ভালোবাসায়_ভেজা_সন্ধ্যে #রোকসানা_রাহমান পর্ব (১৭)

0
356

#ভালোবাসায়_ভেজা_সন্ধ্যে
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (১৭)

*** ১৩ আর ১৭ ঘরের নামতা পড়তে পড়তে ডানদিকে হাঁটা শুরু করো। চোখ অবশ্যই বন্ধ থাকবে।

বিঃদ্রঃ নামতা ভুল হলে বিপদ সংকেত বাজতে পারে। এর জন্য আমি দায়ী নই!***

কাগজটা হাত থেকে পড়ে গেলো। মনে মনে দ্রুত নামতা পড়তে শুরু করলো,,

১৩*১=১৩
১৩*২=২৬
১৩*৩=৩৯
১৩*৪=??

রিপ্তি শুরুতেই আটকে আছে। কিছুতেই মনে করতে পারছেনা। এখন কি হবে?? রিপ্তি মেয়েটার কাছে সাহায্য চাইবে,সেও নেই! রিপ্তির মুখ কাঁদো কাঁদো। এখন কি করবে??? রিপ্তি চটপট আঙুলের কড়ি গুনে গুনে নামতা মুখস্ত শুরু করলো। আগে মুখস্ত করবে তারপর ডানদিকে ঘুরবে। সে কোনো বিপদ সংকেতে পড়তে চায়না,না না না!

রিপ্তি কড়ি গুনছে আর ঠোঁট নাড়ছে। মাঝে মাঝে ভুলে গেলে চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করছে। ব্যর্থ হলে আবার কড়ি গুনছে। বেশ কয়েকবারের মাথায় রিপ্তি নামতা মুখস্ত করে ফেললো। ঠোঁটে সফলতার হাঁসি ঝুলিয়ে ডানের রাস্তার দিকে পা বাড়িয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী চোখ বন্ধ। সাবধানে পা ফেলছে সে। কন্ঠে চলছে নামতার বিড়বিড়ানি। কিছুদুর পৌছুতেই রিপ্তি থমকে গেলো। ১৭*৬= কত? মনে পড়ছেনা তার। সামনে এগুবে কি এগুবেনা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে। ভুল বললে যদি সত্যি কোনো বিপদে পড়ে??? রিপ্তি আর সামনে এগুলো না। স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো,গাছের ন্যায় অনড়! চোখটাও খোলার সাহস পাচ্ছেনা। সকালের মিষ্টি রোদ এখন ঝাঝ মাখানো। মনে হচ্ছে সূর্যটা আকাশে নয়,রিপ্তির তালুতে বসে আছে।

রিপ্তি আবার বাকি নামতাটুকু মুখস্ত করে সামনে এগুলো। এবার আর বেশি হাঁটতে হয়নি। দু/চার কদম ফেলতেই কারো উপর পড়ে যাচ্ছিলো। রিপ্তি চোখ মেললো। একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে। চিকনগড়ন,তবে এর বয়স বুঝা যাচ্ছে। ২৩-২৫ এর মধ্যে হবে। রিপ্তির পড়ে যাওয়াকে উনি সামলিয়েছেন। রিপ্তি নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হতেই মেয়েটি ওর দিকে একটি কাগজ বাড়িয়ে দিলো। রিপ্তি মুখটা কাঁচুমাচু করে বললো,,আবার কাগজ??

মেয়েটি হয়তো ওর কথার মানে বুঝেছে। ঈষৎ হাসছে। অনিচ্ছাকৃত কাগজটা নিতেই,মেয়েটি চলে গেলো। রিপ্তির উনাকে ডাকতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু ইচ্ছে প্রকাশের আগেই মেয়েটি অনেকদুর চলে গিয়েছে। রিপ্তি কাগজটা মেলতে মেলতে ভাবছে,প্রথমবার তো একটি ছেলে ছিলো,তারপর দুটো মেয়ে কেন? একটি ছেলে,একটি মেয়ে তারপর তো একটি ছেলের আসার কথা!

