#হলুদ_খামে
#পর্ব_১২
𝘼𝙙𝙝𝙖𝙧𝙚𝙧 𝙈𝙪𝙨𝙖𝙛𝙞𝙧 (ইফ্ফাত)
আমাকে সং সাজিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সবাই আনন্দ উল্লাস শেষে অনুষ্ঠান শেষ করলো। না চাইতেও কৃত্তিম হাসি ঝুলিয়ে রাখতে হচ্ছে আমার। রুমে এসে ফ্রেস হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তামিমের কল এলো। একপ্রকার মনের সাথে যুদ্ধ করেই আমি ফোন উঠালাম।
এত রাতে কেনো ফোন করেছেন?
— আমার হবু বউকে আমি ফোন করবো তাতে কার কি?
দেখুন এত অধিকার দেখাবেন না, এখনও বউ হইনি আমি আপনার।
— হওনি তাতে কি কালই তো হয়ে যাবে। যাক গে, যা বলতে ফোন করেছিলাম। মিসেস তামিম আজ বাদে কালই আপনি আমার বউ হয়ে যাবেন। সো প্লিজ এমন কিছু করবেন না যেনো বিয়েটা আটকে যায়। আর কোনো কথা না, কাল সারা দিন রাত তো আর ঘুমাতে পারবে না। আজ রাতটা মন ভরে ঘুমিয়ে নেও জান। কাল তবে দেখা হচ্ছে, তৈরি থেকো।
টুক করে ফোন কেঁটে দিলো তামিম। কি করবো আমি কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। বিছানায় এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছে না আমার। কাল কি তবে সত্যিই আমার বিয়ে হয়ে যাবে। আচ্ছা এটা কোনো ভ্রম হলেও তো পারতো। মানাফ তুমি কি আমার কষ্ট দেখতে পাচ্ছো না?
🍁
🍁
🍁
অনেক্ষন দৌড়ানোর পর যখন আমরা হাঁপিয়ে গেলাম, তখন আমি আর আমাকে নিয়ে পালিয়ে আসা লোকটি দাঁড়িয়ে পড়লাম ঝোপঝাড়ের পাশে। পেছন থেকে কারো পায়ের আওয়াজও আর পাচ্ছিলাম না। হাঁটুতে হাত রেখে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছি আমি। পাশে থাকা লোকটাও গাছের সাথে হেলে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। এই শীতেও দৌড়ানোর ফলে এত গরম লাগছে, মনে হচ্ছে যেনো গাঁয়ের সব জামা কাপড়ে আগুন লেগে গেছে। পাশের লোকটাও ঘেমে নেয়ে এক হয়ে আছে। গরমে আর থাকতে না পেরে মুখের মাফলারটা সরাতেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
এটাতো সেই বাজে ছেলেটা যে কিনা আমাকে…
কিন্তু এই ছেলে এখানে কি করছে? অবাকের চরম সীমা থেকে বেড়িয়ে এসে তাকে বললাম–
আপনি? আপনি এখানে কি করছেন?
— তোমাকে নিয়ে মাঠে খেলতে নেমেছি! এটা আবার কেমন প্রশ্ন? মাত্রই তো তোমাকে নিয়ে এতদূর পালিয়ে এলাম আর তুমিই কিনা বলছো আমি এখানে কি করছি! হাউ ফানি…
যদি জানতাম আপনিই সেই বাজে লোকটা তাহলে ওই সন্ত্রাসীদের হাতে নিজ ইচ্ছায় নিজেকে সপে দিতাম তবুও আপনার সাথে পালাতাম না।
— তাইনাকি? ঠিকাছে চলো তোমাকে ওদের কাছে দিয়ে আসি!
কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার হাত ধরে আমাকে যেদিক থেকে এসেছি সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে। এই লোকটার হাত এত শক্ত, আমি এক হাতের সব শক্তি খরচ করেও তার হাত থেকে আমার হাত ছাড়াতে পারছি না। আমাকে এই জঙ্গলের মাঝে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
কি করছেন কি ছাড়ুন আমার হাত, আমি যাবো না কোথাও; আহ লাগছে আমার।
— কেনো ছাড়বো? আমার থেকে ওই সন্ত্রাসী তোমার প্রিয়, তো যাও না যাও ওদের কাছে যাও। আর আমি বাজে লোক? কি করেছি তোমাকে যে আমাকে বাজে লোক বলছো?
কিছু করেন নি আপনি? সেদিন ছাদে নিয়ে আপনি আমাকে… শুরু থেকেই আপনি আমার পেছনে লেগে আছেন। আপনাকে তো আমি চিনিও না, এখানেই প্রথম দেখা আমাদের। যেই না মেয়ে দেখেছেন ওমনি হুমড়ি খেয়ে পেছনে লেগে গেলেন। আপনারা পারেনও বটে।
— দেখো তানহা, মানছি সেদিন ভুল হয়ে গেছে আমার। কিন্তু আমি তোমাকে এক্সপ্লেইন করতে চেয়েছিলাম যে আমি সেদিন ঝর্ণার কাছে…! তোমার কাছে খারাপ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আমি আসিনি। কিন্তু আমার কথা না শুনেই তুমি আমাকে থাপ্পড় মেরে দিয়েছো।
বাহ্ দারুন কাহিনি শোনালেন তো আপনি! তা আপনি বোধহয় বই লেখেন তাইনা? তাইতো কি সুন্দর করে বানোয়াট কাহিনী বলে দিলেন। একটা মেয়ে পাহাড়ের ঝোপঝাড়ে ভেজা শরীরে কাপড় ঠিক করছিলো আর তা দেখে আপনি লোলুভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। মেয়েটি দেখে ফেলার পরও আপনি সেখান থেকে না গিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ভেজা শরীর গিলে খাচ্ছিলেন, আর বলছেন আমার খারাপ কোনো উদ্দেশ্য ছিলোনা! বাহ্ আপনার বই বোধহয় খুব বেশিই বিক্রি হয় তাইনা?
এবার আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। চোখ ভয়ংকর রকমের লাল হয়ে আছে, চোয়াল শক্ত করে দাঁত কিড়মিড় করে আমার কাছে আসতে থাকে। আমিও পেছনে পা ফেলে হাঁটতে লাগলাম, ভয় লাগছে খুব। না জানি কি করে বসে, এমনিতেও ছেলেটা এ পর্যন্ত আমার সাথে যা করেছে। কিন্তু এবার তো মনে হচ্ছে আমি উল্টো তাকে রাগিয়ে দিয়েছি। এই জঙ্গলে আমাকে মেরে ফেললেও কেউ খুঁজতে আসবে না। পেছনে পা ফেলতে ফেলতেই একটা বড় ইটের উপর পা পড়ে আমার পা মুচড়ে পেছনে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেলাম।
আমি গাছের সাথে হেলে দাঁড়িয়ে আছি, পা নাড়ানোর শক্তি আমার নেই। ছেলেটাও পেছাচ্ছে না, একটু একটু করে একদম আমার মুখের সামনে এসে দু’হাত আমার পাশে গাছে ভর দিয়ে আমার…
চলবে…
(একটু ছোট হয়ে গেছে, পরের পর্ব বড় করে দেবো)