মেঘনিবাসী #Part-7 #Esrat_Jahan

0
211

#মেঘনিবাসী
#Part-7
#Esrat_Jahan

খুব ভোরে বিভার কানে এলো একদল পাখির কিচিরমিচির ডাক৷ কর্ণকুহরে বারি খেতেই ওর ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ পিটপিট করে খানিকটা সময় বোঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে সে! মনে পড়তেই অলসতা কেটে যায়। তবুও কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে তবেই ওঠে বিভা। এটা ওর পুরোনো অভ্যাস। বিছানায় একবার গা এলিয়ে দিলেই সে বিভাকে আর ছাড়তে চায় না সে। মন্থর ভাবটা কাটিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়ে বাইরে দৃষ্টি মেলতেই দেখতে পেল সকালের সৌন্দর্য। আকাশে নানা রঙের খেলা আর বৃষ্টি ভেজা সতেজ ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছিলো হাওয়ার সাথে। বিভা কিছুক্ষণ থম ধরা দৃষ্টিতে প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করে। এই এলাকাটা বড় বেশি শান্ত, নিরব আর চুপচাপ বলে সকালবেলা পাখির কলরব শুনতে বেশ ভালোই লাগছে বিভার। আরো কিছুক্ষণ ওভাবে থেকে বিছানা থেকে নেমে পড়লো ও৷ ফ্রেশ হয়ে এসে ভাবলো ঘর থেকে বেরুনো উচিৎ কি-না! অতঃপর বেরুনোটাই শ্রেয় মনে হলো ওর। ভালো করে গায়ের ওড়নাটা জড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলে ধীরপায়ে বেরুলো বিভা। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো করিডোরেই।

ফোনে হাতে কথা বলতে বলতে নাস্তা করার উদ্দেশ্যে ডাইনিংয়ে যাচ্ছিলো মেহরাব। রেগে রেগেই সম্ভবত ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো ও। আর বিভা তখন মাথা নিচু করে ফ্লোরে দৃষ্টি রেখে আনমনে হাঁটছিলো। সামনে থেকে আসা ব্যক্তিটিকে ওর চোখে পড়লো না। আর মেহরাবও খেয়াল করেনি সামনে কে আছে! যার দরুন করিডোরের মাঝ বরাবর আসতেই বরাবর ধাক্কা খায় দু’জন। ফলে মেহরাবের হাত থেকে তার অতিপ্রিয় ফোনটা ছিঁটকে পড়লো পাশের স্ট্যান্ডে রাখা কাচের অ্যাকুরিয়ামটার জলে। আর টাল সামলাতে না পেরে বিভা অ্যাকুরিয়ামের স্ট্যান্ড’টাতে ধাক্কা খায়। যার ফলে কাচের অ্যাকুরিয়ামটা উঁচুস্থান থেকে ফ্লোরে পড়ে ফেটে যায় এবং জল পড়ে ফ্লোর ভেসে যায়। আর ফোনটা মেঝেতে পড়ে বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে এদিকওদিক ছড়িয়ে পড়ে। আকস্মিক এমন একটা ঘটনায় বেশ ভড়কে যায় বিভা। নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ায় একপাশে। মেহরাব অবাক দৃষ্টিতে তখনো তাকিয়ে আছে ওর ফোনটির দিকে। লাল হয়ে আসা চোখগুলো বিভার দিকে পড়তেই চেঁচিয়ে উঠে বলে, ‘হোয়াট দ্যা হেল? এটা কী করলেন আপনি …’

বিভা ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলল, ‘দুঃখিত, ভীষণ দুঃখিত। আমি আসলে দেখতে পাইনি।’

বলেই ফ্লোর থেকে ভেজা ফোনটার দিকে হাত বাড়িয়ে তুলতে নিলেই মেহরাব বাঁধা দেয়। রাগে জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো, ‘চোখ কোথায় থাকে আপনার? দেখে শুনে চলতে পারেন না? আর চলতেই যখন পারেন না তখন বসে থাকলেই তো হয় হাঁটার দরকার কী? যত্তসব …’

বিভা অপমানিত বোধ করে। মাথা নিচু করে বলল,
‘আমি সরি বলেছি!’

‘সরি ইজ মাই ফুট। যত্তসব কেয়ারলেস পার্সন। দেখেশুনে ঠিকমতো হাঁটতেই তো পারছেন না
আবার আসছেন সরি বলতে! ননসেন্স কোথাকার। আর কে আপনি? আমার বাড়িতে কী করছেন?’

বিভা নতকন্ঠে বলল, ‘আমি ব বিভা।’

মেহরাব ভ্রু কুঁচকে একবার ওকে আগাগোড়া দেখে নিলো। তারপর মেঝে থেকে ভাঙা ফোনটা তুলে বিরক্তির সুরে বলল, ‘আপনাকেই তো মা কাল রাতে স্টেশনে আনতে গিয়েছিল! আপনি আমাদের বাসার গেস্ট? রাইট?’

‘জি।’

‘এসেছেন মাত্রই। আর এখনি অন্যের জিনিসপত্র নষ্ট করা শুরু করেছেন, এতটা কেয়ারলেস কেন আপনি?’

বিভার কান্না পাচ্ছে। ভীষণ অপমানে গাল লাল হয়ে আসছে ওর। এরকম বিদঘুটে পরিস্থিতিতে পড়েনি কোনোদিন। আর এই লোকের কথাবার্তা লাগামছাড়া। বিভা কোনোমতে বলল, ‘আমি জায়গাটা পরিষ্কার করে দিচ্ছি আপনি একটু ওয়েট করুন।’

মেহরাব চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে লাগল, ‘ইউ লিসেন। আপনার মতো চোখ থাকতে অন্ধ মেয়ের এসব কাজ করারই দরকার নেই। আমাদের বাড়িতে এসব কাজ করার জন্য আলাদা লোক আছে। যাকে তাকে দিয়ে এইসব কাজ করাই না, ওকে? আর কথা বলে আমার টাইম ওয়েস্ট করার দরকার নেই। নেক্সট টাইম দেখে শুনে চলবেন।’

বলেই মেহরাব রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। বিভা ওর চলে যাওয়া দেখলো অনিমেষ চোখে। এই তাহলে আরিয়ার ছেলে? এত রাগ? ভুল তো মানুষের হতেই পারে। তাছাড়া ও নিজে কেন দেখলো না যে সামনে একটা মেয়ে আছে? নিজের ভুলটা না দেখে বিভাকে দু’মিনিটেই কেমন ধুয়ে দিয়েছে ওয়াশিং মেশিনের মতো৷ কতগুলো কথা শুনিয়ে দিয়ে গেল, যেন এ বাসায় থাকতে আসাটা এই লোকের পছন্দ হয় নি! বিভা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন একজন মেয়ে। আর তাঁকে এতো নিচু করে কথা বললো যে, ব্যাপারটা মানতে বিভার খুব কষ্ট হচ্ছে!

Continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here