আরহাম🍁 #The_Innocent_Boy #Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা #পর্ব (৫০)

0
650

🍁আরহাম🍁 #The_Innocent_Boy

#Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা

#পর্ব (৫০)
_________

সাদনান কল করেছিলো সে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছে সন্ধ্যায়। ভোর পাঁচটা কি ছয়টা নাগাদ পৌঁছে যাবে এখানে।তাই জিনিয়াকে বলেছিলো সে যেন আরহামের কাছ থেকে বাস স্ট্যান্ড থেকে তাদের গ্রামে পৌঁছুনোর এড্রেস ভালো মতো লিখে রাখে।জিনিয়া বলতে গেলে সাদনানের নামটাতেই বিরক্ত। সে মানুষটা তার জীবনের একেবারে অনাকাঙ্ক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। ভদ্রতার খাতিরে না হয় বড়রা দাওয়াত দিয়েই দিয়েছে তাই বলে কি আসতেই হবে? কতোটা বেহায়া হলে মানুষ হবু বউয়ের বান্ধবীর শ্বশুড় বাড়িতে দাওয়াতে আসে!কিন্তু এই বেহায়া লোকটার কথা রাখতেই তাকে এখন আরহাম স্যারের কাছে যেতে হবে।রাতও প্রায় এগারোটা অতিক্রম করলো। গ্রাম্য পরিবেশে বিকেল মানেই সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা মানেই রাত। অথচ এই বাড়িটিতে দশটা পর্যন্ত জেগে থাকার পারমিশন আছে।তবে এখন এটা বিয়ে বাড়ি রাত পোহালেই গায়ে হলুদের দিন। তাই এখন পর্যন্ত সবাই ঘুমায়নি কয়েকজন ছাড়া। কিন্তু তবুও জিনিয়া মৃত্তির রুমে যেতে দ্বিধা বোধ করছে।তাই সে মৃত্তিকে মেসেজ করেছে দেখা করতে।মৃত্তি তার কক্ষে যেতেই সে সাদনানের কথা জানায়।তাই মৃত্তি আবার নিজ কক্ষে ফিরে আসে। সেই মুহুর্তে আরহামের হাতে মৃত্তির মোবাইলটা ছিলো।মৃত্তি হুট করে ঘরে ঢুকে যাওয়ায় আরহাম থতমত খেয়ে গেলো।আর তাড়াতাড়ি মোবাইলটা আগের জায়গায় রেখে দিলো।

–আপনি জেগে আছেন?আমি এক্ষুনি ডাকতাম। (মৃত্তি)

আরহাম বরাবরের মতোই ভ্রু-জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো “কেন”?

-“জিনিয়ার হবু বর সাদনান আসবে ভোরে। শ্বাশুড়ি মা আর বড় মা উনাকে ওইদিন শপিংমলে ইনভাইট করেছিলেন বিয়েতে আসতে। তাই উনি সম্ভবত ভোর পাঁচটা কি ছয়টা নাগাদ পৌঁছে যাবেন বলেছেন।তাই বাস স্ট্যান্ড থেকে বাড়ি পর্যন্ত এড্রেসটা চেয়েছে।”(মৃত্তি)

-“ওহ আচ্ছা জারিফ বা আহনাফ কাউকে পাঠিয়ে দিয়ো সকালে। সাদনান সাহেবের নম্বর আর একটা ছবি দেখালেই হবে তারা নিয়ে আসবে।”(আরহাম)

মৃত্তি চোখ দুটো সরু করে আরহামের আরেকটু সামনে এসে দাঁড়ালো।
–হোয়াট! এভাবে তাকানোর কি আছে?(আরহাম)

-বিয়ে আপনার, বান্ধবীর বাগদত্তা আসবে আপনার বউয়ের, আর ভোর বেলা ঘুম নষ্ট করে মেহমান আনতে যাবে ওই বাচ্চা ছেলে গুলো? (মৃত্তি)

-এই তুমি কি আমার ওপর অধিকার খাটানোর চেষ্টা করছো? (আরহাম)

-যা মনে করেন, তবে অধিকার খাটানোর মতো অধিকার কিন্তু আমার আছে। হুহ,বলেই মৃত্তি বিছানায় উঠে বসলো। আরহাম নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে কিছু একটা ঘেঁটে আবার রেখে দিলো। তারপর মৃত্তির দিকে তাকিয়ে একটা অসভ্য হাসি দিয়ে বলল ” হুম ঠিক বলছো অধিকার তো আছে আমি এই রাতে একটু খাটাই অ-ধি-কা-র” টেনে বললো। আর মৃত্তি তো আরহামের এমন কথা শুনে হঠাৎ ভয়ে কাঠ হয়ে গেলো।কিন্তু আরহাম মৃত্তিকে অবাক করে দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো।মৃত্তিও হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেন।

