#নয়নতারা
পর্ব ২২
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
Suvhan Arag’s Storys
—-আংকেল আপনি কি ভাবছেন?
তারার কথা শুনে নাফিজের চেহারায় একদম কাদো কাদো ভাব।
—-আপনার আমাকে কোন দিক থেকে আংকেল মনে হয় তারা বলতে পারেন?আমার কি চুল পেকে সাদা হয়ে গেছে নাকি বয়সের থলথলে ছাপ আমার মুখে।নাকি আমার মুখে ইয়া বড় মোজ আছে।নাকি মোটা কালো ফ্রেমের চশমা পড়ে আমি ঘুরে বেড়াই।কি হলো বলুন?
তারা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না বোধক উওর দিল।
—-না একদম না।
—-তাহলে?
—-তাহলে কি বলব।বাপির কলিগদের তো আংকেল বলি তাই আপনাকেও,,,,,,আচ্ছা ভাইয়া বলবো।
তারা বেশ হাসি মুখে উৎসুক হয়ে উওর দিলেও নাফিজের যেন আরেকবার চোখ বের হয়ে আসার উপক্রম।
—-ভাইয়া!
—-হ্যাঁ ভাইয়া।
—-আমি আপনার কোন জন্মের ভাই ছিলাম তারা?
নাফিজের অসহায় দৃষ্টিতে তারার দিকে তাকিয়ে আছে।তারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।একবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার নাফিজের দিকে।বেজায় প্যাচালে পড়ে গেছে সে।
—-তাহলে কি বলব?
—-আপনি বরং ক্যাপ্টেন নাফিজ বলেই আমাকে সম্বোধন করবেন।
—-অসম্ভব!
—-অসম্ভব কেন?
—-বড়দের কে নাম ধরে ডাকতে নেই।বাপি শুনলে রাগ করবে।
—-তাহলে?
—-আমি বরং আপনাকে শুধু ক্যাপ্টেন বলেই সম্বোধন করি।আপনি একজন সৈনিক হিসেবে দেশের গর্ব।আপনি সবার কাছেই এই ক্যাপ্টেন হিসেবেই পরিচিত।নামে কি এসে যায়।
—-আচ্ছা ঠিকাছে।
নাফিজ মুচকি হেসে তারার দিকে তাকালো।
—-আমাকে মারিয়া আপুর কেবিনটা একটু দেখিয়ে দেবেন ক্যাপ্টেন?
—-ক্যাপ্টেন নাফিজকে আর দেখাতে হবে।আমি নিজেই চলে এসেছি।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললেন ক্যাপ্টেন মারিয়া।দুজনের চোখাচোখি হওয়াতে তারা মারিয়া কে দেখে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিল।
—-মারিয়া আপু।
—-আমি স্যারের কাছে শুনলাম তুমি আমার কাছে যাচ্ছো।অপেক্ষা র পরেও পেলাম না।তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে আমি শেষ।
—-আসলে আমি তো জানিনা আপনার কেবিন শিফট করা হয়েছে।
—-হুম।সেটা বুঝেছি।এবার চলো।
—-ক্যাপ্টেন দুঃখিত।শুধু শুধু আপনার কাজে ব্যাঘাত ঘটালাম আমি।
তারার কথা শুনে নাফিজ বেশ আহত দৃষ্টি নিয়ে উওর দিল,
—-কোনো ব্যাঘাত ঘটান নি।
—-আসি।
—-আবার আসবেন।
—-ঠিকাছে।আল্লাহ হাফেজ।
—-আল্লাহ হাফেজ।
তারা কথা শেষ করে ধীর পায়ে মারিয়ার দিকে এগিয়ে গেল।মারিয়ার হাত ধরে বেরিয়ে গেল।নাফিজ এখনো তারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
—-খুব কি ক্ষতি হতো কিছুক্ষণ টাকে বেশিক্ষণ রাখতে।আমি তার নিঃশব্দ হাসিতে আরো একবার মাতোয়ারা হতাম।
নিজের ধ্যান ভেঙে গেল নাফিজের।
—-ক্যাপ্টেন।কথাটা আপনার মুখে খুব মানিয়েছে তারা।আপনি কি বলতে পারেন তারা কি জাদু করেছেন আপনি।আজকাল নিজের বাগানের চেয়ে আপনার বাগানটাকেই কেন বেশি ভালো লাগে।কেন এতো টান লাগে?এতো মায়া কিসের?বলতে পারেন?
