আপনিময়_তুমি💓[ An unbearable Crazy love] #Season: 02 #Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr] #Part: 08

0
567

#আপনিময়_তুমি💓[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 08…

দেখতে দেখতে ঘন্টা পেরিয়ে গেল। অথচ বৃষ্টি থামার নাম নিচ্ছে না। এদিকে রাত আরও বাড়তে চলল। রাস্তা প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে। মাঝে মাঝে রাস্তার কাদা পানিগুলোকে ঝর্ণার ন্যায় উপরে তুলে ক্ষণে ক্ষণে দু’একটা গাড়ি সাইসাই করে আপন গতিতে ছুটে চলেছে। আনহার অদূরে একটি ল্যাম্পপোস্ট আলো দিচ্ছে। তবে শক্তিহীন অবস্থায়। আনহার মনে অচেনা এক আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা অলরেডি নটার ঘর হতে দশের ঘরটা ছাপিয়ে গেছে। আনহা কী করবে বুঝতে পারছে না৷ বৃষ্টির মাঝেই হেঁটে যাবে? এখন রিক্সা পাবে বলেও মনে হয় না। আর না এখানে থাকাটা নিরাপদ মনে হচ্ছে।

কিছুক্ষণ মনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সাথে লড়াই করে বৃষ্টির মাঝে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো আনহা। আনহা বৃষ্টির মাঝে নামবে সহসা প্রচন্ড বেগে একটা বাইক ছুটে গেল আনহার সামনে দিয়ে। সাথে কাদা পানিতে ভরিয়ে দিল আনহার শরীর। আনহা চেঁচিয়ে বলল, ‘অসভ্য কোথাকার দেখে চলতে পারিস না নাকি?’

কিন্তু মহৎকর্ম সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিটি কথাটা শুনল না। প্রচন্ড গতি হওয়ার কারণে অনেক আগেই সে অদৃশ্য হয়ে গেছে। আনহা এবার জামা-কাপড় ঝাড়া দিয়ে নিল। হঠাৎই মনে হলো, সেই বাইকটা উল্টো পথে ফিরে আসছে। বাইকের লাইটের আলো পুরোপুরি আনহার মুখে লাগল। ও হাত দিয়ে চোখ-মুখ ঢেকে নেয়। তখনি লাইটটা অফ করে দেয় লোকটি। বাইক থেকে একটা লোক নেমে আনহার কাছে এসে দাঁড়ায়। আশ-পাশ দেখে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করে। লোকটার মাথায় হেলমেট। চেহারা বুঝা যাচ্ছে না। তবে লোকটার গতিবিধি সন্দেহজনক। কিছুটা ভয় পেল আনহা। লোকটির থেকে পর্যাপ্ত দূরত্বে দাঁড়াল। কিন্তু পরক্ষণেই চমকে উঠল—লোকটির কণ্ঠস্বর শুনে।

‘এত রাতে বৃষ্টির মাঝে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’ হেলমেট খুলতে খুলতে বলল লোকটি।

আনহা সচকিত হয়ে বলল, ‘তুমি!’

‘হুমম, আমি। আপনি কী অন্য কাউকে আশা করেছিলেন না কি? হ্যাঁ, এখানে আপনি যে-কাউকেই পেয়ে যাবেন।’

‘বাজে কথা বন্ধ করো।’

‘আচ্ছা করলাম। এখন আপনি ভালোও ভালোও বলুন তো এখানে কী করছেন? হাতে লাগেজ, মাথায় নেই ছাতা, এত রাতে ল্যাম্পপোস্টের সামনে কেন দাঁড়িয়ে আছেন একা?’

‘সেটা তোমায় বলব?’ রেগে বলল আনহা।

‘বইলেন না। আমি কি বলতে বলছি? যখন অন্য কোনো মাতাল এসে যখন হাত ধরে জিজ্ঞেস করবে—সোনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে চলো আমরা একটু খেলি তখন ভালো লাগবে তাই না?’

‘এই যখনি মুখটা খোলো সব ফালতু কথা বলো কেন?’

‘আপনি বলতে বাধ্য করেন।’

‘তুমি এখান থেকে যাও তো।’ বিরক্তি নিয়ে বলল আনহা।

ছোট একটা শ্বাস ছাড়ল ইহান। বলল, ‘ভেবে বলুন। আমি সত্যি চলে যাব কি না? এখানে এখন রিক্সা, সিএনজি কিছুই পাবেন না। আপনার তো ভাগ্য ভালো আমার একটা কাজের জন্য আমি এসেছিলাম এদিকে।’

আনহা চুপ।

‘এখানে আপনার চেনা পরিচিত বলতে আমি ছাড়া কেউ নেই। আর না এই রাস্তাটা সেফ। কে বলতে পারে রাতের এই নীরব-নিরিবিলি রাস্তায় কখন কী হয়ে যায়? তাই বলছি আমার হেল্প চাই কি না?’

