🍁আরহাম🍁 #The_Innocent_Boy #Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা #পর্ব (২৩)

🍁আরহাম🍁 #The_Innocent_Boy

#Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা

#পর্ব (২৩)
_________
-” কি কইলি তুই আবার ক”।চোখ রাঙিয়ে বলছে মৃত্তি।

-“দেখ মৃত্তি হাইপার হোস না এটা আমাদের ভার্সিটি আশেপাশে অনেকেই দেখছে আমাদের। আর আমার ভাগ্য আমি মেনে নিয়েছি তুইও সব কিছু মেনে নে” মুখটা গোমড়া করে বলছে জিনিয়া। কিন্তু মৃত্তি এসব মেনে নেওয়ার পাত্রী না তাই আচমকা সে জিনিয়ার চুল গুলি মুঠোপুরে হ্যাচকা টান লাগালো।ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো জিনিয়া। সে ভাবতে পারেনি মৃত্তি এখানে এমন কিছু করবে।

–তুই আমার ভাইরে রাইখা আরেক পোলারে বিয়া করবি?? আর হেই কথা আমার সামনে বইয়া কইবি ভাবলি কেমনে?

মৃত্তির এমন হঠাৎ আক্রমণ জিনিয়ার বোধগম্য ছিলো না। ব্যাথায় প্রায় কেদে ফেলল জিনিয়া।
আর ওই মুহুর্তেই আরহাম ওদিক দিয়ে যাচ্ছিলো। মৃত্তিকে এভাবে জিনিয়াকে মারতে দেখে চলে যাচ্ছিলো পরেই খেয়াল করলো মৃত্তি মেয়েটাকে ছাড়ছে না। প্রথমে একটু হেজিটেট হলেও পরে ব্যাপারটা ডেন্জারাস মনে হলো তার। তাই দ্রুত ওদের সামনে গিয়ে মৃত্তিকে ধমকে উঠলো।

-“এই মেয়ে ছাড়ো ওকে ছাড়ো বলছি।” মৃত্তি আরহামকে না দেখেই বলে উঠলো “তর বাপের কি আমি ওরে মারুম না আদর করুম ।” কন্ঠস্বর খেয়াল হতেই মৃত্তি জিনিয়াকে ছেড়ে বসা থেকে তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে গেল জিনিয়ার চুল ছেড়ে দিয়ে।

-“ইউ স্টুপিড গার্ল সব সময় এমন অসভ্যের মতো আচরণ কেন করো। মানুষ কি ভাবে তোমায় সেটাও কি তোমার মনে আসে না। আর এই মেয়ে তুমি এই অসভ্য মেয়েটার সাথে এখানে কি করছো। এখানে পড়তে আসো নাকি এসব ফালতু মেয়েদের সাথে আড্ডা দিতে?” (আরহাম)

মৃত্তির চোখে পানি টলমল করছে। হয়তো এই প্রথম তাকে কেউ এতোটা ইনসাল্ট করে কথা বলেছে। জিনিয়া একবার আরহাম তো একবার মৃত্তির দিকে তাকাচ্ছে। আস্তে করে “স্যরি” বলল জিনিয়া আরহামের দিকে তাকিয়ে। আরহাম দুজনের দিকে একবার দেখে চলে গেল নিজের কাজে।

মৃত্তি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে যেন নিষ্প্রাণ কোন মূর্তি। জিনিয়া আলতো করে মৃত্তির কাঁধে হাত রাখলো। তার চোখে পানি দেখে নিজেই কেঁদে ফেলল।

মৃত্তি নিজের চোখ মুছে তাড়াতাড়ি করে জিনিয়ার দিকে ফিরে বলল ” এই কান্দিস ক্যান আরে এই জিন আমার কিছু হয় নাই। স্যার তো এমনি বকছে আমার মন খারাপ হয় নাই। তবে তুই আমার ভাইরে বিয়া না করলে আমি কষ্ট পামু আমার ভাইও কষ্ট পাইবো।”

জিনিয়া এবার দু হাতের তালু দিয়ে নিজের চোখ, গাল মুছে মৃত্তিকে বলল ” তোর ভাই আমায় ভালোবাসে না কষ্ট পাবে কেন? ওনি আমায় পছন্দই করে না।”