;;;;;
এক সপ্তাহ কেটে গেছে
—-মানুষ কখনোই নিজের অতীত কে ধরে সামনে এগোতে পারে না।আমার ও খুব খারাপ লাগলো সব শুনে।কিন্তু তুমি কি চাও তোমার মা বাবাকে কষ্ট দিতে।জন্ম দান থেকে শুরু করে আজ এই অবধি তুমি এসেছো সব আল্লাহর রহমত।কিন্তু তোমাকে এতদূর আনার জন্য কষ্ট করেছে তোমার মা বাবা।কখনো তাদের কষ্ট দিও না।পিছুটান যদি থেকে থাকে তবে সেটা না ভুলতে পারলেও ভোলার চেষ্টা করতে হবে।
—-আমি তো ভুলতে পারছি না।প্রতি নামাজে আমি আল্লাহর কাছে এই একটাই দোয়া করি।তিনি যেন আমাকে সঠিক পথ দেখান।আমি যে বুঝতে পারছি না আমার কি করা উচিত।
—-একটা কথা কি জানো আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথ দেখাবেন কিন্তু তোমাকে ও সেই পথে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।আল্লাহ তোমাকে বিবেক বুদ্ধি সব দিয়েছেন।তোমাকে আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।তোমার নিজের ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা তোমার আছে।তুমি নিজের যেই পথটা ভালো লাগে সেটাই ধর।সেটা যদি সঠিক পথ হয় আল্লাহ নিজেই তোমাকে সেদিকে ধাবিত করবেন।আর খারাপ হলে তিনি ই তোমাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনবেন।সবকিছু ই হবে কিন্তু সিদ্ধান্ত তোমাকে নিতে হবে।
—-তাহলে আমি তাই করব ইমাম সাহেব।আমার মায়ের চোখের পানি যে আমি দেখতে পারছি না।
—-ফি আমানিল্লাহ।আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমার সহায় হবেন।
—-আসি ইমাম সাহেব।
—-আল্লাহ হাফেজ।
—-আল্লাহ হাফেজ।
ঈশার নামাজ আদায় করে মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে নিজের মনের কথাগুলো বলছিল নাফিজ।বড্ড উতলা হয়ে যাচ্ছে আজকাল সে।তার নয়নতারা বাগানের এই নতুন ফুলের আগমন সে যে মেনে নিতে পারছে না।কেন হচ্ছে এমন?প্রশ্নের উওর নিয়ে বড় সংশয় আজ নাফিজের মনে।
;;;;;
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা “।আশা করি নয়নতারা উপন্যাসের মতো সেটাও আপনাদের ভালো লাগবে।
আর বইটার প্রি অর্ডার এখনো শুরু হয়নি।শুরু হলে ইনশাহআল্লাহ আপনাদের জানাব।
;;;;;
কলিংবেলের আওয়াজ হতেই বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো লতিফা।শরীরটা একদম ভালো নেই তার।কোমড়ে ব্যথায় সারাদিন বিছানায় শুয়ে ছিল সে।
—-তুই এসে গেছিস।এতো দেরি করলি কেন?
