#হলুদ_খামে
#পর্ব_৯
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
আমার এদের কথায় কেমন কেমন লাগছে। তিন চারজন মিলে কিসব কানাকানি করছে। তখনই কোথা থেকে মানাফ ভাইয়া এসে আমার হাত শক্ত করে ধরে বললো–
— এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেনো এখানে? টেনে একটা চড় মারবো তোকে। আয় আমার সাথে।
এক প্রকার লাফিয়ে লাফিয়ে মানাফ ভাইয়ার সাথে হাঁটছি আমি। আমার হাত এত শক্ত করে ধরে আছে যে রক্ত জমাট হয়ে যাচ্ছে। ছোটাছুটি করেও কোনো লাভ হচ্ছে না উল্টো আরো ব্যাথা পাচ্ছি।
আহ মানাফ ভাইয়া হাত ছাড়ো প্লিজ, আমার হাতে লাগছে।
— লাগুক, আরো বেশি করে লাগুক। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে কে বলেছে? আমি এখন না এলে ঐ ইতরগুলো তোকে… দিন দিন কি বড় হচ্ছিস না ছোট হচ্ছিস তুই? এসব বাচ্চামো ছেড়ে একটু সিরিয়াস হতে পারিস না?
ইশ এমন ভাবে বকছো যেনো তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড হও। কে তুমি? তোমার কোনো রাইট নেই আমাকে এাবে বকা দেয়ার!
— কি বললি তুই? তোর উপর আমার কোনো রাইট নেই?
এই রে, এমন ভাবে তেড়ে আসছে কেনো? কি এমন বলেছি আমি। সত্যিই তো বলেছি আমি। এই জিরাফের সাথে আমার পরিচয় শুধু প্রাইভেট আর স্কুলে। খুব বেশি হলে আমার থেকে তিন কি চার বছরের বড় হবে। এমন ভাব নেয় যেনো সে আমার কোন সম্পর্কের জামাই হয়। এত শাসন ভালো লাগে না।
আমার হাত ছেড়ে মানাফ ভাইয়া আস্তে আস্তে আমার কাছে আসছে। এই রাস্তায় কেউ আমাদের এভাবে দেখলে কি মহাভারত ভাববে কে জানে। মানাফ ভাইয়ার মতি গতিও কিছু ভালো ঠেকছে না, ওফ্ ফিলিং নার্ভাস।
এ এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো মানাফ ভাইয়া? দূরে যাও তুমি”! আমার একদম কাছে এসে দু’হাতের আঙুল ধরে মানাফ ভাইয়া বললো–
— আমি তোর কে হই তুই বুঝিস না? ওহ বুঝবি কি করে, তুই তো এখনও পিচ্ছি। তবে শুনে রাখ, তোর আর আমার সম্পর্কটা বয়ফ্রেন্ডের থেকেও বেশি। সম্পর্ক নিয়ে আর কোনোদিন যদি কিছু বলতে শুনি তাহলে কানের নিচে থাপ্পড় খাবি। এখান থেকে বাকিটা রাস্তা তুই একা যাবি। মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে এক দৌড়ে যাবি। পাঁচ মিনিটের রাস্তা তিন মিনিটে পৌছে বাসায় গিয়ে আমাকে মিসকল দিবি। তিন মিনিটের এক সেকেন্ডও বেশি হলে তোর কি হাল করবো সেটাতো জানিসই। এটাই তোর শাস্তি, এখন যা চোখের সামনে থেকে স্টুপিড।
মানাফ ভাইয়ার কথা শুনে এক দৌড়ে সেখান থেকে চলে এলাম আমি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাহানায় আমাকে শাস্তি দিবেই দিবে। কিন্তু আজকে কি এমন করলাম আমি?
মাথা থেকে মন খারাপের চিন্তা বাদ দিয়ে পাঁচ মিনিটের রাস্তা কোনোরকম তিন মিনিটে পৌছে মানাফ ভাইয়া ছোট্ট করে একটা মিস কল দিলাম। যাক বাবা, এ যাত্রায় অন্তত শাস্তি থেকে বেঁচে গেলাম। কি এক ঝামেলা পালছি কে জানে। আমার মতো ছোট্ট মেয়েকে প্রতিদিন শাস্তি দিতে হবে না হয় উনার পেটের ভাত হজমই হয় না।
🍁
🍁
এক সপ্তাহ্ পর আমার টেস্ট পরীক্ষা। কিন্তু কোনো ভাবেই পড়ায় মন বসাতে পারছি না। এদিকে মানাফ ভাইয়াটাও হেল্প করছে না। সেদিনের পর আমার সাথে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। কতবার যে রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করেছি তার হিসেব নেই। না কাল যে করেই হোক মানাফ ভাইয়ার সাথে কথা বলতেই হবে। আজ আর পড়ায় মন বসছেনা। ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম কিন্তু ঘুমটাও রাগ করে আছে আমার সাথে।
শুয়ে শুয়ে মানাফ ভাইয়াকে একটা মিস কল দিলাম। সাথে সাথেই কল ব্যাক, এই রে আবার ঝেড়ে দিবে আমাকে। ফোন কানে নিয়ে চুপ করে আছি আমি। ওপাশ থেকেও নিরব। আচ্ছা আমার সাথে কি কথাও বলবে না? কি এমন করেছি আমি? রাগ করে ফোন কেঁটে দিতে যাবো তখনই জিরাফটার কন্ঠ শুনতে পেলাম।
— কি হয়েছে ফোন দিয়েছিস কেনো?
মানাফ ভাইয়া তোমার কি মনে হয়না তুমি একটু বেশি বেশি করছো? আমি কি করেছি তোমার সাথে, এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছো কেনো আমাকে? এক সপ্তাহ্ পর আমার এক্সাম আর তুমি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো? ঠিকাছে আর কথা বলতে হবে না রাখছি আমি।
— তানহা ফোন কেঁটে দিলে থাপড়ে তোর দাঁত ফেলে দেবো। আমি কল ব্যাক করেছি আমার ইচ্ছে হলে আমিই রেখে দেবো, তুই চুপচাপ কানে ফোন ধরে রাখ। …….. সেদিন কি বলেছিলি তুই মনে নেই?
কি বলেছিলাম?
— তোকে চুপ থাকতে বলেছি আমি! কথা বলিস কোন সাহসে? কান খুলে শুনে রাখ, কাল প্রাইভেটের পর দেখা করবি আমার সাথে।
কুট করে কল কেঁটে দিলো জিরাফটা। রাগ যেনো নাকের ডগায় থাকে। আমি আর সময় নষ্ট না করে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।
পরদিন প্রাইভেট শেষে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানাফ ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। ক্লাস নেই বলে আমাদের প্রাইভেটের সময় দশটা থেকে তিনটায় করেছে। দুপুরের কড়া রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি তখনই…
চলবে…
(একটু ব্যস্ত ছিলাম, লেখার সময় পাইনি তাই পর্ব ছোট হয়েছে)