নয়নতারা পর্ব ১৪

0
734

#নয়নতারা
পর্ব ১৪
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)

;;;;;

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা “।আশা করি #নয়নতারা উপন্যাসের মতো সেটাও আপনাদের ভালো লাগবে।

;;;;;

দুপুর বেলা না খেয়ে বিছানায় উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে আছে তানিয়া।সেই কখন থেকে রাবেয়া বেগম তাকে খেতে ডাকছে কিন্তু তার ওঠার নাম নেই।না পেরে ফজলে শেখ নিজেই আসলেন তানিয়াকে ডাকতে।

—-এগুলো কি শুরু করেছো কি তানি?এই শরীরে এই ভরদুপুরে না খেয়ে শুয়ে আছো কেন?তুমি আমাকে একটু শান্তি তে থাকতে দেবে না।

ফজলে শেখের কথা শুনে উঠে বসলো তানিয়া।

—-আপনার শান্তিরই তো ব্যবস্থা করছি।আমি মাকে বলে দিয়েছি ব্যাগ গোছাতে।আজ বিকেলেই চলে যাব আমি বাপের বাড়ি।আমার জন্য তো আপনার যতো অশান্তি ।থাকবো না আমি।

তানিয়া বেশ অভিমানী কন্ঠেই ফজলে শেখকে কথাগুলো বললো।ফজলে শেখ মাথা ঠান্ডা করে তানিয়ার পাশে গিয়ে বসলেন।

—-দেখো তানিয়া দোষ তোমার ও ছিল।
—-কিসের দোষ ছিল হ্যাঁ।আপনার ঐ মেয়ের জন্য দু বেলা শান্তিতে খেতেও পারিনা আমি।আর আপনি আর আপনার ঐ মা সব সময় শুধু আমাকে অপমান করেন।কথা শোনান।আমি কেন কথা শুনতে যাব হ্যাঁ।সব সময় আমাকে কথা শোনাবেন আপনারা।
—-আচ্ছা ভুল হয়েছে।বাদ দাও।তুমি এই শরীরে না খেয়ে থেকে কি আমাদের সন্তানের ক্ষতি চাও বলো।
—-না।তা কেন চাইবো?
—-তাহলে।
—-আমাকে খাইয়ে দিতে হবে।না হলে আমি খাব না।
—-কিহ!কে খাইয়ে দেবে এখন তোমাকে?
—-কেন আপনি আছেন না।

তানিয়ার আঁচলের কোন ধরে আঙুলে পেচাতে পেচাতে বেশ লাজুক ভাবেই কথাটা বললো।ফজলে শেখ মুচকি হেসে তানিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

—-আচ্ছা বসো।আমি খাবার আনছি।

;;;;;

রাস্তার পাশের ফুটপাতে মিষ্টির এক হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে নাফিজ।যেন ছেড়ে দিলে এখনি পালিয়ে যাবে।মিষ্টি শুধু অবাক হয়ে নাফিজের দিকে তাকিয়ে আছে।কি ঘটেছে কিছুই সে বুঝতে পারছে না।

ট্রাকের ড্রাইভার সলেমান মিয়া ট্রাক থামিয়ে নেমে নাফিজদের দিকেই আসলেন।

—-আরে ছোটো মেয়ে,তুমি এইভাবে মাঝরাস্তায় কি করছো?আমি যদি আগে থেকেই ব্রেক না কষতাম কি হতো বলোতো।আর এই যে ছেলেটা তুমি ও সঠিক সময়েই এসে ওকে পাশে সরিয়ে নিয়েছো।কি যে হতো!আল্লাহ মালুম।
—-কাকু ও খেলতে খেলতে চলে এসেছে বুঝতে পারেনি।আসলে রাস্তার পাশে বাড়িতো ওদের।
—-সে ঠিক আছে।তুমি ই বলো এই দুপুর বেলা মানুষজন কম থাকে।রোড ফাঁকা থাকে।আমিও তাই একটু জোরেই গাড়ি চালাচ্ছিলাম।দূর থেকে ওকে দেখে তাড়াতাড়ি ব্রেক কষলাম।না হলে তো,,,,
—-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ কাকু।ও ছোটো মানুষ।বুঝতে পারেনি।
—-আচ্ছা সাবধানে চলাফেরা করবে কেমন।এই মেয়েটা তোমার কে আছে?বোন নাকি।