দরজা খুলে নাফিজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কথাগুলো বললো লতিফা।
—-ঐ নামাজ পড়ে ইমাম সাহেবের সাথে গল্প করছিলাম।
—-ওহ।
—-চলো ভিতরে চলো।তোমার কি অবস্থা তাই বলো।
—-আছি।তুই দরজাটা লাগিয়ে দিস।
—-আচ্ছা তুমি যাও।
নাফিজ দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে লতিফার পিছু পিছু ঘরে গেল।
—-মা কাল সিএম এইচ এ যাবে।ডাক্তার দেখাতে হবে তোমাকে।
—-আমি তো এখানকার কিছু চিনি না তেমন।
—-আমি স্যারকে বলেছি।কাল দু ঘন্টা আউটপাশ নিয়েছি।তোমাকে ডাক্তার দেখাতে যাব।
—-আচ্ছা।
এর মধ্যে নাফিজের ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।
—-কে ফোন করেছে রে নাফিজ?
—-দাঁড়াও দেখছি।
নাফিজ স্ক্রিনে নীলার নাম দেখে প্রচন্ড রেগে যায়।
—-মা দেখেছো তোমার ভাইঝির যদি লজ্জা বলতে কিছু থাকে।দেখো বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি এখন আবার ফোন করেছে।
—-আগে রিসিভ করে দেখ কি বলে।
নাফিজ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশে নীলার কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো।
—-নাফিজ ভাইয়া,তুমি এটা করতে পারলে নাফিজ ভাইয়া।
—-ছাগলের মতো ভ্যা ভ্যা না করে কি হয়েছে বল।
—-নাফিজ ভাইয়া,বাবা আমার বিয়ে ফাইনাল করে ফেলেছে।দুদিন পর আমার বিয়ে।
কথা বলেই আরো জোরে নাক টেনে কেঁদে দিল নীলা।
—-শুকরিয়া আলহামদুলিল্লাহ।আহ কতোদিন বিয়ে খাওয়া হয়না।শোন তোর ঐ কিপ্টে বাপ আমার হাড় কিপ্টে মামুকে বলিস একটা এড়ে জবাই দিতে।নিজের মেয়ের বিয়েতে যেন আর কিপ্টামি না করে।আমি কিন্তু কবজি কেন হাত পা সব ডুবিয়ে খাব বলে দিলাম।
—-আ নাফিজ ভাইয়া তুমি এভাবে আমাকে বলতে পারলে!
—-তাড়াতাড়ি দাওয়াত দিতে বলিস।আর কখনো যেন আমাকে ফোন দিতে না দেখি।ফাজিল মেয়ে।
নাফিজ নীলাকে ধমকিয়েই ফোন কেটে দিল।
—-কি হয়েছে রে?
—-কি আর হবে।তোমার ভাইঝির ন্যাকামো সব।মামু ওরা বিয়ে দিচ্ছে।সেই নালিশ করতে এসেছে।
—-ওহ।তুই কি করবি ভেবে দেখেছিস?
—-কিসের কি করব মা?
—-আমার একদম ভালো লাগে না তোকে উদাস হয়ে দেখতে।তুই তোর ঐ ছেলে বেলার আবেগটাকে এতো টা মনের ভেতর জেকে রেখেছিস তোকে কি বলব আমি নিজেও বুঝতে পারিনা।
উদাস হয়ে নাফিজ জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।জানালার একটা কপাট লাগানো আরেকটা আধখোলা হয়ে আছে।ফাঁক দিয়ে বাকা চাঁদের খণ্ডাংশ দেখা যাচ্ছে।আকাশ ভরা তারা।
—-মা জানোতো,একটা জ্বলন্ত পরী আমার জীবনে এসে সব কিছু রঙিন করেছিল,আমি তাকে নিয়েই নিজের কল্পনার জগতে ডুবে থাকতাম।আমার একটা ফুলের রাজ্য হবে।মাঝখানে সেই ছোট্ট পরীটা রানী হয়ে বসে থাকবে আমার রানী।কিন্তু সেই জ্বলন্ত পরীটা আমাকে আবার বেরঙিন করে দিয়ে চলে গেল।কিন্তু আজ এতো বছর পর আবার আরেকটা জ্বলন্ত পরী আমার বাগানে ঢুকে পড়েছে।তার সাথে না হয় চেনা,না হয় জানা,আমি শুধু দূর থেকে তাকে দেখি।তাকে এক নজর দেখার জন্য ছুটে যাই।আমার তৃষ্ণার্ত মন তাকে দেখার জন্য ছটফট করে।আমি যেন এক ঘোরে চলে যাই।এই জ্বলন্ত পরীর আগমন টা কেন হলো বলতে পারো?
