তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ১০

0
617

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ১০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘যেই মেয়েটি কয়েকদিন পর তোমার প্রাক্তন স্ত্রী হবে তার জন্যে তোমার এতো দরদ উতলে উঠছে পড়ছে কেন অয়ন? তুমি কী ভুলে গেলে? কয়েকদিন পর আমাদের বিয়ে। ‘

ফুপিয়ে ফুপিয়ে কথাটি বললো পায়েল। অয়ন ল্যাপটপে বসে অফিসের কিছু কাজ করছিলো। কালকে তার হসপিটালে তেমন কোন জরুরী অপারেশন নেই, তাই অয়ন ঠিক করেছিলো কালকে রুহানা চৌধুরীর সাথে মিটিং এ যাবে,কিন্তু তখনি অয়নের অনুমতি ব্যতিত পায়েল অয়নের রুমে ঢুকেই ফুপাতে ফুপাতে কথাগুলো অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে। অয়ন পায়েলের কথা শুনে কপালে আঙ্গুল দিয়ে ঘষে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিয়ে, হঠাৎ পায়েলের খুব কাছে এসে,পায়েলের গলা চেপে ধরে
দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘ কতবার বলবো? ওই মেয়ে ওই মেয়ে করবে না। ও আমার রিমিপরী। মিসেস অয়ন চৌধুরী। সেইটা কি তোমার ডাফার মাথায় ঢুকেনা পায়েল? নাকি আমি ঢুকিয়ে দিবো? ‘

অয়নের হঠাৎ এমন আক্রমনে বিস্মিত হয়ে যায় পায়েল। হাত দিয়ে বার বার অয়নের হাতকে নিজের গলা থেকে সরানোর চেস্টা করছে কিন্তু সে ব্যর্থ।
পায়েলের মতো রোগা মেয়ে কী আর অয়নের মতো
সুঠোমদেহী যুবকের পেশিবহুল হাতকে সরাতে সক্ষম হবে? অয়ন পায়েলের গলা আরো চেপে ধরে। পায়েলের চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। চোখ দিয়ে নোনাজল গড়াচ্ছে। অয়ন যদি আরেকটু তার গলাটা চেপে ধরে তাহলে সে হয়তো মরেই যাবে। অয়ন কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,

‘ নিশ্চই সকালের ঘটনা ভুলেনি তুমি? আবার কোন সাহসে তুমি আমার সামনে আসো? আমার রিমিপরীকে ব্যাথা দিয়ে আবার তুমি আমার সামনে এসেছ। ওহ আই সি তোমার শাস্তিটা তো বাকি ছিলো। ভালোই হয়েছে। আমাকে তোমার কাছে যেতে হলো না বরং তুমি চলে এলে আমার কাছে। ‘

কথাটি বলেই অয়ন ভয়ংকরভাবে বাঁকা হাসলো। পায়েলের এইবার সত্যি ভয় ঝেঁকে বসেছে মনে। অয়নের পাগলামো সমন্ধে তার যথেষ্ট ধারণা আছে।যেই ছেলে সকলের সামনে গরম কফি ঢেলে দিতে পারে সে তো যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। পায়েল কথাটি ভেবে চলে যেতে চাইলে অয়ন পায়েলের হাত ধরে ফেলে। অতঃপর পায়েলের অতি নিকটে গিয়ে মুচকি হেসে অতি ঠান্ডা গলায় বলে উঠে,

‘ জানো তো পায়েল? একজন ডক্টর হওয়ার জন্যে রোজ অপারেশন করার সময়ে ছুড়ি দিয়ে কাটাছেডা করতে করতে, ছুড়ি দিয়ে খেলাটা এখন একটা বদ অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ‘

অয়ন কথাটি বলেই পকেট থেকেই একটা চিকন সুক্ষ্ম ছুড়ি বের করে। পায়েল তা ভয়ে কান্নাই করে দেয়। পায়েল জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে করতে বলে,

‘ কেউ আছেন? প্লিয হেল্প! কেউ কি নেই? ‘

অয়ন বাঁকা হেসে পায়েলের গালে হাত রেখে মধুর কন্ঠে কিছুটা ঠাট্টার ছলে বলে,

‘ কেন বেইবি? তুমিই তো সবসময় আমার কাছে আসতে চাইছিলে তাহলে আজ কেন এতো দুরুত্ব বলো তো? আমাদের মাঝখানে তুমি অন্য কাউকে কেন ঢুকাচ্ছো? ইটস নট ফেয়ার। আমি আমাদের মাঝে কাউকে ঢুকতে দিবো না। তাছাড়াও আমার রুম সাউন্ড প্রুফ তাই তুমি যতো ইচ্ছে চিৎকার করো কেউ শুনবে না। সো লেটস স্টার্ট দ্যা গেইম। ‘