**রোদ,বৃষ্টি,ঝড়ে
তিনপায়ে ঘুরে…..

ধাধাটির উত্তর বের করো। উত্তরটাই তোমাকে আলুখেতে পৌছে দিবে!**

রিপ্তি ফ্যালফ্যাল নয়নে চেয়ে আছে কাগজটির দিকে। এসবের মানে কি?? তিন পা নিয়ে কে ঘুরে?? রিপ্তি কাগজের মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর প্রাণীকুলে। জানা-অজানা নানা প্রজাতির প্রাণীকে সে ছক আকারে বিন্যাস করছে। কিন্তু কোথাও সে তিনপায়ের প্রাণী দেখতে পারছেনা। চার পা,পাঁচ পা এমন কি বারো পায়ের প্রাণীও সে দেখেছে কিন্তু তিনপায়ের কোনো পশু,পাখি দেখেছে এমনটা তো মনে পড়ছেনা। রিপ্তি এবার বিরক্তের চরম পর্যায়ে পৌছে গেলো। হাতের কাগজটা ছিড়ে কুটিকুটি করে রাগ ভাসাচ্ছে বাতাসে। তবুও কমছেনা। নিজেই নিজেকে বকে যাচ্ছে,কেন আমি ঐ ছেলের হাত থেকে কাগজটা নিতে গিয়েছিলাম? কি প্রয়োজন ছিলো?? এখন তো সব কাগজের খেলা চলছে। মনে হচ্ছে আমি কাগজের পুতুল। উফ! আমি কোন ফ্যাসাদে পড়লাম?? রিপ্তির ইচ্ছে হলো মাটিতে বসে পড়তে। হাত-ছুড়ে কান্না করতে! কিন্তু ছোটছোট ধুলোর কণায় জামায় মেখে যাবে,সে ভয়ে আর বসলোনা। দুঃখের চাহনি আঁকলো মাটিতে!

রিপ্তি মাটির কণার সাথে দুঃখ ভাগাভাগি করতেই হুট করে মনে পড়লো,ক্লাস সেভেন নাহয় এইটে একটা গল্প পড়েছিলো৷ যেখানে একটি পরিবারের সকলেই মুরগির পা খেতে পছন্দ করে। তাই সেই পরিবারের কর্তা তিনপাওয়ালা মুরগি পুষতো। তাহলে কি এই চিঠিতে তিন পাওয়ালা মুরগির কথা বলেছে?? ওটা তো গল্প ছিলো,বাস্তবেও কি তিন পাওয়ালা মুরগি আছে?? সম্ভব!

রিপ্তি ভাবনা বন্ধ করলো। চারপাশে দ্রুত চোখ বুলাচ্ছে। যদি এটার উত্তর তিন পাওয়ালা মুরগি হয়,তাহলে আশেপাশেই থাকবে। রিপ্তি সতর্কদৃষ্টি ফেলছে চার পাশে। ছোট ছোট গাছের আনাচে-কানাচে। কিন্তু কোথাও সে মুরগি দেখতে পারছেনা। তিন পা তো দুর,দুই পাওয়ালা মুরগিও নেই। রিপ্তি হতাশ হয়ে মাটিতেই বসে পড়লো। ময়লা ধুলোর কথা ভুলে গিয়েছে। কপালে কি হাত ঠেকাবে?? সে কি এই পৃথিবীর সবচেয়ে দুখী মানুষ?? যে বিশ্ববিযালয়ে ছাত্রী হয়ে নামতা পারেনা,সামান্য ধাধার উত্তর পারেনা!

রিপ্তির ডানহাতটা কপালে ঠেকবে,তখনি ক্রিং ক্রিং শব্দ। রিপ্তি খানিকটা ছিটকে উঠলো। গালবসা,কালোবর্ণের মাঝবয়সী একটি লোক তারদিকে চেয়ে আছে,রিকসার মধ্যে বসা। গলায় লাল ঘামছা। দুর থেকেই ঘামের দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। রোদে লোকটির মুখের ঘাম চিকচিক করছে! রিপ্তি লাজুক হাঁসলো। হায়রে,তিনপা!

