#হলুদ_খামে
#পর্ব_১১
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
বলা নেই কওয়া নেই আমাকে কোথায় যে নিয়ে যাচ্ছে কে জানে! রিকশায় উঠে আমার পাশ ঘেষে শক্ত করে আমার হাত ধরে বললো–
— পরীক্ষা কেমন দিয়েছিস?
বলি রিকশায় উঠে কপোত কপোতিদের মতো হাত ধরে কেউ পরীক্ষার কথা জিজ্ঞেস করতে পারে সেটা মানাফ ভাইয়া নামক আজব প্রাণীটা না থাকলে আমি কোনোদিন জানতেই পারতাম না।
— কি হলো চুপ করে আছিস কেনো? ও বুঝেছি, তাহলে তোর পরীক্ষা খারাপ হয়েছে!… ফাইল থেকে স্কেলটা বের কর।
মানাফ ভাইয়া তোমায় কে বলেছে আমার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে! বরং আজকের পরীক্ষাটা আরো বেশি ভালো হয়েছে। এবার বলো, আমরা কোথায় যাচ্ছি?
— তোকে বলেছি না, আমার কথার জবাব দেয়া বাদে আর একটা কথাও বলবি না। গেলেই দেখতে পাবি আমরা কোথায় যাচ্ছি। এবার যদি আর একটাও কথা বলিস তবে রিকশা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবো স্টুপিড।
মুখে তালা মেরে চুপচাপ মানাফ ভাইয়ার পাশে বসে আছি আমি। আর উজবুকটা আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে। এবার আমার রাগ হচ্ছে প্রচুর, না কিছু বলছে না কিছু বলতে দিচ্ছে। ভেতরে ভেতরে মানাফ ভাইয়ার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছি, যদিও উনার চৌদ্দগুষ্টির কাউকেই আমি চিনি না। মনে মনে উনাকে গালি দেয়া শেষ না হতেই একটা ফুলের দোকানের সামনে রিকশা থেমে গেলো। উনি কি তবে ফুল কিনতে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন? কিন্তু কাকে ফুল দেবে? আমাকে? আমাকেই যদি দিতো তাহলে আমার সামনে কেনো কিনবে? আমিও না কি, সামনে কিনলে কি এমন হয়? কিন্তু… তাহলে কি অন্য কারো জন্য? ভাবতেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। উনি অন্য কাউকে ফুল দেবে সেটা আমার একদমই সহ্য হচ্ছে না। আাচ্ছা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? বোধহয় উনার গার্লফ্রেন্ডকে প্রোপজ করতে উনি ভয় পাচ্ছে তাই আমাকে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে। খুব কান্না পাচ্ছে আমার। উনার গার্লফ্রেন্ড আছে সেটা উনি আমাকে আগে কেনো বললো না।
একগুচ্ছ সাদা গোলাপ হাতে নিয়ে আমার পাশে বসে আছে মানাফ ভাইয়া। সাদা গোলাপ আমার ভীষন প্রিয়, আর সেই সাদা গোলাপ দিয়েই কিনা মানাফ ভাইয়া তার গার্লফ্রেন্ডকে প্রোপজ করবে! ভাবতেই কান্না চলে আসছে আমার। আমাকে অন্তত একটা সাদা গোলাপ কিনে দিলে কি এমন ক্ষতি হতো?
এপাশ ফিরে কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করছি আমি। কিন্তু এবার তাতেও যেনো অপরাধ করে ফেলেছি আমি। আমার চুপচাপ থাকাটাও যেনো মানাফ ভাইয়ার পছন্দ হলো না। কাঁটা গাঁয়ে নুনের ছিটা দিতে বললো–
— কিরে ফুলগুলো পছন্দ হয়েছে? দেখতো সব ঠিকাছে কিনা? যাকে দেবো তার পছন্দ হবে তো?
বড় বড় শ্বাস ছেড়ে বললাম- হুম খুব সুন্দর।
🍁
🍁
🍁
তারপরের পরীক্ষাগুলো আমি একাই দিয়েছি। মানাফ ভাইয়া আমার সাথে আর যোগাযোগ করেনি। সেদিন সাদা গোলাপ হাতে রিকশা থেকে নেমে মানাফ ভাইয়া আমার হাত ধরে আমাকে পার্কের ভেতর নিয়ে সকলের সামনে প্রোপজ করে। মাটিতে হাটু গেড়ে বসে যখন বলেছিলো–
তানহা তোকে আমি খুব ভালোবাসি রে। কিন্তু কখনও বলতে পারিনি, আজ বলতে বাঁধা নেই। এতো গুছিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না, ভালোবাসি শুধু এতটুকু শুনে রাখ। প্লিজ ফিরিয়ে দিস না আমাকে।
তখন মানাফ ভাইয়ার কথা বিশ্বাস হয়নি আমার। ভেবেছিলাম প্র্যাঙ্ক করছে আমার সাথে। কিন্তু আমার জবাবের আশায় যখন উনি মাটিতে হাটু গেড়ে বসেই ছিলেন তখন আমি আর অবিশ্বাস করে থাকতে পারিনি। কাঁপা কাঁপা হাতে ফুলগুলি হাতে নিয়ে মাথা নাড়িয়ে ছিলাম শুধু। মুখ থেকে আমার কোনো কথাই বের হয়নি। সেদিন শুধু তাকিয়েই ছিলাম আমি মানাফ ভাইয়ার মুখের দিকে। বার বার ভ্রু নাঁচিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো কেনো তাকিয়ে আছি আমি। কোনো জবাব দিতে পারি নি। খুব বেশি কিছুই হুট করে পেয়ে গিয়েছিলাম কিনা তাই। কথার মাঝেই মানাফ ভাইয়া আমাকে এমন কিছু বললো যা শুনে আমার ভেতরে থাকা খুশিটা হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেলো।
মানাফ ভাইয়া চলে যাচ্ছে সিলেট। সেখানেই নাকি বাকি পড়াশোনা শেষ করবে। আর যাচ্ছে তো যাচ্ছে একদম কালই চলে যাচ্ছে, শেষ বেলায় এসে আমাকে বলতে হলো? মুহূর্তেই চোখে পানি এসে পড়েছিলো আমার। মানাফ ভাইয়ার সামনেই হু হু করে কেঁদে দিয়েছিলাম আমি। আমার চোখ মুছে মুচকি হেসে বললো– আমি ফিরে আসবো তানহা। আমার জন্য অপেক্ষা করিস। চলে গেলো, আমার হাতে হলুদ খামের এই চিঠিটা ধরিয়ে দিয়ে মানাফ ভাইয়া চলে গেলো। সেই যে গেলো, আর ফিরে এলো না।
🍁
🍁
🍁
আজ আমার গাঁয়ে হলুদ। হলুদ শাড়ি পড়ে গায়ে তাজা সাদা গোলাপের গহনা পড়ে বসে আছি ঘর ভর্তি মানুষের সামনে। তামিমের কথা মতোই আমাকে সাদা গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে। আজ আমার খুব পছন্দের সাদা গোলাপগুলোও কেমন বিষাদময় লাগছে। এই গোলাপে শুভ্রতা নেই, এর প্রতিটা পাপড়িতে মানাফকে হারিয়ে ফেলার বিষন্নতা আছে।
আমাকে সং সাজিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সবাই আনন্দ উল্লাস শেষে অনুষ্ঠান শেষ করলো। না চাইতেও কৃত্তিম হাসি ঝুলিয়ে রাখতে হচ্ছে আমার। রুমে এসে ফ্রেস হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই…
চলবে…