ভোর ছয়টা পনেরো, সাদনান বাসে করে এসেছে ঢাকা থেকে। মাত্রই বাস থেকে নেমে রাস্তার কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে। বাস থেকে নেমেছে ঢাকা থেকে আগত আরো একজন। সেও দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার কিনারায় তবে সে দাঁড়িয়েছে রিকশা, ভ্যান যা পায় তাতেই গন্তব্যস্থলে যাবে বলে।বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বিরক্ত একটা রিকশা তো দূর রিকশার ছায়াটাও চোখে পড়ছে না। সাদনান এবার জিনিয়াকে কল করলো। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই জিজ্ঞেস করলো “তুমি কি আরহাম স্যার থেকে এড্রেসটা নাও নি? ওপাশ থেকে কি জবাব তা জানা নেই তবে সাদনান একটু চড়ে গেল বলে মনে হলো। সে জিনিয়াকে একটু চিল্লিয়েই বলল ” এত ভোরে কি আমি খালি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবো আমি এই অচেনা এলাকায়?”বলেই কল কেটে দিলো সাদনান।

সাদনানের পাশেই যেই ব্যক্তিটি বাস থেকে নেমে দাড়িয়েছিলো সে এবার তার সামনে এসে দাঁড়ালো।

–এক্সকিউজ মি, আপনি কি আরহাম আহমেদ এর বাড়িতে যাবেন?

-জ্বি,কিন্তু আপনি….

-“আমি মিরহাদ মাহবুব। আমার বোন মৃত্তির হাজবেন্ড আরহাম আহমেদ । আপনি বোধ হয় কাউকে জিজ্ঞেস করছিলেন এড্রেসটা, আমিও সেখানেই যাবো চলুন আমি এড্রেস জানি।

–হ্যা আমি আমার ফিয়ন্সিকে কল করেছিলাম এড্রেস জানাতে কিন্তু সে এখনও আরহাম স্যারকে বলেই নি আমি আসবো।(সাদনান)

–আপনার ফিয়ন্সিও বাড়িতে? নামটা কি ওনার… মিরহাদ প্রশ্ন করলো সাদনান নামটা বলতেই যাবে ঠিক সে সময় জিনিয়া আবার কল করলো। সাদনান কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কি বললো মিরহাদ শুনতে পেলো না। কিন্তু সাদনান বললো এড্রেস লাগবে না মৃত্তিকার ভাইয়ার সাথে দেখা হয়ে গেছে উনার সাথেই আসছি, বাই।

জিনিয়ার কলিজাটা ধক করে উঠলো “কি বললো সাদনান মৃত্তির ভাই ওখানে মানে মির আসছে। না আসলেই তো ভালো ছিলো এই লোকটা কতোটা বদমাশ সবসময় পাশ ঘেঁষে থাকে মিরের সামনে আমি কি করে থাকবো৷ আর এই লোকটাকেই বা কি করে বোঝাবো। নাহ আমারই বোকামি কেন আসতে গেলাম আমি এখানে। মিরহাদ এর বোনের বিয়ে তার তো থাকারই কথা আমি কি করছি এখানে। (বিষন্ন মনে বলে চলছে জিনিয়া)

