#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ-১৪,পর্ব ১৫
তাসনিম তামান্না
নিকষ গভীর আঁধার রাত চারিদিকে কৃত্রিম আলোই ভরপুর হসপিটালের সামনের রাস্তায় জনজাট রাত গভীর হলেও মানুষের ব্যস্ততার শেষ নেই। ফিনাইলের গন্ধে ক্লান্ত চারি দিক। নির্ঘুম রাত চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে অক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়শীর দিকে। অস্থির মনে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে অপেক্ষা তার চোখ খুলে তাকানোর। মাথায় টিসটিস ব্যাথা নিয়ে জারা নড়েচড়ে উঠে শান মাথা থেকে হাত সরিয়ে নেয় জারা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায় ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখে চারিদিক বুঝতে অসুবিধা হলো না সে কোথায়। হঠাৎ নিজের ওপর বিরক্ত আসলো বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ‘চ’ শব্দ করে ঘুমঘুম কন্ঠে নিজেই বলল
-‘ জীবনে ভালো হবি না তুই সবাইকে টেনশন দিতে এতো ভালো লাগে তোর ওফ্ফ কাল আরও কয়েকটা ঔষধ খেলাম না কেন? তাহলে আর জ্বর আসতো না ‘
জারা মাথায় হাত দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। শান শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। ঘুম কন্ঠ শুনে তার হার্ট বিট যেনো কয়েকগুণ বেরে গেছে। শান নিজের বুকের বা পাশে হাত দিলো। নিঃশব্দে সাবধানে শ্বাস ফেলতে লাগলো।
হসপিটালের জারার সাথে কে আছে মাথায় আসতেই জারা চট করে চোখ খুলে নিলো চোখ ডলতে ডলতে পাশে তাকিয়ে শানকে দেখতে পেয়ে থেমে গিয়ে ঘুম কন্ঠে বলল
-‘ আপনি? এখানে? ‘
শান গলা ঝেড়ে বলল
-‘ অন্য কেউ থাকার কথা ছিল না-কি? ‘
জারা কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না এই লোকটা সবসময় ত্যাড়ামো করে কোনো কথা সোজাসাপটা উত্তর দিতে পারে না। যা বলবে সব ঘুড়িয়ে প্যাচিয়ে যা জারার মোটেও পছন্দ নয়। জারা অকপটে বলল
-‘ থাকার লোকের তার অভাব নাই তাই শুনছিলাম এতো ভালোবাসার লোক থাকতে আপনি ই কেনো? ‘
-‘ বাবা জানতাম না তো তোর এতো ভালোবাসার মিলিয়ন বিলিয়ন লোকজন আছে জানলে আর থাকতাম না ‘
জারা আর কিছু বলল না। কথায় কথা বাড়বে ঝগড়া লাগবে। ঝগড়া করার মুড বা মন মানসিকতা কোনোটাই নাই শরীরেও আর কুলাছে না। জারা চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। শান কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল
-‘ শরীর কি খুব বেশি খারাপ লাগছে? কিছু খাবে? ‘
জারা চুপ থেকে ভাবলো ২ মিনিট পর উত্তর দিলো।
-‘ খেতে ইচ্ছে করছে না ‘
জারার কথা শুনে শান বাইরে চলে এলো। জারা শব্দ পেয়ে চোখ খুলে দেখলো শান নেই। জারা বিরক্ত হয়ে নিজে নিজে বলল