বুকের ধুরুধুরু কম্পন নিয়ে,রিকসায় বসে আছে,রিপ্তি। রোদের তীব্র তাপটা বাতাসে ঢাকা পড়ছে। হাওয়ার বেগে ছুটছে তার রিকসা। কোথায় যাচ্ছে সে জানেনা। তবে তার বুকের কম্পন ধীরে ধীরে বাড়ছে। মনের ভেতরের হাওয়া বলছে,সে ব্যাঙরাজ্যে যাচ্ছে। অনুভবের সব অনুভবকে শুষতে!

রিপ্তির ভাবনা রেশ কাটার আগেই রিকসা থেমে গেলো। সে তখনো রিকসার আড়ালেই। ভয় করছে,আতঙ্ক ঠেকছে। যদি অনুভবকে দেখতে না পায়। অন্য কেউ হয় তাহলে?? কিন্তু এখানে আর কে হবে? অনুভবকে ছাড়া তো সে অন্য কাউকে চিনেনা। যদি অপরিচিত কাউকে দেখতে পায়? যার মুখ ভয়ঙ্কর,গলায় শিকল,চুল লাল,নানা জায়গায় খোপ খোপ ক্ষতের চিহ্ন! মুহুর্তেই রিপ্তি ভয়ে জমে গেলো। রিকসা থেকে নামার সাহস পাচ্ছেনা। রিকসাওয়ালা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বললেন,,

“” আপা নামেন,অন্য পেছেন্জার ধরুম!””

রিপ্তি কাঁপা কাঁপা পলকে লোকটির দিকে তাকালো। সে যে প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে তা ওর চোখ এড়ালোনা। লোকটি আর অপেক্ষা না করে আবার রিকসায় চেপে বসলো। এমনভাব,নামলে নামেন,না নামলে নাই। আমি আর অপেক্ষা করতে পারুম না!

রিপ্তি চটপট নেমে দাড়ালো। সামনে চোখ রাখলো। সোজা রাস্তা চলে গিয়েছে। আশে পাশে কি আছে তা দেখারও সাহস পাচ্ছেনা। রিপ্তির মন হঠাৎ বলে উঠলো,আমি ক্যাম্পাসের ভেতরে আছিতো??

রিপ্তির মনো প্রশ্ন শেষ হতেই হাততালির শব্দ। দুর থেকে অনেকের হাঁসির আওয়াজ আসছে। রিপ্তি ঘুরে দাড়ালো। কাউকে দেখতে পারছেনা। ইটা ভবনের দেয়াল আড়াল করে রেখেছে। রিপ্তি পথ ছেড়ে সবুজ ঘাসে পা দিলো। কয়েককদম এগুতেই দেয়ালের আড়ালটা সরে যাচ্ছে। আড়াল শেষে অনুভবের মুখটা চোখে পড়লো। ঘাসে বসে আছে। তার সাথে আরো অনেকেই। প্রায় আট/দশজনের একটি দল হবে হয়তো। সকলে গোল করে বসা। কিছু নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে।

রিপ্তি আর এক সেকেন্ডও দেরি করলোনা। দৌড়ে অনুভবের সামনে গিয়ে দাড়ালো।

“” এগুলো সব আপনার কারসাজি তাইনা?””

অনুভব পাশে চোখ তুলে তাকালো। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ঘাসে হাতের ভর রেখে,পাশ সরলো। তারপর গুনগুন শুরু,,

অন্তর দিলাম বিছাইয়া
বইসা লওনা জিরাইয়া
যদি তোমার,চায় মনে
নয়ন রাইখো,নয়নে
পরাণ রাইখো পরানে(গান)

রিপ্তি ঠিক কি রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছেনা। বুঝা-অবুঝার দ্বন্দ নিয়ে দাড়িয়ে রইলো। পাশ থেকে একটা ছেলে বললো,,

“”হায়,আমার শাবনুর!””

সকলেই হেঁসে উঠলো। অনুভবও হাঁসছে। তার হাঁসি দেখে মনে হলো রিপ্তিনামক মেয়েটাকে সে ভুলে গিয়েছে। তার মনেও যে বাজছে,,

“” হায়,আমার অনুভব!””

কেউ কি তা শুনতে পেয়েছে??

অনুভব ভ্রূ উচিয়ে রিপ্তির দিকে তাকালো,

“” বসবে না?””

