আরহাম🍁#The_Innocent_Boy #Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা #পর্ব (৫১)

0
709

🍁আরহাম🍁#The_Innocent_Boy

#Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা

#পর্ব (৫১)
_________
রোহান গাড়ি বা বাইক কিছুই আনেনি তাই সে আরহামের ছোট বাবার গাড়ি নিয়ে সেও বেরিয়ে পড়লো।আরহাম, মিরহাদ, রোহান তিনজনই গেছে তিন রাস্তায়। কারোই জানা নেই তারা কোন পার্লার এ গেছে। মির জিনিয়াকে বার বার কল করে যাচ্ছে। অনেকক্ষণ পর মিরের কল রিসিভ হলো তবে রিসিভ করেছে তুবা। মির প্রশ্ন করে তারা কোথায়, কোন পার্লারে আছে। কিন্তু তুবা শুধু বলতে পারে তারা ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট…… আর কিছুই শোনা যায় না ওপাশ থেকে শুধু কিছু মানুষের হৈচৈ শোনা যায়। মিরহাদের কলিজা ধক করে উঠলো। ঠিক আছে তো মৃত্তি আর জিনিয়া নাহ আর কিছু মাথায় আসলো না,সে দ্রুত জিপিএস কানেক্টে করে জিনিয়ার নাম্বারে লোকেশন ট্রেস করলো। সে অন্যপথে এসেছে আবার উল্টো পথে গাড়ি ঘুড়ালো। মিরহাদ খানিকটা পথ যাওয়ার পরই সামনে চোখে পড়লো আরহামের বাইক মানে সে ঠিক পথেই যাচ্ছে। কিছুটা পথ যেতেই চোখে পড়লো সামনে কিছু মানুষের জটলা আরহাম বাইক সাইড করে নিয়ে যেতে লাগে তখনি চোখে পড়ে পিছনে গাড়ি থেকে মিরহাদ দৌঁড়ে সেই ভিরের দিকে যাচ্ছে । আরহাম এবার থমকে গেল মির ওভাবে দৌঁড়ে গেল কেন? আরহামও এবার দ্রুত এগিয়ে গেলো আর ভিড়ের ভেতর একনজর দিতেই চমকে উঠলো। মৃত্তি নিচে পড়ে আছে তার পা দিয়ে হালকা রক্তও পড়ছে। পাশেই জিনিয়া ডান হাত ধরে বসে আছে আর তুবারও হাত ছিলে গেছে। আরহাম হতবাক ভীড় ঠেলে তাদের সামনে গেলো। মির দৌঁড়ে গাড়িতে গেল।আরহাম কে দেখেই তুবা ডাকলো বললো গাড়ি এনেছে কিনা তারা ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট করেছে। আরহাম জিজ্ঞেস করলো তারা ঠিক আছে কিনা। সবার আগে মৃত্তি জবাব দিলো সে ঠিক আছে।মির ফাস্টএইড বক্স এনেছে গাড়ি থেকে। এসেই মৃত্তির পায়ে পেইন রিমুভার স্প্রে করে দিলো এবার জিনিয়াকে জিজ্ঞেস করলো শুধু কি হাতেই ব্যাথা লেগেছে। কিন্তু সে পুরো কথা শেষ করার আগেই দেখলো আরহাম মৃত্তিকে কোলে তুলে নিয়েছে। মৃত্তির পা অনেকটা ফুলে আছে সাথে রক্তও পড়ছে। আরহাম রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সি এনজি খুঁজছিলো। কারণ সে মিরহাদের গাড়িতে উঠবে না কিন্তু মৃত্তির পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা মৃত্তির চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। জিনিয়া, তুবা আরহামের পিছন পিছন এগিয়ে এসে বলল তাকে গাড়ীতে উঠতে। ততক্ষণে মিরও গাড়ি নিয়ে তাদের সামনে এনে রেখেছে। মিরহাদ পুরনো সব ভুলে নিজেই আরহাম কে ডাকে। “আরহাম মৃত্তিকে নিয়ে গাড়ীতে উঠ ” জিনিয়া তুবা ভাবী আপনারাও উঠেন। তুবা জিনিয়া উঠে পড়ে কিন্তু আরহাম ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে মৃত্তিকে কোলে নিয়ে। এবার জিনিয়া আর তুবাও ডাকে আরহামকে গাড়ীতে উঠার জন্য কিন্তু আরহাম একটা সি এনজি দেখে তাতে উঠতে যায়।মিরহাদ গাড়ী থেকে নেমে মৃত্তিকে নিজেই কোলে নিতে যায়। কিন্তু আরহাম সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সি এনজিতে উঠতে নেয় আর অমনি মির মৃত্তিকে নিজের কোলে নিয়ে আরহামকে ধাক্কা লাগায়। আরহাম কিছুটা ছিটকে সরে যায়। তার চোখ মুখে পৃথিবীর সব রাগ যেন এসে ভর করে। কিন্তু মির তাতে ভ্রুক্ষেপহীন সে বলে চলে “তোর কাছে বোনের কষ্টের দাম না থাকতে পারে আমার আছে”। কথাটা একদম তীরের মত বিঁধে আরহামের বুকে অবাক মৃত্তি আর সেখানে থাকা জিনিয়া তুবাও হয়। কিন্তু কারো বোধগম্য হয় না এটা কেন বলল মির। আরহাম মিরের কথা গুলো শুনে আচমকা পেছন থেকে ঝাকড়ে ধরে মিরকে।

