🍁আরহাম🍁#The_Innocent_Boy #Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা #পর্ব(১৭)+(১৮)+(১৯)

🍁আরহাম🍁#The_Innocent_Boy

#Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা

#পর্ব(১৭)+(১৮)+(১৯)
______________________
-“কি বললি? কে আরহাম” মৃত্তির মা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন মেয়েকে।

-“আম্মা ওঠো তো আমার দেরি হইয়া যাইতাছে গোসল করমু, রেডি হমু, খাবার খামু কত্তো কাজ রইছে” বলেই মৃত্তি মায়ের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে নিলো। তার মা তার চোখে মুখে লজ্জা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সাথে খুব অবাকও হচ্ছে । লজ্জা পাচ্ছে এই মেয়ে তাও আবার মায়ের সামনে! যে কিনা অচেনা মানুষের সামনেও লজ্জা পায় না কখনো,কোন কারণে। খুব বেশিই আশ্চর্য হচ্ছেন তবুও নিজের কৌতুহল দমিয়ে আপাতত মেয়ে কে নিচে আসতে বলে চলে গেলেন উনি। মৃত্তি ও তৈরি হয়ে খাবার খেতে নিচে গেলে তার বাবার সামনে পরে।

-আম্মাজান আফনের কি হইছে শুনলাম আফনে ঠিকমত খান না, কথা কন না।

মৃত্তি কিছুটা আমতা আমতা করে বলল “আব্বা তেমন কিছু না ভুল শোনছেন।”

-“আচ্ছা আম্মা বসেন অনেকদিন ধইরা একসাথে খাওয়া হয় না আমাগো। কই গো মিরুর আম্মা নাস্তা দাও জলদি আর আমারে চাও দিও আরেক কাপ।”

-একি আব্বাজান আপনে একটু আগেও কি চা খাইছেন?

তার বাবা একটু নিচু স্বরেই বলল “হ খাইছি তবে এই লাস্ট আম্মা আর খামু না। আরেক কাপই শেষ সারাদিন আর ছুইয়াও দেখুম না হাছা বলতাছি।”

-“আব্বা আফনে জানেন না ডাক্তার আপনেরে মানা করছে। বেশি চা খাইতে লিভারের সমস্যা তো বাইড়া যাইবো” বলেই রাগ দেখিয়ে উঠে পড়লো বসা থেকে ।

-আম্মা আফনে কই যান কিছু খাইয়া পরে যাইয়েন আমি দিয়া যামুনে আফনেরে স্কুলে ।” মৃত্তির বাবা বলে চলছে কথা গুলো ততক্ষণে মৃত্তি বাড়ির বাইরে চলে গেছে।

-“মেয়ে এখন স্কুলে না ভার্সিটিতে পড়ে” বলতে বলতে মৃত্তির মা চায়ের কাপটা খট করে রাখলো টেবিলে।

-মিরুর মা তোমার আবার কি হইলো!

-“কিছু না মেয়ে যে বড় হয়েছে সে খেয়াল কি আছে? মেয়েটাকে একটু শাষণে রাখার সময় আদর দিয়ে মাথায় তুলছো। কি করে কখনও নিজে নজর দাও নি। আর না আমাকে দিতে দিয়েছো। একেবারে উরনচন্ডী স্বভাবের বানিয়েছো। কবে যে কি উল্টা পাল্ট…..”আর কিছু বলার আগেই রেগে ওঠলো মৃত্তির বাবা।

-“ওই বেশি প্যাচাল পারবা না। আমার মাইয়া যা মন চায় করবো তুমি একটা কথাও বলবা না।”

মিরহাদ ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে একেবারে তৈরি হয়ে নিচে আসলো। কিন্তু বাবা মায়ের তর্ক দেখে সে আর খাবার টেবিলে বসলো না। সোজা বাড়ি থেকে বের হতে নিলো আর তখনি তার মা ডাকলো।

-“খেয়ে যা বাবা এখনও অনেক টাইম আছে অফিসে যাবার। তোর বাবাও তো যায় নি। কিন্তু মির মায়ের কথায় কর্ণপাত করলো বলে মনে হলো না সে সোজা বেরিয়ে গেল। “দেহো মিরুর মা তোমার ভদ্র পোলা কি আচরণডা করলো তুমি আমার মাইয়ারে কও উরণচন্ডী এবার পোলা নিয়া কি কইবা?”