ট্রাক ড্রাইভারের কথাতে নাফিজ একবার মিষ্টির দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার ট্রাক ড্রাইভারের দিকে।

—-না।প্রতিবেশী।বিশেষ কেউ।আমার বাগানের নয়নতারা ফুল।

নাফিজের কথাটা ড্রাইভার ঠিক বুঝতে পারলেন না।উনি মিষ্টির মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিলেন।

—-যাই বলো এতো সুন্দর বাচ্চা আমি আজ অবধি দেখিনি।সাক্ষাত পরী।তুমি মা বড় হলে সেই সুন্দর হবে।মাশাল্লাহ।আল্লাহ তোমাদের ভালো করুক।আসি ঠিকাছে।আর কখনো রাস্তায় এভাবে চলাফেরা করবে না।
—-আচ্ছা।

নাফিজের মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।ড্রাইভার মিয়া তার ট্রাক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলেন।

—-আজকে তোকে আমি সত্যি সত্যি মারব মিষ্টি।তুই কখনো আমার কথা শুনিস না।কতোবার বলি রাস্তায় আসবি না।

নাফিজের গরম চোখ দেখে মিষ্টি ঠোট ফুলিয়ে কেঁদে দিল।

—-তুমিও আমাকে মারবে নাফিজ ভাইয়া!জানো বাবাই না আমাকে আজ খুব মেরেছে।খুব ব্যথা করছে।

মিষ্টির কান্না দেখে নাফিজ মিষ্টির সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।

—-কি হয়েছে মিষ্টি পাখি?কাকু তোকে মারলো কেন?
—-একটু আপেল খেতে চেয়েছিলাম বলে।আচ্ছা নাফিজ ভাইয়া ট্রাকের সামনে পড়লে কি মানুষ আকাশের তারা হয়ে যায়?
—-কেন?
—-বলোই না।
—-হ্যাঁ হয়ে যায়।
—-তাহলে আমাকে ট্রাকের সামনে আবার দিয়ে আসবে।আমি ও আকাশের তারা হয়ে যাব।তারপর মায়ের কাছে থাকবো।

মিষ্টির কথা শুনে নাফিজের চোখ ছলছল করে উঠলো।

;;;;;

নাফিজের বিছানার ওপর বসে পা দোলাচ্ছে মিষ্টি।আর আপেল খাচ্ছে।

—- আহ মিষ্টি এতো নড়িস না।আমি তো তোর চুল ঠিকভাবে বাঁধতে পারছি না।কতোদিন চুল বাধিস না বলতো।
—-দুদিন আগে দাদীমা বেধে দিয়েছিল।তারপর আর দেয়নি।

মিষ্টি আপেল খেতে খেতে উওয দিলে।এর মধ্যে লতিফা ছাদ থেকে শুকনো কাপড় এনে ঘরে ঢুকলো।

—-মিষ্টি আর খাবি আপেল?
—-না কাকিমা পেট ভরে গেছে।
—-এই নাফিজ তুই কি করছিস?
—-ওর চুল বাধছি।এবার ওকে বউ সাজাবো।
—-বউ সাজাবি কেন?
—-ওর নাকি ওর বউ পুতুলের মতো সাজার খুব শখ।
—-ও নিজেই তো একটা পুতুল।সাজালে আরো বেশ লাগবে।বিকেল হতে চললো ওর বাবা তো একবার ও খোঁজ নিতে এলো না রে।
—-ওদের কথা বাদ দেও মা।আমি তো ওদের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম।তাই দেখতে পেলাম।না হলে তুমি বলো আজ কি অঘটন ঘটতে পারতো।একটু খেয়াল নেই কারোর ওর প্রতি।
—-এতো সুন্দর ফুটফুটে মেয়েটা।ফজলে র কি মায়া হয় না নাকি।মারতে কি একটু কষ্ট হয় না ওর।

নাফিজ চুল বাঁধা সেজে মিষ্টিকে বসিয়ে সাজাতে লাগল।লতিফার ঘর থেকে লিপস্টিক এনে মিষ্টির ঠোঁটে লাগিয়ে দিল।কাজল দিয়ে মিষ্টির ডান দিকের ঠোঁটের নিচের তিলটা আরো গাড়ো করে দিল।তারপর লতিফার লাল রঙের একটা ওড়না এনে মিষ্টির মাথায় বউদের মতো করে ঘোমটা দিয়ে দিল।সবশেষে চুলের সাথে ক্লিপ লাগিয়ে কপালে একটা টিকলি ঝুলিয়ে দিল।