একটা গাট্টা মারলো মৃত্তি জিনিয়ার মাথায়।
“হ তরে কইছে আমাট ভাই তরে পছন্দ করে না। এজন্যই সক্কাল সক্কাল আমারে রাইখা আমাগো বাড়ি থাইকা তরে লইয়া ভার্সিটি আহে। আমি তোর বয়ফেরেন্ডের কথা কইলে আমার ভাইয়ের এমনে এমনেই চোখ দিয়া আগুন বাইর হ য্যান আমারেই মাইরা ফালাইবো।” (মৃত্তি)

জিনিয়া মাথায় হাত ঘষতে ঘষতে বললো “এগুলো কবে করছে আর আমাকে নিয়া ভার্সিটি আসছে সেটা তো এমনি পৌছে দিচ্ছিলো। তুই যাস নি বলে আর আমি গাড়ি নিয়ে আসি নি বলে।”

-“আর একটা মিছা কতা কবি তাইলে আবার একটা লাগামু” বলেই মৃত্তি হাত উঁচু করলো জিনিয়ার গালের সামনে। আর জিনিয়া ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলল।মৃত্তি তার দিকে তাকিয়ে এমন কুঁচকানো চোখ মুখ দেখে এবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।

জিনিয়া এক চোখ খুলে মৃত্তিকে হাসতে দেখে এবার অবাক হলো সে।

-হাসছিস কেন এমন করে (জিনিয়া)

-তাইলে কি করমু তুই মুখের কি হাল করছিলি। (মৃত্তি)

-তো কি করবো তোরা দুই ভাই বোন শুধু কথায় কথায় আমাকে মারতে আসিস। (জিনিয়া)

-ওলে বাবু লে মন খারাপ করিছ না বিয়ার পর আরও খাবি। (মৃত্তি)

-তাইতো তোর ভাবিই হবো না (জিনিয়া)

– দেখমুনে তুই কেমনে অন্য কাউরে বিয়া করোছ আমার ভাইরে রাইখা। তারপর দেখবি আগে তরে খুন করুম পরে তোর জামাইরে। (মৃত্তি)

–“কেন করবি তুই জানিস আমি তোর ভাইকে কত্তো বছর ধরে ভালোবাসি। আর সে সব জেনেশুনে আমাকে বহু ইনসাল্ট করছে। আমি পিচ্চি আমি ভালোবাসার কথা বললে কানের নিচে লাগাবে। এখন কেন আমি তাকে বিয়ে করতে চাইবো আমি করবো না” বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে জিনিয়া।

মৃত্তি জিনিয়াকে টেনে জড়িয়ে ধরে।
“আরে ধুর কান্দিস ক্যান তুই যখন বলতি ভালোবাসার কথা তখন তুই ছোট আছিলি তাই বকতো। এহন তো বয়স হইছে এহন বিয়া করবো তো।” (মৃত্তি)

-হ্যা যখন আমার ওই চশমুওয়ালার সাথে কবুল বলা হয়ে যাবে তারপর করবে তোর ভাই।(মৃত্তি)

-“ওই আমি আছি কিজন্য? আমার ভাই কিছু বলার আগেই তুই আমাগো বাড়ি থাকবি। আইচ্ছা এইবার কাজের কথা ক বিয়া কবে ঠিক করছে তর? আর ডবল ব্যাটারির ছবিসহ ঠিকানা দে তো।” (মৃত্তি)

-ডবল ব্যাটরি মানে?

-মানে হইলো তর হবু জামাই চশমা পড়ে তুই কইলি না তাই আমি ডবল ব্যাটারি কইছি মানে আলগা চোখ লাগায়। (মৃত্তি)

-“ওহ আচ্ছা ঠিকানা আছে তবে ছবি আমার কাছে নেই তবে আইডি থেকে রিকুয়েষ্ট দিছে। সেখানে আছে মনে হয় আমি চেক করি নি” বলেই জিনিয়া মোবাইল থেকে ছেলের প্রোফাইল বের করে দিলো।

“সাদনান শেখ”
বর্তমান ঠিকানা মিরপুর ১২***

স্থায়ী ঠিকানা বিক্রমপুর

জেন্ডার মেল

ধর্ম মুসলমান

–উফ মৃত্তি কি পড়ছিস এভাবে প্রোফাইল তো দেখলি কি করবি এবার? শুক্রবার এ এনগেজমেন্ট করতে আসছে তারা ছেলেসহ। (জিনিয়া)