মৃত্তির মা টেবিলের সামনে থেকে চলে গেলেন কারন, এখন এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মানে ওনার বকবক শুনে কানের পোকা মেরে ফেলা।

মৃত্তি ভার্সিটিতে এসেছে প্রায় এক ঘন্টা আগে কিন্তু সে এখনও ক্লাসে পা রাখে নি। আদৌ আজ রাখবে কিনা তাতেও সন্দেহ আছে। কারণ, এখনও জিনিয়া আসেনি কেন জানি তার বারবার মনে হচ্ছে জিনিয়া হয়তো আজ আসবেই না। কিন্তু কেন তা মৃত্তির জানা নেই। আর ক্যাম্পাসে ঘুর ঘুর করছে সে কারণ, চেক করে এসেছে টিচার্স রুমে আরহামও আসেনি এখনও। তার টেনশন হচ্ছে জ্বর কি এখনও আছে তার!

একবার কি নম্বর নিয়ে কল করে দেখবে না, আর ভাবতে পারছে না সে। কোন কিছুই ভালো লাগছে না মৃত্তির। আগে যেমন ফুরফুরে মেজাজের মৃত্তি ছিলো এখন পুরোটাই উল্টো সবসময় কেমন অস্থিরতা কাজ করে তার মধ্যে।

হঠাৎ খেয়াল হলো গেট দিয়ে একটা সাদা গাড়ি ভেতরে ঢুকলো। মৃত্তি পার্কিং সাইডেই দাঁড়িয়ে ছিলো তাই সব স্পষ্টই দেখা যাচ্ছিলো। মৃত্তি গাড়িটার দিকে তেমন একটা নজর দেয় নি ভেবেছে কে না কে এসেছে গাড়িটাও অচেনা। কিন্তু পরক্ষণেই তার বুকে যেন ব্যথা শুরু হয়েছে চিনচিনে টাইপ। বেশ জোরেই ধুকপুক করছে তাই আবারও সে গাড়ির দিকে তাকালো। তাকাতেই যেন তার চক্ষু চড়কগাছ। কারণ গাড়ি থেকে আরহাম নেমেছে। পড়নে একটা সাদা শার্ট, কালো ডেনিম প্যান্ট এক হাত পকেটে আর একহাতে গাড়ির ডোর লক করে সামনে আগায় আর মৃত্তিও আরহামকে দেখে অনেকটা জোরেই অগ্রসর হয়।

আহহাআআআআআআআআআআ।।

-“উফ তুমি কি জীবনেও শুধরাবে না?” বলেই আরহাম মৃত্তিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বলল কথা গুলো।

চলবে

🍁আরহাম🍁#The_Innocent_Boy

#Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা

#পর্ব(১৮)
__________

-“উফ তুমি কি জীবনে ও শুধরাবে না?” বলেই আরহাম মৃত্তিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বলল কথা গুলো।

-সসসস্যরি স্যার! আমি তো আপনাকে খেয়াল করি নি। (মৃত্তি)

-“কবে খেয়াল করো তুমি?আমি তো প্রথম দিন থেকে তোমাকে এমনই দেখি আসছি।” দাঁতে দাঁত চেপে বলল আরহাম। মৃত্তি খেয়াল করলো আরহাম যখন দাঁত চেপে কথা বলছিলো তখন তার সুইট পাতলা গাল দুটো কেমন ফুলে উঠছিলো। সে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো “ইশ কত্তো হ্যান্ডসাম লাগে আমার জান টারে মন চায় গাল দুইডা টাইন্না ধরি আর পিচ্চি গো মত চুম্….!” ছিঃআমি কি ভাবতাছি এগুলা স্যারের নিয়া মুখটা একদম লাল টমেটোর মত হয়ে গেল মৃত্তির এসব কথা ভাবতেই। আরহাম বেশ বিরক্ত আজও মেয়েটার ওপর। যখন তখন গায়ের ওপর পড়ে। ভেবেছিলো কালকের জন্য মৃত্তিকে একটু হলেও ভালো চোখে দেখবে। কিন্তু না এই মেয়ে কখনও ভালো হয়ে চলতেই পারবে না তাকে কি করে ভালো চোখে দেখবে?
আরহাম না চাইতেও আবার ধমকে উঠে ” এই সরে দাঁড়াও সামনে থেকে।” মৃত্তি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গায়ই সে এখনও তার গালের দিকে তাকিয়ে আছে। টোল দুটো কেমন আজ বেশি গর্তে যাচ্ছে না এটা দেখে তার রাগও হচ্ছে। কিন্তু আরহাম রেগে আর বিরক্তিতে মৃত্তি কে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