বাইরে সূর্যের আলো চকমকে, আজ আকাশ পরিষ্কার কোথাও এক টুকরো মেঘের ভেলা নেই। আরহামের ঘুম মাত্রই ভাঙলো। সে ঘাড় ঘুরিয়ে বাম দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো মৃত্তির ঘুমন্ত চেহারাটা। একবার ভালো করে দেখে নিলো আরহাম মৃত্তির পুরো মুখটা।আজকাল বড্ড টানে তাকে এই মুখটা, উহুম মুখটা ওই গাল দুটো। সবসময় শুনেছি ছেলেদের আকর্ষণ এর কেন্দ্রবিন্দু নাকি মেয়েদের চোখ,ঠোঁট না হয় ফিগার কিন্তু আময় শুধু ওর গাল দুটোই সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে। কেন? আরহাম আপন মনেই ভাবতে থাকে আর ধীরে ধীরে মৃত্তির খুব কাছে চলে আসে। এতোটাই কাছে যে তার নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে মৃত্তির চোখে মুখে।আর এতোক্ষণে মৃত্তির ঘুমও ভেঙে গেছে কিন্তু সে চেষ্টা করেও চোখ খুলতে পারছে না।আরহাম তার যত কাছে আসছে মৃত্তি ঠিক ততোটাই কাতর হয়ে পড়ছে।আরহামের দৃষ্টি যত গভীর হচ্ছে মৃত্তি চোখ বন্ধ রেখেই তা উপলব্ধি করতে পারছে। তার পুরো শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। যেন হাত, পা নাড়ানোর ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছে সে। আরহাম অপলকে দেখছে মৃত্তিকে আর ভাবছে একটু কাছে গেলে খুব বেশি কি ক্ষতি হয়ে যাবে? নাহ, ক্ষতি কেন হবে সে তো আমারই অর্ধাঙ্গিনী। একটু না হয় হয়েই গেলাম টিপিক্যাল হাজবেন্ড। কিন্তু… ধুর কিসের কিন্তু মনে মনে এমনও হাজার কথা ভাবতে ভাতে এবার যা করে বসলো তা হয়তো সে নিজেও ভাবেনি করবে বলে। মৃত্তির ফোলা ফোলা গাল দুটোতে আলতো করে চুমু খেলো তারপর কপালেও একটা গভীর ঠোঁটের পরশ এঁকে সে বিছানা ছাড়লো।আর মৃত্তি তো একদম বরফের ন্যায় শীতল আর শক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল।আরহামের মনে পড়লো সাদনানকে আনতে যাওয়ার কথা আর ঘড়িতে টাইম এখন পোনে সাতটা।

শিট, খুব বেশিই লেইট হয়ে গেল কে জানে সাদনান সাহেব কতোক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বলেই আরহাম দ্রুত ব্রাশ করে টি-শার্ট চেইঞ্জ করে ছোট চাচুর থেকে বাইকের চাবিটা নিলো । তারপর জিনিয়ার কাছে যাচ্ছিলো সাদনানের নাম্বারটা নিতে ঠিক তখনি কড়িডোর থেকে নজর পড়লো বাইরে গেটের পাশে।আরহাম দু একবার নিজের চোখ ভালো করে কচলে আবারও দেখার চেষ্টা করলো নাহ, ঠিকই দেখছে সে। এটা মিরহাদ কিন্তু পাশের ছেলেটা কে তাকে তো চিনতে পারছে না। কিন্তু এই মুহুর্তে তারা থাক আগে জিনিয়ার থেকে তার ফিয়ন্সির নম্বর নিয়ে আসি।

রোহান এখনও ঘুমে এখানে আসার পর সে কেমন যেন অশান্ত বোধ করছে মন থেকে।না চাইতেও মৃত্তির দিকে চোখ পড়ছে আর এই দু’দিনে যতবার সে মৃত্তিকে দেখেছে প্রত্যেকবারই আরহামের পাশে নয়তো তার সাথে কথা বলতে অথবা পরিবারের লোকজন তাদেরকে পাশাপাশি বসিয়ে কখনো প্রশংসা করছে। তো কখনো হাসি ঠাট্টা করছে। আর তা দেখে রোহান ভেতরে ভেতরে জ্বলছে, কষ্ট পাচ্ছে। তবুও এখানে তাকে থাকতে হচ্ছে বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে বলে কথা।

জিনিয়া রুম থেকে বের হয়ে মৃত্তিকে ডাকতে যাচ্ছিলো তখনি চোখে পড়লো আরহাম। লম্বাটে বারান্দার একেবারে শেষে। জিনিয়া কিছু বলার আগেই আরহাম বলে উঠলো” আমি তোমার কাছেই আসছিলাম এক্চুয়ালি সাদনান সাহেবের নম্বরটা নিতে অনেকটা লেইট হয়ে গেছি।”

জিনিয়া একটু অবাক কিসের কথা বলছে স্যার?আরহাম আবার বলল “মৃত্তি আমাকে বলেছিলো উনাকে আনতে যাওয়ার কথা ”

জিনিয়া এবার বুঝতে পারলো মৃত্তি আরহামকে বলেছে কিন্তু সাদনান তো বললো মিরহাদ এর সাথে আসছে।

-স্যার, সাদনান কল দিয়েছিলো রাস্তায় সম্ভবত মৃত্তির ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছে। তারা একসাথে আসছে বললো।

-ওহ তারমানে উনিই সাদনান যে এখন মিরহাদের সাথে বাড়িতে আসলো। (আরহাম)