মির এবার জিনিয়াকে গাড়ির ডোর ওপেন করে তাকে সিটে বসিয়ে আরহামের দিকে ফিরলো। আর তার হাত নিজের শার্ট থেকে ছুটাতে ছুটাতে বলল “ভুল কি বললাম! ” এটাই সত্যি তোর কাছে বোনের কষ্টের দাম নেই যদি থাকতো তবে আজ সায়নি মৃত থাকতো না…… মিরহাদ কথাটা,সম্পূর্ণ করতেই আরহামের ঘুষি তার গালে পড়ে। মির ছিটকে গিয়ে গাড়ির সাথে ধাক্কা খায় । ঘটনার আকস্মিকতায় মেয়েরা তিনজনই বোকা বনে যায়। জিনিয়া,আর তুবা গাড়ি থেকে নেমে আসে জিনিয়া মিরকে ধরতে যায় কিন্তু মির তাকে বাঁধা দেয়। আরহাম আবারও এসে মিরের কলার ধরে জিনিয়া,আর তুবা আটকানোর চেষ্টা করেও পেরে উঠেনা।

আরহাম আবারও ঘুষি মারে মিরের গালে এবার তার ঠোঁট কেটে রক্ত পড়তে থাকে। মৃত্তি এবার ফোলা পায়েই নেমে আরহামকে ধরে।

-কি হলো থামলি কেন সত্যিটা খুব গায়ে লেগেছে তাই না!(মিরহাদ)

-“একটা কথাও বলবি না আর নয়তো আমি তোকে এখানেই খুন করবো আজ। সেদিন তো পালিয়ে বেঁচে গিয়েছিলি আজ আর আর ফিরতে পারবি না” চিৎকার করে বলল আরহাম।