নাফিজের উদাস মনের প্রশ্নের জবাব লতিফার কাছে নেই।সে শুধু চেয়ে আছে ছেলের মুখপানে।কিছু পাওয়ার আশা যেন সে আবার দেখতে পাচ্ছে নাফিজের চোখে।
;;;;;
—-আআআ বাপি খুব ব্যথা করছে।আমি সহ্য করতে পারছি না।
—-এই তো মা।তোমার মা ইনজেকশন দিচ্ছে দেখ সব ঠিক হয়ে যাবে।
—-আফা আপনে কাইনদেন না।আপনার কান্না দেখলে যে আমার ও কান্না পায়।
—-গাসু আমার খুব যন্ত্রণা করছে।
বিছানায় ছটফট করছে তারা।সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে বেখেয়াল বশত সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছিল সে।পায়ে আঘাত লেগেই প্রচন্ড যন্ত্রণা তে ছটফট করছে সে।
মেয়ের কান্না দেখে কেঁদেই দিয়েছেন আব্রাহাম সাহেব।মাহমুদা বেগম ইনজেকশন পুশ করতেই আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায় তারা।
তারা কে ভালো করে শুইয়ে দিয়ে মাথার কাছে বসে আছেন মাহমুদা বেগম।তিনি ও কাঁদছেন।
—-মাহমুদা কিসের ইনজেকশন দিলে?
—-ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি।ও ঘুমোক রাতটা ধরে।কি কষ্ট না পেয়েছে আমার মেয়েটা।
—-কাইনদেন না ম্যাডাম।
—-আমার তখন তোমাকে নিচে ডাকা উচিত হয়নি গাসু।ও নিচে নামার সময় তুমি থাকলে এ অঘটন ঘটতো না।কতো কষ্ট পাচ্ছে ও।
—-এসব বলতে নেই মাহমুদা।বিপদ মহান আল্লাহর একটা পরীক্ষা।তিনি পরীক্ষা নেন তার বান্দাদের।ধৈর্য ধরো।কাল ওকে সি এম এইচ এ নিয়ে যেতে হবে।
—-হ্যাঁ।তুমি ডাক্তার কে কিন্তু আগেই বলে দিও।
—-চিন্তা করো না।আমি ও যাব ওকে নিয়ে।
;;;;;
অনেকক্ষন ধরে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে নাফিজ।সূর্য ও উঠে গেছে চারপাশ আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে।কেটে যাচ্ছে আঁধারের ঘনঘটা।
—-কি হলো আজ?এমন তো হওয়ার কথা নয়।তারা তো প্রতিদিন আরো সকালে বাগানে আসে।আজ কি হলো ওনার।উনি কি আজ আসবেন না।একবার কি দেখতে পারব না ওনাকে।
নাফিজের মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেল।প্রতিদিন অনেক ভোরে উঠে দ্রুত সাইকেল চালিয়ে আসা আবার দ্রুত যাওয়া তারপর অফিস করা যেন নাফিজের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।প্রতিদিন সে এক নজর দেখতে আসে তারা কে।তারা ও প্রতিদিন খুব ভোরে হাঁটা চলা করে বাড়ির সামনে।কিন্তু কেন আসে উওর নাফিজের জানা নেই।
চলবে————-
(এটা উপন্যাস।একটু পর্ব বেশি হবে এটা স্বাভাবিক।আর যেহেতু শুরুটা অনেকটা ট্রাজেডি দিয়েই করেছিলাম আমি এখন কাহিনীর মোড় ঘুরিয়ে নিচ্ছি।আর পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা।সে আদৌ বেচে ফিরবে নাকি ফিরবে না সে টা আপনাদের পড়েই বুঝতে হবে।তবে আশা করছি আপনাদের ভালো কিছু দিতে পারব।)