মৃত্তি পুরো ক্লাসে শুধু জিনিয়ার অপেক্ষা করেছে কিন্তু সে আজ ভার্সিটিতেই আসে নি। ভেবেছিলো একবার কল করবে কিন্তু তারও সুযোগ হয়ে ওঠেনি।

দুপুর দুইটায় মৃত্তির ক্লাস হয়েছে আজ। সে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে সোজা গেটের সামনে আসে,কিন্তু গাড়ি নিয়ে আসেনি আজ। বিধায় রিকশার জন্য দাঁড়ায় গেটের বাইরে আর রোহানও তখন গাড়িটা নিয়ে চলে যাচ্ছিলো। হঠাৎ কি মনে করে মৃত্তির সামনে গাড়ি নিয়ে এলো।

-কি হয়েছে মৃত্যি এভাবে এখানে দাড়িয়ে আছো কেন। (রোহান)

-কিছু না স্যার রিকশার জন্য দাঁড়াইয়া আছি।

রোহান গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল “ওঠে এসো আমি পৌঁছে দিচ্ছি ঐ পথেই যাবো আমি একটা কাজে।”

-না না দরকার নাই স্যার আমি একটু জিন গো বাড়ি যামু থুক্কু জিনিয়াদের বাড়ি যাবো। (মৃত্তি)

-সমস্যা নেই আমি ওখানেই পৌঁছে দেবো ওঠে পড়ো।(রোহান)

রোহানের জোরাজুরিতে মৃত্তিকে উঠতেই হলো রোহানের গাড়িতে।তবে পেছন গাড়িতে বসে এই দৃশ্য দেখছিলো আরহাম । সে যথেষ্ট অবাকই হলো রোহান মৃত্তিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে তার উপর এতোটা জোর করে! মৃত্তির মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো সে বারবার না করছে। কে এই মৃত্তি তাহলে কি আমাদের পরিচিত কেউ? নাকি শুধুই আমাদের ছাত্রী এসব ভাবতে ভাবতে আরহামও গাড়ি স্টার্ট দেয়। সে এখান থেকে আবার অফিসে যাবে।

মির সকাল থেকেই অফিসে এসে ছটফট করছে। কোন কাজেই মন বসছে না তার। জিনিয়াকে বলল বাসায় আসতে এলো না। কিন্তু কলটা তো উঠাবে। সেই কখন থেকে ট্রাই করছে মোবাইলটা অফ করে রেখেছে। আজকাল প্রায়ই সে ভার্সিটি যায় না মিরহাদের কেমন যেন একটা ভয় কাজ করছে।

রোহান মৃত্তিকে নিয়ে জিনিয়াদের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। গাড়িতে বসে মৃত্তি একদম চুপ ছিলো আগে রোহানকে দেখলেই কেমন উদ্ভট সব কাজ করতো রোহান খেয়াল করতো।কিন্তু এখন তো একটা কথা পর্যন্ত বলছে না তাই রোহান নিজেই বলল ” কেমন আছো”?

