হৃদয়ে_রেখো পর্বসংখ্যা -০৫

0
325

#হৃদয়ে_রেখো
পর্বসংখ্যা -০৫

মিলিয়া দুপুরে খাবার খেয়ে মায়ের রুমে উকি দেয়।

-” কি রে মিলি এমন চোরের মতো করছিস কেনো? কিছু বলবি?

মিলিয়া মায়ের কথায় অপ্রস্তুত হাসে। ঢোক গিলে কথাগুলো নিজের মতো করে সাজিয়ে নেয়। তারপর গুটি গুটি পায়ে গিয়ে মায়ের কোলে শুয়ে পরে। দুহাতে মায়ের কোমর জড়িয়ে ধরে। আহ্লাদি সুরে বলে-

-” মা আমার কার যেতে হবে তো। মিডিয়ার লোকজন ফোন করছে। তাদের একটা সুটিং আছে। ওটা শেষ করেই আমি চলে আসবো।

মিলিয়া সব মিথ্যে বলেছে। তাই তার হাত পা মৃদু কাঁপছে। ছোট থেকেই মিথ্যে বললে তার কেমন জানি লাগে। আসলে তার আর ভালো লাগছেনা এসব তাই বলল। মিলিয়ার মা গম্ভীর হয়ে মেয়ের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। তারপর চোখ বন্ধ করে বিছানায় হেলান দিয়ে বলতে লাগলেন-

-” দেখ মা আমি বুড়ো হয়েছি। কখন কি ম’রে যাই তার ইয়াত্তা নেই। কটা দিন আমার সাথে থাক না। তুই তো বড় হয়ে গেছিস। আমার জন্য কি তোর কাছে সময় আছে আর। যা ভালো বুঝার কর।

মিলিয়া চুপ করে মায়ের কথা শুনলো। মায়ের ভীষণ অভিমান হয়েছে। তার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মন চাইছে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে। কিন্তু তাতে মা আরো বেশি কষ্ট পাবে। চুপচাপ মায়ের কোলে শুয়ে থাকলো সে। আর কথা বলল না।

পরেরদিন মিলিয়ার ট্রেন রিনি আর জুবায়ের এসেছে মিলিয়ার সাথে। কিন্তু আদ্রিদ আসেনি। তাকে কেউ জানায়নি মিলিয়া চলে যাচ্ছে। মিলিয়া ট্রেনে উঠে সবাইকে বায় বলে। ট্রেন আস্তে আস্তে স্টেশষ ত্যাগ করে। হারিয়ূ যায় প্রিয় মানুষদের মুখগুলো। মিলিয়া ট্রেনের সিটে গা এলিয়ে দেয় আবার। মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক তো আছেই।

মিলিয়ার পৌঁছাতে সকাল হয়ে যায়। সে আসলে আর অভিনয় করতে চাইছেনা। এখন তার সবকিছু থেকে ছুটি প্রয়োজন। যে কটা দিন বেঁচে থাকবে নিজের পরিবারের সাথে কাটাতে চায়। সে গিয়ে এবার সবকিছু থেকে অবসর গ্রহণ করে। আসার সময় আনাফের সামনে পড়ে যায় সে। আনাফ কথা বলতে চাইলেও, মিলিয়া কটাক্ষ করে বলে দেয়। তার সাথে কোন কথাই বলতে চায়না সে। আনাফও চলে যায়‌। মিলিয়া বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে জিনিসপত্র সব গুছিয়ে নেয়। এবার একেবারে মায়ের কাছে চলে যাবে। জিনিসপত্র গুছিয়ে আবার রাতের ট্রেনে করে চলে যায় মায়ের কাছে।

সকালবেলা.

অনেকক্ষন ধরেই কলিংবেলের আওয়াজ হচ্ছে। মিলিয়ার মা বিরক্তিকর মুখে গিয়ে দরজা খুলে। দরজা খুলতেই সে হাঁ হয়ে যায়। বলার শক্তি নেই তার। যে মেয়ে বলল ভালো লাগেনা এখানে তাই চলে যাচ্ছে। সে আবার কি করে এখানেই থাকতে পারে। সে মিলিয়ার জন্য বেশি বেশি চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে নাতো। চোখ কচলে আবার তাকালো। না এটা মিলিয়াই। মিলিয়ার মা অবিশ্বাস্য সুরে বললো-