-আমাকে হুমকি দিচ্ছিস কোন সাহসে? তুই বললেই আমি খুনী হয়ে যাবো?” বলেই মিরও এবার ঘুষি লাগালো আরহামকে।
মৃত্তি পায়ের ব্যাথায়,সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না কিন্তু আরহাম আর মিরকে থামানোর চেষ্টা করছে। ওদিকে জিনিয়া আর তুবা মিলে রাস্তার আশেপাশের মানুষদের কে ডাকছে তাদেরকে একটু আটকানোর জন্য। রোহানও ততক্ষণে পৌঁছে গেছে। একটু দূর থেকেই সে দেখতে পেলো তাদের মারামারি করতে। সে গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত দৌড়ে আসছিলো কিন্তু হঠাৎই তার দৌড়ের গতি কমিয়ে দিলো। আর একটু পরই সে হাটাও বন্ধ করে দিলো। সে তো চায়নি বন্ধুত্বের মাঝে কখনো ফাটল ধরুক তাই তো আরহামকে সত্যিটা জানাতে চাইছিলো। কিন্তু আরহামই কখনো শোনেনি তার কথা কিন্তু আজ যখন দু’জন মুখোমুখি সুযোগ আছে সব ঝামেলা মিটিয়ে আগের মত হওয়ার। তখন রোহান এই সুযোগটাকে কাজে লাগানোটা বোকামি মনে করছে। আর তার একমাত্র কারণ আরহামের পাশে ওই গায়ে হলুদের সাজে দাঁড়ানো মেয়েটি।সব কিছু জেনেও চুপ থাকতে চায় রোহান। কে জানে হয়তো তাদের এই লড়াই মৃত্তি আর আরহামকে আলাদা করতে সাহায্য করবে। আরহাম তো এমনিতেও মৃত্তিকে পছন্দ করে না হয়তো মিরও চাইবে না তার বোন তার শত্রুর ঘরে থাকুক। আরহাম আর মির পরপর দু’জন দুজনকে মেরেই চলছে। পাশেই মৃত্তি কেঁদে যাচ্ছে একবার মির তো আরেকবার আরহাম এর হাত ধরে আটকানোর চেষ্টা করছে।চেষ্টা করছে তুবা জিনিয়াও কিন্তু দু’জন পুরুষের শক্তির কাছে তিনজন মেয়ের শক্তি কিছুই না। রোহান কেউ দেখার আগেই সে গাড়ি নিয়ে ব্যাক করলো তবে সে জানে না সেখানে উপস্থিত কেউ তাকে আগেই দেখে নিয়েছে।

আরহাম আর মির মারামারির মাঝেই মৃত্তি দাঁড়িয়ে গেলো।আরহাম আবারও ঘুষি মারতে নেয় ঠিক তখনই মৃত্তি তার হাতের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। মৃত্তির গায়ে ঘুষি লেগেছে মনে করে জিনিয়া চিৎকার করে উঠে।কিন্তু না আরহাম হাত নামিয়ে ফেলেছে। মৃত্তি মির কে জিজ্ঞেস করে “সায়নি কে”?

আরহাম রাগে ফুসছে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টায় দু হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। মিরও চুপ থাকে তুবা পাশ থেকে বলে “আমি যদি ভুল না হই সায়নি আমাদের ননদ “।

মৃত্তি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ” আমাদের ননদ”?মানে উনার বোন আরহামকে ইশারা করে বলে ।

-হ্যা, সায়ন এর বোন আরহাম, জারিফ সবার একমাত্র বোন। পুরো বাড়ির একমাত্র মেয়ে ছিলো সে। (তুবা)

জিনিয়া আর মৃত্তি দু’জনেই একসাথে বলে উঠে “ছিলো”?

-হুম ছিলো সায়ন এর কাছে শুনেছি সায়নি মারা গেছে প্রায় দু’বছর আগে। (তুবা)

-” মারা যায় নি মেরে ফেলেছে এই যে এই হলো আসল খুনী।” আরহাম চিৎকার করে মিরকে দেখিয়ে বলল কথা গুলো।

-“অনেক বলেছিস আর না আমি খুনী আমি! যে তোর বোনকে সেই রাতে ওই গুন্ডার সাথে পালানো থেকে আটকিয়ে ছিলাম। আমি খুনী যে তোর বোনকে ভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে জোর করে বাড়িতে এনেছিলাম শুধু মাত্র ওই লোফার টিপুর সাথে ডেটিং এ না যেতে পারে।” রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তারা চিৎকার করে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়ায় প্রায় দশ বারোজন মানুষ আবারও জমায়েত হয়ে গেলো।

মৃত্তি ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে তবুও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।তুবা, জিনিয়া কি বলবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। বাড়ি থেকেও কল আসছে সবার মোবাইলে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না।

-মিথ্যা বলা বন্ধ কর ফর গড সেক আমার বোন এ দুনিয়ায় নেই কেন এখনও মিথ্যা বলছিস মৃত মানুষকে নিয়ে। (আরহাম)

মিরের রক্ত টগবগ করছে কি করলে সে সত্যি প্রমাণ করতে পারবে হঠাৎ মনে পড়লো রোহান এর কথা। মির গাড়ির চাবি তুবার দিকে এগিয়ে বলল “হসপিটাল কত দূর এখান থেকে?”

