মেঘনিবাসী #Part-5 #Esrat_Jahan

0
171

#মেঘনিবাসী
#Part-5
#Esrat_Jahan

ছোটখাটো একটা রাজপ্রসাদের সামনে যেন দাঁড়িয়ে আছে বিভা। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আর ঝিরিঝিরি বাতাস দোলা দিয়ে যাচ্ছে বারবার। কোলাহলপূর্ণ এই ঢাকা শহরের বুকে এত সুন্দর একটা বাড়ি থাকতে পারে তা ভাবতেও পারে নি মেহের। বাইরে থেকে দেখেই যদি এত সুন্দর লাগে, তাহলে এর ভেতরটা কেমন হবে? গাড়ি থেকে নামতে নামতে বিভার এমন বিস্মিতরুপ দেখে আরিয়া তাবাসসুম বললেন, ‘ভেতরে চল!’

বিভা বাস্তবে ফিরে আসে। আঁধার ঢাকা এই বর্ষণ রজনীতেও বাড়িটার আভিজাত্যপূর্ণ ছাপ ফুটে ওঠেছে কৃত্রিম আলোক বাতি’র দৌলতে। সুসজ্জিত বাগান থেকে ভেসে আসছে মনোমুগ্ধকর কামেনী, বেলি ফুলের সুঘ্রাণ। বিভা মুগ্ধ নয়নে সবকিছু দেখতে থাকে। তবে রাত হওয়ায় বেশিকিছু চোখে পড়লো না ওর।

গেইটের সামনে পাহারারত আছে একজন দারোয়ান। আরিয়া বিষন্ন মুখে তাঁকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতেই দারোয়ান মাথা নেড়ে তার উত্তর দিলো। বিমর্ষ ভাবটা কেটে গিয়ে স্বস্তি ফুটলো আরিয়ার চেহারায়। ওদের কথোপকথন বিভা শুনতে পেলো না। বিভাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলেন আরিয়া। দু’বার কলিংবেল বাজাতেই কাজের মেয়ে লুবনা এসে দরজা খুলে দিলো। বাড়ির সবাই ঘুমে বিভোর থাকায় আরিয়া সবাইকে জাগাতে বারণ করলো। আর বিভা ক্লান্ত থাকায় তিনি ওকে সোফায় বসে বিশ্রাম করতে বললেন। ফুফুর নির্দেশ পেয়ে বিভা তাঁর ক্লান্ত দেহখানি নিয়ে ধপ করে বসে পড়লো সোফায়। দু-চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছে ওর। বুয়া শরবত নিয়ে এলো ওদের জন্য। আরিয়া বুয়াকে বললেন বিভার জিনিসপত্র সব নিয়ে ওর জন্য বরাদ্দকৃত ঘরটাতে রাখতে। লুবনা তাঁর নির্দেশ মোতাবেক বিভার জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেলো। আরিয়া এবার লুবনার দিকে ফিরলেন। মেয়েটির শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে ভীষণ মায়া হলো তাঁর। সারা সন্ধ্যার জার্নিতে শরীর ভেঙ্গে গেছে। আরিয়া ডাকলো, ‘বিভা মা? ক্লান্ত লাগছে খুব?’

বিভা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘একটু।’

‘তবে তুই হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে যা। তারপর ঘুমিয়ে পড়।’

‘আমি খাবো না ফুপি। পেট ভরা।’

আরিয়া কপট রাগ নিয়ে বললেন, ‘তা বললে তো চলবে না! আমার বাসায় এসেছিস আর বলছিস খাবি না? টালবাহানা না করে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আয় বলছি!’

‘সত্যি বলছি ফুপি। ট্রেনে এতকিছু খেয়েছি যে এখন আর ইচ্ছা করছে না। প্লিজ জোর করবেন না, আমার খুব ঘুম পেয়েছে। একটু ঘুমাতে চাই!’

আরিয়া অভিমান করলো। কিন্তু জোরাজুরি করেও বিভাকে খাওয়ানোর জন্য রাজি করানো গেলো না। অগত্যা তিনি হাল ছেড়ে দিলেন। বিভা বাড়ির কোনোকিছু ঠিকঠাক চেনে না। আরিয়া ওকে রুমে পৌঁছে দিলেন। তখন রাত সাড়ে বারোটা। বিভা কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। হঠাৎ করে এত ঘুম কোথা থেকে আসলো কে জানে! ঘুমাতে গিয়ে ওর মনে হলো মায়ের কথা। বাড়িতে ফোন দিয়ে জানানো দরকার যে ও ঠিকঠাক পৌঁছাতে পেরেছে। তড়িঘড়ি করে ফোন বের করে রুবাইদাকে ফোন লাগালো। চিন্তায় চিন্তায় অস্থির রুবাইদা মেয়ের ফোন রিসিভ করেই নিশ্চিন্ত হলেন।। যাক, সুস্থভাবে পৌঁছাতে পেরেছে এতেই আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। মায়ের সঙ্গে অল্প কথা বলে ফোন রেখে আবারও বিছানায় গা এলিয়ে দিলো বিভা। তখনই মনে পড়লো আরিয়ার ছেলের কথা। একটাই ছেলে তাঁর। বিভা কোনোদিনও দেখে নি তাকে, না ওর সম্বন্ধে বেশিকিছু জানে। তবে সে শুনেছে আরিয়ার ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে পড়াশোনা করেছে, ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। দেখতেও নাকি সুদর্শন। একবার দেখলেই নাকি ‘প্রেমে পড়া’ টাইপ ফিল আসে।
আত্মীয়দের মতে, এই ছেলের যেমন রাজপুত্রের মতো চেহারা, তেমনি বিভিন্ন কাজে পারদর্শী। বড় বড় লোকজনদের সাথে তার উঠাবসা, কাজকর্ম। তবে এই ছেলে নাকি ফ্যামিলি গ্যাদারিং পছন্দ করে না। রাগ হলে নাকি তুলকালাম কান্ড ঘটায় সে। বিভা মনে মনে ভাবে, এই ছেলে ভীষণ ইন্টারেস্টিং পার্সন বটে। একই বাড়িতে যখন থাকবে, তখন দেখাসাক্ষাৎও নিশ্চয়ই হয়ে যাবে। না হলেও ক্ষতি নেই। তাতে বিভার কিছু যায়-আসে না। অতিরিক্ত সুদর্শন ছেলেদের প্রতি এলার্জি আছে ওর। এদের থেকে দূরে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে হয় বিভার। বাইরে তখন প্রগাঢ় হয় মধ্যরাতের অঝোর ধারায় বর্ষর্ণের সুর। বৃষ্টির মনোমুগ্ধকর রুমঝুম শব্দ শুনতে শুনতে বিভার চোখে এসে ভর করে তন্দ্রা। একসময় ঘুমের আবেশে ডুবে যায় সে!

Continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here