🍁আরহাম🍁#The_Innocent_Boy #Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা #পর্ব(৪৮)

🍁আরহাম🍁#The_Innocent_Boy

#Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা

#পর্ব(৪৮)
_________
আরহাম সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে খাটের কার্নিশে হেলে বসলো। আজ অনেক দিন পর সে নিজের পুরনো বিছানায় ঘুমালো। হয়তো এজন্যই তার রাতে ঘুমটা ভালো হয়েছে। পাশেই মৃত্তি ঘুমিয়েছিলো কিন্তু তার একটুও খেয়াল ছিলো না মৃত্তির কথা। মৃত্তি ঘুমের মধ্যে একটু নড়েচড়ে উঠতেই তার নজর পড়লো মৃত্তির দিকে। বাইরে রোদ জ্বলমল আর তার জানালাটা পূর্ব দিকটায় হওয়ায় সকালের রোদ কাচের জানালা ভেদ করে সরাসরি মুখে এসে লাগে।জানালায় পর্দা আছে তবুও রোদ মুখে পড়ছে মৃত্তির। ফ্যানের বাতাসে পর্দাটা বারবার সরে যেতেই রোদের আচটা মুখে লাগছে তার। সেজন্যই বারবার নড়েচড়ে উঠছে সে।আরহাম কিছুসময় ব্যয় করলো এই দৃশ্য দেখে কিন্তু কি যেন মনে করে সে একটু এগিয়ে মৃত্তির মুখের সামনে ঝুঁকে বসলো।আর রোদটাও তার পিঠের আড়ালে পড়ে গেল।মৃত্তি এবার রোদ থেকে রেহাই পেয়ে আরামেই ঘুমুচ্ছে। কিন্তু আরহাম সে তো কোন ঘোরে চলে গেছে এতো কাছ থেকে মৃত্তির এই ফোলা ফোলা গাল দু’টো দেখে। এটা কেমন আকর্ষণ সে নিজেও বুঝতে পারলো না। নাকটা খুব সরু মৃত্তির তবে চোখ দুটো অত সুন্দর না।আরহাম কখনোই সাজানো দেখেনি এই চোখ দুটো। মেয়েরা একটু সাজবে ঢং করবে তবেই না মনে হবে সে আস্ত একটা মেয়ে। কিন্তু ইনি তো সারাক্ষণ সাইকোগিরি করে ঘুরে বেড়ান। মৃত্তি ঘুমের মধ্যেই সোজা থেকে ডান কাৎ হয়ে শুইলো আর ডান পাশেই ছিলো আরহাম। মৃত্তি একেবারেই গা ঘেঁষে গেছে আরহামের। গভীরভাবে দেখছিলো মৃত্তিকে সে হঠাৎ চোখে পড়লো মৃত্তির নিচের ঠোঁটটা এখনও অনেকটা কালশিটে পড়ে আছে। মনে পড়লো পরশু রাতের ঘটনা। সে কতো বাজেভাবেই না কামড়ে দিয়েছে এই ঠোঁটটা! আরো একটু কাছে আরেকটু মনোযোগ বাড়িয়ে দেখতে লাগলো সে মৃত্তিকে। আর এই দেখাই তার কাল হয়ে গেলো। কে জানতো একদৃষ্টে দেখতে থাকলে তার মনের ভেতর কোন ঝড়ের সৃষ্টি হবে! কিন্তু হয়েই গেলো সে তার চোখ দুটোকে সরাতে পারছে না। বরং হাতটাও অবাধ্য হয়ে একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছুক তার পাশে থাকা নারীটির ফোলা ফোলা গাল দুটোকে। আর এই ইচ্ছা প্রগাঢ় হয়ে যাচ্ছে। নাহ, আর এখানে বসা ঠিক হবে না ভেবে উঠে পড়লো সে বসা থেকে। খাট থেকে নামতেই মৃত্তি ঝট করে হাত ধরে ফেলল আরহামের। সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মৃত্তির দিকে। চোখ দুটো আধবোজা ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি আর হাত দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে আরহামের হাত।

“কি হয়েছে চলে যাচ্ছেন কেন এভাবে বউকে সকালের আদরটুকু না দিয়ে? “(মৃত্তি)

আরহাম ভ্রু কুটি করে বলল ” হাত ছাড়ো”

-উহুম, ছাড়বো না আগে বলেন পালাচ্ছেন কেন? এতক্ষণ চুপচাপ দেখছিলেন এবার একটু আদর……..(মৃত্তি)

-“এই মেয়ে হাত ছাড়তে বলছি না? কথা শুনতে পাও না!”(আরহাম)

-কেন ছাড়বো? আপনার হাত ধরেছি না’কি? আরহাম এবার ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো “তাহলে এটা কার হাত ধরেছো “?

