলো। ‘

রিমি আরো কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু বলতে দিলো না অয়ন। রিমির মুখ আলতো করে চেপে ধরে বলে,

‘ হুসসস! আর একটা কথাও নয়। অনেক বলেছো তুমি। সবাইকে নিয়ে প্রব্লেম তো? ওকে সেই সমস্যাও কালকে থেকে থাকবে না। ‘

অয়নের কথার মানে রিমি ঠিক বুঝলো না। রিমির ভাবনার মাঝেই অয়ন রিমির গালে আলতো করে অধর ছুইয়ে রিলো। রিমি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কেঁপে উঠলো তার ছোট্ট হৃদয় খানা। অয়ন রিমির কানের কাছে অতি শীতল গলায় বললো,

‘ ইউ নো রিমিপরী? তুমি যখন রেগে যাও। তখন তোমার মুখশ্রী লাল টমেটোর মতো লাল টকটকে হয়ে যায়। ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি। ‘

রিমি অয়নের দিকে তাকাতেই, অয়ন মন মানতো হাসি উপহার দিয়ে বলে,

‘ এইভাবে তাকিয়ে না রিমিপরী। বুকে গিয়ে লাগে তো। তোমার প্রতিটা চাহনী নেশার মতো আমাকে তোমার দিকে আকর্ষিত করে। ‘

……চলবে….?

[ ছোট কইবেন না🥴। সবাই কমেন্ত করেন কেমন হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে পর্বটি তাড়াতাড়ি লিখছি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here