#তোর দিওয়ানা শুধুই আমি😎
#My madness love😍
#লেখিকা_তামান্না
#বোনাস_পার্ট(রহস্যের সমাপ্তি)
তামান্না আনমনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তার মনের গহীন থেকে শুধু একটা কথাই উচ্চারিত হচ্ছে। যে সালমান নির্দোষ। কিন্তু মস্তিষ্ক সেটা মানতে রাজি নই। কেননা সে যা দেখেছে তা কি আদৌ সত্যি নাকি মিথ্যে !
~ কেনো এই দুনিয়ায় এতো পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়? কেনোই বা সব এতো কঠিন! তুমি দিয়েছো আমায় ভেঙে, আমি হয়েছি নিজের ভাঙা হৃদয়ের এক…(চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে পড়ে) এক নিরীহ মন(তামান্না)
তামান্না হেঁটে যাচ্ছে তখন তার ফোনে কল আসে। সে চোখ মুছে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে সেখানে নিরুর নাম ভেসে আসছে। এ দেখে তামান্না মনে মনে বলে….
~ নিরু কে কিছুই বুঝতে দেওয়া যাবে না। নইতো বেচারী শুধু শুধু আমাকে নিয়ে টেনশন করবে।
সে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে কল কানে দিতেই অপরপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।
তামান্না উওেজিত হয়ে জিগ্গেস করে ~ নিরু কি হলো? কান্না করছিস কেন? বল কি হলো?
নিরু হিচকি তুলে কোনো ভাবে কান্না থামিয়ে বলে ~আ…আপ্পি নি….নিলু দি…(বলতে গিয়ে আবারো কান্না করতে লাগে)
তামান্না এবার চিন্তায় পড়ে যায়। সে নিরুকে শান্ত গলায় বলে ~ নিরু কান্না থামা প্লিজ! থামিয়ে বল প্লিজ নিলু কি??
নিরু একদীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ::: দিই নিলু ভাবির এক্সিডেন্ট হয়েছে(কান্নায় ভেঙে পড়ে)
তামান্না এ কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। এ যেনো বিশ্বাস করার মতো না। সে কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে জিগ্গেস করে::: নিরু আ…আবার বলতো কি বললি??
নিরু কিছু বলতে না পেরে কলটা সুমনার হাতে ধরিয়ে দেয়। সুমনা নিয়ে ভাবে সে কাকে কি বলবে? দুই বোনই কান্নায় ভেঙে গেছে। সে নিজেও স্তব্ধ। সুমনা সাহস করে কলটা কানে ধরে বলে….
~ তামু বুনু আমি সুমনা (শান্ত কণ্ঠে)
তামান্না শুনে বলে :: কে কবে কখন হলো??(শান্ত কণ্ঠে)
সুমনা বলে ::: বুনু সব বলবো তুমি হসপিতালে চলে আসো। রোডগাউন তুলি মেহরুপপুর হসপিটালে চলে আসো।
তামান্না কল রেখে আর একসেকেন্ডও দেরি করলো না। সে রিকশা উঠে রওনা দিলো।
🌿🌿
~ বস আপনি যদি নদীতে পড়ে যান? তাহলে বেঁচে যান কি করে? আর যেই নদীতে পড়লেন সেই নদীর নাম তো কর্ণফুলি নদী। যেখানে পানির স্রোত সবচেয়ে বেশি হয়।
(সোহেল অবাক হয়ে সালমানের দিকে তাকিয়ে)
সালমান দেওয়ালে পিঠ ঠেসে বলে :::: আল্লাহর রহমতে বেঁচে যায়। উনি আমাকে সেই গভীর স্রোতের বিনিময়ে নিয়ে যান এক ভালো মানুষের কাছে।
সোহেল মুচকি হেসে ~ হেকমাত বাবা?