-সাত,আট মিনিট লাগবে এ রাস্তার মোড় ঘুরলেই হসপিটাল। কেন? (তুবা)

-“ড্রাইভ করতে পারেন?” আরহাম এবার রক্তিম চোখে তাকালো মিরের দিকে। মির সেদিকে নজর না দিয়ে তুবাকে আবার জিজ্ঞেস করলো ক্যান ইউ ড্রাইভ?

-না,

-ওকে জিনিয়াকে বললো চাবি নাও ড্রাইভ করে হসপিটাল নিয়ে যাও। তুবা মৃত্তিকে ধরে বসে পড়লো গাড়ির পিছনের সিটে কিন্তু মৃত্তি যাবে না মির, আরহামকে একা ছেড়ে। খুব ভয় লাগছে তার এমনিতেই দু’জন মারামারি করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। কিন্তু না মির তাদেরকে পাঠিয়ে দিলো।আরহাম ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গায়। মির আচমকা আরহামের কলার টেনে বাইকে বসালো। আরহামের কোন প্রতিক্রিয়াই নেই। মির আরহামকে ধাক্কা মেরে বলল “বাইকে বস আর বাড়ি নিয়ে যা।” আরহাম স্তব্ধ যেন রোবট হয়ে গেছে সে। কিন্তু মির কি করতে চাইছে বুঝতে পারলো না। আরহাম বাইক স্টার্ট দিলো। বাড়ির গেইটে পৌঁছুতেই মির দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো। আরহাম বাড়ির ভেতরে যেতে মির রোহানকে নিয়ে চলে এলো। তার পেছন পেছন বাড়ির অন্যান্যরাও এলো। দু’জনের অবস্থা দেখে সবাই আৎকে গেলো আর মৃত্তিরাই বা কোথায়। ওদের কি পায় নি?

-বল এবার কি প্রমাণ করতে চাইছিস? (আরহাম)

-রোহান এর কাছ থেকে শুনে নে। (মিরহাদ)

রোহান এবার অবাক হলো “কি শুনবে আমার কাছ থেকে। মির আরআরহাম সায়নির ব্যাপারটা জানতে চাইবে না’তো! সত্যিটা জেনে গেলে তো কিন্তু আমিই বা চুপ করে থাকবো কি করে। দু’জনই আমার খুব কাছের মৃত্তিকে পাওয়ার লোভে কোন অন্যায় করে ফেলবো না’তো!”

আরহামের দৃষ্টি রোহানের দিকে সে জানতে চায় কি প্রমাণ করতে চাইছে মির?

-“আমরা যখন লাস্ট টাইম এ বাড়িতে এসেছিলাম তখন সায়নি কে আমরা প্রথমে কোথায় দেখেছিলাম?” মির প্রশ্ন করলো।

রোহান যেই জিনিসটার ভয় পাচ্ছিলো ঠিক সেটাই হচ্ছে। মির নির্দোষ আজ বোধ হয় জেনেই যাবে আরহাম। আরহাম এবার নিজেও প্রশ্ন করলো রোহানকে।

