🍁আরহাম🍁#The_Innocent_Boy
#Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা
পর্ব(১৫)+(১৬)
________
আরহামের জ্বর এখনও অনেক তবে জ্ঞান ফিরেছে। ডক্টর তাকে চেক আপ করে ইনজেকশন দিয়ে গেছে আর কিছু মেডিসিনস। তবে বলেছে তিন ঘন্টার মধ্যে জ্বর না ছাড়লে তাকে হসপিটালে এডমিট করতে হবে।
আরহাম চোখ খুলেই দেখলো মাথার কাছে তার মা বসে আছে। হাতে ভেজা ন্যাকরা বুঝাই যাচ্ছে জলপট্টি দিচ্ছেন তিনি ছেলের মাথায়। আর সাথে চোখের পানিও বিসর্জন দিচ্ছেন।
মা!আরহামের ডাকে তিনি দ্রুত জবাব দিলেন “কেমন লাগছে তোর এখন কিছু লাগবে বাবা কিছু খাবি?”
-” না মা কিছু লাগবে না”বলেই মায়ের হাতটা টেনে নিজের গালের সাথে চেপে ধরে চোখটা বন্ধ করে নিলো। যেন মায়ের হাতের স্পর্শেই তার শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে। তার মাও তাকে পরম যত্নে হাত বুলাতে লাগলো মুখে,মাথায়। তারপর উঠে জোর করেই কিছুটা খাবার খাইয়ে ঔষধ খাওয়ালো। তারপর মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন যেন আরহাম ঘুমিয়ে যায়।
মৃত্তি ছটফট করছে সেই কখন থেকে বারবার তার আরহামের কথা মনে পড়ছে। “আইচ্ছা স্যারের জ্বরডা কমলোই নাকি কে জানে?” বলতে বলতে সে বারান্দায় গেল। অন্য সময় হলে ভাবতো আরহাম হয়তো এখনি বারান্দায় এসে পড়বে তাকে দেখে ফেলবে। কিন্তু না আজ আর এমন কিছু হবে জানে সে। আরহামের যে অবস্থা হয়তো আজ বিছানা ছেড়েই উঠবে না।
সন্ধ্যার দিকে মিরহাদ বাড়ি এলো এসেই মা কে জিজ্ঞেস করলো “মৃত্তি কোথায়।” তার মাও বলল ওপরে নিজের রুমে আছে।মিরহাদ উপরে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার মৃত্তির রুমে গেল। মৃত্তি তখনো বারান্দায় বসে আরহামের বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে।
-কিরে চুপচাপ বারান্দায় বসে আছিস কেন? (মিরহাদ)
-তাইলে কি করমু তোর আর জিনের মত নাইচ্চা বেড়ামু? মুখ বাকিয়ে বলল মৃত্তি।
মিরহাদ এবার একটু হকচকিয়ে গেল “মমমমানে কি হ্যা?”
-“কি আবার আমি জানি তো সব খবর তোগো তোরা দুইডা যে ডুইব্বা ডুইব্বা সাতার কাটোস সব জা..”.উমমমম
মৃত্তি পুরো কথা বলার আগেই মিরহাদ মৃত্তির মুখ চেপে ধরেছে। আর মৃত্তি ওভাবেই বলেই যাচ্ছে থামছে না।
-থাম না সোনা চুপ কিছু বলিস না আমি তোর মুখ ছাড়ছি বাইরে মা-বাবা দুজনেই আছে তো।
মৃত্তি এবার মাথা কাৎ করলো মানে সে চুপ থাকবে এখন কিছু বলবে না। মিরহাদ মৃত্তির মুখ থেকে হাত সরাতেই মৃত্তি খেঁকিয়ে উঠলো।
-“ওই তুই আমার বান্ধপির লগে প্রেম করবি আর আমি কিছু জানমু না ভাবলি কেমনে?”