সালমান শুনে তার দিকে তাকিয়ে আবারো তামান্নার ছবির দিকে দৃষ্টি করে বলে ~ Yes. The big Mafia Father Hakmat Chowdhury. উনি আমাকে নদীর ধারে অজ্ঞান পান। সে থেকে আমাকে চিকিৎসা করান। উনার মাধ্যমে পাই এক ভাই রোয়েন। তার সাথে কলেজের বাকি জীবন পাড় করতে থাকি। কিন্তু রোয়েন জানে না যে তার বাবা আর আমি মাফিয়া। উনি উনার ছেলেকে এসব থেকে দূরে তো রেখেছেন। তবে আমি তো জন্ম থেকেই একা ছিলাম। কেউই ছিলো না, শুধু ছিল তামান্নার সাথে কাটানো সব মুহূর্তের স্মৃতি।
~তবে আমি ভুলি নি আমার প্রতিশোধের কথা নীল আমার আর তামান্নার সাথে যা করেছে তার জন্যে আমিও প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। হেকমাত বাবার সাথে মাফিয়া জগতে পা রেখে হয়ে গেলাম The great Mafia king of Every country.
সোহেল সালমানের কাঁধে হাত রেখে বলে ::: বস চলেন ভাবির ভুল ভেঙে দেয়(টেডি স্মাইল দেয়)
সালমান নিজের মাথা নাড়িয়ে তামান্নার ছবির দিকে তাকিয়ে বলে ::: আসতেছি জান। ওয়েট এন্ড ওয়াস(ছবিতে তামান্নার কপালে চুমু দিয়ে)
সোহেল দুষ্টুমির ভাব করে বলে::: মনে হচ্ছে রুম থেকে এক-দুই সেকেন্ডের জন্যে বের হওয়া লাগবে!(গালে হাত দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ) কারো কি প্রাইভেসি দরকার!?
সালমান চোখ রাঙিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে::: বালের পান্স দেবো??
সোহেল মুচকি হেসে বলে ::: আচ্ছা সরি বস চলেন।
তারা বের হওয়ার আগেই সোহেলের ফোনে একটা মেসেজ আসে। যা তাদের এক ইনর্ফোমার দেয় যে সবসময় নজর রাখে তামান্নাদের বাসায়। সে মেসেজ টা ওপেন করে নিলার এক্সিডেন্টের কথা জানতে পারে।
সে সাথে সাথে সালমানকে স্টোপ করে বলে ::: বস বস বস!
সালমান::: কি হয়েছে? এভাবে তড়ফড় করছিস কেন?
সোহেল ::: স্যার নিলা আপুর এক্সিডেন্ট হয়েছে।
সালমান শুনে উওেজিত হয়ে বলে:::: বুঝছি আমাদের থেকে এখনই হসপিতালে যেতে হবে। নীল তামান্নার ব্রেনে অন্যকিছু ঢুকিয়ে দিক। তার আগেই আমাদের থেকে আমাদের কাজ করতে হবে।
সোহেল নিজের মাথা নাড়িয়ে সালমানের সাথে রওনা দেয়।
🌿🌿
তামান্না অপারেশন থিয়েটারের সামনে হাঁটাহাঁটি করছে। নিলা তার বেস্টু। তার এমন অবস্থা দেখে চিন্তায় শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সে সুমনার হাত ধরে অন্য পাশে নিয়ে গিয়ে জিগ্গেস করে…..
তামান্না ::: সুমু কি হলো সব খুলে বলো?
সুমু বলতে লাগে :: তামু নিলু আর আমি শপিংমলে গিয়েছিলাম। সব কেনাকাটি করা শেষে আমরা যখন বের হবো তখনই নিলুর ফোনে কল আসে। সে কল উঠিয়ে দেখে নীল ভাইয়া কল করছে।
তামান্না শুনে ::: নীল??
সুমনা শুনে নিজের মাথা নাড়িয়ে আবারো বলে ::: নিলা আপু কে রোডের কোন সাইডে দাড়িয়ে আছে বললো। তাই নিলু আপ্পি আমাকে চলে যেতে বলে নিজে একলাই সেখানে গেলো।
তামান্না শুনে বলে::: নিলুর ফোন কোথায়?
সুমনা তার ব্যাগ থেকে নিলুর ফোন বের করে তাকে দেয়। তামান্না একঘণ্ঠা আগের সব কল দেখতে থাকে। কিন্তু নীলের ফোন আসছে যে বললো সেই নামের কোনো কলই যেনো ডায়লগে নেই। তামান্না মনে মনে বলে….