অনুভবের প্রশ্নটা যেন রিপ্তি বুঝলোইনা অমনভঙ্গিতে ওর দিকে চেয়ে আছে। অনুভব রিপ্তির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পেতে দেওয়া আসনটা নিজেই দখল করতে নিলে রিপ্তি দ্রুততার সাথে বললো,,

“” আপনি আমার জায়গায় বসছেন কেন?””
“” আমি ভাবলাম,তুমি বসবে না!””

রিপ্তিখানিকটা অপমানবোধ করলো সাথে লজ্জা। এতক্ষণ তাকে কেউ বিশেষভাবে খেয়াল না করলেও,এখন সবাই তার দিকে চেয়ে আছে। সবার চোখেই সীমাহীন কৌতুহল!

সবার দৃষ্টি আড়াল হতে রিপ্তি অনুভবের পাশে বসে পড়লো। অনুভব নিভু গলায় বললো,,

“” তাহলে এবার,আলুখেতের সকল আলুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। আপনার কি ইচ্ছে বলদরানী?””

অনুভবের ঠোঁটে হাঁসি ঝুলছে। রিপ্তির দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে,সকলের উদ্দেশ্যে বললো,,

“” ইনি হলেন আমাদের সর্বকনিষ্ঠা জনাবা। ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী,রিপ্তিসা রিপ্তি!””

সকলেই তাকে হাই জানালো। রিপ্তি ভদ্রতাসূচক হাঁসি ঝুলিয়ে ফিসফিস করে বললো,,

“” আমার পরিচয় বলে থম মেরে গেলেন কেন? উনাদের পরিচয় বলবেননা?””
“” আলুর পরিচয় দিয়ে তোমার কি কাজ? আলুর ব্যবসা করবে?””

রিপ্তি কড়াদৃষ্টি ছুড়লো। অনুভবও ভ্রূ নাচিয়ে নিজের প্রশ্নের উত্তর চাইলো। রিপ্তি মুখ বাকিয়ে ভাবনায় ডুব দিলো। এই লোকটা। আমার মনের বানানো আলু খেতের কথা কি করে জানলো?? উনি কি বিড়বিড়জান্তা!

“” বিড়বিড়জান্তা কি?””
“” যে বিড়বিড় কথা পড়তে পারে।””

অনুভব রিপ্তির কোলভর্তি করে চকলেট ঢেলে বললো,,

“” তোমার বিড়বিড় শোনার জন্য বিড়বিড়জান্তা হওয়ার প্রয়োজন নেই,একটু কাছাকাছি হলেই যথেষ্ট।””

অনুভব কথা শেষ করে একটু রিপ্তির দিকে চেপে বসলো।

রিপ্তি সরতে গিয়েও সরলোনা। নিজের কোলের দিকে তাকিয়ে বললো,,

“” এগুলো কি?””
“” গিফট।””
“” গিফট? কিসের?””
“” আজ আমার বাচ্চার মায়ের জন্মদিন তো সেই খুশিতে সবাইকে গিফট দিয়ে বেড়াচ্ছি!””
“” আপনার বাচ্চাও আছে?””

অনুভব রিপ্তির দিকে ঝুকলো। চোখে চোখে পলক ফেলে বললো,,

“” উহু,এখনো হয়নি,হবে!””
“” কতগুলো?””
“” কী কতগুলো?””
“” আপনার বউ কতগুলো?””

রিপ্তির শেষ প্রশ্নটা অনুভব শুনলোনা। তার ফোন বাজছে। পকেট থেকে ফোন বের করলে,রিপ্তিও আড়চোখে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো,তনয়া লিখা!

অনুভব কলটা রিসিভ করতে করতে উঠে দাড়ালো। রিপ্তি তখনো বসে। কোলের চকলেটের উপর রাগীদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দুইহাত ভরে চকলেট তুললো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,আপনার বউয়ের জন্মদিন,আপনি খান। আমি কেন খাবো?? চকলেটগুলো মাটিতে ফেলে দিবে তখনি অনুভবের তাড়াকন্ঠ।

গোলমিটিং শেষ। সকলেই ব্যস্তপায়ে পথের দিকে যাচ্ছে। অনুভবও। রিপ্তি থম মেরে বসেই রইলো। অনুভব গলা হাঁকিয়ে বললো,,