-ভালো। স্যার আপনি? (মৃত্তি)

-এই তো ভালো। তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে আজকাল? (রোহান)

-“জ্বি স্যার ভালো।” তারপর কেউ আর কোন কথা বলেনি দু’জনেই চুপ। গাড়ি জিনিয়ার বাড়ির সামনে এসে থামতেই মৃত্তি দ্রুত বের হয়ে গেল গাড়ি থেকে তখন আবার রোহান ডাকলো “মৃত্তি”৷

মৃত্তি পেছন ফিরে তাকাতেই রোহান একটু করে হেসে বলল “কিছু না যাও।”

মৃত্তির কেন যেন আজব লাগলো আজকের রোহানকে দেখে। সে তো দেখলে সবসময় স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করে কেমন আছো, পড়াশোনা ঠিকঠাক করছে কিনা? আর নিজের ক্লাস নিয়ে কিছুক্ষণ জ্ঞান অবশ্যই দেয় কিন্তু আজকের কথা গুলোতে কেমন যেন আবেগ প্রকাশ করছিলো সে। মৃত্তি সব কিছু ভাবতে ভাবতেই জিনিয়াদের বাড়ির ভেতর পা রাখে। সোফায় চোখ পড়তেই তার চোখ ছানাবড়া। জিনিয়া শাড়ি পড়ে মাথায় কাপড় দিয়ে চুপটি করে বসে আছে পাশে কয়েকজন মহিলা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে জিনিয়াদের বাসায় মেহমান এসেছে কিন্তু কি এমন মেহমান এরা যে তাকে শাড়ি পরতে হলো!

জিনিয়ার মা মৃত্তিকে দেখে এগিয়ে এলেন। আরে মৃত্তি তুই কখন এলি আয় এখানে বোস।

-“কেমন আছেন আন্টি? ” বলতে বলতে জিনিয়ার দিকে তাকালো।

-“ভালো আছি ভালো সময়ই এসেছিস ইনি জিনিয়ার হবু শাশুড়ী আর ওইটা ওর ননদ। আর এনারা দুজন খালা শাশুড়ী।” কথা গুলো শুনেই মৃত্তির কলিজাটা ছ্যাৎ করে উঠলো।

একজন মহিলা বলে উঠলো “এটা কে বেয়াইন?”

-“মৃত্তি জিনিয়ার বান্ধবীও আবার আমার বান্ধবীর মেয়েও হয়। মানে ওর মায়ের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব। আমরা আগে পাশাপাশিই থাকতাম পরে এখানে চলে আসি।” মৃত্তির বুঝতে বাকি রইলো না জিনিয়ার বিয়ে ঠিক হচ্ছে তাই সে ক্রোধান্বিত চোখে জিনিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর জিনিয়া মৃত্তির আওয়াজ শুনেই চমকে গেছে ভাবছে মিরহাদ কি পাঠিয়েছে মৃত্তি কে! তার চোখ টলমল করছে সে না পারছে এখান থেকে উঠে যেতে না পারছে কান্না করতে। আর মৃত্তি ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে জিনিয়ার মা বারবার বলছে বসতে কিন্তু সে যেন অপেক্ষা করছে জিনিয়ার তাকানোর। তাকালেই হয়তো তার অগ্নিকুন্ডের ন্যায় চোখ দুটি দিয়েই ভষ্ম করে দিবে। হলোও তেমনটাই জিনিয়া তাকাতেই মৃত্তি রাগী চোখে তার দিকে একবার তাকিয়ে সোজা বের হয়ে এলো বাড়ি থেকে।

মৃত্তি জিনিয়াদের বাড়ি থেকে বের হয়ে কোন রিকশা না নিয়ে হেঁটেই চলছে। এখান থেকে তাদের বাড়ি হেটে যেতে কমপক্ষে বিশ মিনিট সময় লাগবে তবুও সে আজ হেঁটেই যাবে ঠিক করেছে। কেন জানি জিনিয়াকে ওভাবে দেখেই তার মনটা অস্থিরর হয়ে গেছে। প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হচ্ছে তার তো খুশি হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু না তার কষ্ট হচ্ছে খুব হয়তো নিজের ভাইয়ের জন্য । অনেকদিন ধরেই লক্ষ করেছে ভাই তার জিনিয়াকে পছন্দ করে। নাহ, শুধু পছন্দ নয় ভালোও বাসে। মৃত্তি আজকাল ভালোবাসা বুঝতে শিখেছে। আরহামকে দেখলেই তার মনে হয় আরহামের জন্য তার মনে ভালোবাসা কাজ করে ঠিক তেমনটাই আবার ভাইকে দেখলে মনে হয় তার ভাইয়েরও জিনিয়ার প্রতি ভালোবাসা আছে।

