#নয়নতারা
পর্ব ৩
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
জানালার গ্রিল ধরে খাটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি।ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।
—-ও মা মা তুমি কোথায় গেলে।ও মা মা আমাকে নিয়ে যাও না।বাবাই না খুব মারে।ও মা জানো একটু নুডুলস খেতে চেয়েছিলাম বলে সেদিন নতুন মা আমাকে অনেক মেরেছে।বাবাই ও খুব ব্যথা দিয়েছে।ও মা মা তুমি কবে আসবে আমার কাছে?
এক সপ্তাহ হয়ে গেছে মিষ্টিকে সারাদিন ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়।তানিয়া তো এক টু পর পর এসেই ওকে মারধোর ও করে যায়।সেদিনের ঐ ঘটনার পর তানিয়া মিষ্টিকে অনেক মেরেছিল।আর রাতে ফজলে শেখতো আছেই।
—-ও নাফিজ ভাইয়া তুমি কোথায় গেলে?তুমি ও আমাকে ভুলে গেছো।কেউ আমাকে মনে রাখে না।
তালা খোলার শব্দ পেয়েই মিষ্টি খাট থেকে নেমে দৌড়ে দরজার কাছে যায়।দরজা খুলে তানিয়া ভেতরে ঢুকলো।হাতে একটা থালা।
—-ও নতুন মা নতুন মা আমাকে বাইরে যেতে দেও না।ঘরে থাকতে ভালো লাগছে না।ও নতুন মা যেতে দেও না।
তানিয়ার আঁচল ধরে মিষ্টি বাইরে যাওয়ার জন্য কান্না জুড়ে দিল।
—-এই আঁচল ছাড় বলছি।কোথাও যাবি না তুই।এইখানেই পচে মর।শয়তান মেয়ে একটা।গান্ডেপিন্ডে গিলবে আবার বাপের কাছে গিয়ে আমার নামে নালিশ করবে!
তানিয়া হাতের থালাটা এক প্রকার ছুড়ে মারলো বিছানার ওপর।
—-নে বসে গেল।গিলে উদ্ধার কর আমাকে।যততোসব জ্বালাতন।
তানিয়া আবার দরজা খুলে চলে যেতে গেলেই মিষ্টি গিয়ে আবার তানিয়ার আঁচল টেনে ধরে।
—-ও নতুন মা শোনো না।
—-কি হয়েছে টা কি আবার?তোকে বললাম না ঘর থেকে বের হতে দেব না।
—-না না সেটা না।আমাকে একটু ভাত খেতে দেবে।ঐ রুটি না আমি খেতে পারি না।শক্ত শক্ত রুটি চিবুতে কষ্ট হয়।আমাকে একটু ভাত খেতে দেও না।
তানিয়া মিষ্টির থেকে শাড়ির আঁচল ছাড়িয়ে ওকে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিল।
—-ঐ রুটিই খেতে হবে তোকে।না খেতে ইচ্ছে করলে খাস না।তাতে যদি অন্তত না খেয়ে তুই মরিস আর আমি বাঁচি।
;;;;;
খাবার টেবিলে বসে প্লেটে ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছে নাফিজ।এক লোকমা ভাত এখনো মুখে তোলেনি সে।
—-কি রে খাচ্ছিস না কেন?তরকারি ভালো লাগেনি?
—-মা এক সপ্তাহ হয়ে গেল মিষ্টি পাখির কোনো খোঁজ নেই।ওর কি হয়েছে বলোতো?
—-আমি ও জানিনা রে।একদিন তোর ফুফুরা ছিল তাই তাড়াহুড়োতে অতো খেয়াল করিনি।সত্যি তো মিষ্টি তো এমন করে না।ঝড় বৃষ্টি যাই হয়ে যাক দিনে একবার হলেও তো এ বাড়ি এসে ও উঁকি দেয়।বাচ্চা মেয়েটার কি হয়েছে কে জানে?
প্লেটের উপর হাত ধুয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো নাফিজ।
—-আরে তুই খাবি না?