~ বুঝছি এতে কারো হাত আছে! কেউ আমার বেস্টুকে মারার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু যেই বা করছে তাকে আমি ছাড়বো না। কখনোই না এই মাফিয়া কুইন থেকে বাঁচা অসম্ভব।
সুমনা তামান্নার কাঁধে হাত রেখে বলে :::: কিছু হবে না নিলুর। সে ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করো।
তামান্না শুনে নিজের মাথা নাড়িয়ে অন্যদিকে ফিরে দেখে সালমান আর তার সাথে একটা ছেলে আসতেছে। সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। নিরু নিলুর পরিবারের সবার চোখে পানি।
প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে ডাক্তার তড়িঘড়ি করে ওটি থেকে বের হয়ে বলে ::: আপনাদের মধ্যে মেয়েটার বাবা-মা কারা?
নিলুর বাবা-মা ::: আমরা! আমাদের মেয়ের খবর কি ডক্টর?(কান্না করে করে হিচকি তুলে ফেলে)
ডক্টর উদাস ফেস নিয়ে বলে ::: এখনো কিছু বলতে পারছি না। আপনার মেয়ে মাথায় প্রচুর আঘাত পেয়েছে সাথে দুই হাতের বাহুজোড়াও ভেঙে যায়। অপরাশেন তখনই সাকসেসফুল হবে যখন উনার জ্ঞানদ আসবে এর আগে কিছুই বলতে পারছি না। এখন সব কিছু আল্লাহর হাতে। আমরা আমাদের মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনারা দোয়া করতে থাকুন।
ডক্টরের কথা শুনে নিলুর আম্মু আরো ভেঙে যান। নিরুর সাথে আম্মুও এসেছিলো। আম্মু নিলুর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা করতে থাকে।
তামান্না সবার দুঃখর্মাকা ফেস দেখে নিজেই নিজের কাছে হেরে যাচ্ছে। কিন্তু সে জানে তার বেস্টু তাকে ছেড়ে যাবে না।
সে পাশ ঘুরে অন্য চেয়ারে গিয়ে বসে দুইহাত তোলে বলে :::
“ইয়া আল্লাহ রহম করো তোমার এই গুনাহগার বান্দীদের উপর। হেদায়াত দান করুন। আমার বাল্য,কিশোর, যৌবনকালের বান্ধবী নিলা তাকে ফিরে দেন আমাদের মাঝে,বাঁচিয়ে দেন তার জীবন। দেখিয়েন আমায় সঠিক রাস্তা। আমি আটকা পরেছি ভালোবাসা আর সংগ্রামের মাঝে। কোন দিকটায় সায় দেবো বুঝতে পারছি না ইয়া মালিকুন ইয়া জাব্বারুর রহিম। নিশ্চয়ই তুমি অামাকে ধর্য্য ধারণের শক্তি দেবেন। আমার দোয়া কবুল করুন ইয়া রাব্বি ইয়া রাব্বুলআলামীন। আমিন ”
তামান্না দোয়া করে দুইহাত মুখে লাগিয়ে নিজের মোনাজাত শেষ করে ফেলে। তখনই তার মাথায় হঠাৎ এক প্রশ্ন জেগে উঠে। সে মনে মনে বলে….
~এখানে আমরা সবাই আসছি! অথচ যার থেকে মেইনলি থাকতে হবে! সেই নেই? কেনো?(তামান্না কিছুটা সন্দেহ করে)
~নীলই এসব করছে আমি গ্যারান্টি দিতে পারবো!(সালমান বাঁকা হেসে বলে )
তামান্না ভ্রু কুচকে বলে ::: আপনি এখানে?
সালমান হামি দিয়ে বলে ::: তুমি যেখানে আমি সেখানে(চোখ টিপ মেরে টেডি স্মাইল দিয়ে)
তামান্না রেগে বলে ::: এখানে আমার বেস্টুর লাইফ রিস্কে আর আপনি কিনা হাসি- ঠাট্টা এসবে পড়ে আছেন(দুইহাত বুকের উপর গুজে রাগে ফুসতে ফুসতে বলে)
সালমান এবার ধমক দিয়ে বলে :::: আরেকবার যদি নিলার মরার কথা বলিস। তাহলে আমার চেয়ে বারো খারাপ আর কেউ হবে না!
