#হলুদ_খামে
#পর্ব_১৭
𝘼𝙙𝙝𝙖𝙧𝙚𝙧 𝙈𝙪𝙨𝙖𝙛𝙞𝙧 (ইফ্ফাত)
দ্বিতীয়বারের মতো লজ্জায় আমি তামিমের দিকে তাকাতে পারছি না।
ভেজা চুলগুলি আমার মুখের সামনে এসে আমাকে বিরক্ত করছে।
বুক সমান পানিতে সাদা কামিজটা সম্পূর্ন ভিজে গেছে।
তখন আমি আর তামিম শুকনো মাটি থেকে অনেকটা দূরে এসে পরেছি।
তামিম একটু একটু করে পা বাড়িয়ে সামনে হাঁটছে।
ভিজে চুপচুপ হয়ে তামিমকে আকড়ে ধরে আছি আমি।
প্রায় মিনিট পাঁচেক এভাবে থাকার পর আমি কিছুটা শান্ত হলাম।
কিন্তু তামিমকে কোনো ভাবেই আমি ছাড়ছি না। চারপাশ কেমন নিস্তব্ধতায় ঘিরে রেখছে আমাদেরকে।
সবকিছুই কেমন চুপচাপ।
আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিচ্ছে তামিম।
দু’হাতের বাঁধনটা ধিরে ধিরে শক্ত হচ্ছে।
তামিমের চোখের দিকে তাকাতেই দেখলাম কেমন নেশা লাগানো চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে, ঠোঁট দু’টো কাঁপছে, শ্বাস দ্রুত ফেলছে।
কিছু তো একটা চলছে তার মনে।
চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।
তামিমের ঐ চোখে তাকাতে আমার ভয় করছে।
খুব ভয়, নেশা লেগে যাবার ভয়।
স্পষ্ট বুঝতে পারছি তামিম কি চাইছে।
আমার অস্বস্তি ভরা মুখ দেখে বোধহয় সে কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে।
আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো–
— তুমি ঠিকাছো?
কানের কাছে মুখ এনে কথা বলায় তামিমের গরম নিঃশ্বাস আমার কানে এসে পড়লো।
মুহূর্তেই কেঁপে উঠলাম আমি।
কেমন বিচ্ছিরি একটা অনুভূতি।
না পারছি তামিমের কাছ থেকে দূরে যেতে আর না পারছি সহ্য করতে।
তাকে হাত দিয়ে হালকা সরিয়ে দিয়ে বললাম–
হ্যাঁ ঠিকাছে আমি। আমাকে মাটিতে নামিয়ে দিন প্লিজ।
আমার কথা যেনো তার কান পর্যন্ত পৌছায়নি।
কাছে এসে আমাকে শক্ত করে ধরে আবারো নেশা ধরানো চোখে তাকিয়ে আছে।
এবার আর আমি নিজেকে ছাড়াতে পারছি না।
অবাধ্য ভেজা চুলগুলি চোখে মুখে লেপ্টে আছে আমার।
তামিম এক হাতে আমার মুখে লেপ্টে থাকা চুলগুলি কানের পেছনে গুজে দিতেই আমার কাঁধ দৃশ্যমান হলো।
একে তো উড়না নেই, তার উপর এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে কার-ই বা ভালো লাগবে!
খুব অস্বস্তি লাগছে আমার।
তামিমের দিকে তাকাতেই দেখলাম, কেমন চিন্তিত চোখে আমার কাঁধের দিকে তাকিয়ে আছে।
কপালে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
আমি নড়ে উঠতেই সে আমাকে বললো–
— তোমার কাঁধের ঐ দাগটা কিসের?
চোখ নামিয়ে আমি বললাম–
অনেক আগে একবার রিকশার হুডের সাথে লেগে কেটে গিয়েছিলো সেটারই দাগ।
আমার জবাবে তামিমের মুখ উজ্জল হয়ে গেলো। চোখে মুখে আনন্দের আভাস দেখা যাচ্ছিলো।
মুখে হাসির রেখা টেনে আমাকে বললো–
— তোমার ঘাড়ের ঐ তিলটা!
বলতে বলতেই আমাকে বুকের সাথে মিশিয়ে কিছু একটা দেখতে থাকলো।
সাথে সাথেই তামিমকে সরিয়ে দিলাম আমি।
কি অসভ্য ছেলে, কথায় কথায় গায়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করে।
সরিয়ে দিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার দু’বাহু শক্ত করে ধরে বললো–
— তানহা… জান… তুই তুই আমার তানহা। কত্ত বড় হয়ে গেছিস তুই!
তোকে তো আমি চিনতেই পারি নি।
ও গড, ভাগ্য কখনও বেঈমানী করে না আজ বুঝলাম।
বলেই তামিম আমার কপালে গালে নাকে এলোপাথাড়ি চুমু দিতে থাকে।
দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।
হাত দিয়ে তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু তাতে কোনো কাজই হচ্ছে না।
এমন শক্তিসামর্থ্য মানুষটার সাথে আমি কোনো ভাবেই পেরে উঠছি না।
আর সহ্য করতে না পের বললাম–
কি করছেন কি আপনি, ছাড়ুন আমাকে।
এমন অসভ্যতামির জন্যই আমি আপনাকে ঘৃণা করি।
আমার কথা তামিম থেমে গেলো। চোখ বড় বড় করে আমাকে বললো–
— তানহা তানহা আমি তোর.. আমি তোর মান..
কি হলো? চুপ করে আছেন কেনো?
দেখুন আপনার সাথে আমি আর এক মুহূর্তও এখানে থাকবো না।
আমাকে এখনই পারে নামিয়ে দিন।
আপনার জন্যই আমি পানিতে পড়ে গিয়েছি।
— হুশশ চুপ, একদম চুপ কোনো কথা নেই।
এবার যা করার আমি করবো।
অনেক খুঁজেছি তোমাকে জান অনেক খুঁজেছি।
কিন্তু ভাগ্য আমাকে তোমার সাথে এভাবে দেখা করিয়ে দেবে সেটা কখনই ভাবিনি।
তামিম কি বলছে আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। বিরক্ত হয়ে বললাম–
দু’দিন না খেয়ে খেয়ে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে আপনার। কি আবোল তাবল বলছেন আপনি?
আমি আর পানিতে থাকতে পারছি না, দয়া করে আমাকে উপরে নামিয়ে দিন।
এবারও আমার কোনো কথা তামিমের কানে গেলো না। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে যা বললো তাতে আমার পিত্তি জ্বলে গেলো।
রাগ আমার চরমে উঠে গেছে, ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিতেই আমি তামিমের কাছ থেকে আলাদা হয়ে পানিতে ছিটকে পড়লাম।
দ্রুত কাছে এসে আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে তামিম বললো…
চলবে…
(বানানে ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)