-‘ আমার কথা যখন শুনবি না তখন জিজ্ঞাসা করার কি মানে খবিশ লোক কোথা কার এবার যদি আমারকে জোর করে খাওয়াতে এলে একটা কিক্ মেরে দিবো। দূর! বাসায় যাবো কাল-ই হসপিটালে কার ভালো লাগে? ‘
কথার মাঝে শায়রী আসলো সাথে শান ও। জারা তাকালো শায়রী দাঁত কেলিয়ে বলল
-‘ কি রে চাশমিশ কেমন আছে? হসপিটালে থাকবেন না কেনো হসপিটাল তো আপনার ফেবারিট জায়গা ‘
-‘ একেবারে ফাউল কথা বলবি না ‘
-‘ তাইলে খাস না কেন ঠিক মতো নিজের খেয়াল রাখিস না কেনো? ‘
-‘ তুই কথা না বলে ক্যানেলা খোল ‘
শায়রী জারার হাতের ক্যানেলু খুলতে খুলতে বলল
-‘ হুহ বুঝলাম আন্টিকে বলতে হবে তোর বিয়ের কথা বিয়ে দিলে তোর বর তোকে পি’টি’য়ে খাওয়াবে ‘
কথাটা বলে শায়রী আড়চোখে শানের দিকে তাকালো শান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে শায়রীর কথা জারার কানে গেলো ঠিকি কিন্তু প্রতিত্তোর করলো না। চোখ খিঁচে চাদর খামছে শুয়ে রইলো। ব্যাথা পেতেই ‘আহ’ করে উঠলো।
-‘ শেষ ‘
জারা চোখ খুলে বা হাত দিয়ে ডান হাত বুলিয়ে বলল
-‘ ডান হাতে দিসিস কেন বা হাতে দিতে পারিস নি ‘
-‘ তোর হাতের শিরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই ডান হাতেই দিসি ‘
-‘ খুব ভালো করছেন আপনি ‘
-‘ হ আমি জানি আমি সবসময় ভালো কাজেই করি তোর চোখে চশমা ছাড়া যে চোখে পরলো আমি ধন্য হয়ে গেলাম তো বলে ফেল কি খাবি কি খেতে ইচ্ছে করছে? ‘
-‘ তোরে খেতে ইচ্ছে করছে ‘
শায়রী লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে হেলে দুলে বলল
-‘ ছিঃ ছিঃ এসব কি কস আমার বর…’
শায়রী আর কিছু বলতে পারলো না জারা ধমক দিয়ে বলল
-‘ দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে ‘
শায়রী মুখ ভেংচি কেটে বলল
-‘ যাচ্ছি একেবারে বাড়ি যাচ্ছি আর আসবো না ‘
-‘ হ যা তোর তো আজ রাতে ডিউটি না তাহলে আছিস কে দূর হ কাল সকালে যেনো তোকে আমার সামনে না দেখি ‘
-‘ কিছু বললেন আপনি? ‘
শায়রী চলে গেলো চোখ বন্ধ করে নিলো। শান হটপট থেকে স্যুপ বোলে স্যুপ ঢেলে চামশ নিয়ে জারার পাশে বসলো। বাড়ি থেকে শান্তির পাঠিয়ে দিয়ে ফোন দিয়ে বলল দিয়েছে জারার ঘুম ভাংলেই জেনো জারাকে খেতে দেয়। শান বলল
-‘ উঠে বসো খেয়ে নাও ‘
জারা চোখ খুলে স্যুপ দেখে বলল
-‘ এটা কোথায় পেলেন এখন? ‘
-‘ বাসা থেকে পাঠিয়ে দিয়েছিলো ‘
-‘ ও কিন্তু আমার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ‘
-‘ খেয়ে নে তারাতাড়ি তোর সাথে ঢং করার কোনো ইচ্ছে বা শখ কোনো টাই নাই মা বলে দিয়েছিল বলে তোকে খেতে বলছি না হলে তাও বলতাম না ‘
জারার উল্টো প্রশ্ন করে বলল
-‘ আপনি খেয়েছেন? ‘
শান চুপ থেকে উত্তর দেয়
-‘ কেনো আমি খাবো না কেনো? আমার শোক লাগছে যে আমি খাবো না? বেশি কথা না বলে উঠে বস খেয়ে নে ‘