-“কার আবার আমার বরের হাত, আমার টোল পড়া হিরোর হাত। আমার বজ্জাত স্বামীর হাত।” এ পর্যায়ে আরহামের ভ্রু সোজা হয়ে গেলো আর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। “এই তুমি আমাকে বজ্জাত বললে কোন সাহসে? বেয়াদব মেয়ে আমি যে তোমার শিক্ষক সেটা কি ভুলে গেছো?”
মৃত্তিও এবার শোয়া থেকে উঠে বসলো তবে আরহামের হাত ছাড়লো না।

-আপনি শিক্ষক সেটা মেনে নিলাম আমি যে বউ সেটা কেন মানেন না? (মৃত্তি)

-কারণ সেটা মানার মতো না।

-“আচ্ছা, সেটা মানার মতো না হলে এটা কেন মানলেন যে আমি আপনাকে বজ্জাত বলেছি। আমি তো বলেছি বজ্জাত বরের হাত ধরেছি। তার মানে তো এটাই দাঁড়ায় আপনি নিজেকে আমার বর মেনে নিয়েছেন।” মিটিমিটি হাসছে মৃত্তি।
আরহাম এবার ঝটকা দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। আর সঙ্গে সঙ্গে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

” লোকটা শুধু আমাকে দেখানোর জন্যই ডেবিল বিহেভ করে নয়তো একেবারেই ইনোসেন্ট”।(মনেমনে)

আরহাম মৃত্তির ঠোঁটে হাসি দেখে জিজ্ঞেস করলো “হাসছো কেন”?

আপনার কি আমার হাসিতেও সমস্যা? (মৃত্তি)

-তা কখন বললাম এনিওয়ে,উঠে পড়ো এ বাড়িতে লেইট করে ঘুম থেকে উঠা তেমন একটা পছন্দ না কারো।(আরহাম)

-“তাহলে সেটা আমাকে জানাচ্ছেন কেন? এখনই তো সুযোগ আমাকে সবার কাছে অপছন্দনীয় করতে পারবেন।”মৃত্তি আরহামের মুখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল।

-“আমি তোমাকে কারো পছন্দনীয় হওয়ার জন্য নিয়মনীতি জানাচ্ছি না। তাই প্লিজ মনের মধ্যে কোন ভালো লাগা নিও না এ নিয়ে।” আরহাম মুখে এই কথা গুলো বললেও এবার মন থেকে এমন কিছু তার ভাবনায় আসছে না।কেমন যেন আজকাল একটু একটু ভালোলাগা কাজ করে তার এই সাইকো বউটার জন্য।

মৃত্তির মা বাবা ঘুম থেকে উঠেই আগে তার ভাইকে কল দিলো। কিন্তু মিরহাদ কল তুলছে না। বাড়িতে মির একা থাকার মধ্যে শুধু দাড়োয়ান আছে। মা-বাবা বাড়ি থাকবে না বলে মির কাজের বুয়াকে কালই ছুটি দিয়ে দিয়েছে। আর লিলি তো তাদের সাথেই চলে এসেছে। মির একা একা বাড়িতে কি করছে কে জানে? খেয়েছে কি’না ঠিকঠাক মত এ নিয়ে তার মা চিন্তিত। কয়েকবার কল বাজলো কিন্তু মির উঠায়নি।

আরহাম ঘুম থেকে উঠে আগে ছোট মা,ছোট বাবা আর বাড়ির সবার সাথে দেখা করে নিলো। রাতে কারো সাথেই তেমন কথা হয় দূরের জার্নি আর পৌঁছুতে পৌঁছুতে রাত অনেক হয়ে গিয়েছিলো। আরহাম রোহানকেও ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে বাড়ির বাইরে গেলো। গ্রামে অনেকদিন পরপর আসলে তার ভালোই লাগে ঘুরাঘুরি করতে। আর এবার তো রোহানও এসেছে। আগে যখনই রোহান আর মির একসাথে আসতো তখনই তারা এভাবে ঘুরতে বের হতো। তাদের পুরো গ্রামের প্রায় বেশিরভাগ মানুষই বোধ হয় তার এই বন্ধু দু’জনকে খুব ভালো করেই চিনে।