-“চুপ কর বুড়ি একটা আমি তোর বান্ধবীর সাথে প্রেম করলাম কবে সে তো আমায় দেখলে মুখ বাকিয়ে রাখে অলওয়েজ।”
-“ওহ হো প্রেমই যদি করতো তাইলে কি আর বিয়াতে রাজী হইতো?” আঁড়চোখে মিরহাদের দিকে তাকিয়ে বলল কথা গুলো। মৃত্তির কথা গুলো শুনে যেন মিরহাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
-কককি বলছিস এগুলা মৃত্তির বিয়ে মানে? আহত দৃষ্টি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো মির।
-“তরে কমু ক্যান তুই তো আর প্রেম করোছ না হের লগে।” মির এবার বলেই ফেলল আমি জিনিয়াকে পছন্দ করি রে মৃত্তি কিন্তু প্রেমের সম্পর্ক নাই তার সাথে। (মিরহাদ)
আজও মির আরহামের কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলো আর মৃত্তি মিথ্যে কেন বলছিলো তাও জিজ্ঞেস করতো। কিন্তু মৃত্তির কথার জালে আজও তেমন কিছু জিগ্যেস করা হলো না সে ভুলেই গেল সব।
সন্ধ্যা,পেরিয়ে রাত নামলো পৃথিবীর বুকে। আরহামের জ্বড়টা ছেড়েছে এখন।
চলবে
🍁আরহাম🍁 #The_Innocent_Boy
#Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা
#পর্ব(১৬)
_________
ঘড়ির কাটা ঠিক বারোটায় মৃত্তি এখনো বারান্দায়। বিকেল থেকে এখানে একবারও যায় নি সে বারান্দা থেকে। পাছে আরহামকে যদি দেখার সুযোগ মিস হয় তাই কিন্তু না আরহাম একবারও তার বারান্দায় আসেনি। আসবেই বা কি করে জ্বরে কাতর ছিলো সে পুরোদিন। সন্ধ্যার পর যদিও ছেড়েছে জ্বড়টা তবুও শরীর তো চলার মত না।
মৃত্তির বাবা এসে মৃত্তির কথা জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারেন মৃত্তির আজ সারাদিন চুপচাপ ঘরে পড়ে থাকার কথা। তাই তিনি চিন্তিত মেয়ে কি সত্যিই বিয়ের জন্য উতলা হয়ে গেল কি না।
কিন্তু কোন উত্তর ঠিক বুঝতে পারলেন না তাই মৃত্তিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তবুও মৃত্তি এলো না। তার বাবার মনটা ভার হয়ে গেল। বিষন্ন মনে তিনি খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন প্রতিদিন এর মত আজ আর গেলেন না মেয়ের রুমে বরং নিজেই গিয়ে শুয়ে পড়লেন কোন কথা না বলেই। মৃত্তিও অর্ধেক এর বেশি রাত বারান্দায়ই কাটিয়ে দিলো ভোরের একটু আগে রুমে এসে শুয়েছে।
আরহামের খুব সকালেই ঘুম ভেঙে যায় আজ জ্বরটাও একেবারেই নেই। তাই জলদি করে ফ্রেশ হয়ে মায়ের রুমে যায়। মা ঘুমে তাই মায়ের কপালে ছোট্ট করে একটা চুমো একে কিচেনে আসে। তার খুব খিদে পেয়েছে তাই পাউরুটি আর জেলি নেয়ে টেবিলে বসে পড়ে। তারপর মনে হলো একটু চা হলে ভালো হতো তাই উঠে গিয়া চায়ের পানি বসালো। রুটি খেতে খেতে মোবাইলটা নিয়ে ফেসবুক ঘাটছিলো এমন সময় চোখে পড়লো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এ থাকা মৃত্তির আইডি। দেখতেই মনে পড়লো কাল তো মৃত্তিই তাকে টিচারস রুম থেকে নিয়ে এসেছে তবে জ্বরের ঘোরে গাড়িতে বসানোর পরের আর কিছু মনে নেই তার।
সে মনে মনে ভাবতে লাগলো মেয়েটা একটু পাগল তবে পরোপকারী নাকি শুধু আমারই উপকার করলো। ধুর আমিও মেয়েটার মত পাগল হয়ে গেলাম নাকি কি সব ভাবছি। চা চুলোয় পড়ে গ্যাস অফ গেছে সেই কখন কিন্তু আরহামের কোন হুশই নেই। তার মা ও কখন থেকে তার সামনে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে ইশারা করছে তার চোখে যেন আসছেই না কোন ইশারা। এবার তার মা তার সামনে গিয়ে কাঁধ ধরে ঝাকালো।
-আরহাম! বলে চিল্লালো আরহামের এবার হুঁশ হলো।
-আহ! মা কি হয়েছে এভাবে ডাকছো কেন? (আরহাম)
-তা না হলে কি করবো সেই কখন থেকে রুটি মুখের সামনে ধরে বসে আছিস মুখে তুলছিস না। তুই চায়ের পানি বসিয়েছিস সেই পানিও ফুটে উপচে পড়ে গ্যাস অফ হয়ে গেছে তোর হুঁশ নেই। আমি কখন থেকে তোর চোখের সামনে হাত দিয়ে ইশারা করছি ডাকছি তাতেও কোন হেলদোল নেই তোর। (আরহামের মা)
-না মানে হয়েছে কি বলতে বলতে আরহাম মাথা চুলকাচ্ছে তা দেখে তার মা বুঝতে পারলো সে লজ্জা পাচ্ছে।
-হয়েছে এভাবে আর লজ্জা পেতে হবে না শুধু এইটুকু বল কে সেই রাজকন্যা যে আমার রাজপুত্রকে পাগল করেছে?
