#নয়নতারা
পর্ব ১৭
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
বিকেল বেলা ক্যান্টনমেন্টের মধ্য দিয়ে হাঁটাহাটি করছে নাফিজ।এটা স্বীকার করতেই হবে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ক্যান্টনমেন্টই আলাদা আলাদা ভাবে সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।ভেতরে ছোটো ছোটো রাস্তা গুলো একদম দেশে বিদেশের রাস্তা গুলোর মতো দেখা যায়।আর সকাল হোক বা বিকেল হাঁটার জন্য একদম মনোরম পরিবেশ।নাফিজ হাঁটতে হাঁটতে এগুলোই ভেবে চলেছে।
হাঁটার মধ্যেই এক জায়গায় এসে দাড়িয়ে গেল নাফিজ।এ আর নতুন নয়।যে জায়গায় সে এই ফুল দেখে সে জায়গায় তাকে দাঁড়াতেই হবে।এ যেন নাফিজের জীবনের চরম বাধ্যবাধকতা।পাশের সারিবদ্ধ নয়নতারা ফুলের গাছের ওখানে এক পায়ের ওপর ভর করে হাঁটু গেড়ে বসলো নাফিজ।গাছের ফুলগুলোর ওপর পরম আদরের সাথে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে।যেন তাদের সাথে তার আত্মার আত্মীয়তা।
—-কেন এভাবে পোড়াস তোরা আমাকে?আমি যে দগ্ধ হয়ে যাই প্রতি মূহুর্তে।ঝলসে যাই বার বার।নিজেকে যে ক্ষমা করতে পারিনা।কেন সেদিন আমি মায়ের সাথে চলে গেছিলাম!কেন?
ক্যান্টনমেন্টে প্রথম ট্রেনিং এর জন্য আশার পর থেকেই নাফিজের দম বন্ধ হয়ে আসতো।প্রত্যেকটি ক্যান্টনমেন্টে গাদা ফুলের সাথে এই ফুলের গাছ থাকবেই থাকবে।আর এই গাছগুলো নাফিজকে বার বার ভেতরে ভেতরে দগ্ধ করে দেয়।
—-স্যার স্যার,,,,,
কারোর ডাকে নাফিজের ঘোর কাটলো।পিছনে ঘুরে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখে একজন সৈনিক।নাফিজ তাকাতেই সৈনিক টা তাকে এক হাত কপালের ডান পাশে উঠিয়ে এক পা একটু তুলে আবার নামিয়ে দিয়ে স্যালুট করলো।
—-হুম বলো।
—-স্যার আপনি একজন অফিসার।আপনি এভাবে এখানে বসে থাকবেন না।খারাপ দেখাবে।
—-অফিসার বলে কি আমি মানুষ না?
—-না স্যার সেটা নয়।
—-একজন অফিসার হওয়ার আগে আমি একজন মানুষ।আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে।আমি যেখানে খুশি বসতেই পারি।এর জন্য খারাপ লাগার তো কোনো বিষয় নেই।
—-আসলে স্যার এভাবে তো কেউ বসেন না।এজন্য বলছিলাম।
—-আপনি কি বলতে এসেছেন স্টাফ?
—-স্যার মেজর ইমরান স্যার আপনাকে ডাকছেন।
—-ওকে।চলো।
নাফিজ উঠে দাড়ালো।তাঁরপর মেজরের অফিসের দিকে গেল।
;;;;;
—-হ্যালো কোথায় তোমরা?
—-আরে কেন কি হয়েছে?আমরা বাপ বেটি মিলে মজা করছি তোমার হিংসে হচ্ছে।
—-হবে না।আমি এসেই হসপিটালে জয়েন করে কাজের চাপে শেষ হয়ে যাচ্ছি।আর তুমি দিব্যি মেয়েকে নিয়ে উইকেন্ড কাটাচ্ছো।
—-আহা।দেখো দেখো।তুমি দেখবে আর লুচির মতো ফুলবে।
—-ওহ।ভালো কথা মনে করেছো।মামোনি তো আমার কাছে লুচি খেতে চেয়েছিল।
—-যাক।তবুও ভালো।তোমার মনে পড়েছে।
—-তোমরা দুজন খেয়েছো তো?
