#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_Jahan💜
#Part_13
!
-আমি আস্তে বললাম,শীত লাগছে!
!
-উনি তাড়াতাড়ি বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলেন।আর আমি প্রচণ্ড জ্বরে কাঁপছি।উনি ভয় পেয়ে বাড়ির সবাইকে ডাকতে চাইলে আমি মানা করে দিলাম।এতো রাতে সবার ঘুম ভাঙ্গানোর কোনো মানে হয় না।উনিও মেনে নিলেন।ডাক্তারকে কল করলেন,উনি নাকি শ্বশুরবাড়ি খুলনাতে বেড়াতে গিয়েছেন,আসতে পারবেন না।তার বদলে বলে দিলেন কী কী করতে হবে।
!
-উনি তো ডাক্তারের কথা শুনে ভীষণ রাগান্বিত।বললেন,আসতে পারবেন না মানে কী?ডাক্তার হয়েছেন কেন তাহলে?পেশেন্ট জ্বরে অস্থির আর আপনি শ্বশুরবাড়ি গিয়ে আরাম করছেন?আর আমার বউ এখানে শীতে কাঁপাকাপি করছে!!
!
-ওপাশ থেকে ভয়ে ডাক্তার বললো,দেখুন আমি তো আর জানতাম না আপনার ওয়াইফ আজ অসুস্থ হয়ে যাবে!তো আমি কী করবো?
!
-কেন?জানলে কী করতেন?রেগে…
!
-জানলে শ্বশুরবাড়িতে কুরবানি ঈদের দাওয়াত খেতে আসতাম না!আজ পনেরোদিন পর দাওয়াত খেতে আসলাম,আর আপনার ওয়াইফ অসুস্থ হয়ে গেল?হেসে….
!
-শাট আপ!আপনাকে যদি কাল সকালে আমার বাড়িতে না দেখি,তাহলে আপনার ডাক্তারি করার সাধ জন্মের মতো মিটিয়ে দিবো!গট ইট!রেগে…..
!
-স্যার,আপনি এখন ম্যাডামকে অন্য একজন ডাক্তারের কাছে দেখান!আমি ওনার নাম্বার দিয়ে দিচ্ছি!আর আমি কাল সকালের মধ্যেই চলে আসার ট্রাই করবো।ভয়ে……
!
-কোনো ট্রাই চলবে না।আমি যাতে সকালেই আমার বাড়ির ড্রইংরুমে দেখি,নইলে ডাক্তারির সব সার্টিফিকেট আর আস্ত থাকবে না।রেগে…..
!
-ওকে স্যার।আমি নাম্বার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
!
-উনি ডিজগাস্টিং বলে ফোন রেখে দিলেন।অন্য ডাক্তারকে ফোন করে সব জেনে নিলেন।ফোন রেখে উনি একটা বাটিতে করে পানি নিয়ে আসলেন! আমি চোখ খুলতে পারছিলাম না।তাও উনার সব কাণ্ডকারখানা দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।
!
-বাটি দিয়ে পানি নিয়ে আসতে দেখে আমি বড্ড অবাক হলাম।কোনোমতে জিজ্ঞেস করলাম,বাটিতে পানি কেন?
!
-তোমার মাথায় পানি দিতে হবে, ডাক্তার বলেছে!
!
-আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝলাম না!বললাম,এই বাটি দিয়ে পানি দিবেন?
!
-হুম!
!
-আপনি জন্মে ও কোনোদিন মানুষের সেবা করেননি,বুঝাই যাচ্ছে!
!
-তাতে কী?
!
-বাটি দিয়ে যে মাথায় পানি দেয় তা আমি জন্মেও দেখিনি!তেজপাতা মার্কা জীবন নিয়ে দুনিয়াতে এসেছেন।
!
-উনি মুখ গোমড়া করে বললেন,তাহলে কীভাবে পানি দিতে হয়?
!
-থাক,আপনাকে আর পানি দিতে হবেনা।এতটুকু সেবা করে পরে সবার কাছে বলে বেড়াবেন যে সারারাত বসে আপনি আমার সেবা করেছেন।
!
-এই!পকপক বন্ধ করো।বলো,প্লিজ!
!