-‘ বমি করে দিলে ‘
-‘ করবি তাও খাবি ‘
জারা জানে শানের সাথে পারবে না যত যায় করে হক জারাকে যখন খাবাবে বলছে তখন খাবাবেই জারা উঠে বসে বলল
-‘ দিন খাচ্ছি ‘
শান ফট করে বলল
-‘ হা কর আমি খাইয়ে দিচ্ছি ‘
জারা চমকে তাকালো শানের দিকে শান জারা মুখে স্যুপ দিয়ে বলল
-‘ মটেও ভাববি না আমি তোকে ভালোবাসি তোর হাত ফুলে আছে ব্যথা তাই খাইয়ে দিলাম ‘
জারা কিছু বলল না খেয়ে নিলো। শান ঔষধ খাইয়ে দিলো জারা ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল ৭ টায় ঘুম ভাংতেই জারা শানকে বেডে হেলান দিয়ে ঘুমাতে দেখে কিছু বলতে গিয়েও বলল না। হাত বাড়িয়ে নিজের ফোনটা হাতে নিলো কোনো কাজ না পেয়ে গেম খেলতে লাগলো। হুট করে শান জারার ফোন কেরে নিয়ে বলল
-‘ ফোন দেখলে মাথা ব্যথা করবে ‘
-‘ করুক আপনি ফোন দিন ‘
-‘ নাহ ‘
জারা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো
-‘ তাইলে বাসায় নিয়ে চলুন আমার এখানে ভালো লাগছে না ‘
-‘ দেখছি ‘
১০ টার দিকে সকল কাজকর্ম শেষে জারা বাসায় ফিরলো। জারাকে দেখে শান্তি বেগম অস্থির হয়ে পড়লেন কি করবে না করবে দিক বেদিক ছোটাছুটি করতে লাগলো। জারা শান্তিকে শান্ত হতে বলল। তিনি শান্ত হলেন না। ইশা পরিক্ষা দিতে গেছে। আসলাম অফিসের জরুরি মিটিংয়ে গেছে। জারাকে বাসায় দিয়ে শানও কোথায় উধাও হয়ে গেলো। জারা সাওয়ার নিয়ে বাইরে এসে বলল
-‘ মনি কি করছ? এতো ব্যস্ত হওয়ার তো কিছু দেখছি না ‘
-‘ জানি তো আমরা তোর কেউ না ‘
-‘ এসব কথা কেনো বলছ?’
-‘ তোর যে হাত কাটছে একবারও বলছিস আমাকে? ‘
জারা শান্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
-‘ এমন করছ কেনো? তোমরা টেনশন করবে বলে কিছু বলি নি’
-‘ সর আমাকে মনি বলে ডাকবি না আমি তোর কেউ না ‘
জারা শান্তির অভিমান খুব কষ্টে ভাংগালো। শান্তি জারাকে খাইয়ে দিয়ে বললেন
-‘ রুমে গিয়ে রেস্ট নিবি একদম এই শরীর নিয়ে নিয়ে আসবি ‘
জারা মাথা নাড়িয়ে উঠে এসে শুয়ে পড়লো। কিন্তু ভালো লাগছে না শুয়ে থাকতে। উঠে ছাদে চলে আসলো আজ আকাশ মেঘলা জ্যোষ্ঠ মাসের শেষের দিকে জারা দেখলো নিচে অনেক গুলো কাঠগোলাপ পড়ে আছে জারা মাথায় বুদ্ধি আসলো খুশিতে লাফিয়ে দৌড়ে নিচে গিয়ে সুই সুতা এনে কাঠগোলাপ ফুলের মালা বানাতে লাগলো। হাতে সুই ফুটে আহ শব্দ তুলে হাত দিয়ে আংগুল ধরে দেখলো র-ক্ত পরছে। কোথা থেকে শান এসে জারার আংগুল ধরে গালে দিলো। জারা কেঁপে উঠলো। শান ছেড়ে দিয়ে বলল
-‘ দেখে কাজ করতে পারিস না? এটা কি করছিস? ‘
জারা এখনো অবাকের রেস কাটিয়ে উঠতে পারি নি শুকনো ঢোক গিলে বলল
-‘ মালা ‘
শান সুই সুতা নিয়ে মালা বানাতে বানাতে বলল
-‘ অকর্মা ঢেকি’