মৃত্তি আপন মনে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাস্তার মাঝে চলে এসেছে তার হুঁশই নেই। তখনি হঠাৎ কেউ গাড়িতে ব্রেক কষলো। সামনে তাকাতেই কেউ আচমকা গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে ধমকে উঠলো।

চলবে

🍁: আরহাম #The_Innocent_Boy🍁

#writer-ফারহানা আক্তার (রুপকথা)

#পর্ব (১৯)
____________

-“মৃত্তি প্রবলেম কি তোমার (চিৎকার করে) সবসময় আমার সামনেই কেন পড়তে আসো?” চোখ মুখ খিঁচে কথা গুলো বলল আরহাম। মৃত্তি যখন আনমনে রাস্তার মাঝ দিয়ে হাঁটছিলো তখন আরহাম এ পথে আসছিলো আচমকা সামনে আসাতে সে খুব ঝামেলায় পড়ে যায় ব্রেক কষতে। আর একটু ভুল হলে হয়তো মৃত্তি গাড়ির নিচেই পড়তো। আরহাম এখনও ধমকে যাচ্ছে তাই মৃত্তি আস্তে করে বলল “স্যরি স্যার” মাথাটা নিচু করে।

আরহাম বড় বড় দুইটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো। তারপর মৃত্তির দিকে তাকিয়ে “ইটস ওকে তুমি এভাবে মাঝ রাস্তায় হাঁটছো কেন আর রোহান কই?”

আরহামের এমন প্রশ্নে মৃত্তি অবাক হয়ে আরহামের দিকে তাকায়।

-” কি এভাবে তাকাচ্ছো কেন তুমি তো রোহানের সাথেই এসেছিলে ভার্সিটি থেকে তার গাড়িতে করে। তাহলে এখন মাঝ রাস্তায় কেন?”

আরহামের এমন ধাঁচের কথা শুনে মৃত্তি বেশ আশ্চর্যই হলো তার কথার মানে কি একটু বাজে কিছু ইঙ্গিত করলো?

মৃত্তির এই ছোট্ট মাথাটা যেন আজ বেশ ভাবুক হয়ে উঠেছে। কখনও জিনিয়া কে নিয়ে ভাবছে কখনও ভাই কে নিয়ে ভাবছে কখনও আবার আরহামের কথার মানে ভাবছে।

মৃত্তিকে চুপচাপ ঠাঁয় দাঁড়ানো দেখে আবারও ডাকলো আরহাম। মৃত্তি এবার বলল “স্যরি স্যার আর এমন ভুল হবে না।”

-আমি কি এখন ভুলের কথা জিজ্ঞেস করছি? নাকি রেহানের সাথে এলে সে কোথায় গেছে তোমায় রাস্তায় ফেলে তা জানতে চেয়েছি?

-“রোহান স্যার তো সেই কখন চলে গেছে। আমি তো জিনিয়ার বাড়ি এসেছিলাম স্যারও এই পথে আসছিলো তাই সাথে করে নিয়ে এসেছিল।”(মৃত্তি)

-“ওহ ওকে” বলে আরহাম গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল “সাবধানে যাও বেখেয়াল হয়ে কারো গাড়ির নিচে পড়ে কাউকে বিপদে ফেলো না” বলে চলে গেল।

মৃত্তি হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে ভেবেছিলো আরহাম বলবে “চলো আমিও বাড়ি যাচ্ছি তোমাকে ড্রপ করে দিবো। কিন্তু না শালা এক নাম্বারের খাটাশ সাবধানে যাও বইলা ভাগছে। হুহ, তরে যতোডা ইনোসেন্ট ভাবছি তুই তার এট্টুও না শালার কেরাশ দেইখা নিমু আমি তরে” বলে মৃত্তি আবারও হাঁটতে লাগলো।