আরহাম চলে যেতেই মৃত্তিও বিছানা ছেড়েছে। তাড়াতাড়ি করে শাড়ি বদলে বাইরে বের হবে ভেবেছিলো কিন্তু সমস্যা হলো সে শাড়িই পড়তে পারে না। লাগেজ থেকে একটা শাড়ি বের করে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, তখনই দরজায় কড়া নড়লো।

-কে? মৃত্তি একটু আস্তে করেই বলল।

-আমি গো আমি আরহাম কি ভেতরে আছে?

একটা মেয়েলি কন্ঠ এলো বাইরে থেকে মৃত্তি বুঝলো না কে হতে পারে তাই বলল, “না স্যার তো বাইরে গেছেন।” এবার মেয়েটি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়লো। মৃত্তি শাড়িটা বিছানায় রেখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। একটা মেয়ে বয়স তার থেকে দু,চার বছর বেশিই হবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কে হতে পারে ধারণা করতে পারলো না।

-“এহম এহম, কি ভাবছো?” গলা খাকড়ি দিয়ে মৃত্তিকে প্রশ্ন করলো মেয়েটি।

-ককিছু না’তো আসলে আপনা……

-“আসলে কি আমাকে চিনতে পারছো না তাইতো? চিনবেই কি করে হয়তো কেউ এখন অব্দি আমার কথা বলেনি তোমার সামনে। আর সেজন্যই আমি নিজে পরিচিত হতে চলে এলাম। আমি আরহামের ভাবী মানে সায়ন সাহেবের বউ” বলেই মেয়েটি প্রশস্ত ঠোঁটে হেসে দিলো।বাহ্! খুব মিষ্টি করে হাসে তো ওনি মৃত্তি মনে মনে বললো।

-“আমার নাম তুবা, তোমার নাম কি? আসলে মা কলে শুধু বলেছে আরহাম মিষ্টি একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে কিন্তু মেয়েটির নাম বলে নি।” মুখ ফুলিয়ে বললো তুবা।মৃত্তি অবাক হয়ে দেখছে কতো সুন্দর করে কথাও বলে তুবা। মৃত্তির এবার একটু টেনশন হচ্ছে । সে কতোটা উরনচন্ডী স্বভাবের আর তার বর,জা,শ্বশুড় শ্বাশুড়ি কতোটা নম্র আর শান্ত। আল্লাহ জানে সে সবার সাথে মিলিয়ে গুছিয়ে নিতে পারবে তো?

-কি হলো নামটা কি আমায় বলবে না?(তুবা)

-“আমার নাম মৃত্তিকা।” বলেই হাসির বিনিময় করলো মৃত্তি। তুবার চোখ পড়লো বিছানায় রাখা শাড়ির ওপর।

-শাড়িটা এখানে কেন? (তুবা)

-“পড়তে নিয়েছিলাম কিন্তু আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না।” কথাটা বলার সময় মৃত্তির মুখ কালো হয়ে এলো।

তুবা এবার হেসে দিলো “তাতে কি হয়েছে আমি তো পাড়ি “।

মৃত্তির মুখ আবার উজ্জ্বল হয়ে গেলো। ” আমাকে একটু পরিয়ে দিবেন ভাবী “? আকুতি স্বরে বললো মৃত্তি।

“কেন নয়?” বলেই মৃত্তিকে শাড়ি-ব্লাউজ চেঞ্জ করে আসতে বলল তুবা। মৃত্তিও তাই করলো। এরপর তুবা তাকে শাড়ি পরিয়ে রুমেই বসিয়ে রেখে গেলো।আজ তো বাড়িতে সব আত্মীয়-স্বজনরা চলে আসবে আর কাল গায়ে হলুদ। তাই মৃত্তিকে তেমন একটা বেরুতে দেওয়া হবে না।