-এটা আবার সবার কাছে বলে বেড়াবেন না তো?আসলে আপনার তো নিজের বিষয়ে বাড়িয়ে বলার বাতিক আছে!বাটি দিয়ে পানি দেয়া!!!!যত্তসব….. হাঁদারাম!
!
-আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম রাগে উনার মুখ থমথম করছে,তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,ওকে!
!
-আমিও সুযোগ পেয়ে বললাম,বালতি দিয়ে পানি নিয়ে আসুন,একটা মগ,আর টাওয়াল আনুন।আর মেডিসিন? ওগুলো কোথায়?ভ্রু কুঁচকে
!
-মেডিসিনের কথা শুনে উনি কাকে যেন ফোন করলেন।কিসব বলে ফোন কেটে দিয়ে বালতি দিয়ে পানি আনলেন,যা যা বললাম সবকিছু আনলেন।ধীরেসুস্থে পানি দিয়ে দিলেন আমার মাথায়।সুন্দর করে চুল মোছে দিলেন।কিছুসময় পর দরজার ঠকঠক শব্দ হলো। উনি দরজা খুলে দেখেন দারোয়ান, দারোয়ান এত রাতে কোথা থেকে যেন ঔষধ নিয়ে এলেন।ওগুলো ওনার হাতে দিয়ে দারোয়ান চলে গেলেন।আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,এত রাতে ঔষধ কোথা থেকে নিয়ে আসলো?
!
-সেটা তোমাকে বলবো কেন?
!
-আজব!
!
-আমার হাতে মেডিসিন গুলো দিয়ে বললেন,ওগুলো খেয়ে ঘুমাও!
!
-আমি ঔষধ খেয়ে দুইগ্লাস পানি খেলাম।উনি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন।আমার হাসি পাচ্ছে উনাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে।উনি এখনো সেই স্যুট -প্যান্ট পরে আছেন।এভাবে কামলার মতো উনাকে আমার সেবা করতে দেখে আমি মজা পেলাম।জ্বর কমেছে বোধহয় পানি দেয়ার পরে!আরেকটু মজা নেওয়ার জন্য আমি বিছানায় ঠেস দিয়ে বসলাম…….
!
-উনি বাস্তবে ফিরে এসে বললেন,যাও,ঘুমাও!
!
-ঘুমুবো না!মন খারাপ করে
!
-কেন?ভ্রু কুঁচকে
!
-আমার পা ব্যাথা করছে!
!
-হোয়াট?
!
-হুম, পা টিপে দেন!
!
-কীহ?আমি পা টিপবো? অবাক হয়ে….
!
-ওহহ..স্যরি।আচ্ছা,আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন!
!
-উনি আবারো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন।হয়তো,বোঝার চেষ্টা করছেন যে সত্যিই আমার পায়ে ব্যথা কি না!
!
-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।অনেক হেল্প করেছেন,সো থ্যাংকস ।আমার পা ব্যথা করছে না না করছে তাতে আপনার কিছু হবে না।আজ যদি নিজের বাসায় নিজের ফ্যামিলির কাছে থাকতাম তাহলে সবাই আমার জন্য নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিতো। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই,চিকেন বল বানিতে খাওয়াতো আব্বু।ভাইয়া ঔষধ খাইয়ে দিতো।আম্মু সারারাত পাশে বসে সেবা করতো। সবই হতো।কিন্ত এটা তো নিজের বাড়ি না……তাই…..
!
-এটুকু বলার পরই উনি ঠাস করে বিছানায় বসে ঠুস করে আমারর পা টেনে নিয়ে টিপে দিতে লাগলেন।
!
-আমার মনে তো লাড্ডু ফুটতে লাগলো।যাইহোক,,আমি যে এত বড় এক্টর তা আজই জানলাম।বাবাহ…..নিজের উপর ফিদা।এই আবরার আগুন চৌধুরী নামক গুন্ডা লোকটাকে দিয়ে যে আমি শুভ্রতা জান্নাত খুশবু পা টিপালাম,সেটা যদি সবাই দেখিতে পাইতো তাহলে কতই না আনন্দ হইতো,মনে বড়ই আরাম পাইতাম।আর আমার মিনসে টা ও আমার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের কাছে হারিয়া গেল?কেয়া বাত……আমি বিশ্বজয় করা হাসি ফুটাইলাম ঠোঁটের কোণে,আমার মিনসে সেটা দেখিতে পাইলো না।সে পা টিপিতেই আছে,টিপিতেই আছে।অবশ্য শরীরটা আমার খুবই খারাপ!তাও এই মুহূর্ত দেখার লোভ সামলাইতে না পারিয়া নাটক করিতেই হইলো……
!
