হলুদ_খামে #পর্ব_১০

0
494

#হলুদ_খামে
#পর্ব_১০
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

পরদিন প্রাইভেট শেষে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানাফ ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। ক্লাস নেই বলে আমাদের প্রাইভেটের সময় দশটা থেকে তিনটায় করেছে। দুপুরের কড়া রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি তখনই মানাফ ভাইয়া এসে আমার কান টেনে বললো–

— এই কড়া রোদে তোকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে কে বলেছে? পাশে দোকান দেখতে পাস নি? ওহ আমিতো ভুলেই গিয়েছি তোর তো আবার বাচ্চামি না করলে হয়ই না। এখনও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হা করে কি দেখছিস আয় বাসায় যাবি।

তখনও হা করে দাঁড়িয়ে আছি আমি। কি দেখে যে এই জিরাফের উপর ক্রাশ খেলাম কে জানে। কথার কোনো ছিড়ি নেই, সেকেন্ডে সেকেন্ডে আমার কান টেনে দেবে উফফ।

🍁
🍁
🍁

রিকশায় করে জিরাফটার পাশে বসে আছি আমি। স্কুল থেকে হেঁটে বেশি হলে তিরিশ মিনিট লাগে বাসায় যেতে। প্রতিদিন হেঁটেই যাই অথচ আজ কেনো রিকশায় বসে যাচ্ছি কে জানে! হুট করে আমার হাত ধরে রিকশায় বসিয়ে দিলো। উনার কথার উপর কথা বলার সাহস আমার নেই, তাই টু শব্দ না করেই চুপচাপ বসে আছি আমি। আমার ধ্যান ভাঙিয়ে মানাফ ভাইয়া আমাকে বললো–

— বেশি চিন্তা করতে হবে না। পা ব্যাথা হচ্ছিলো তাই আজকে রিকশা নিয়ে নিলাম। ভাবিস না তোকে রিকশায় করে ঘুরাবো বলে নিয়েছি। আমি কে হই যে তোকে এত সময় দেবো!

ওফফো মানাফ ভাইয়া, এত রাগ স্বাস্থ্যের জন্য একদমই ভালো না। কি একটা কথায় তুমি এখনও রেগে আছো। বলছি যে আর কিছুদিন পর তো আমার পরীক্ষা, তখন তো আর তেমন কথাই হবে না। আচ্ছা ঠিকাছে এই যে আমি কানে ধরেছি, এবার তো কথা বলো।

— দেখ তানহা…

কি দেখবো?

— তোকে একটা কথা বলবো, আসলে.. মানে.. তুই তো এখনও পিচ্ছি। তোকে… তোর পরীক্ষা কবে শেষ হবে?

একমাস পর শেষ হবে’ কি বলছিলে বলো না।

— না থাক, পরীক্ষা শেষ হলেই বলব। এখন বললে..

এর মধ্যেই রিকশার ঝাঁকিতে আমি পাশের লোহায় হাতের বাহুতে ব্যাথা পেলাম। হাত দিয়ে ঢলছি দেখে মানাফ ভাইয়া আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমার স্কুল ব্যাগটা উনার উরুর উপর রেখে আমার দিকে আরো চেপে বসে একহাতে আমাকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমি শক্ত হয়ে বসে আছি, ইশ কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। মানাফ ভাইয়া যে আমাকে কখনও এমনভাবে জড়িয়ে ধরবে সেটা আমি ভাবতেই পারিনি। অথচ উনি কি স্বাভাবিক ভাবে শান্ত চোখে আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে, যেনো কিছুই হয়নি। এদিকে আমার শরীর শক্ত হয়ে আছে উনার স্পর্শে। ইশ কি লজ্জা কি লজ্জা!

🍁
🍁
🍁

আজ আমার টেস্ট পরীক্ষার প্রথম দিন। বার বার করে মানা করা সত্বেও মানাফ ভাইয়া আমাকে পরীক্ষার হল অবদি পৌছে দিচ্ছে। বলি আমি কি হেঁটে যেতে পারিনা? এতদিন তো আমি একা একাই স্কুলে যেতাম, আজ কি এমন হতো একা এলে? বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় পৌছাতেই মানাফ ভাইয়া বললো–

— আজ থেকে প্রতিদিন আমি তোকে স্কুলে দিয়ে আসবো আর ছুটি হওয়ার পরও বাসায় পৌছে দেবো।

কি এক ঝামেলা, এই এক মাস রাস্তায় আমার ইন্টারভিউ নিবে সাথে বকা ঝকা তো আছেই।

এদিকে যে পুরো দমে আমি মানাফ ভাইয়ার প্রেমে পড়ে গিয়েছি সে খবর কি উনি রাখে? সে তো ব্যস্ত নিজের দুনিয়ায়, আমাকে ভালোবাসার সময় কোথায় উনার। আমার একার প্রেম গড়িয়ে এতটুকু এলো অথচ বাসায় উনাকে কেউ চিনেই না। কতবার করে বললাম আমাদের বাসায় এসে বসে যেতে, বলে কিনা–

— তোর বাসা তো চেনাই আছে, সঠিক সময় এলে শুধু তোদের বাসায় না। আমার পুরো পরিবার সহ তোদের বাসায় এসে তোকে আমার বাড়ি নিয়ে যাবো।