জিনিয়ার হঠাৎই চেহারার রং পাল্টে গেছে তৎক্ষনাৎ। আর সেটা আরহাম লক্ষ্য করেছে কিন্তু জিজ্ঞাসা করলো না। আরহাম উল্টো পায়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। সে কোন মতেই চায় না মিরের সম্মুখে আসতে। নয়তো পুরনো ক্ষতটা তাকে রাগের সাথে মিলিয়ে দিবে। দুইটা বছর নিজেকে সামলে রেখেছে হয়তো সামনে পড়লে আর সামলাতে পারবে না।

জিনিয়া ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো নিচে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই দেখতে পেল সাদ আর মির দু’জন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। সামনেই আরহামের ছোট চাচু আর আহনাফ কথা বলছে। সাদ এর চোখ সিঁড়িতে পড়তেই সে জিনিয়াকে ডাকলো।

চমকে উঠলো মির সাদ এর মুখে জিনিয়ার নাম শুনে। চোখ তুলতেই দেখতে পেল দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয় মানুষটি কিন্তু সাদ কেন ডাকলো তাকে। কে এই সাদনান? তখনি মনে পড়লো স্ট্যান্ডে সাদনান বলেছিলো তার ফিয়ন্সিকে কল করেছে। তাহলে কি জিনিয়াই সেই ফিয়ন্সি ।তাচ্ছিল্যের হাসি বেরিয়ে এলো মিরের ঠোঁটে। সেই তাচ্ছিল্যের হাসিটা শুধু মাত্রই নিজের জন্য এসেছে। এক সময় এই মেয়েটা ভালোবাসি বলে বলে তার পিছনে পড়ে থাকতো, অথচ মির তাকে ইগনোর করতো ছোট বলে, বাচ্চা ভেবে। আর আজ এই মেয়েটা পরিণত বয়সে এসেও তার হবে না। অন্য কারো হয়ে গেছে। একবার চোখে চোখ পড়তেই মির নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। জিনিয়ার মনে হলো কেউ তার কলিজায় যেন ছুড়িকাঘাত করে বসেছে। চোখ সাক্ষী হয়ে যাচ্ছে কষ্টের তবুও উপায় নেই এ কষ্টকে দূর করার। মির ছোট চাচুর সাথে কথা বলে ভেতর বাড়িতে প্রবেশ করলো। আর সাদ আগে গিয়ে জিনিয়ার সাথে কথা বলল তারপর দেখা মিলল মৃত্তির বড় শ্বাশুড়ি মায়ের উনি নিজেই সাদকে নিয়ে বাড়ির অন্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।মৃত্তি বাড়ির বউ হলেও জিনিয়ার ফিয়ন্সিকে সবাই মেয়ে জামাই হিসেবেই আদর আপ্যায়ন করছে।

আরহাম রুমে গিয়ে মৃত্তি কে পায় নি। সে ভাবছে হয়তো মৃত্তি বাথরুমে হবে কিন্তু না সে কিছুক্ষণ পর রুমে ঢুকলো। পড়নে একটা গোলাপি আর সাদা মিশ্রিত রঙের সেলোয়ার-কামিজ। হাতে ছোট একটা বক্স।বক্সটা চিনতে আরহামের বেশি কষ্ট হয় নি কারণ এটা সেই নাক ফুলের বক্স। যেটা বড় মা মৃত্তির জন্য তাকে আনতে বলেছিলো। এবার আরহামের নজর পড়লো মৃত্তির নাকে বড় মা নাক ফুরানোর সাথে সাথে সুতা বেঁধে রেখেছিলো একেবারে ছোট করে যেন গর্তটা বন্ধ না হয়ে যায়।আজ সেই সুতোটা নেই নাকে মানে বড় মা সেটা খুলে দিয়েছে নোজপিনটা পড়ার জন্য ।

মৃত্তি বক্সটা নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই চোখ পড়লো জানালার পাশে দাঁড়ানো আরহামকে। কেমন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে মৃত্তির খুব লজ্জা লাগছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। সে কোন মতে বক্সটা খুলে নাকের ফুলটা হাতে নিয়ে নাকের কাছে নিচ্ছে পড়ার জন্য । কিন্তু এ’কি তার হাত খুব করে কাঁপছে। লজ্জা,ভয় আর এক অন্যরকম অনুভূতি তাকে জেঁকে বসেছে। কিছুতেই সে হাতটা স্থির করতে পারছে না, আরহামও নজর সরাচ্ছে না। আচ্ছা এই অসভ্য লোকটা কি বুঝতে পারছে না আমি নার্ভাস হচ্ছি তার দৃষ্টির ঘোরে মনে মনে স্বগতোক্তি করলো মৃত্তি।