-“কি আর করমু মাইয়ার বাড়ি পর্যন্ত যাইতে পারবো না পোলা এনগেজমেন্ট করতে” বলেই মৃত্তি দাঁত বের করে একটা ডেবিল হাসি দিলো।তারপর জিনিয়াকে নিয়ে উঠে গেল । ক্লাস না করেই বাড়ি চলে গেল। বলে গেল যেন দু দিন বাকি এই দু দিনে যেন তার ভাইয়ের সাথে দেখা না করে বা কথা না বলে জিনিয়া।

রেহান পুরো ভার্সিটি খুজেও মৃত্তির দেখা না পেয়ে পাগল প্রায়। কিছুদিন আগে সে মৃত্তিকে চোখের সামনে কতো দেখেছে তবুও তার প্রতি কোন আকর্ষণ কাজ করেনি। কিন্তু এখন না না এখন না যেদিন আরহাম এলো আর মৃত্তির সাথে ধাক্কা খেলোসেদিন থেকেই কেন জানি তার মন পাগল হলো। তার মানে কি এটা জেলাসি? কিন্তু কেন আগে তো ভালোবাসে নি সে কাউকে। মৃত্তি তো তার ওপর ক্রাশড ছিলো সে জানতো তবুও কোন ফিলিংস বুঝতে পারে নি কেন? হঠাৎ মৃত্তির সামনে আরহামের আগমন ঘটতেই রোহানের হৃদয়ে প্রেমের ঘন্টা! বিষয়টা কেমন হিংসা বলে মনে হচ্ছে রোহানের নিজেরই।

ভার্সিটিতে অনেক মেয়েই রোহানের জন্য পাগল। এখন আরহামের জন্য ও পাগল অনেক মেয়ে। কিন্তু তাদের নিয়ে তো কোন জেলাসি কাজ করে না তাহলে মৃত্তি! নাহ একটু বেশিই ভাবছে রোহান স্বগোতক্তি করলো আপন মনে। আর মাত্র দু’দিন তারপরই এনগেজমেন্ট করে আসবে রোহান ঠিক করেছে। একেবারে অফিসিয়ালি নিজের নাম লাগিয়ে আসবে মৃত্তির নামের সাথে।

আরহাম মাত্রই ভার্সিটির ক্লাস শেষ করেছে। রোহানকে খুজতে খুঁজতে করিডোর দিয়ে হাটছিলো ওমনি ম্যানেজারের কল আসলো।

হ্যালো,

ওপাশঃ……..

কি চায় তারা??
ওপাশঃ……..

বিশ লাখ মানে টাকা কি ওদের বাবার নাকি?

ওপাশঃ…..

শুক্রবারে? কোথায় যেতে বলেছে!

ওপাশঃ……

ওকে, বাই।কথা শেষ করে আরহাম রোহানকে খুঁজে না পেয়ে অফিসে চলে যায়।

মৃত্তি বাড়ি এসে খাওয়া শেষ করে একটা ঘুম দিলো।একেবারে বিকেলে উঠলো ঘুম থেকে।তারপর বসে বসে ভাবছে কি করা যায় জিনিয়ার এনগেজমেন্ট আটকাতে। কিন্তু মাথায় কিছুই আসছে না তাই বসে বসে মুভি দেখছিলো। হঠাৎ মুভিতে একটা সিন এলো যেখানে ভিলেন ছেলে নায়িকাকে তার ফটো এডিট করে কিছু অশ্লীল ফটো বানায়। মৃত্তির মাথায় সিনটা একেবারে জেঁকে বসলো। সে দ্রুত নিজের মোবাইলে ফেসবুক থেকে “সাদনান শেখ” সার্চ দিয়ে প্রোফাইলে ফটো চেক করলো বেছে বেছে কয়েকটা ফটো সেভ করলো তার মধ্যে সবচেয়ে চোখে লাগার মত একটা ছিলো। সাদনান সুমিংপুলে পেটের ওপরিভাগ পর্যন্ত পানিতে। আর বুক থেকে মাথা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। পুলের ওপর দুপাশে দুহাত ছড়িয়ে রেখে আছে। ছবিটাতে অনায়েসে এডিট করে পাশে একটা মেয়েকে লাগিয়ে দেয়া যাবে। মৃত্তি তাই করতে নিলো কিন্তু বিপত্তি ঘটলো তখনই যখন ওরকম কোনো মেয়ের ছবি পেলো না। তারপর আরও দুইটা ছবিতে ট্রাই করলো কিন্তু পারলো না। মন খারাপ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। সন্ধ্যার আযান হয়ে গেছে । এখন বর্ষার মাঝামাঝি সময় তাই হুটহাট বৃষ্টি শুরু হয় কখনও মুষলধারে তো কখনও ইলশেগুঁড়ি। এখনও শুরু হয়েছে বৃষ্টি তবে ইলশেগুঁড়ি। মৃত্তির মাথাটাও যেন হ্যাং হয়ে আছে তাই নিচে গিয়ে মাকে বলল কফি দিতে।