—-হ্যাঁ।
—-খাবার নিজে গরম করেছিলে?নাকি আবার আমার মেয়েটাকে খাটিয়েছো?
—-আরে না।আমিই করেছিলাম।
—-আচ্ছা রাখছি।রোগী আসছে।
—-শোনো।
—-তাড়াতাড়ি বলো।
—-আজকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো।
—-কেন?
—-আমি আজ তুন্দলের রুটি আর বারবিকিউ বানাব।
—-তুমি বানাবে?কেউ খেতে পারবে তো?নাকি আমাদের মা মেয়েকে আজ না খাইয়ে রাখবে।
—-হুহ।পারব দেখে নিও।ভুলে যেও না আমি একজন মেজর।আমি কোনো অলরাউন্ডারের থেকে কম নাকি।
—-দেখা যাবে।রাখছি।
—-আল্লাহ হাফেজ।
—-আল্লাহ হাফেজ।
ডা:মাহমুদা বেগম মুচকি হেসে ফোন কেটে দিলেন।বুড়ো বয়সে ও তার স্বামীর এরকম ভালোবাসা সত্যি তার কাছে খুব হাস্যকর লাগে।
—-ম্যাম নেক্সট ডাকব।
—-আর কতজন আছে?
—-পনেরো জনের মতো।
—-আচ্ছা ডাকো।আমাকে আবার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।
;;;;;
সকাল হয়ে গেছে।
শীতের কেবল শুরু।কুয়াশায় ঢেকে গেছে সবকিছু।কাছের জিনিস ও ঠিক মতো দেখা যাচ্ছে না।এই ঠান্ডা আমেজে সকাল দশটার সময় টাও যেন সকাল মনে হয়না।কম্বলের নিচ থেকে কেউ ই বের হতে চায়না।
মোটামুটি ঠান্ডায় নাফিজের ঘুমটা বেশ হয়েছে।ভোর রাতে নামাজের পর ঘুমটা যেন আরো বেশি জেকে বসে।আড়মোড়া দিয়ে উঠে পড়লো নাফিজ।তৈরী হয়ে রওনা দিল অফিসের উদ্দেশ্যে।
—-ক্যাপ্টেন নাফিজ আপনাকে আজকে মেজর আব্রাহামের বাড়িতে যেতে হবে।উনি সামনের বছরেই অবসরে যাচ্ছেন।ওনার থেকে ম্যাপের কাজগুলো নিয়ে আপনি বুঝে আসবেন।উনি এক সপ্তাহ হলো নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরেছেন।এখন ও ছুটিতে আছেন।
—-স্যার ওনার ঠিকানা।
—-উনি অফিসার্স কোয়াটারে থাকেন।কিন্তু সেটা খুব কম।উনি যশোরের স্থায়ী বাসিন্দা।তাই ওনার পরিবার ওনার নিজস্ব বাড়িতেই থাকে।ওনার বাসা এয়ারপোর্ট রোডের ঐ এলাকাতে।আমি ক্যাপ্টেন মারিয়া কে আপনার সাথে পাঠাচ্ছি।উনি আপনাকে কিছু কাজ দেখিয়ে দেবেন।আর মেজর আব্রাহামের বাসা ও।
—-ওকে স্যার।
যশোর এয়ারপোর্টের রাস্তায় ঢুকেছে গাড়ি।সামনে ড্রাইভার ড্রাইভিং করছেন।ক্যাপ্টেন মারিয়া গোথাম আর নাফিজ পেছনে বসে আছে।
—-ক্যাপ্টেন নাফিজ আপনার কথা অনেক শুনেছি এতোদিন।
—-ওহ।আপনি কি খ্রিষ্টান?
—-কেন?
—-মারিয়া গোথাম।নামটা শুনে মনে হলো।
—-জি।ঠিক ধরেছেন।
মারিয়ার সাথে কথা বলে নাফিজ জানলা দিয়ে আবার বাইরের প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
—-ক্যাপ্টেন নাফিজ,আপনি কখনো জ্বলন্ত পরী দেখেছেন?হুরপরী।একদম যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছে।যেন আকাশের তারা খসে এসে পৃথিবীতে পড়েছে।
চলবে————