কথাটি বলার সাথে সাথে অয়ন আর এক মুহূর্তও দেরী করেনা। পায়েলের হাত বরাবর ছুড়ি বসিয়ে দেয়। পায়েল নিজের রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘ অয়ন তুমি এইটা কী করলে? কালকে আমার ক্যানাডায় শ্যাুট আছে। আমি কালকে কি করে শ্যাুট করবো? ‘

অয়ন দায়সাড়া ভাবে উত্তর দিয়ে বলে,

‘ আমি কীভাবে জানবো? আমার রিমিপরীর নামে বাজে কমেন্টস করার আগে তোমার ভাবা উচিৎ ছিলো। ‘

পায়েল ব্যাথায় চিৎকার করে কান্না করতে থাকে কিন্তু তার আর্তনাদ শুধু অয়নের রুমের দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে।

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
_________________________

ফারহানকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে রিমি পিছাতে থাকে। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে তার। পালানোর সুযোগটুকুও এখনো নেই তার।

ফারহানকে এগিয়ে আসতে দেখে মেঘ হাঁসিমুখে রিমির হাত ধরেই, রিমিকে নিয়ে ফারহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ ভাইয়া তুমি আমাকে ডাকছিলে? ‘

ফারহানের চোখ যায় হঠাৎ রিমির পানে। কেমন বিস্মিত হতভম্ব নয়নে চেয়ে আছে রিমির দিকে। রিমি
ফারহানের সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে মাথা নিচু করে থাকে। রিমি প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এই মুহুর্তে বড্ড পানি খেতে ইচ্ছে হলো তার। শীতের মধ্যেও তরতর করে প্রতিনিয়ত ঘেমে চলেছে রিমি। মনে হচ্ছে সে বোধহয় কোন ভুতকে
দেখে ফেলেছে। রিমির দৃষ্টিতে ফারহান এখন তার কাছে ভুতের থেকে কোন অংশে কম নয়। যাকে বলে ভয়ংকর ভুত। বলিষ্ট দেহী বিশিষ্ট ফারহান নামক যুবকটি রিমিকে খানিক্ষন পর্যবেক্ষন করলো। অতঃপর আনমনে বলে উঠলো,

‘ জান্নাত তুমি? ‘

‘ জান্নাত ‘ নামটি শুনে রিমির হাত-পা দ্বিগুনভাবে কাপছে। ফারহানকে কী এতোবছর পরেও তাকে চিনে ফেললো। মেঘ এক পলক রিমির দিকে তাকিয়ে হেসে ফারহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ তুমিও না ভাইয়া? কাকে কি নামে ডাকছো তুমি?
ওহ তুমি তো রিমিপুর সাথে আগে দেখা করো নি। ওকে আমি পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি মিট মাই ভাবি মিসেস রিমি চৌধুরী। অয়ন ভাইয়া সবাইকে বলে দিয়েছে যে যতক্ষন পর্যন্ত রিমিপুর সাথে ভাইয়ার ডিভোর্স না হচ্ছে ততদিন রিমিপুর পরিচয় হবে সে ডক্টর এয়ারসির ওয়াইফ। বুঝলে ভাইয়া? ‘

মেঘের কথায় ফারহানের রিমিকে নিয়ে যা ধারণা ছিলো তার সমাপ্তি ঘটলো। রিমি স্বস্হির নিঃশ্বাস ফেলে। যাক ফারহান তাকে চিনতে পারেনি। ফারহান এইবার পকেট থেকে একটা বড় চকলেটের প্যাকেটটা বের করে মেঘের হাতে গুজে দিয়ে বলে,

‘ আজকে অফিসে যাওয়ার সময় তোর ফেভারিট চকলেটটা চোখে পড়লো। তাই কিনে রেখেছিলাম। ‘

ফারহান কথাটি বলে আর দাঁড়ায় না। ধীর পায়ে স্হান ত্যাগ করে। মেঘ চকলেটটার দিকে তাকিয়ে প্রাপ্তির হাসি হেসে বলে,