-“আআআমরা যখন ঢাকা থেকে এখানে এসেছি তখন প্রায় সন্ধ্যের আগ মুহুর্ত ছিলো। আমরা কলেজ রোড দিয়ে গ্রামে আসছিলাম কারন ওপাশটায় রিকশা চোখে পড়েছিলো। মিরের গলা শুকিয়ে গিয়েছে বলে তোদের কলেজের পাশে যে রেস্টুরেন্ট ছিলো সেখানে পানির বোতল কিনতে যায়।আমি রিকশা,দাঁড় করাচ্ছিলাম তখন মির পানি না কিনেই চলে আসে আর বলে যে সে তোর কাজিন সায়নিকে দেখেছে একটা ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠমুহুর্তে। প্রথমে আমি অবাক হই পরে ভাবি এটা অসম্ভব কারণ তুই সবসময় বলতিস তোদের বাড়িতে সবাই খুব স্ট্রিক্ট সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে কখনো থাকতে পারিস না। মির এর কথা শুনে আমি নিজেও যাই তখন সায়নি রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। এরপর যখন তোদের বাড়ি পৌঁছাই তখন দেখি তোর দাদু গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সায়নিকে জেরা করছে। সায়নি বলেছিলো সে কোচিং এ ছিলো। কিন্তু কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা দু’জন প্রথমে ঠিক করি তোকে বলবো পরে ভাবলাম তোরা সবাই খুব কষ্ট পাবি তাই মিরকে বলি সে যেন নিজেই কথা বলে সায়নির সাথে এ নিয়ে। করিও তাই পরেরদিন সায়নিকে ছাঁদে ডেকে নিয়ে মির অনোক বোঝায়। প্রেম করা অন্যায় না কিন্তু তা হতে হবে সৎ ও সঠিক মন মানসিকতার। আমি তখন ছাঁদ থেকে নিচে যাই একটু সিগারেট ধরাতে। এই ফাঁকে তুইও ছাদে চলে আসিস। তখন মির আর সায়নিকে এক সাথে একা দেখে তোর মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।কিন্তু মির সায়নিকে বলে দেয় তোকে সবটা জানাবে কারণ আমরা তিন বন্ধু কখনও কিছু লুকাই না একে অপরের থেকে। সায়নি ওয়াদা করায় যেন তোকে কিছু না বলে কিন্তু আমি তো আগে থেকেই জানতাম। সায়নি টিপু নামের একটা ছেলের সাথে প্রেম করতো। ওই ছেলে সায়নিকে ফাঁসিয়ে ভিডিও বানায়। আর আমরা যতদিন এ বাড়িতে ছিলাম প্রায় প্রতিদিন সায়নি মিরের সামনে কান্না করেছে। আমরাও তাকে নিজের বোন ভাবতাম তোর বোন বলে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ ছিলো মিরের হয়তো তাই যতবারই তোর চোখে সে আর সায়নি পরেছে তুই প্রত্যেকবারই বাজে ভেবেছিস। আর যেদিন সায়নি আত্মহত্যা করেছে সেদিন সায়নি ওই টিপুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।টিপুর থেকে ভিডিও ক্লিপ নিতে কিন্তু টিপু ভিডিও ক্লিপ দেয়নি বরং সায়নিকে রেপ করতে চেয়েছিলো। মির তাকে সেখান থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে টিপুকে হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে মাথাও ফাটায় কিন্তু আফসোস সে বেঁচে পালিয়ে যায়। আর সায়নি নিজের সম্মানের জন্য মিরকে হাত জোর করে বলে বাড়িতে যেন কাউকে কিছু না জানায়। মিরও বলে নি কাউকে ভেবেছে সায়নির সম্মানের জন্য চুপ থাকাই ব্যাটার।

-“কিন্তু না মেয়েটা আমাকে ভরসাই করলো না। সে রাতেই সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ” বলেই মির কেঁদে দিলো। রোহান এবার চুপ। সেখানে উপস্থিত সবার দৃষ্টি মিরের দিকে আর আরহামের দৃষ্টি মাটির দিকে।। এবার পেছন থেকে সায়ন বলে উঠলো হ্যা,সায়নি মিরকে ভাইয়ের চোখে দেখতো। মির তাকে অনেক সাহায্য করেছে যেটা আমরা তার আপন ভাই হয়েও পারিনি। সায়নির আত্মহত্যার পেছনে কারণ ছিলো ভয়।টিপুর ভয়, সম্মানের ভয় আমি পেয়েছিলাম সায়নির ডায়েরি। তার মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া সব কথাই আমি পড়েছি।

ঠাসসসসসসসসসসস,,,,,,, সায়নের গালে খুব কষে থাপ্পড় লাগালো আরহাম।মুহুর্তেই চমকে গেলো বাড়ির সবাই । বড় বাবা তো চিৎকার করে ডেকেই উঠলো “আরহাম”