জারা আরো অবাক হলো। কি হচ্ছে এসব জারা কি স্বপ্ন দেখছে? বিষময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো শানের দিকে মালা বানানো শেষে শান জারার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলল
-‘ রুমে যা অসুস্থ না তুই মাথা ঘুরে পরলে আরেক কান্ড ‘
জারা হতভম্ব হয়ে রুমে আসলো। থম মেরে বসে রইলো অনেকক্ষণ। খুশি হবে কি দুঃখ পাবে বুঝে উঠতে পারলো না। জারা হাতের মালাটা ডাইরির মাঝে রেখে দিলো। লিখলো…
১৬ জুন ২০২২
ভালোবাসা আর কাঠগোলাপ
দুটোই খুব প্রিয়…❀
চলবে ইনশাআল্লাহ
#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৫ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
অগোছালো সৃগ্ধ মেঘলা বিকাল চারিদিকে ভেজা বৃষ্টির পানির কনা শীতল মৃদু বাতাসে বৃষ্টিতে ভিজে সজিব হয়ে ওঠা গাছের পাতাগুলো এলোমেলো হয়ে দুলছে। বিকালটা সুন্দর করে দিতে এক চিলতে খুশি হয়ে শায়রী, পলক, রুহান, সাইম, প্রীতি এসে হাজির জারা সহ সকলে খুশি। শান্তি তো কি খাবে রান্না করা শুরু করে দিয়েছে। সকলে ড্রাইংরুমের সোফায় বসলো জারা ভ্রু কুচকে বলল
-‘ তোরা আসবি আগে বললি না যে? ‘
সাইম বলল
-‘ ক্যান আগে জানলে কি করতে বাড়ি থেকে ভাইগা যাইতিস না-কি আমাদের আসতে মানা করছি ‘
জারা ভাব নিয়ে বলল
-‘ বাসার দরজায় খুলতাম না ‘
শায়রী বলল
-‘ দেখছিস কত বড় দুশমন ‘
রুহান ওদেরকে থামিয়ে বলল
-‘ জারা তুই হসপিটাল থেকে আসলি একবারও বলছিস আমাদের? আমার সকালে হসপিটালে গেছিলাম দেখতে কিন্তু তুই… ‘
-‘ সরি দোস্ত কিন্তু হসপিটাল থেকে এসে তো টেক্সট করে দিয়েছিলাম এতো রাগ করিস না ‘.
প্রীতি বলল
-‘ রাগ করলেই বা তোর কি? ‘
পলক বলল
-‘ আচ্ছা বাদ দে এখন শরীর কেমন তোর? ‘
-‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ‘
রুহান জারার কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কি না। শান তখন শিরি দিয়ে নাম ছিল। জারার কপালে রুহানের হাত দেখে রেগে গেলো হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিয়ে এগিয়ে আসতে নিলেই। তখন শান্তি বেগম এসে রুহানকে ওনার সাথে নিয়ে গেলো কি যেনো ইনপটেন কথা বলবে। শান আর নিচে নামলো না উল্টো ঘুরে ওপরে চলে গেলো। জারা এক পলক তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। ওরা গল্প করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর রুহানও আসলো।
ইশা সকলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল
-‘ এটেনশন প্লিজ ‘
সকলে ইশার দিকে তাকালো। ইশা গলা ঝেড়ে বলল
-‘ শুনো সবাই পৌশু দিন তোমরা সকলে আসবে সন্ধ্যায় তোমাদের ইনভাইট কিন্তু তোমরা সকলে সকালে আসবে ‘
পলক বলল
-‘ বাট ইনভাইটের রিজন কি? ‘
ইশা হিহিহি করে হেসে বলল
-‘ গেস্ট করো ‘
কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর শায়রী বলল