জিনিয়া ঘুম থেকে উঠে মাথাটা চেপে ধরে বসে আছে। দূরের পথের জার্নি করায় মাথাটা কেমন ব্যাথা ব্যথা লাগছে। হঠাৎই তার মোবাইল বেজে উঠল। স্ক্রীণে নামটি তার জীবনে একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত তবুও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সাদনান কল করছে, এই লোকটার কি মাথায় বুদ্ধি শুদ্ধি নেই। এতো সকালে কাউকে কল করা কোন ম্যানারস এর মধ্যে পড়ে? ফালতু লোক একটা বলেই জিনিয়া কলটা ইগনোর করলো। পরে ফোন সাইলেন্ট করে দিলো। মুখহাত ধুয়ে খুঁজে খুঁজে মৃত্তির রুমে গেলো।দু’ বান্ধবী ভালোই আড্ডা দিচ্ছিলো ঠিক সেই মুহুর্তে আরহাম রুমে আসলো।কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো দুজনই। আর জিনিয়া সে তো পড়িমরি করে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধরলো। আরহাম বুঝতে পেরে জিনিয়াকে আটকে দিলো।

” তুমি বেরিয়ে যাচ্ছো কেন, আমি শুধু মোবাইলটা নিতে এসেছি। “(আরহাম)

-না এমনিতেই যাচ্ছি। সমস্যা নেই স্যার আমি পরে আসছি। (জিনিয়া)
মৃত্তি ভ্রু কুঁচকে জিনিয়াকে একবার দেখে নিলো।

-এই তুই ওনাকে স্যার বলছিস কেন? (মৃত্তি)

জিনিয়া, আরহাম দুজনেই অবাক হয়ে তাকালো মৃত্তির দিকে।

-“এভাবে তাকানোর কি আছে আমি কি ভুল কিছু বলে ফেললাম? আরেহ, বাবা আমার বরকে তুই স্যার বলবি নাকি দুলাভাই বলবি বলে ঠিক করেছিলি?”

-“সেটা পুরনো কথা মৃত্তি তখন জানা ছিলো না তোর বিয়ে স্যারের সাথে হবে” বলেই সে বেড়িয়ে গেলো। আরহাম এবার শুধু অবাক নয় কিছুটা অস্বস্থিতেও পড়ে গেলো।

” কি ব্যাপার স্বোয়ামি আপনার কি হলো”?কিছুটা টিপ্পনী কেটে বলল মৃত্তি।

-“কককই কিছুই হয়নি। আর তুমি এখনো এখানে কি করছো বাড়ির বউ হওয়ার শখ বউদের কাজ করো না কেন?”(আরহাম)

-“বউদের কাজটা তো করতেই চাচ্ছি কিন্তু আমার সোয়ামিটা সুযোগই দিচ্ছে না” বলে মৃত্তি খিলখিল করে হেসে উঠলো।আরহাম মৃত্তির কথার অর্থ রসিক আর দুষ্টু তা বুঝতে পারলো। মেয়েটা বড্ড ঠোঁট কাটা স্বভাবের বলতে লাগলো মনে মনে।
আরহাম আলমারি খুলে নিজের কিছু জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করছিলো আর মৃত্তি বিছানায় বসে তার দিকে তাকিয়ে গুনগুন করতে লাগলো।

“”কত দূরে গেলে কাছে পাবো তোমাকে””

“”ধীরে ধীরে গেলে কাছে পাবো তোমাকে””

এক পা দু’পা তাল মেলাতে ভয়টা কেন পাও?
জানতে গেলে যাও পালিয়ে বলো না কি চাও?(২)
আছো কি দেখাতে আয়না সারাদিন
নিজেকে বানাতে আমার আলাদিন (২)

হয়েছি অভিমানী কেন আমিই জানি
পড়ে গেছি তুমি তুমি যন্ত্রনায়,,
চুরি করে আমি ফেলতে চাই তোমায়,,

এক পা দু’পা তাল মেলাতে ভয়টা কেন পাও??
জানতে গেলে যাও পালিয়ে বলো না কি চাও?

“”আছো কি দেখাতে আয়না সারাদিন
নিজেকে বানাতে আমার আলাদিন””।।

প্রথমে কন্ঠস্বর নিচু করে গাইলেও ধীরে ধীরে একটু জোরেই গাইলো মৃত্তি। আরহামের কানে পৌঁছুতে সে কিছু খোঁজার বাহানায় আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে মৃত্তির গান শুনতে লাগলো মনোযোগে।মৃত্তিও ব্যপারটা খেয়াল করে ফেলেছে তাই সে আস্তে আস্তে উঠে আরহামের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।

চলবে