“” আজ কি ঘাসের সাথে প্রেম করবে বলে পণ করেছো?””
“” মানে?””
“” প্রেমটা পরে করো। এখন রিকসায় এসে বসো।””

অনুভবের ডাকে রিপ্তি তড়িঘড়ি করে দৌড়ে এলো। চকলেটগুলো ওড়নায় পেচিয়েছে। রিকসায় বসতেই অনুভব বললো,,

“” বললাম আর চলে এলে? কোথায় যাচ্ছো জিজ্ঞেস করলেনা? যদি তোমাকে পাচার করে দেই?””

রিপ্তি চোখ বড়বড় করে অনুভবের দিকে তাকিয়ে আছে।

~~~

না অনুভব রিপ্তিকে পাচার করেনি। হসপিটালে নিয়ে এসেছে। কেন এসেছে সে জানেনা। অনুভবকে জিজ্ঞেস ও করা হয়নি। আধঘন্টা ধরে সে অপেক্ষারত। অনুভব সেই যে তাকে বসিয়ে করিডোরের মধ্যে মিলিয়ে গেলো,তারপর আর দেখা নেই। অপেক্ষা করতে করতে সে বিরক্ত হচ্ছে আবার ভালোও লাগছে। কারণ অনুভব তার সাথে আছে। অনুভবের দেওয়া চকলেটের অর্ধেক সে শেষ করে ফেলেছে। মনে হচ্ছে সে আসতে আসতে বাকিটাও শেষ হয়ে যাবে। তাতে কি? তবুও সে অপেক্ষা করবে। আজকে তার কাছে অপেক্ষা মানে অনুভব,চকলেটের কামড়ে তাকে অনুভব করছে। হারিয়ে যাচ্ছে শিহরণময় অনুভূতিতে।

রিপ্তি শেষ চকলেটটায় কামড় বসাতেই অনুভবের আগমন ঘটলো। হাতে সাদা টাওয়াল পেচিয়ে কিছু একটা নিয়ে আসছে। বেশ সাবধানী। রিপ্তির নিকটে আসতেই বিড়বিড় করলো,,একটু আগে বলেছিলো হবে,এর মধ্যে হয়ে গেলো? এতো ফাস্ট!

“” ভাবনারানী!””
“” হুম!””
“” ধরো।””
“” আমি?””
“” হুম।””

রিপ্তি হাত পেতে বাবুটাকে কোলে নিলো। কোমল,তুলতুলে বাবুটাকে বুকের সাথে মিশিয়ে বললো,,

“” আপনার বাবুটা,আপনার মতো হয়েছে!””

অনুভব শব্দ করে হেঁসে উঠলো। রিপ্তি মুখ কালো করে বললো,,

“” হাসছেন কেন?””
“” ওর বয়স একদিনও হয়নি,এরমধ্যে বুঝে নিলে ও আমার মতো হয়েছে?””
“” হুম।””
“”শুধু বাবুকেই দেখবে? তার মাকে দেখবেনা?””

রিপ্তি অনুভবের পিছুপিছু হাটছে। লম্বা করিডোর পেরিয়ে একটি রুমে ঢুকে পড়লো অনুভব। রিপ্তি ঢুকলোনা। তার হাত-পা কাঁপছে। হঠাৎ করেই শরীরের সব শক্তি হাওয়াই মিলে গেলো। কোলের বাবুটাকে ধরে রাখার শক্তিটুকুও নেই। পড়ে যাবে না তো?? অনুভব ভেতর থেকে মাথা বের করে বললো,,

“” নতুন বউদের মতো লজ্জা পাচ্ছো কেন? এটা শ্বশুড়বাড়ী নয়,হসপিটাল!””
“” বাবুটাকে ধরবেন প্লিজ! পড়ে যাচ্ছে।””

অনুভব এক পলক রিপ্তির হাতের দিকে তাকালো। বেরিয়ে এসে বাবুসহ রিপ্তিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

“” চলো!””

সাদা ফকফকা বেডের উপর আধশোয়া মেয়েটির দিকে চেয়ে আছে রিপ্তি। মুখটাও কেমন রক্তশূন্য হয়ে আছে। চোখের দৃষ্টি দূর্বল,দেখেই বুঝা যাচ্ছে,অনেক ধকল সহ্য করে ছোট্টপ্রাণটাকে পৃথিবীতে এনেছেন। রিপ্তি মনে মনে প্রশ্ন করলো,কে উনি? লিনা? উনিই কি লাল ব্যাঙের বংশের আলো জ্বালিয়েছেন??

“” তনয়া,তোর বাবু তোর মতো না হয়ে,আমার মতো হলো কি করে? তোর বর এ কথা জানলে কি হবে ভাবতে পারছিস?? আমার মনে হচ্ছে সিয়াম ভাই আসার আগেই আমার চলে যাওয়া উচিত। নাহলে নির্ঘাত তোদের ডিভোর্স হবে।””

তনয়া হাসলো। দুর্বল হাসি। ইশারায় রিপ্তিকে ডাকছে। রিপ্তি মেয়েটির সামনে গিয়ে দাড়ালো। দুর্বল কন্ঠে বললো,,

“” বাবুর একটা নাম রেখে,ফাজিলটাকে নিয়ে যাও তো। ওর জন্য আমার ডিভোর্স হতে হতে বেঁচে গিয়েছে।””

এই মেয়েটা লিনা নয় ভেবে যে সস্থির নিশ্বাস ফেলেছিলো রিপ্তি তা মুহুর্তেই অসস্থিতে পরিণত হলো। দুজনের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে এরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বন্ধুর জন্য বন্ধুর ডিভোর্স হবে কেন??

“” নাম ভাবলে?””

তনয়ার ডাকে রিপ্তির ঘোর কাটলো। বিস্ময় নিয়ে বললো,,

“” আমি নাম রাখবো?””
“” তোমার আপত্তি থাকলে দরকার নেই।””
“” আমার আপত্তি নেই। কিন্তু একটা অপরিচিত মেয়েকে নাম রাখতে বলছেন তো তাই…””
“” তুমি আমার পরিচিত।””
“” কিভাবে? আমি তো আপনাকে কখনো দেখিনি।””
“” অনুভব…””
“” আমাদের তাড়া আছে তনয়া। তিনটের ট্রেণ ধরতে হবে।””

অনুভবের বাধা পেয়ে তনয়া থেমে গেলো। রিপ্তির কোল থেকে বাবুটাকে নিতে নিতে অনুভব বললো,,

“” বাইরে গিয়ে দাড়াও। আমি আসছি!””