-আমার নয়নে ততক্ষণে নিদ্রা ভর করিয়াছে।
!
‘সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি,উনি আমার পা থেকে কিছুটা দূরে ঘুমিয়ে আছেন।উনার মাথাটা ঠিক আমার পায়ের নিচে,আর ঘুমের মধ্যে উনি উনার মাথা চুলকাচ্ছেন।দেখে আমার হাসি পেয়ে গেলো। দেখি,মাথায় উকুন আছে কিনা…আমি আবার ভালো উকুন আনতে পারি।আমার জানু আনিকা ইবনাত আমাকে উকুন আনার টেকনিকটা শিখিয়ে দিয়েছে।যাইহোক রাতে উনি আমার পা টিপে দিয়েছেন,এই এত বড় ঋণের বোঝা উকুন এনে শোধ করে দিই!আমার মহান মিনসেটা যে…….
!
কিন্তু ফাটা কপাল!যেই গেলাম উনার মাথার কাছে অমনি উনি লাফিয়ে উঠলেন।চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানায় সোজা হয়ে বসে বললেন,কী?পা ব্যাথা কমেনি?জ্বর কমেনি এখনো? আসলে চোখটা লেগে গিয়েছিল হঠাৎ করে।
!
-আমার জ্বর এখন আর নেই।পা ব্যথা নিরাময় হয়ে গেছে।এত ভালো ঔষধ থাকতে পা ব্যথা আর থাকার সাহস পাবেনা।
!
উনি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,ঔষধ? কোথায় পেলে?আমি তো পা ব্যথার কোনো ঔষধ আনিনি…
!
-এই ঔষধ সেই ঔষধ না!
!
–উনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,এটা আবার কেমন ঔষধ তাহলে?
!
-আপনি বুঝবেন না!
!
-কেন?আমি কেন বুঝবো না?আমাকে কী বোকা মনে হয়?
!
-না,ভ্যাবলা মনে হয়!
!
-হোয়াট? ভ্যাবলা মানে?অবাক হয়ে…..
!
-জানি না।বলেই বিছানা থেকে উঠে সোজা ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। উনি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। আর আমি উনাকে বোকা বানিয়ে বহুত আরাম পেলাম।
!
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরুলাম। বেরিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।উনি আমার জন্য ভাত,মাছ,মাংস,ডাল,আলুভাজি, অমলেট আর দু-তিন রকমের আচার নিয়ে এসেছেন।আমি অবাক হয়ে বললাম,এসব কি?
!
উনি ক্রাশমার্কা হাসি দিয়ে বললেন,এভাবে বলে না সোনাপাখি,এভাবে বলতে হয় না।আমার ছোট সোনাপোকাটা জ্বর নিয়ে নিচে ব্রেকফাস্ট করতে যাবে,সেটা আবার হয় নাকি?
!
আমি বেক্কলের মতো বললাম,সোনাপাখি, সোনাপোকা এগুলো কে?
!
উনি এবার ব্রাশমার্কা হাসি দিয়ে বললেন,ওগুলো আমার বউয়ের নিকনেইম।তারপর লাজুক ভঙ্গিতে বললেন,সারারাত জ্বরে কষ্টপাচ্ছিল তাই আরকি এই ব্যবস্থা! সব খাইয়ে ছাড়বো আজ!
!
আমি উনার মতলব বুঝতে পেরে বললাম,তাহিলে আপনি আপনার সোনাপোকা বউকে খাওয়ান আমি আসি….বলেই দরজার দিকে দৌড় দিতে গিয়ে দেখি,ওটার উপরের ছিটকিনি লাগানো। আমি তো সারাজীবনেও নাগাল পাবো না….
!