আরহাম এবার মৃত্তির পিছনে এসে দাঁড়ালো। একেবারে মৃত্তির পিঠ ঘেঁষে দাঁড়ালো। মৃত্তির ঘাড়ে আরহামের নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে। মৃত্তির হাত পায়ে কাঁপুনি ধরে যাচ্ছে। এতোটা কাছে কেন এসেছেন উনি? (মনেমনে)

আরহাম আয়নায় মৃত্তির মুখটা ভালো করে দেখে নিলো। তার ঠোঁট প্রশস্ত হয়ে হালকা হাসি ফুটে উঠেছে। এই সেই সাইকো মেয়ে যে আমাকে বউয়ের অধিকার দেখাতে আসে। অথচ আমি একটু কাছে আসলেই তার শরীর হিমশীতল হয়ে যায়। আপনা- আপনিই কাঁপতে থাকে ভাবতে ভাবতে আরহাম মৃত্তির হাত থেকে নাক ফুলটা নিয়ে নেয়।মৃত্তি তখনও মূর্তির মতো থাকে। আরহাম আলতো করে মৃত্তির বাহু ধরে তাকে নিজের দিকে ফেরায়। মৃত্তি একবার আরহামের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টিজোড়া ফ্লোরে নিবদ্ধ রাখে। আরহাম এবার নাক ফুলটা নিয়ে নাকে পড়িয়ে দেয়। প্রথমে একটু আৎকে উঠে মৃত্তি পড়ে আরহামের হাতের ছোঁয়ায় চোখ বুঁজে ফেলে।তার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে আরহামও যেন তার মুখের মায়ায় জড়িয়ে পড়ে। মৃত্তির নাক ফুলের ঠিক উপরে আরহাম ঠোঁট ছোঁয়ায়। মৃত্তিও পরম আবেশে তার স্পর্শ গ্রহণ করে। আরহাম এবার নাক থেকে কিছুটা নিচে মৃত্তির ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায় ঠিক তখনি দরজায় কড়া নরে।

-ভাবী, মিরহাদ ভাইয়া আসছে আপনাকে খুঁজছিলো,মাও খুঁজছে আপনাকে কি যেন দরকার। (আহনাফ)

আহনাফের ডাক শুনতেই দ্রুত সামনে থেকে সরে যায় আরহাম । আর মৃত্তি চোখ খুলে একবার আরহামের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়। ” ভাইয়া এসেছে? আমি এক্ষুনি আসছি” বলেই সে দৌঁড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আরহাম হতভম্ব তার কি রিয়াক্ট করা উচিত বুঝতে পারলো না।
__________________________

সারাদিন যেন তেন করে কেটে গেল। সন্ধ্যা নেমেছে ধরণীতে। আজ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হবে মৃত্তি আর আরহামের। পুরো বাড়ি বউ বউ সাজে সেজেছে। বিয়ে ধুমধামে হবে না বলেও যথেষ্ট ধুমধামে হচ্ছে।বিকেলেই মৃত্তিকে নিয়ে তুবা পার্লারে গেছে সাথে জিনিয়াকেও নিয়ে গেছে। সন্ধ্যে হয়ে গেছে এখনও ফেরেনি । বাড়ি শুদ্ধ সবাই চিন্তিত। সাথে কোন ছেলেও যায় নি। আরহামেরও গায়ে হলুদ তৈরি তো তাকেও হতে হবে তাই সায়ন কে বলা হয়েছিলো যেন সে গিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু সায়ন সারাজীবনই দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বসে ভুলেই গেছে। আহনাফও গাড়ি নিয়ে শহরে গেছে তার স্কলারশিপ এ যাওয়া নিয়ে লাস্ট মুহুর্তে কোন ঝামেলা হয়েছে তাই। মিরহাদ আর রোহানও এখানকার পার্লার কোনটাই চিনে না। তুবা জিনিয়া কেউ ফোন ধরছে না। জিনিয়ার নম্বর মিরহাদের আর সাদনানের কাছেই আছে। কিন্তু সাদ কোন কলে ব্যস্ত তার তো সেই খেয়ালটাও নেই জিনিয়ারা বাড়িতে ফেরেনি এখনও। মির তার বাবার কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে কাউকে কিছু না বলেই বেড়িয়ে পড়লো। আর জিনিয়াকে কল করে বসলো। আরহামও কাউকে কিছু না বলে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

চলবে

(কত বড় করে লিখলাম শেষ করে দিবো বলে 😞 কিন্তু না শেষ আর করতে পারলাম না। আরো দু’এক পর্ব হবে। আর হ্যা পরবর্তী পোস্ট আপডেট গ্রুপে পোস্ট করে জানিয়ে দিবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here