কিন্তু মা মুখের ওপর বলে দিয়েছে পারবে না। এক কাপ কফি কেন সে নিজে বানাতে পারে না? আজ বাদে কাল শ্বশুর বাড়ি যাবে এখনও এতটুকু মাকে বলে করে দিতে।

মৃত্তি কাজের বুয়াকে বলতে যাচ্ছিলে কফির কথা তখনই খেয়াল হলো মায়ের শেষের কথা গুলো।

আজ বাদে কাল শ্বশুড়বাড়ি যাবে মানে?

কি কইলা আম্মা আজ বাদে কাল…..

মৃত্তির মা জ্বিভে কামড় দিলেন ইশ মির বারবার বলেছিলো এখন কিছু না বলতে মৃত্তি কে।

কই কি বললাম? বলছি তুই ধিঙ্গি মেয়ে বড় হয়েছিস বিয়ে দিলেও কি শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে এভাবে অর্ডার করবি নিজে কিছু শিখে নে।

-“ওহ আইচ্ছা , লাগবো না কফি হুহ” বলেই মৃত্তি নিজের রুমে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। পেছন থেকে মির ডাকলো, বৃষ্টির ছিটেফোটায় একটু ভিজে গেছে মির। মৃত্তি তাড়াতাড়ি এসে একটা টাওয়াল এনে দিলো মায়ের রুম থেকে। “ভাইয়া তুই আজকা এতো দেরি করলে ক্যান?”

মির একটু অবাক হয়ে মৃত্তির কপালে হাত রাখলো।

-তুই ঠিক আছিস তো জ্বরটর আসে নি তো? (মিরহাদ)

-“হুহ, কথাই কমু না। একটা ভালা কতা কইলেও তুই আর আম্মা আমার ওপর হাসোছ” বলেই চলে যাচ্ছিলো মৃত্তি। মিরহাদ বেনের বাহু ধরে সামনে দাঁড় করালো।

-“তুই আজকাল বড্ড বড় বড় ভাব নিস আমার কেমন জেনো ভয় হয়। তোকে না খুব দ্রুতই শ্বশুড়বাড়ি পাঠাতে হয়। আমরা বোধ হয় থাকতে পারবো না কেউ তোকে বিয়ে দিয়ে।” মিরের চোখে পানি চিকচিক করছে। আসলেই বুঝতে পারেনি বোনটা কবে আঠারো পেরিয়ে উনিশে পা রেখেছে। তারওপর আবার রোহানরা আসবে শুক্রবারে কে জানে তারা কবে বিয়ের তারিখ দিয়ে বসে।

মৃত্তির মা দু’ভাই বোনের আলাপচারিতা দেখছিলো দূর থেকে। কিন্তু মিরের কথাগুলে ওনারও মনে দাগ কেটেছে। সত্যিই তো বাড়িটাই খালি হয়ে যাবে মেয়ে বিয়ে দিলে। কি করে থাকবে সবাই এই পাগলিটাকে বিয়ে দিলে। আর তার বাবা ওনার তো পুরো কলিজাটাই মৃত্তি ভাবতেই শিওরে ওঠেন মৃত্তির মা।

চলবে

(সারপ্রাইজটা আজই দিতে চাইছিলাম কিন্তু হাত সহায়,হলো না 😔)