~~~

অনুভবের পাশেই রিপ্তি বসে আছে। এক রিকসায়। দুজনের মাঝে বেশ দুরত্ব থাকলেও রিপ্তির মনে হচ্ছে দুজন খুব কাছাকাছি আছে। যতটা কাছাকাছি থাকলে একে অপরের নিশ্বাসের শব্দ শুনা যায়। রিপ্তিও শুনছে। অনুভবের নিশ্বাসের শব্দ। তবে সে সেদিকে কর্ণপাত করছেনা। সবকিছু কেমন গোলক ধাধা লাগছে। তনয়া লিনা নয়,কিন্তু তার বাবু হয়েছে। অনুভব তো বলেছিলো উনার বাবু হবে,তাহলে কি কোনোভাবে এটা উনার বাবু? নাহলে এমন কি কারণ থাকতে পারে,যার জন্য তনয়া আপুর ডিভোর্স হতে পারে?? সম্পর্কে মেয়েবন্ধু হয়,উনার তো মেয়ে বান্ধুবী মানেই প্রেগন্যন্ট। তাহলে কি উনিও উনার বাবুওয়ালা মেয়েবান্ধবী ছিলো???

রিপ্তি কয়েকবার অনুভবের দিকে তাকালো। সব যেমন-তেমন,কিন্তু লিনার ব্যাপারটা মাথা থেকে যাচ্ছেইনা। এক বার কি উনাকে জিজ্ঞেস করবো? রিপ্তির ভাবনার মাঝেই অনুভব গলায় সুর তুললো,,

ঝুরি ঝুরি হাওয়ায়
উড়ে তাহার চুল
দিবে কি ইশারা
করতে একটু ভুল!!(রোকসানা)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here