পেছনে ঘুরে খেলাম ধাক্কা গুন্ডাটার সাথে,আর উনি সুযোগ বুঝে কাজ হাসিল করে নিলো,মানে ঠাস করে আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বসলো। আমি চেহারা কালো করে বললাম,আসলেই আপনি বখাটে…..
!
উনি বাঁশমার্কা ডাটিয়াল হাসি হেসে বললো,সোনাপোকা এত দুষ্টুমু করে না।আসো,খাবার শেষ করো।বলেই টানতে টানতে আমাকে নিয়ে গেলেন।
!
-আমি এত খাবার খাবো না।
!
-খেতেই হবে।রেগে…..
!
-খাব না!
!
-একগুয়েমির ফল ভালো হবে না।সো চুপ থাকো।
রেগে
!
-বুঝলাম কাহিনী করে লাভ নেই।বললাম,আপনি ভাত, মাছ এনেছেন কেন?
!
-আমার ইচ্ছে!পকপক বন্ধ করো।রেগে
!
-আসলে……
!
-আহ!বলেছি পকপক অফ রাখো।নইলে মজা দেখাবো….তাড়াতাড়ি খাবারগুলো শেষ করো। রেগে
!
-আমি উনার চিৎকারে ভয় পেয়ে খাওয়া শুরু করে দিলাম।আর উনি একদৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়েই আছেন।এভাবে তাকিয়ে থাকলে কী খাওয়া যায়?আমি বেশ আনইজি ফিল করলাম।
!
-শেষমেশ বলেই ফেললাম, এই!আপনি অন্যদিকে তাকান।
!
-হোয়াট?
!
-মানে,আমার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকান!
!
-না।
!
-আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,কেন?
!
-আমার সোনাপোকা বউয়ের দিকে আমি তাকাবো,তাতে আমি কারো কথা শুনবো না।তুমি খাও…
!
-আমি এভাবে খেতে পারছিনা।এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে কি খাওয়া যায়?এমন করছেন কেন?
!
-সেটা তোমার ব্যাপার!আর আমি কাউকে এক্সকিউজ দেবো না!
!
-আমার কথা বলার ইচ্ছেটাই চলে গেলো। উনার কান্ডকারখানা দেখিয়া জ্ঞান হারাইবার দশা আমার।গিরগিটিও এতবার নিজের রঙ পাল্টায় না।উনি এই ভালো তো এই খারাপ।বুঝলাম না, উনার কি মানসিক প্রবলেম আছে?আজব!যদি মানসিক প্রবলেম থাকে তাহলে?হায়……শেষমেশ মানসিক রোগীর সাথে আমার বিয়ে হলো!এই দুঃখ আমি কই রাখি?ওয়্যারড্রোবের ভেতর রাখব নাকি?রাখার জায়গাও নাই!
!
বিকেলবেলা।
!
সারাদিন আমি আর মামানি বসে বসে গল্প করলাম সানাচাচীর সাথে।জ্বর আর নেই,মামানিতো জ্বরের কথ শুনে গুন্ডা আবরার আগুনকে বকে দিলেন ইচ্ছেমতো। সেই রাগে উনি বাসা থেকে বেরিয়ে সাদাফ ভাইয়ার বাসায় বসে আছেন। যাইহোক, এখন আমি সুস্থ। তাও মামানি একটু পরপর গায়ে হাত দিয়ে দেখছেন,জ্বর আছে কিনা!
!
আর মামা যখন শুনলো এই নিউজটা মামানির কাছ থেকে,তখনই ডিসিশন নিলো,আমাকে হসপিটালে এডমিট করতে হবে।
!
আর আরহাম ভাইয়া,উনি রীতিমতো খাবারের আয়োজন করেই চলেছেন।একটু পরপর জিজ্ঞেস করছে,কি খাবো,কি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে,বমি আসছে কিনা?নানান প্রশ্নের ভারে আমার জ্বর মামা ভয়েই গা ঢাকা দিয়েছে!ব্যাটা আর ফেরত আসবে কিনা সন্দেহ!
!
সন্ধ্যার কিছু পর!
!
ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। রিসিভ করে আসসালামু আলাইকুম বলতেই ওপাশ থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ এলো। বুঝলাম না কে হতে পারে।যখন বুঝলাম,তখন আমি এতটাই অবাক এবং…….. ‘
!
চলবে…..