‘ জানো রিমিপু? আমার ফারহান ভাইয়া না চেঞ্জ হয়ে যায়নি। এখনো আগের মতো আছে। শুধু ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হয়তো আগের মতো করেনা কিন্তু এখনো তার বোনের জন্যে ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি। কেন যে সবকিছু চেঞ্জ হয়ে গেলো। একটা ঝড় সবকিছু শেষ করে ফেললো। ‘

কথাটি বলতে বলতে মেঘের চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। রিমি তা সযত্নের সাথে মুছিয়ে দিয়ে বলে,

‘ কেঁদো না মেঘ। আবারোও সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা। ‘

মেঘকে সান্তনা দেওয়ার জন্যে রিমি কথাটি বললেও,
রিমি খুব ভালো করেই জানে কিছুই ঠিক হবেনা।

______

রিমি বাগানের দোলনায় বসে ভাবছে তাকে যা করার খুব তাড়াতাড়িই করতে হবে। আজ ভাগ্যক্রমে সে বেঁচে গেছে কিন্তু ফারহান যদি তাকে চিনে ফেলে? তখন কি হবে? তখন তো সে যা করতে এসেছিলো তা করতেই পারবে না। রিমি আনমনে কিছু ভাবছিলো তখনি অয়নের উপস্হিতি রিমি নিজের পাশে টের পায়। অয়নকে এই মুহুর্তে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় রিমি। রিমির এমন ঘাবড়ে যাওয়া দেখে অয়ন রিমির দিকে ঝুঁকে ভ্রু কুচকে বলে,

‘ রিমিপরী আমার দিকে তাকাও! কি ভাবছো তুমি? ‘

রিমি তাকায় না বরং নীচের দিকে তাকিয়ে থাকে। অয়ন খানিকটা গম্ভীর সুরে বলে,

‘ জানো রিমিপরী? মানুষ তখনি তার বিপরীতের মানুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেনা যখন সে কিছু লুকায় কিংবা কোন অপরাধ করে। তুমি কী কিছু লুকাচ্ছো রিমিপরী? ‘

অয়নের কথার প্রতিউত্তরে রিমি ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না। রিমিকে ভয় পেতে দেখে অয়ন স্মিত হাসে। ফিসফিস কন্ঠে বলে উঠে,

‘ রিমিপরী শুনছো? এইভাবে প্রতিদিন ভয় পেতে থেকো। আমি রোজ রোজ তোমার ভয়ার্থ মুখশ্রীতে মুগ্ধ হবো। ‘

__________

হসপিটালে দুইটা ওটি শেষ করে ক্লান্ত শরীরে নিজের কেবিনে বসে ছিলো অয়ন। তখনি তার নজর যায়
বাড়ির সিসিটিভির ক্যামেরার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে মাথায় রক্তচড়ে তার।

____________
রাতে সিড়িতে বসে ছিলো রিমি। চৌধুরী বাড়ির বিশাল ড্রইংরুমে একটি বড় দরজার সমতল্য জানালা রয়েছে। সেই জানালা থেকে রিমি দূর আকাশের চাঁদটাকে দেখছে। চাঁদ মেঘের মাঝে নিজেকে কেমন লুকিয়ে রেখেছে। যেন চাঁদটি শুধুই মেঘের। চাঁদকে অন্য কেউ কেন দেখবে? কথাটি ভেবে ফিক করে হেসে দেয় রিমি। তখনি সেখানে হুট করে অয়ন এসে রিমির পাশে বসে হঠাৎ রিমির কোলে নিজের মাথা রেখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে দেয়।
অয়নের এমন আক্রমনে থম মেরে বসে থাকে রিমি।
অয়নের নিঃশ্বাস রিমি তার শরীরে খুব ভালোভাবে টের পাচ্ছে। রিমি অয়নকে সরাতে চাইলে, অয়ন চোখ বন্ধ করেই বিরক্তির সুরেই বলে,

‘ রিমিপরী কিছুক্ষন তোমার কোলে মাথা রেখে আমাকে ঘুমাতে দাও। আমার শান্তির ঘুম খুব প্রয়োজন। মারপিট করে আমি ক্লান্ত। ‘

চলবে……..কী?

[ আপ্নারা তো সবাই জানেন আমি অসুস্হ ছিলাম তাই গল্প অনিমিয়ত দিচ্ছিলাম। সবাই দোয়া করবেন যেন এখন থেকে নিয়মিত দিতে পারি।
ফি আমানিল্লাহ্ 💝]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here