-‘ জানি না তুমি বলে দাও ‘
ইশা হেসে বলল
-‘ আমার এনগেজমেন্ট ‘
সাইম অবাক হয়ে আফসোসের সুরে বলল
-‘ কি? এতো পিচ্চি মেয়ের বিয়ে? আমি জীবনে কি করলাম কি করতে বেঁচে আছি আমার মরে যাওয়া উচিত আমি একটা প্রেম ও করতে পারলাম না ‘
সবাই মিলে হেসে উঠলো প্রীতি বলল।
-‘ তোর দ্বারা প্রেম ট্রেম কিছু হবে না বিয়ে তো অনেক দূরের কথা ‘
-‘ এই একদম আমাকে ইনসাল্ট করবি না আমি একটা কাউকে কিছু না বলে হুট করে বিয়ে করে বউ এনে সকলকে তাক লাগিয়ে দিবো দেখিস ‘
জারা ভ্রু কুচকে বলল
-‘ সাইম একটা কথা সত্যি করে বলতো তুই কি চুপিচুপি ট্রেন চালাছিস না-কি? ছিঃ তোর লজ্জা করলো না আমাদেরকে না জানিয়ে এসব করতে? ‘
সাইম ভাব নিয়ে বলল
-‘ জানবি জানবি আস্তে আস্তে সব জানবি ‘।
পলক আর রুহান সাইমকে চে/পে ধরলো। কিন্তু সাইমের মুখ থেকে কিছুই বের করতে পারলো না। সন্ধ্যার আরো কিছুক্ষণ পর ওরা বাসায় রওনা হলো।
★★★
পরের দুদিন গেলো খুব অদ্ভুত ভাবে। আত্মীয় স্বজন দের দেখাশোনায় আর কাজকর্মের ব্যস্ততায়। বাড়ি ভর্তি এতো আত্মীয় স্বজন যেনো মনে হচ্ছে আজ-ই ইশার বিয়ে। জারা এর মাঝে শানকে কয়েক মুহুর্ত চোখের পলক দেখেছিল। অদ্ভুত ভাবে এরমধ্যে একবার জারা আর শানের কোনো রকম কথা হয় নি। জারা নিজেও নিজেকে লুকিয়ে বা শানের সামনে যেনো না পড়ে তেমন ভাবেই ছিল। কিন্তু যতটুকু শানের সামনে পরছে শান একবারও জারার দিকে তাকায় নি। জারা নিজের মনে খুঁতখুঁত করছিল কিন্তু পরে ভেবে দেখলো তাকে ছাড়া তো থাকতেই হবে একদিন এতো মায়া বারিয়ে কি লাভ? যত দূরে থাকবে ততই ভালো।
দোতালা বাড়িটা রঙবেরঙে ফেরিলাইট, ফুল দিয়ে সাজানে এযেনো এক রূপকথার রাজপ্রাসাদ রাজ্যকিয় ব্যাপার আর সেই রাজ্যের রাজকন্যার আজ এনগেজমেন্ট। ইশা আজ মিষ্টি কালারের গাউন পড়েছে আর ইশার বাগদত্তা জিহান কালো সুট পরছে দুজনকে আজ পাশাপাশি মেড ফর ইচ আডার লাগছে একেবারে কিউট কাপল। জারা জুস হাতে নিয়ে এগুলো দেখছে আর গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। জারা মনে মনে কল্পনা জল্পনা করছে
-‘ আজ যদি আমার বাবা-মা থাকত। আমার রাজ্যর রাজা-রানি থাকত তাহলে আমিও আজ রাজকন্যা হতাম অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাকে টেনশন করা লাগত না তারা আমাকে সুপাত্রের হাতে তুলে দিতো। কিন্তু না আজ তারা নাই আমার নিজের ওপরে নিজের সব দায়িত্ব চাপিয়ে অন্যের বাড়ির আশ্রিতা ট্যাগ লাগিয়ে চলে গেলো না ফেরার দেশে ‘
