নয়নতারা পর্ব ৩৬

0
712

#নয়নতারা

পর্ব ৩৬

Suvhan Årag (ছদ্মনাম)

মোখলেস স্যারের কথা শুনে গাসু দাঁত কেলিয়ে দাড়িয়ে আছে।

—-ভারি অসভ্য মেয়ে তো তুমি!এখন আবার হাসছো।

—-স্যার আসলে হইছে কি বলেন তো।

—-কি হয়েছে?

—-স্যার আমাগো বাড়ি মানে মেজর স্যারের বাড়ির সামনে যে বাগান আছে মুই কালকে সেইহানে পানি দিতে ছিলাম।

—-তো এর সাথে ঐ বাগানের কি সম্পর্ক?

—-স্যার ঐ খানে তো আসল কামডা সারছে।

—-কি হয়েছে?

—-স্যার পানি দিতে দিতে বাগানের পানি কাদায় চিপ চিপ হয়ে গেছিল।

—-তো?

—-তো মুই ওর পরে যেই ভুইলা পা খান ফেলছি সাথে সাথে এক্কেরে চিতপটাঙ।

—-তাতে কি হয়েছে?

—-স্যার ঐ যে চিতপটাঙ হইলাম তার পরে অজ্ঞান হয়ে গেছি।উঠে দেখি সকাল হইয়া গেছে।ইশ্ক্উল টাইম হয়ে গেছে।কিন্তু মাথার থেইকা সব পড়া একদম হুইসেল বাজাইয়া ট্রেনে করে বেরিয়ে গেছে।আর খাতার দিকে তাকালেই কেমন চোখ ঝাপসা দেখতেছি।তাই ঠিকমতো পড়তে পারছি না।

—-গাসু,আমার হাতে কি এটা দেখেছো?

—-ঐ তো স্যার বেত।

—-এই তো ঠিক দেখছো।শুধু খাতার দিকে তাকালেই চোখ ঝাপসা হয়।মা র কাছে মামা বাড়ির গল্প শোনাতে আসো।

—-কেন স্যার?আপনি কি মোর মা ছিলেন?কিন্তু কেমনে?আপনি তো শার্ট আর পেন্টালুন পড়ে আছেন।

—-গাসুউউউ।

;;;;;

আরিফপুর রোডে এসে একটা ছোটোখাটো রেস্টুরেন্টের সামনে এসে নাফিজ গাড়ি দাঁড় করালো।

—-তারা।

—-হুম।

—-চলুন।নামুন।

—-কেন?

—-আপনি কি গাড়ির ভেতর বসে থাকবেন?

—-না।না।চলুন নামছি।

নাফিজ প্রথমে নিজে নামলো।তারপর তারার পাশের দরজা খুলে ক্রাচ টা নামিয়ে দিয়ে তারাকে নামতে সাহায্য করলো।

—-চলুন।

—-কোথায়?

—-রেস্টুরেন্টে ঘুরে আসি।চলুন।আর কোনো প্রশ্ন করবেন না।

নাফিজ রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকে গেল।তারাও পিছু পিছু গেল।

রেস্টুরেন্টে ঢুকে তারা চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে।কেউ কেউ খাচ্ছে তো কেউ কেউ গল্প করছে।কেউ একা বসে আছে,আবার স্কুল ড্রেস পড়া ছোটো বাচ্চাকে নিয়ে মা বসে আছে,আবার দু তিনটা বুলবুল-বুলবুলি।

নাফিজ একদম শেষের দিকে একটা টেবিলে গিয়ে বসলো।তারা যেতেই তারাকে অপর পাশের চেয়ারটা এগিয়ে দিল।তারাও বসলো।

—-এভাবে কি দেখছেন তারা?

—-ক্যাপ্টেন,ঐ দেখুন ঐ ভুড়িয়ালা আংকেল টা কিভাবে পরোটা ডাল খাচ্ছে।

নাফিজ পেছনে ঘুরে দেখে আসলেই একটা লোক প্রচুর খাচ্ছে।প্লেটে এমনিতেই দুটো পরোটা দেখা যাচ্ছে,হাতে একটা, এর মধ্যে ওয়েটার আরো দুটো পরোটা দিল লোকটাকে।

—-ওদের কথা বাদ দিন।আপনি কি খাবেন সেটা বলুন।

—-আমি!আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে।আপনি এখন রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসে বসিয়ে আমাকে খেতে বলছেন।

—-যাক বাবা।আমি কি করলাম!আমি তো কতবার বললাম আপনি আমার সাথে যাবেন কি না।আপনিও তো দিব্যি গাড়িতে উঠে পড়লেন।এখন দোষ আমার!