আমি বাবা উনার কথার এত প্যাঁচ বুঝি না। কোন কথার কি জবাব দেয় সেটা উনিই ভালো বোঝেন।

স্কুলের সামনে এসে রিকশা থেকে নেমে এক হাত দিয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরলেন। স্কুলের মাঠের সবাই আমাদের দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে, সবার দৃষ্টি আমাদের দিকে। খুব লজ্জা লাগছে আমার, হাত মুচড়িয়েও আমি ওনার হাত থেকে আমার হাত ছাড়াতে পারছিনা। এদিকে লজ্জায় আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। মুখের উপর কিছু বলতে গেলেও ঝাড়ি খেতে হবে । সাহস করে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবো তখনই দেখি উনি আমার দিকে নাক ফুলিয়ে কেমন ভাবে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। চোখ মুখ শক্ত করে কড়া গলায় আমাকে বললেন–

— এভাবে মোচড়া মুচড়ি করছিস কেনো? চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পারিস না? রিকশা ভাড়াটা দিতে দে আমাকে।

কি আর করা, উনার কথা শোনার জন্যই বোধহয় আমার সৃষ্টি হয়েছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আমি উনার পাশে। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষন। আমি এবার লজ্জায় লাল থেকে নীল হয়ে যাচ্ছি সেটা দেখে উনি মুচকি মুচকি হাসছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে মানাফ ভাইয়াকে বললাম–

ভাইয়া হাত ছাড়ুন না প্লিজ, সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, কি ভাবছে কে জানে।

— ভাবতে দে সবাইকে তাতে আমার কি? আগে বল তুই কি ভাবছিস!

আমি আবার কি ভাববো? পরীক্ষার টেনশনে আমার চুল সব উঠে যাচ্ছে, একটু পর পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে এবার তো ছাড়ো।

— এই খবরদার, একটা চুলও যেনো এদিক সেদিক না হয়। আমার জিনিস নষ্ট হলে তোর খুব শাস্তি হবে।

তোমার জিনিস মানে?

— কিছু না, এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে এখনই, যা আমার চোখের সামনে থেকে।

বলেই আমার হাত ছেড়ে দিলো। পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে আমার হাতে। ইশ নিজেই হাত ধরে রাখবে আবার নিজেই যেতে বলবে। এই জিরাফের মাথায় কখন কি চলে কে জানে, এই ভালো তো এই খারাপ। আমার তো উনাকে ছেড়ে যেতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। তবুও না চাইতেও মুখ ভেঙচি কেঁটে উনার সামনে থেকে চলে এলাম। কিছুদূর যেতেই পেছন থেকে উনি আমাকে ডাক দিলেন। পেছন ফিরে দেখি দু’হাত পকেটে রেখে আমার দিকে কেমন ঠান্ডা দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। ইশ দেখলেই খেয়ে ফেতে ইচ্ছে করে। আমি একাই ক্রাশ খেয়ে বসে আছি। উনার মনে আমার জন্য কি আছে কে জানে! আচ্ছা উনিও কি আমাকে ভালোবাসেন? না না না আমাকে কেনো ভালোবাসবেন? আমার সাথে উনার যায়ই না, আমার থেকে কত সুন্দরী মেয়েরা উনার প্রেম হাবুডুবু খায়। সে কথা মনে হতেই আমার মন খারাপ হয়ে যায়।

— মন দিয়ে পরীক্ষা দিস। ফুল আন্সার দিতে পারলে আজকে তোকে আইসক্রিম খাওয়াবো। এক নাম্বারও যদি ছেড়ে আসিস তবে শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাকিস।

এই যাহ শাস্তিও দিবে আবার ট্রিট-ও দিবে! এক নাম্বারের উজবুক একটা। বড় একটা ঢোক গিলে “আচ্ছা” বলে দৌড়ে চলে আসলাম উনার সামনে থেকে।

🍁
🍁
🍁

মানাফ ভাইয়া প্রতিদিন আমাকে স্কুলে পৌছে দিচ্ছে আবার নিয়েও আসছে। এ’কদিনে লক্ষ্য করলাম প্রতিদিনই আমার হাত উনি শক্ত করে ধরে থাকে। এমন যেনো ছেড়ে দিলেই আমি হারিয়ে যাবো। উনি কাছে থাকলে আমি এমনিতেই হারিয়ে যাই; নতুন করে আর কি হারাবো!

আর মাত্র পাঁচটা সাবজেক্ট বাকি, তারপরই আমার পরীক্ষা শেষ। আজ পরীক্ষা শেষে মানাফ ভাইয়ার সাথে দেখা হতেই দেখলাম উনি কেমন উৎফুল্ল হয়ে আছে। আজ কি উনার বার্থডে? না তো, তাহলে এত খুশি কেনো দেখাচ্ছে উনাকে? আহা হাসি মুখে কি সুন্দরই না লাগছে জিরাফটাকে।

কাছে এসেই আমার হাত খপ করে ধরে বললো–

— তানহা, আজ তোকে একটা যায়গায় নিয়ে যাবো। রাস্তায় আমার কথার জবাব ছাড়া আর একটা কথাও বলবি না, চল আমার সাথে।

বলা নেই কওয়া নেই আমাকে কোথায় যে নিয়ে যাচ্ছে কে জানে! রিকশায় উঠে আমার পাশ ঘেষে শক্ত করে আমার হাত ধরে বললো…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here