তোমার সাহস কি করে হয় বড় ভাইয়ের গায়ে হাত তোলার। কিন্তু সায়ন চুপ হয়তো সে থাপ্পড়ের কারণটা আগেই বুঝতে পেরেছে।

হ্যা,বোঝারই কথা কারণ সায়ন জানতো আরহাম সায়নির আত্মহত্যার জন্য দায়ী মিরহাদকেই মানতো। তাহলে সে সত্যিটা জেনেও চুপ করে ছিলো কেন। কেন এই দুইটা বছরে একবারও বলার চেষ্টা করেনি মিরহাদ দায়ী নয় বরং সাহায্যকারী ছিলো সে। আর রোহান সে কেন বলল না কিছু। আর মিরই কেন সত্যিটা জানানোর চেষ্টা করলো না।

আরহাম কাকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তবে সায়ন নিজেই বলল ” আমি ডায়েরি পেয়েছি সায়নির মৃত্যুর অনেকদিন পর। ততদিনে এলাকায় আত্মহত্যার ঘটনাটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আমি যদি টিপুর কথাটা বলতাম তাহলে আবার নতুন করে ঝামেলা হতো। আমি তো নিজেকে শান্ত করে রাখার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তুই সেটা কখনোই পারতিস না। টিপুকে খুঁজে বের করে হলেও তুই তাকে খুন করতি।'”

আরহামের এবার রাগ সপ্তআসমানে সে কিছুতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। বাড়ির গেইটে খুব জোরে ঘুষি মেরে বসলো হাত লোহার গেইটে লেগে ঝরঝর করে রক্ত ঝড়তে লাগলো। মৃত্তিকে নিয়ে কেবলই ফিরলো জিনিয়া আর তুবা। বাড়িড় সবাই দৌড়ে আরহামকে ধরতে যাচ্ছিলো কিন্তু মৃত্তির পায়ে ব্যান্ডেজ দেখে আবার তার দিকে ঘুরলো। মিরহাদ আগে বন্ধুর কাছেই গেলো। আরহাম মাথা নিচু করে নিচে বসে আছে। কি ভুল করেছে সে তাকে এতো শাস্তি পেতে হলো কেন। প্রানের প্রিয় বন্ধুকে দু’দুটো বছর ভুল বুঝে গেছে। এমনকি খুন পর্যন্ত করতে চেয়েছিলো রাগের মাথায়। মৃত্তিকে অপমান করেছে কতবার খুনীর বোন মনে করে। মিরকে দুশ্চরিত্র ভেবেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানতে পারলো সে নিজেই ভুল করেছে বন্ধুকে ভুল বুঝে। মৃত্তিকে মির কোলে করে রুমে পৌঁছে দিয়ে এসেছে। রোহান হঠাৎ করেই সবার সামনে থেকে গায়েব হয়ে গেলো।বাড়ির সবাই মৃত্তির আদর যত্ন করে চলছে কিন্তু মৃত্তির নজর শুধু আরহামকে খুঁজছে। সে ছোট মাকে জিজ্ঞেস করেই বসলে “উনি কোথায়”?

উনি কে?

-ছোট মা উনি মানে আরহাম স্যার।

ছোট মা এবার হেসে ফেললো। তোমার উনি’র হাতে ব্যাথা ভাবী গিয়েছে ব্যান্ডেজ করাতে। নিচেই হবে হয়তো।

-আর ভাইয়া কোথায়?(মৃত্তি)

মিরের কাছে তোমার মা আছে তারও দেখলাম ঠোঁট কেটে গেছে গাল ফুলে আছে।

-হুম দু’জন দু’জনের মুখে ঘুষি মেরেছিলো তাই এমন অবস্থা। ছোট মা এবার মৃত্তিকে একটু রেস্ট নিতে বলল তিনি তুবাকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিবে।