নাফিজের কথায় তারা খানিকটা লজ্জা পেল।আসলেই তো সে নিজেই বলদের মতো ড্যাঙ ড্যাঙ করে চলে এসেছে নাফিজের সাথে।নিজেকে আপাতত একটা বলদ ই মনে হচ্ছে তারার।

—-কি হলো?

—-কিছু না।

—-এবার তো বলুন কি খাবেন?

—-আমি বাইরের খাবার খাই না।

—-কেন?

—-মায়ের নিষেধ আছে।আমি যদি বাইরের কোনো খাবার খেতেও চাই তো মা সেটার রেসিপি ইন্টারনেটে দেখবে।দেখে নিজে বানাবে।তবুও বাইরের কিছু খেতে দেবে না।

—-ওহ হো।আচ্ছা কফি অর্ডার করি?এখানকার কফি বেশ ভালো।আগে দুদিন খেয়েছি।

—-কিন্ত,,,।

—-কিছু হবে না।

—-আচ্ছা।

ওয়েটার কে ডেকে নাফিজ দু টো কফির অর্ডার দিল।

—-এবার বলুন কলেজে গেলেন না কেন?

—-ভালো লাগেনি তাই।

—-আমি তো জানতাম আপনি মিথ্যা বলেন না।

—-আপনি আমার সাথে ওরকম করে কথা বললেন কেন তখন?

—-আপনি এই জন্য যাননি!

—-জানিনা।

তারা মুখ গোমড়া করে বসে আছে।নাফিজ তারার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।

—-আপনি সকালে আসেননি কেন তারা?আপনি জানেন আমি কতক্ষণ অপেক্ষা করেছি আপনার জন্য।

—-সব তো সৈকত ভাইয়ার দোষ।

—-সৈকত!

—-আমার চাচাতো ভাই।

—-তো উনি আবার কি করলো?

তারা একে একে সৈকতের আসা থেকে সবকিছু নাফিজকে বললো।তারার কথা শুনে নাফিজের খুব খারাপ লাগছে।তারাকে সে কতোটা ভুল বুঝেছিল।শুধু কি তাই?সে তো একটু আগে তাকে এড়িয়ে কথা বলছিল।

—-এইজন্য।

—-আপনার ফোন বন্ধ কেন?কতোবার কল দিয়েছি আমি।

—-ফোন টো স্ট্রোক করে মারা গেছে ।

—-কিহ!ফোন আর স্ট্রোক!

—-হ্যাঁ।স্ক্রিন ফেটে চৌচির।গাসু তো বললো করা হয়েছে নাকি।

—-স্ক্রিন ঠিক করেননি কেন?

—-বাপি নতুন কিনে দেবে বলেছে।এটা ঠিক করাবে না।

—-ওহ।

—-কিন্তু ঐ দু দিন তো গেল।তারপর আপনি আসেননি কেন?

—-আমি তো ঢাকায় গিয়েছিলাম।কাল রাতে এখানে এসেছি।

—-ওহ।

এর মধ্যে ওয়েটার দু টো কফির কাপ এনে দুজনের সামনে রাখলো।নাফিজ একটা কাপ তারার দিকে এগিয়ে দিল।

—-তারা।

—-হুম।

—-নিন।

—-হুম।

—- কি হুম হুম করছেন?

—-দেখুন না ক্যাপ্টেন সবাই কিভাবে আমাদের দিকে দেখছে?

—-মানে?

নাফিজ পেছনে ঘুরে দেখে আসলেই সবাই একটু কেমন কেমন করে ওদের দেখছে।

—-ক্যাপ্টেন দেখেছেন।

—-হুম।কিন্তু এভাবে ওদের তাকানোর কারণ কি?

—-আপনি ইউনিফর্ম পড়ে আছেন।আর আমি ও আপনার সাথে আছি।দেখতে কেমন দেখাচ্ছে না!

—-কেমন দেখাবে আবার?

—-বাবা আর মেয়ে।

—-কিহ!তারা আপনার মাথা ঠিকাছে?