মায়ের কথা শুনে আরহামের চোখ যেন কোটর থেকে বের হয়ে আসবে। মা কি বলছো এসব তুমি এখানে মেয়ে কোথায় পেলে!
কোথায় পাবো আবার আমার এত পাংচুয়াল ছেলে এমনি এমনি নিশ্চয়ই এমন গা ছাড়া ভাবের হয়নি। আর এই বয়সে ছেলেরা এমন উদাসীন কোন মেয়ের প্রেমে পড়লেই হয় এসব আমার অজানা না। (আয়শা বেগম)
-আমি যে তোমার ছেলে সেটা কি ভুলে গেছো? কোন মা কি ছেলেকে এভাবে মেয়েদের কথা বলে। (আরহাম)
-“আরে ধুর, আমাকে কি তোর টিপিক্যাল বুড়ি মা মনে হয়? আমি তোর ইয়াং মডার্ন মা যে নিজ দায়িত্বে ছেলের প্রেম কারাবে মেয়ে ভাগিয়ে নিয়ে আসবে। আমার তো কত শখ তুই বিয়ে করবি বউ আনবি আমার নাতি-নাতনি আসবে। কিন্তু তোর হাবভাবে আমার তো মনে হয় আমি তোর বিয়ে দেখে মরতে পারবো না” মুখ ফুলিয়ে বলছেন আরহামের মা।
আরহাম এবার এক হাতে মা কে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে রুটি টুকু মুখে পুরতে পুরতে বলল আচ্ছা তুমি মেয়ে খোঁজো আমি বিয়ে করে নেব। তবুও ইমোশনাল ড্রামা বন্ধ করো। আরহাম খাওয়া শেষ করে চা না খেয়েই বেড়িয়ে গেল অফিসের উদ্দেশ্যে সেখান থেকে আবার ভার্সিটিও যেতে হবে।
জিনিয়া কেবলই ঘুম থেকে উঠলো উঠেই দেখলো মিরহাদের মেসেজ।
” ভার্সিটিতে আজ আমাদের বাড়ি হয়ে পরে যাবে। ”
উফ কি ঝামেলা আজকাল মৃত্তি সন্দেহ করে এমনিতেই। তার উপর আবার এনার জন্য ওদের বাড়ি গেলে সন্দেহ আরও বেড়ে যাবে। ভাল্লাগে না আমার কি যে করি! বলেই মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। জিনিয়ার মা এসে জিনিয়াকে বলল আজ ভার্সিটিতে যাওয়ার কোন দরকার নেই ।
জিনিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো “কিছ খুশি ম্যা?”
-“তোর হবু বরের খালা আর তার মা আসবে আজ এনগেজমেন্ট এর ডেট ফিক্সড করতে।” কথাটা শুনে যেন জিনিয়ার মাথায় বাজ পড়লো একটা।
মৃত্তি আজ এখনও ঘুম থেকে উঠতে পারে নি ঘুমিয়েইছিলো ভোরের দিকে। তার মা গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকতে লাগলো। সে একটু একটু করে চোখ খুলে তাকালো মায়ের দিকে তারপর একটা মিষ্টি করে হাসি দিয়ে মাথাটা মায়ের কোলে রাখলো। আজ বহুদিন পরে সে তার মাকে এভাবে ধরলো। এমনিতে সবসময় বাবার কাছেই বেশি থাকে সে। বাবার আদুরে কন্যা সে আর মিরহাদ মায়ের রাজপুত্র । দু ভাই বোনের দুইটা রাজত্ব একজনের মা অন্যজনের বাবা।
-আইচ্ছা আম্মা ভালোবাসা মানে কি?
মৃত্তির মা মেয়ের মাথায় হাত বুলানো বন্ধ করে মেয়ের দিকে তাকালেন তার এমন প্রশ্নে।
-ভালোবাসার মানে জেনে তুই কি করবি । আচ্ছা তোর আজকাল কি হয়েছে বল তো এতোটা শান্ত আর চুপচাপ থাকিস কেন?
-“আরহামের জন্য” বলেই জ্বিভে কামড় দিলো মৃত্তি কি বলে ফেলল এটা সে।
চলবে