আরহাম আজ তার নতুন কারখানার জন্য একটা জমি দেখতে যাচ্ছে তাই আগে থেকে খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছে জায়গাটা কেমন। আর যতটুকু জানতে পেরেছে জায়গাটায় অবৈধ জিনিসের আস্তানা বানিয়ে রেখেছে কিছু লোক। তাই জমির মালিক কম টাকায় জমিটা বিক্রি করতে চাচ্ছে। জেনেশুনে সেখানে কেউ রাজী হয়নি জায়গাটা কেনার জন্য তবে আরহাম কম দামে পেয়ে হাতছাড়া করেনি। কিন্তু তার ম্যানেজার ভাবছে বিপদের কথা এখানে কোন বড় বড় রাজনীতিবিদরা পাওয়ার থাকা সত্বেও আসতে চায় না সেখানে আরহাম একজন সাধারণ ব্যবসায়ী হয়ে কেন আসছে?ম্যানেজারের তো ভয়ে হাত পা কাঁপছে ভাবতেই। বেচারা আসতে চায় নি এখানে কিন্তু আরহাম কল করে বলেছে উকিলসহ উনি যেন আধ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছায় এখানে।

জিনিয়ার এনগেজমেন্ট ডেট ঠিক হয়েছে তিনদিন পরের মানে শুক্রবার। ছেলে নিজেই এসে আংটি পরাবে আর একদম কোন ধুমধাম ছাড়াই এনগেজমেন্ট করবে। জিনিয়ার মায়ের প্রথমে আপত্তি থাকলেও পরে ভাবলেন বিয়ে ধুমধামে করবেন।

রোহান আর মিরহাদ একসাথে আজ শপিংমলে এসেছে। মিরহাদই তাকে আসতে বলেছে সে কিছু বলতে চায় রোহানকে। আর রোহানও ভাবছে এই সুযোগ আজ দু’বন্ধু মিলে অনেকদিন পর আড্ডা দিবে আর সাথে নিজের মনে মৃত্তি কে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া অনুভূতিটাও জানাবে। তবে রোহান, মিরহাদ দুজনই মনে মনে মিস করছে আরহামকে। কতোটা সময় পেরিয়ে গেছে তিনজন একসাথে হয় না হয়তো এ জীবনে আর হবেও না।

মৃত্তি বাড়ি এসে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো বারান্দায়। আর মনে মনে দোয়া করছে যেন আরহামও আসে বারান্দায় । তাহলে মৃত্তি আজ একটা ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারবে আরহামের মাথায়। তাতে যদি তার মাথা ফেটে যায় যাক। আবার ভাবছে না, তার ক্রাশের মাথা ফাটলে তার কি হবে। সে তো তার টোল পড়া কেরাশের টোলে সাতার কাটবে বিয়ের পর।

-ইশ! আমি যে ক্যান এত কেরাশরে নিয়া বিয়া বিয়া ভাবি সে যদি আমারে বিয়া না করে? মন খারাপ হয়ে গেল কথাটা ভাবতেই মৃত্তির।

আরহাম খুব ভালোভাবে কম টাকায় জায়গার রেজিষ্ট্রি করে ফেলেছে নিজের নামে। কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই। সে মিষ্টি কিনে আনিয়েছে ম্যানেজার মুখটা এখনও কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে তার মুখে। কিন্তু আরহাম হাঁসতে হাঁসতে একটা মিষ্টি নিয়ে জোর করে ম্যানেজারের মুখে ঢুকিয়ে দিলো। ম্যানেজার গোবেচারা মুখ করে বলল “স্যার বাসায় যাবেন না।”

আরহাম বলল “হ্যা চলেন” বলেই সেও বেড়িয়ে পরলো পথে এক প্যাকেট সন্দেশ কিনলো তার মায়ের পছন্দের। বাড়ি গিয়ে মাকে জমি কেনার খুশির খবর টা দিয়ে সন্দেশ খাওয়ালো।

প্রায় পনেরো মিনিট ধরে রোহান আর মির একসাথে মলের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে হাঁটছে।কিন্তু দুজনেই দ্বিধায় ভুগছে কথা শুরু করতে কি দিয়ে কথা শুরু করবে তাই খুঁজে পাচ্ছে না। দু’জনই ভাবছে বন্ধু কি মনে করবে অবশেষে নিরবতা কাটিয়ে রোহানই বলে ফেলল মির আমি তোকে কিছু জানাতে চাই জানি না তুই কি ভাববি তবুও বলতে চাই।

মিরহাদ ইতস্তত করে বলল আমিও তোকে কিছু বলতে চাই মৃত্তি কে নিয়ে।

চলবে