-” এটা মিলিয়া তো নাকি অন্য কেউ।

মিলিয়া মায়ের কথায় হেসে দিল।

-” হ্যা মা আমিই। দাড় করিয়ে না রেখে ঘরে ঢুকতে দেও। আমি খুব ক্লান্ত।

-” তাহলে বললি যে সুটিং আছে।

মিলিয়ার মা মুখ গোমড়া করে কথাটা বলে। মিলিয়া হাতের জিনিসপত্র ফেলে মা কে জড়িয়ে ধরে।

-” মা গো তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারছিনা। এখন থেকে তোমার সাথেই থাকবো। বাকি সব গোল্লায় যাক।

মিলিয়ার মা মুচকি হাসলেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।

মিলিয়া আর আদ্রিদের তেমন একটা কথা আর হয়নি, ঐদিনের পর। একদিন রাতে মিলিয়া রিনি আর জুবায়ের এর সাথে আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরছিলো। সবসময় মুখে মাস্ক লাগিয়ে ঘুরতে অসহ্য লাগে। অভিনয় জগতে যাওয়াই তার ভুল হয়েছে। এখন মাস্ক ছাড়া ঘুরলেও মানুষ আসে সেলফি নিতে, অটোগ্রাফ নিতে। মিলিয়ার তখন সবাইকে তুলে আ”ছাড় মা”রতে মন চায়। মিলিয়া বেখেয়ালি হয়ে হাঁটছিল রাতের নিস্তব্ধ রাস্তা দিয়ে। মাঝে মাঝে সাঁই করে দু একটা গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। মিলিয়ার হাঁটার মাঝে কেউ তাকে হেঁচকা টান দেয়। সে ব্যালেন্স ঠিক করে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়। আদ্রিদ! ব্যাটা আমাকে টান দেয়ার সাহস কই পেলো‌। আদ্রিদের বাচ্চা তোকে টিকটিকির ভুনা খাইয়ে ছেড়ে দেব। নাইলে তোর ঐ সিল্কি চুলগুলো সব টে”নে টে”নে ছি”ড়বো নাইলে আমার নামও মিলিয়া নয়। কোন ধরনের অসভ্য রাস্তার মাঝে মেয়েদের হাত ধরে টা”নাটা”নি করোস। মিলিয়া রেগেমেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা গাড়ি হর্ন দিতে থাকে। মিলিয়া চমকে সরে দাঁড়ায়। একটা লোক গাড়ি থেকে মুখ বের করে বলে-

-” এই যে ম্যাম দেখে শুনে চলতে পারেন না হ্যাঁ? এখনি একটা দূর্ঘ”টনা ঘটে যেত। কিছু হলেই ড্রাইভারদের দোষ দেন। আপনারা যে ইচ্ছে মতো রাস্তা দিয়ে হাঁটেন তাতে কিছু হয়না?

মিলিয়া চুপ করে আছে। আড়চোখে আদ্রিদের দিকে তাকাচ্ছে। আদ্রিদ এবার বলে-

-” ভাই সরি আসলে ডিপ্রেসড তো তাই। আপনি চলে যান। মিলিয়া আমার সাথে এসো।

লোকটা চলে গেলো। মিলিয়া হালকা কেপে ওঠে। আদ্রিদ কখনোই পুরো নাম ধরে ডাকেনা। ক্ষেত্রবিশেষে অনেক রাগ করলে ডাকে। সে কি রেগে গেল। মিলিয়া কালিমা পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে গুটিগুটি পায়ে আদ্রিদের সাথে যায়। পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে তারা বসে।

-” সারাদিন তো কিছু খাওনি। বলো কি খাবে?

মিলিয়া চোখ তুলে আদ্রিদের দিকে তাকায়। আদ্রিদ কি করে জানালো সে খায়নি।

-” না খেয়েছি আমি।

-” থা”প্পর মে”ড়ে সব গুলো দাঁত ফেলে দিবো একটা কথাও বলবা না। চুপ করো‌ আর মিথ্যা তো আমি শুনবোই না।

মিলিয়া রাগ লাগছে। ব্যাটা নিজ থেকেই যোগাযোগ বন্ধ করেছিস আবার অধিকার দেখাচ্ছে। তোর ঐ মুখে আমি পাতিলের কালি লাগিয়ে দিব। আদ্রিদকে ভয়ঙ্কর কিছু গালি দিতে মন চাচ্ছে মিলিয়ার। কিন্তু এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। রিনির থেকেই গালি গুলো আমার শিখে নেয়া লাগবে। আদ্রিদ ওয়েটারকে ডেকে অর্ডার দেয়। তারপর মিলিয়ার দিকে তাকায়। মিলিয়া দুই গালে হাত দিয়ে কি যানি চিন্তা করছে।

-” মাস্ক খুলো।

আদ্রিদের কথায় মিলিয়া নড়েচড়ে বসে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে রেস্টুরেন্টে তেমন মানুষ নেই। সে মাস্কটা খুলে প্রানভরে নিঃশ্বাস নেয়।

-” এভাবে সারাদিন মাস্ক পড়ে ঘুরতে তোমার ভালো লাগে?