জিনিয়ার এখনো হাত -পা কাঁপছে চোখের সামনে এত মারামারি দেখে সে এখনো আতঙ্কে আছে৷ সে কাউকে কিছু বলতেও পারছে না। কড়িডোরে এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ সাদনান কোথা থেকে এসে তার পাশে দাঁড়ালো।

আমি একটু বাড়ির বাইরের দিকে ছিলাম এসে শুনি মৃত্তির হাজবেন্ড আর তার ভাই খুব মারামারি করেছে। কি হয়েছে বলতো আর তোমরাই বা এত লেইট করলে কেন? (সাদনান)

তেমন কিছু না একটা মিসআন্ডাসটেন্ডিং ছিলো। (জিনিয়া)

-“ওহ আচ্ছা শোন আমি আর তুমি কাল চলে যাবো। ওদের ফ্যামিলির সাথে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।” সাদনান জিনিয়ার হাতটা ধরতে ধরতে বলছিলো কথা গুলো। জিনিয়া হাসফাস করতে লাগলো সাদনানের এভাবে হাত ধরায়। সাদনান বরাবরই জিনিয়ার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত হয়তো সেজন্যই এতো বেশি অস্বস্তি হয় তাকে পাশে দেখলে।আর এমনই সময় মিরও আসলো এদিকটায়। সাদনান জোর করে জিনিয়ার হাত ধরছে চোখ এড়ালো না মিরের। কিন্তু সে কি করবে ওদের মাঝে সে কেবলই থার্ড পার্সন তাই রাস্তা বদলে উল্টো দিকে চলে গেল।সে আরহামকে খুঁজছিলো কিন্তু আরহাম উপরে নেই। আরহাম রোহানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদে। রোহান টেনশনে কি বলবে আবার যা বলার ছিলো জানার ছিলে সব তো হয়েই গেলো।

মির অনেক খুঁজে ছাদে আসলো। দরজা থেকেই চোখে পড়লো আরহাম আর রোহান ছাঁদে।

রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আরহাম। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে রোহানকে প্রশ্ন করলো “কেন বলিসনি সত্যিটা এতগুলো দিন “?

রোহান কাচুমাচু করছে কি বলবে তবে সত্যি এটাই সে চেষ্টা করেছে সত্যিটা জানাতে। কিন্তু আরহাম মিরের নামটাও শুনতে নারাজ। সে কখনোই সুযোগ দেয় নি বা শুনতে চায় নি মিরকে নিয়ে কোন কথা। রোহান নির্ভয়ে সত্যিটাই বলে দেয় যে সে বহুবার বলতে চেয়েছে আরহাম নিজেই শুনতে চায় নি। আরহাম লজ্জিত, অনুতপ্ত। ভুল তারই কেন সে এতোটা জেদ আর রাগে অন্ধ ছিলো যে সত্যিটা জানার চেষ্টা করেনি তবে তার চেয়ে বেশি কষ্ট ছিলো একমাত্র বোনকে হারানোর তাই আগে পিছে ভাবার মত মন মানসিকতাই ছিলো না। আরহাম নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগলো কি করে হবে মিরের মুখোমুখি? রোহান এবার জাপটে ধরলো আরহামকে কাঁদতে দেখে। কিন্তু মির এর আর সহ্য হলো না। সে পিছন থেকে বলে উঠলো ” শালা ঢং শিখেছিস মেয়েদের মত ন্যাকা কান্না করছিস! ” রোহান হেসে দিলো মিরের কথায় কিন্তু আরহাম ঘাড় তুলে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত মির এবার আরহামের পিঠে জোরে ঘুষি মেরে আরহাম রোহান দুজনকে জাপটে ধরলো। তিনবন্ধু খুব একে অপরকে জরিয়ে ধরলো। আর একে একে তিনজনই বলে উঠলো “লাভ ইউ দোস্তো ”

চলবে

(আজকের এই পর্ব লিখতে গিয়ে এতটুকু বুঝলাম আর যাই হোক আমাকে দিয়ে কখনো থ্রীলার গল্প লেখানো সম্ভব না। একটা সামান্য প্যাচের বর্ণনা লিখতে মাথার অবস্থা জগা খিচুড়ী)😐

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here