তামান্না তার দিকে তাকায় দেখতেই ভয় পেয়ে যায়। কেননা সালমান প্রচুর পরিমাণে রেগে যাওয়ায় তার চোখজোড়া রেগে ছলছল করতে থাকে।
সালমান বলে ::: নিলা আমার বোন আমি তাকে খুব ভালোই জানি বুঝছিস?? সো আর বলবি না।
সে ঘুরে চলে যতে লাগলেই পিছে ঘুরে বলে :::: তুই যে আমার কথা না শুনে ভুল বুঝে ফেললি! তার ফল নিজেই বুঝবি। মেরি জান টিয়া পাখি।
সে বলে চলে গেলো। তামান্না সেখানেই ঠাই মেরে দাড়িয়ে রইলো। তার ব্রেনে যেনো আবারো জোরে জোরে ধাক্কা লাগতে থাকে। সে আশপাশে ঘুরে পানির ফ্লিটার পেয়ে পায়। সে গিয়ে তাড়াতাড়ি পানি ঢেলে খেয়ে নেয়।
খেয়ে চেয়ারে বসে বলে::: কেনোই বা লাগছে সালমানের কথায় সত্যতা আছে ! (চিন্তিত প্লাস সন্দেহের ভঙ্গিতে)
সে এবার নিজেকে শক্ত করে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ভেলেনিয়া লোয়া অফিসের হেডলাইনে কল করে। রিয়া এসে কল উঠিয়ে কানে ধরতেই…
তামান্না~ হ্যালো মিস রিয়া। আমি তামান্না।
মিস রিয়া ~ ওও আচ্ছা। আমার বসের নামও তামান্না।
তামান্না চোখ ঘুরিয়ে বলে :::;: I’m the mafia queen tamanna.
রিয়া শুনে শকড হয়ে আমতা আমতা করে বলে::: I’m sorry mam. আমি বোঝতে পারিনি। এটা আপনি।
তামান্না শুনে :: আরে রিয়া ইটস ওকে। তোমাকে আমি মেসেজ করেছিলাম। এক্সিডেন্টের ব্যাপারে ডিটেলস দিতে!খুঁজে পেয়েছো??
রিয়া ::: জী ম্যাম। সে বলতে লাগে…
~ম্যাম রয়েল মার্কেটের সামনে নীল নামের এক ছেলে ওয়েট করতেছিলো। কিন্ত সে অন্য আরেকজনের সাথে কথা বলতে অন্যদিকে চলে যায়। তখন নিলু ম্যাম সেদিকে আসতেই দুই ছেলে উনাকে ঘিরে ধরেছিলো। এতে উনি বাঁচার জন্যে পাশে থাকা এক কাঁচের বোতল এক ছেলের মাথার উপর মারতে যাবে। তখনই…..ম্যাম ভিডিও রেকডিং এ যাস্ট এটুকুই দেখানো হয়েছে।
তামান্না শুনে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ::: ওকে আমাকে এড্রেস দাও।
তামান্না কল কেটে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে যাই। সে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে যায়। ওটির এখানে আসতেই কে যেনো তাকে ডাক দেয়।
সে পিছে ঘুরতেই নীলের সাথে ধাক্কা খাই। নীল তাকে ধরতে পারতো। কিন্তু তামান্না পড়ার আগেই চেয়ারের হেন্ডেল ধরে ফেলে। নীল তার সতর্কতা দেখে মনে মনে বলে….
নীল~ সালমান এর সাথে ধাক্কা খেয়ে তার উপর পড়তে বেশিক্ষণ লাগাও না। অথচ আমার উপর পরতে গিয়েও পড়ো না হেন্ডেল পেয়ে যাও। যাক যাই হোক তুমি তো আমারই হবে(ডেভিল স্মাইল দিয়ে)
………..চলবে………
[বিঃদ্র::: কালকে ধামাকা পার্ট দুই মাফিয়া মিলে নীল আর প্রিয়ার এর তেরোটা বাজাবে। এখন তো ক্লিয়ার হলোই মাফিয়া কুইন হলো তামান্না। এরপর শেষ পার্ট দিয়ে এই গল্পের ইতি টানবো। তারপর বাকি দুই গল্প রানিং দেবো ইনশাআল্লাহ। হেপ্পি রিডিং ]