-” তা ছাড়া কি করবো। নাহলে পাবলিকের জ্বালায় বের হতে পারিনা। সবাই আসে অটোগ্রাফ, সেলফি হেন তেমন করতে। সবগুলোকে সাপের ডিম খাইয়ে মা”রা উচিত।

মিলিয়া ঠোঁট উল্টে কথাগুলো বলে। আদ্রিদ মিলিয়ার কথায় হেসে দেয়-

-‘ মিলি তুমি তো সেলিব্রিটি তাই এমন করে। আর এভাবে হাটছিলে কেন রাস্তায়? যদি তোমার কিছু হয়ে যেত। তোমার ভবিষ্যত বাচ্চার বাবার কি হতো?

মিলিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কথাটা বূঝতে পেয়ে চোখ বড় বড় করে-

-‘ বাচ্চার বাবা মাই ফুট। তার কি হবে না হবে এতে আমার কি?

-” সে কি তুমি জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে কোন ভূমিকা রাখতে চাওনা?

মিলিয়া চোখ কটমট করে তাকায় আদ্রিদের দিকে। আদ্রিদ তা দেখে মিটমিট করে হাসছে।

-” আমি বিয়েই করবো না। আসছে বাচ্চা নিয়া। হুহ

-” কেন করবেনা বিয়ে?

মিলিয়া চুপ করে থাকে এ প্রশ্নের উত্তর সে দিতে পারবেনা। কি দরকার কারো জীবন নষ্ট করার। থাক না সব নিজের মতো। এরই মধ্যে খাবার চলে আসে। মিলিয়া দুই চোখ বড় বড় করে টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে।

-” এতো খাবার কে খাবে? তুমি আমি মিলেও তো শেষ হবেনা।

আদ্রিদ বাঁকা হেসে বলে-

-” আমি শুধু কোলড্রিংকস খাবো। বাকি সব তুমি খাবে।

-” না প্লিজ প্লিজ আমি এতো খেতে পারবোনা।

মিলিয়ার কাঁদো কাদো কথাগুলো আদ্রিদের বেশ লাগছে।

-” আগে শুরু করো।

মিলিয়া আদ্রিদের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে খাওয়া শুরু করে। আদ্রিদ তাকিয়ে দেখছে শুধু। আদ্রিদ কোল ড্রিংকস খাচ্ছে। মিলিয়া খাওয়া রেখে ফট করে বলে-

-” চলো বিয়ে করে নেই‌। তোমার মতো সাদা বিলাই কে এমনিতেও কোন মেয়ে বিয়ে করবেনা। শেষ পর্যন্ত আমার গলায়ই ঝুলতে হবে।

মিলিয়ার কথায় আদ্রিদ বিষম খায়। খুক খুক করে কাঁশতে থাকে। মিলিয়া দুষ্টু হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। মিলিয়া আবার খাওয়ায় মনযোগ দেয়। প্রায় অর্ধেক খাবার শেষ করে সে হাঁপিয়ে যায়।

-” আদ্র আর খেতে পারছিনা। তুমি খেয়ে নাও।

-” সব শেষ করো।

-” ধুর ধুর এই চিকেন ফ্রাই হেন তেন সব প্যাকেট করে দেও। বাসায় নিয়া খাব‌। এখন আর সম্ভব না‌।

আদ্রিদ চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। টেডি স্মাইল দিয়ে ওয়েটারকে ডেকে খাবারগুলো প্যাক করে দিতে বলে। ওয়েটার মিলিয়া কে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিলো।

-” সরি আদ্র প্রাংক করেছি তখন। সিরিয়াসলি নিও না।

-” কিসের?

-” ঐ যে বললাম বিয়ে নিয়ে।

আদ্রিদ মনে মনে বলে। হ্যা সত্যিই তোমার গলায় ঝুল’তে পারলে ভালোই হয়। কিন্তু মাথা চুলকে বলে-

-” ওহ ব্যাপার না‌।

#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)

#চলবে

(বিঃদ্রঃ খুবই অসুস্থ ছিলাম। আর আইডিটায় সমস্যা হয়েছিলো। এবারে প্রচুর দেরী হয়ে গেলো। আইডিতে দুইদিন ঢুকতে পারিনি। তাই লেখা থাকলেও দিতে পারিনি। খুবই দুঃখিত 😔)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here