—-খেতে ইচ্ছে করছে না মা।তুমি কাল সকালে একবার ফজলে কাকুদের বাড়ি যেও তো।ভালো লাগছে না।মনে হচ্ছে এক যুগ ওকে দেখি না।
—-আমার ও ওকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।ওর ঐ সুন্দর মুখটা একবার দেখলে মনে হয় তাকিয়েই থাকি সারাদিন।জীবনে অনেক বাচ্চাই দেখেছি।কিন্তু মিষ্টির মতোন এরকম সুন্দর বাচ্চা দেখিনি।এক কথায় অসম্ভব সুন্দর ও।
—-তা যা বলেছো মা।আমাদের মিষ্টিকে ডিজনি প্রিন্সেসদের থেকেও সুন্দর লাগে।একদম জ্বলন্ত পরী। বেবি সিনড্রেইলা।
—-কিছু না হলেও ওর ঐ মুখটা দেখে কি তানিয়ার একটু মায়া হয় না।
;;;;;
অফিস থেকে সবে ফিরেছেন ফজলে শেখ।ঘেমে একাকার হয়ে গেছেন।ঘরে বিদ্যুত নেই।পাশে দাঁড়িয়ে তানিয়া হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে।
—-মিষ্টি কোথায়?ওকে যে দেখছি না।
মিষ্টির নাম শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো তানিয়া।
—-সব সময় এতো মিষ্টি মিষ্টি করেন কেন হ্যাঁ?আমি যে সারাদিন বাড়িতে আছি কই এসে তো একবার ও আমার খোঁজ করেন না।সব সময় খালি মিষ্টি মিষ্টি।
—-তানিয়া।একদম চুপ।এতো হিংসুটে কেন তুমি হ্যাঁ।তুমি আর ও দুজনে কি এক হলে।যাও মিষ্টিকে নিয়ে এসো।
—-যাচ্ছি।
তানিয়া হাত পাখাটা জোড়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে মিষ্টির ঘরের দিকে গেল।
পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বসার ঘরে এলেন রাহেলা বেগম।
—-বাপজান।আইছোনি আফিস থেইকা।
—-হ্যাঁ মা।
—-তুমারে একখানা কতা কইতাম।
—-কি কথা? বলো।
—-মিষ্টি দাদুরে লইয়া ওর নানা বাড়িতে দিয়া আইসো।হেরা ওরে যা পারে তাই কইরা মানুষ বানাই লইবে।
—-কেন?আমার মেয়েকে আমি ও বাড়ি তে কেন দিয়ে আসবো?
—-তা কি করতি কইবো হুনি।ঐ টুকুন মাইয়াডারে এক হপ্তাহ ধইরা ঘর বন্দী কইরা রাখছো।হামার ঘরে তাই আইসতে দেয় না তুমার বউ।বলি মাইয়াডাও তো মানুষ না কি।জেলখানায় ও মনে হয় আসামিগে এট্টু দয়া দেহানো হয়।তুমার বউয়ের মনে তো সেইডাও নাই।ও ছোটো মানুষ এদিক ওদিক ঘুরতে চাইবেই।তাই বলে হেরে ঘরে আইটকা থুতি হইবো।আর তুমি খুব তো হামার মাইয়া কইতাছো তুমি ও তো ঐ বউয়ের কতায় নাচো।
—-তানিয়া কি কিছু করেছে মা?
—-করলেই বা কি।তুমি এট্টু রাগ দেহাইবা পরে তুমার বউ যা কইবে হেইডা শুইনা আবার মন ঘুরাইবা।
ফজলে শেখ রাহেলা বেগমের কথা শুনে চুপ করে বসে আছেন।
—-কিছু কইতাছি হুনছো?
—-আমি দেখছি মা।
—-তাই দেহো।হামার কি মনে হয় জানো আল্লাহ যদি রুবিরে না লইয়া তুমারে নিত তাও মনে হয় হামার এতো কষ্ট লাগতো না।
—-মা!আমি তোমার ছেলে।এই কথা বলতে পারলে?
—-ঠিকই কইছি।বাপ হইছো বাপ।তাই না।আল্লাহ জানে মাইয়াডার কপালে কি আছে?
চলবে——-