—-মা দেখে যাও।মিষ্টি বুড়িকে কতো সুন্দর লাগছে।

লতিফা নাফিজের ডাকে ঘরে এলো।

—-বাপরে।ও মিষ্টি তোকে তো পুরো ছোট্ট বউ লাগছে।মাশাল্লাহ।

মিষ্টি বসে আছে।নাফিজ বিভিন্ন এংগেলে মিষ্টির ছবি তুলছে ফোন দিয়ে।মিষ্টি খিলখিলিয়ে হাসছে।

—-এই দাঁত বন্ধ কর।তোর ফোকলা দাঁত বের করিস না।
—-নাফিজ তুই ও যা।ওকে কোলে নিয়ে বস।আমি তোদের ছবি তুলে দেই।

মায়ের কথা মতো নাফিজ মিষ্টিকে কোলে নিয়ে কতগুলো ছবি তুললো।

;;;;

সন্ধ্যা বেলা লতিফা মিষ্টি কে ওর বাড়ি নিয়ে এসেছে।

—-কাকিমা ওরা না হয় ভুলে গেছে।আপনি তো একবার ওর খোঁজ নিতে পারতেন।কি অঘটন ঘটতো আজ বলুন তো।

লতিফা দুপুরের সব ঘটনা রাহেলা বেগমকে খুলে বললো।পাশে বসে তানিয়া ও সব শুনেছে।

—-এমন ভাবে বলছেন যেন মরে টরে রাস্তায় পিচের সাথে পিষে আছে।ও দিব্যি সুস্থ আছে।
—-তানিয়া তোমার মুখের লাগাম নেই।এতো বড় কথা বলতে বাধছে না।
—-এই যে শুনুন।বাইরের মানুষ বাইরের মানুষের মতো থাকবেন।আমাকে ধমকানোর আপনি কে হ্যাঁ।সব সময় আমাদের সংসারে নাক গলাতে আসেন।
—-মুখ সামলে কথা বলো তানিয়া।আমার খেয়ে দেড়ে কাজ নেই তোমার মতো অসভ্য বেয়াদব একটা ডাইনির সংসারে নাক গলাতে আসবো।সেই মিষ্টির জন্ম থেকে ও আমাদের কোলে কোলে মানুষ হয়েছে।আজ রুবি ভাবী নেই।তাই ওর খেয়াল রাখি।ও না থাকলে তোমার সংসারে পায়ের ধুলো তো দূরে থাক থু ফেলতেও আমি আসতাম।
—-আপনার সাহস,,,,,
—-একদম আমাকে চোখ গরম দেখাতে আসবে না।অসভ্য মহিলা একটা।তোমার মতো মেয়ে নারী জাতির কলঙ্ক।মনে রেখো তুমি ও কিন্তু মা হবে একদিন।এখনো হওনি।পরের বাচ্চাকে নিয়ে এতোটাও কথা বলতে এসো না।আল্লাহ চাইলে যা কিছু করতে পারেন।
—-আপনি,,

তানিয়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে লতিফা রাহেলা বেগমের কাছে গেলেন।

—-কাকিমা আসি।কাল বিকেলে আমি বাপের বাড়ি যাব।মিষ্টিকে একটু দেখে রাখবেন।
—-হামার হইছে যতো জ্বালা।দুপুরে ফজলে রে কইলাম যা মাইয়াডারে ধইরা আইনা গা গোসল দিয়া।কে হুনে কার কতা।হে তো এ হন বউ পাইছে বউ।ও কি কইছে জানো,মিষ্টি মরলে মরুক।ওর দেহার দরকার নাই।হামারে ও ঘর থেইকা বাইর হতি দেইনি।

রাহেলা বেগমের কথা শুনে ঘৃনাতে বুক ফেটে যাচ্ছে লতিফার।তার শুধু একটাই ভাবনা একজন বাবা হয়ে ফজলে কিভাবে এই কথা বলতে পারে।

চলবে———

আল্লাহ বাঁচালে ইনশাহআল্লাহ পরবর্তী পর্ব থেকে কাহিনীর মোড় ঘুরবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here