আনহা মাথা নিচু করে আছে। তখনি ছোটবেলার কাহিনীটা মনে পড়ে। এই ছেলেটার মতই ইহান সেদিন ওকে সাবধান করেছিল। কিন্তু ও শোনেনি। তার ফল খুব খারাপ হয়েছিল। আজকেও যদি তেমন কিছু হয়?

‘আপনি ভাবতে থাকুন আনহা। আমি চলি।’

ইহান যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেই আনহা পিছু ডাকে। ‘এই ছেলে শোনো।’

ইহান বাঁকা হেসে পিছনে তাকায়। দাম্ভিক সুরে বলে, ‘ছেলে হলেও আমার একটা নাম আছে। অয়ন… অয়ন নাম হে হামারা।’

‘আচ্ছা, অয়ন আমাকে একটু ভার্সিটির হোস্টেলে পৌঁছে দিতে পারবে?’

ওর কথায় একটু অবাক হয় ইহান। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। অতঃপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে, ‘ঠিক আছে, আসুন।’

আনহা লাগেজটা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। ততক্ষণে বৃষ্টি কমে গেছে। গুড়িগুড়ি পসলা বৃষ্টি পড়ছে। ইহান আর আনহা দু’জনেই রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। ইহান বাইক না চালিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর আনহার হাতে লাগেজ। কিছুদূর যাবার পর। ইহান বলল, ‘চলে এসেছি।’

আনহা উচ্ছ্বসিত দৃষ্টিতে সামনে তাকায়। কিন্তু হোস্টেল দেখে না। তার পরিবর্তে দেখে গাড়িতে খাবারের দোকান। গাড়িতে খাবার তৈরি করে গাছের নিচে করা ঝাপিতে বিক্রি করে। আনহা ক্রোধান্বিত কণ্ঠে বলল, ‘এটা কী?’

‘খাবারের দোকান। আমার বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে।’ বলেই সেদিকে হাঁটা ধরল ইহান। আনহা বাধ্য হয়ে ওর পিছু পিছু গেল। ইহান ঝাপিতে বসে আনহাকে দেখিয়ে দিল। আনহা কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে ভিতরে ঢুকল।

‘আপনি কিছু খাবেন?’

আনহা মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানায়। ইহানও মাথা নেড়ে চলে যায় খাবারের অর্ডার দিতে। ও চলে যাওয়ার পর আনহা চারপাশটা দেখে নিল। উপরে রেক্সিন পেপারের ছাদ পানি, ধূলোময়লা আটকাননোর জন্য। দড়ি দিয়ে চারপাশে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঝাপিতে কয়েকটি টেবিল আর লম্বা লম্বা টুল রয়েছে। এখানে বসেই সবাই খায়। সন্ধ্যার সময় অনেক ভীড়-ভাট্টা হবে হয়তো। কিন্তু এখন ফাঁকা বললেই চলে। গাড়িতে করে ওনারা খাবার তৈরি করে আনে বাসা থেকে। এবং গাড়িতে থাকা চুলায় গরম করে বিক্রি করে।

তখনি আনহার নাকে একটা ঝাঁঝরা তৈলাক্ত খাবারের ঘ্রান আসে। কিছুক্ষণের পর ইহান দু’প্লেটে রুটি, পোড়া মুরগী আর ঘন ডাল নিয়ে আসে। একটা আনহার সামনে আরেকটা নিজের রাখে। আনহা ইতস্তত হয়ে বলে, ‘আমি তো বলেছি আমি খাব না।’

‘দেখুন, এমনিতে খাবারের সময় কাউকে সামনে খালি মুখে বসিয়ে রাখতে নেই। তাছাড়া আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, আপনার খাওয়া হয়নি।’

‘কিন্তু… এটাই কী খাবারের জায়গা হলো? কেমন জানি?’

হেসে উঠল ইহান। বলল, ‘আমাদের মতো ছেলেরা শুধুমাত্র গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে হাজার টাকার বিল দিতে চায়। কিন্তু নিজেদের পেট এখান থেকেই ভরে। এখানের খাবারগুলো তেমন টেস্টি, তেমনি দামও কম। বিশ্বাস না হলে খেয়ে দেখুন। বাজি ধরে বলছি, কোনো রেস্টুরেন্টের চেয়ে কম না।’

‘তাইলে গার্লফ্রেন্ডকে এখানে নিয়ে আসলেও তো পারো?’