জারা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। চোখ গেলো শানের দিকে শান আজ ব্লু সুট পরছে চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা, হাতে ওয়াইনের গ্লাস ফেন্ডদের সাথে কথা বলতে বলতে চুমুক দিচ্ছে। জারা নিজের দিকে তাকালো আজ সে ওফ ওয়াইট কালারের সিলকের শাড়ি তার ওপরে স্টোনের কাজ করা শাড়ি পরছে, মুখে হালকা মেকাপ, চুলগুলো খোঁপা করে সামনের বেবি হেয়ার গুলো ছেড়ে রাখা দেখতে মিষ্টি লাগছে। জারা চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখলো। শান্তি বেগম আর আসলাম সাহেব গেস্ট দের সাথে কথা বলছে। জারার ফেন্ডগুলা আসছে অনেকক্ষণ তারা কি নিয়ে কথা বলছে সেখানে জারার যাওয়া বারণ জারাও বিরক্ত নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তবুও তাদের পাত্তা নেই। জারার এবার ওদের কাছে গিয়ে বলল
-‘ হলো তোদের? কি এতো কথা বলছিস? আসার আগে বাইরে থেকে বলে আসতে পারিস নি অসহ্য সব কইটা ‘
প্রীতি ঢং করে বলল
-‘ ও তুই আয় তোর কথা তো ভুলেই গেছিলাম ‘
জারা রেগে বলল
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ তা তো ভুলে যাবাই আমি তো তোমাদের কেউ হই না ‘
সাইম বলল
-‘ এমন করে রাগ করিস কেন বউ? তুই ছাড়া আমার কে আছে বল? তোকে ছাড়া তোর বরটা যে অসহায় ‘
-‘ হ্যাঁ তার পরিণাম তো এতোক্ষণ দেখলাম ‘
পলক বলল
-‘ থাক কষ্ট পাস না ওরা এমন-ই ‘।
জারা কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল
-‘ তা আপনি আবার কেমন শুনি? আপনিও তো আমাকে ডাকেনি ‘
রুহান বলল
-‘ আচ্ছা থাক এতো রাগিস কেন? ‘
-‘ এটা রাগার জিনিস তো রাগবো না? ‘
কেউ আর কিছু বলল না।
কথা ঘুরিয়ে শায়রী বলল
-‘ আচ্ছা শোন জারা আর রুহান তোরা দুইটা কি প্লান করে এক রংয়ের মিলিয়ে পরছিস? আমাদেরও বলতিস আমরাও পরতাম’
জারা রুহান অবাক হয়ে নিজেদের দিয়ে তাকিয়ে হেসে ফেললো। জারা বলল
-‘ হোয়াট এ কোইনসিডেন্স! ‘
পলক বলল
-‘ বুঝি বুঝি আমরা জানি তোরা মিলিয়ে পরছি এখন ঢং করবি ‘
রুহান জারার হাত জড়িয়ে ধরে বলল
-‘ আমাদেরকে কাপল লাগছে না? ‘
প্রীতি বলল
-‘ হ্যাঁ পলক তুই কখন আমার সাথে এমন করে মিলিয়ে পরছিস? ‘
কথাটা বলে কোনা চোখে তাকালো প্রীতি পলক শুকনো ঢোক গিললো। রুহাম প্রীতির কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল
-‘ তাহলে আমাদের এখনি বিয়ে করা উচিত ‘
জারা হেসে রুহানের বাহুতে চাপর মেরে বলল
-‘ ফাজলামি করিস কেন? ‘
-‘ এই তুই কার গায়ে হাত তুলছিস খেয়াল আছে তোর আমি চাইলেই তোকে জেলে পুরে দিতে পারি কিন্তু দিবো না ‘
-‘ কেন দে দিবি না কেন?’
ওয়েটার কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আসলো। ধাক্কা লেগে জারা শাড়ীতে পারলো। ওয়েটারটা অপরাধী মুখে তাকিয়ে বলল
-‘ সরি ম্যাম আসলে তাড়াহুড়ায়…. ‘
জারা শাড়ী ঝাড়তে ঝাড়তে বলল
-‘ ইট’স ওকে দেখে কাজ করবেন যান ‘
ওয়েটারটা চলে গেলো জারা বলল
-‘ তোরা থাক আমি আসছি ‘
জারা ওপরে এসে টিস্যু দিয়ে শাড়ী মুছ ছিল তখন দরজা আটকানোর শব্দে পিছনে ফিরে তাকালো।
চলবে ইনশাআল্লাহ।