—-হ্যাঁ।আপনি তো বয়সে কতো বড় আমার থেকে।তাই এটাই তো দেখাবে না।

—-তারা আপনি শুধু বয়সটাই দেখলেন!আমাকে কি এতো টাই বুড়ো মনে হচ্ছে আপনার!

নাফিজ অসহায় দৃষ্টিতে তারার দিকে তাকিয়ে আছে।নাফিজের কান্ড দেখে তারা হেসে উঠলো।

—-আপনি হাসছেন?

-‌—না আপনি একদম বুড়ো না দেখতে।

—-যাক বাচলাম।

—-ওহ হো।আমি তো ভুলেই গেছি।

—-কি হয়েছে?

তারা ঝটপট করে নিজের ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স আর কাটা চামচ টা বের করে নাফিজের সামনে রাখলো।

—-কি এটা?

—-আপনি তো আমার রান্না খেতে চেয়েছিলেন।আর আজ আমি নিজেই টিফিনে পাস্তা বানিয়েছি।নিন।

—-তাহলে তো দেখতেই হবে।

নাফিজ বক্স খুলে খাওয়া শুরু করলো।

—-কেমন হয়েছে?বললেন না তো?

—-অসাধারণ।যাক ভালো ই হলো।আর কিছু না হোক আপনার রান্না তো খেতে পারলাম।

এর মধ্যে নাফিজের ফোন বেজে উঠলো।নাফিজ ফোন হাতে নিয়ে দেখে অফিস থেকে ফোন এসেছে।নাফিজ রিসিভ করলো।

—-হ্যালো স্যার।

—-,,,,,,,,,,,,।

—-স্যার আসলে আসার পথে হুট করে শরীরটা খারাপ লাগছিল।কাল জার্নি করে এসেছি তো।মাথা ঘোরাচ্ছিল একটু।তাই আমি গাড়ি ফার্মেসির সামনে দাঁড় করিয়েছি।প্রেসার টা চেক করব।

—-,,,,,,,,,,,,,।

—-না স্যার।আমি পারব।একটু দেরি হবে।এই আর কি।

—-,,,,,,,,,,,,।

—-আচ্ছা স্যার।

নাফিজ ফোন রেখে দিল।তারা এদিকে ভুত দেখার মতো নাফিজের দিকে চেয়ে আছে।

—- কি হয়েছে তারা?এভাবে কি দেখছেন?

—-আপনি গড়গড় করে এতো মিথ্যা বলে গেলেন!

—-তো কি এটা বলবো,আমি মেজর আব্রাহাম স্যারের মেয়েকে কলেজ ফাকি দিয়ে নিসে এসে রেস্টুরেন্টে বসে কফি খাচ্ছি।

নাফিজের কথা শুনে তারা একদম চুপসে গেল।নাফিজের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।তারা কে আরেকটু লজ্জাতে ফেলতে চায় সে।

—-তারা আপনি কি জানেন সবাই কি দেখছে?

—-কি?

—-এভাবে তো প্রেমিক প্রেমিকারা বসে থাকে।আরো তো আপনি টিফিন বক্সে করে আমাকে খাবার দিলেন।

—-মানে?

—-মানে আমাদের দেখে যে কেউ কাপল আই মিন হাজবেন্ড ওয়াইফ ভাবতে পারে।

—-কিহ!নাহ্!

তারা তো উঠেই যেতে যাবে।তার আগে নাফিজ বসিয়ে দিল।

—-চুপচাপ বসুন।আমাকে খেতে দিন ।আপনার একটা খাতা আর কলম দিন তো।

—-কেন?

—-দিন না।

তারা ব্যাগ থেকে খাতা কলম বের করে নাফিজের হাতে দিল।নাফিজ তারা খাতার মাঝখান টাতে কলম নিয়ে কিছু লিখছে।

“প্রেয়সী,

তোমার মনের এতো কার্পণ্যতা কেন?বলতে পারো?তোমার মনের আঙিনায় এলোপাথাড়ি চলনের জন্য হলেও যে আমার এক খন্ড জমি বড্ড দরকার।জায়গা কি দেবে তোমার ঐ মন জমিনে?”

নাফিজ খাতাটা বন্ধ করে তারার হাতে দিল।

—-কি লিখলেন?

—-বাসায় গিয়ে দেখবেন।

—-আচ্ছা।

চলবে———-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here