‘কী যে বলেন? তাহলে তো গার্লফ্রেন্ডের সামনে মান-ইজ্জত থাকবে না।’

ভেংচি কাটল আনহা। মনে মনে বলল, ‘আসলেই পকেটে ১০০টাকা রেখে ভাব ধরে হাজার টাকার। ছেলেদের স্বভাবই খারাপ। যেন টাকা নেই সেটা গার্লফ্রেন্ড জানলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে।’

‘কিছু বললেন?’

‘না, ভাবছি। আমাকে তাইলে কেন নিয়ে এসেছ? আমিও তো মেয়ে না কি? এবার মান-ইজ্জত যাবে না।’

কথাটায় ভেমরি খেল ইহান। পরক্ষণেই হেসে উঠে বলল, ‘আপনি মেয়ে, কিন্তু আমার গার্লফ্রেন্ড না। আর ভাব শুধু গার্লফ্রেন্ডের সামনে মারতে হয়। কিন্তু ফ্রেন্ড, বউ আর আর পুলিশের সামনে ভাব মারতে নেই। তাহলে কপালে দুঃখ আছে।’

কথাটা শুনে আনহা ইতস্তত হলো। নিজেকে কোন ক্যাটাগরিতে ফেলবে বুঝতে পারল না। না ও ছেলেটার ফ্রেন্ড আর না পুলিশ? বাকি থাকল বউ… ছি ছি.. কী ভাবনা? ভেবেই আনহা নিজের মাথায় নিজে গাট্টা মারল। তারপর খাবারটা খেতে শুরু করল। আসলেই টেস্টি খাবারটা। মুগের ডালটা আরও ভালো। এমনিতেই খিদে তার উপর এমন খাবার আর কী চাই?

হঠাৎই ইহান বলে উঠল, ‘আপনি কি সিরিয়াস? এখন গার্লস হোস্টেলে যাবেন?’

অবাক হয় আনহা। জিজ্ঞেস করে, ‘কেন?’

‘না আসলে রাত ১০টার পর সেখানে কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। আর সেখানে ওরা আপনাকে যেতেই দেবে না। আমার জানা মতে আপনি ওখানে সিট পাননি।’

মাথা নাড়ায় আনহা।

‘ভেবে দেখুন কী করবেন?’

আনহা কিছু বুঝে উঠতে পারল না কী করবে? তখনি ইহানের দিকে তাকায়। ছেলেটা ওকে বিপদের ভয় দেখিয়ে নিশ্চিন্ত মনে খাচ্ছে। পরক্ষণেই ভাবল, আচ্ছা যদি ছেলেটার থেকে হেল্প নেওয়া যায়। কিন্তু ওকে বিশ্বাস করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত হবে? চেনেই কতটুকু ছেলেটাকে? কিন্তু ছেলেটাকে দেখে খারাপ মনে হচ্ছে না। আর না ওর কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয়।

আনহা গলা খাঁকরে ইহানকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আচ্ছা, তুমি আমাকে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে দিতে পারো? এই একরুমের। ভাবলেট হলেও হবে। তবে সেটা আজকেই।

কথাটা শুনে ইহানের খাওয়াটা থেমে গেল। নিচের দিকে তাকিয়ে আনহার অলক্ষ্যে বাঁকা ঠোঁটে হাসল। এতক্ষণ যেন আনহার এই কথাটা শোনার অপেক্ষায় ছিল। গভীর একটা নিশ্বাস নিল। অতঃপর আনহার দিকে তাকিয়ে ওকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘এজন্যই বলে বাচ্চা না কানলে মাও নাকি দুধ দেয় না। সেখানে আপনি তো আমার কিছুই হোন না। যাই হোক বাসা চাই তো আপনার?’

মাথা নাড়ায় আনহা।

ইহান কিছুক্ষণ ভাবুক ভঙ্গিতে থেকে বলল, ‘ওকে ডান। তবে আমার একটা শর্ত আছে।’

‘বাসার জন্য শর্ত কেন নিতে হবে?’

‘আহা! তাইলে একা একটা মেয়েকে এই রাতের বেলা কে বাসাটা দিবে?’

আনহা আর কথা বলল না। কথাটা সত্যি। তাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল।

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.

[বাকিটা পরের পর্বে জানবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here