#হৃদয়ে_রেখো
#মেঘলা_আহমেদ
পর্বসংখ্যা -১০
কমিউনিটি সেন্টারের গেটের সামনে বড় বড় করে লিখা আদ্রিদ আর মিলিয়া। নামদুটো জ্বলজ্বল করছে। মিলিয়া আদ্রিদের ভালোবাসার কাছে নিজেকে হার মানায় শেষমেষ। আদ্রিদের মুখে ছিলো সেদিন তৃপ্তির হাঁসি। আসলেই কতো বছরের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো তবে। রিনি, জুবায়ের সহ সকল বন্ধুদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে। সাথে অনেক নামিদামি মানুষ ও। অভিনেত্রী মিলিয়ার বিয়ে বলে কথা! মিলিয়া কে পার্লারের মেয়েরা সাজানো শেষ করলো এইমাত্র। সবাই তার রূপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মিলিয়া নিজেও নিজেকে আয়নায় দেখে বিমোহিত হচ্ছে বার বার। আসলেই কি এটা সে নিজে? নিজেই নিজের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে বারবার। কিছুক্ষণ পরেই মিলিয়াকে নিয়ে আদ্রিদের পাশে বসানো হয়। আদ্রিদকে পাঞ্জাবিতে অনেক সুদর্শন লাগছে। মিলিয়া মুগ্ধ চোখে তাকে দেখছে। আজ থেকে এই মানুষটি তার। নিয়তি তার ভালোবাসাকে তার করে দিয়েছে। কিন্তু কতদিনের জন্য। হয়তো কয়েকটা দিন বা কয়েকটা মাসের জন্যই আদ্রিদ তার। আদ্রিদকে সে একা ফেলে যাবে ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। আচ্ছা বিয়েটা না করলে হয়না? মিলিয়ার উদ্ভট ভাবনার মাঝেই তাকে কবুল বলতে বলা হলো। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিন কবুল বলে দিলো এরপর আদ্রিদ ও বলে দিলো। বিয়েটা তাহলে হয়েই গেলো। আদ্রিদ মিলিয়া কে পাঁজাকোলা করে উঠিয়ে নেয় আচমকা। মিলিয়া চমকে যায়-
-” একি কি করছো তুমি? নামাও সবাই কি ভাবছে? এই বিয়ে থেকে জামাই বউ এভাবে দৌড়াচ্ছে কি ভাবছে নামাও।
আদ্রিদ নামালো না। সে একদম গাড়ির দরজা খুলে মিলিয়া কে বসিয়ে দিলো। গাড়ি লক করে নিজেও তরিৎ গতিতে উঠে বসলো। মিলিয়া রাগে ফুঁসছে তার কথার জবাব কেনো দিচ্ছেনা? আর এসবের মানে কি?
-” আরে মিলি রাগ করো না জান প্লিজ আমরা একটু ঘুরতে যাচ্ছি।
আদ্রিদের দাঁত কেলানো দেখে মিলিয়ার রাগে গা জ্বলছে। বিয়ে বাড়ি থেকে একপ্রকার পালিয়ে আসার মতো করে কিনা ঘুরতে যাচ্ছে।
-” তুমি এত ঢং করতে পারো আমার জানা ছিলো না।
-” কেন তোমার তো পালিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো। তাহলে আমি এভাবে সেটা পুরন করছি। দোষ কি?
মিলিয়া অবাক চোখে আদ্রিদের দিকে তাকায়। কবেকার কথা তাও আদ্রিদের কিভাবে মনে থাকতে পারে। তার ওপর সে এলজাইমারের রোগী-
-” তোমার এখনও সেই কথা মনে আছে কি করে?
-” আসার সময় ডায়েরিতে দেখেছি। আগে স্কুলে বসে যা যা বলতে তোমার পছন্দ ইচ্ছে অনিচ্ছা সব আমি লিখে রাখতাম।
আদ্রিদ ড্রাইভ করছে। মিলিয়া শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আদ্রিদ আর চোখে কিছুক্ষণ পর পর তাকাচ্ছে। হঠাৎ করেই আদ্রিদ ব্রেইক কষলো। মিলিয়া চমকে ওঠে আবারো-
-” কি হলো গাড়ি থামালে কেন মাঝ রাস্তায়?
-” তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার লজ্জা লাগছে?
আদ্রিদ দু হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি করে। মিলিয়া তা দেখে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।
-” এই মিলি হাসছো কেন। আমাকে কি রাস্তাতেই ঘায়ে”ল করে ফেলবা? এমনিতেই তোমার এই সাজসজ্জা দেখে আমি পুরাই ফিদা আমার আমার দিকে তাকিয়ে আছো তার উপরে হাসছো। তোমার কি এই নাদান ভোলাভালা নিষ্পাপ ছেলেটাকে হার্ট ফেল করিয়ে মেরে ফেলার ধান্দা আছে নাকি?
-” আরে নাহ ড্রাইভ করো আমি আর তাকাচ্ছি না।
মিলিয়া সোজা হয়ে বসে। জানালা থেকে বাহিরে তাকিয়ে আছে। আদ্রিদ জিপিএস দেখে দেখে ড্রাইভ করছে। মিলিয়া বাহিরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেছে। আদ্রিদ অবশেষে রাত আটটার দিকে গাড়ি থামায় তাদের বাসার থেকে একটু দূরে সেই লেকের কাছে।
-” নামো মিলিয়া।
-” এখনে এলে কেনো?
-” আগে নামো না। সারপ্রাইজ আছে!
-” প্লিজ বলে দাও তুমি তো জানোই আমার সারপ্রাইজ এ এলার্জি আছে। না মানে ইয়ে মানে আসলে আমার তর সইছে না বলে দাও প্লিজ।
-” মিলি এতো অধৈর্য হয়োনা গো। আরেকটু।
আদ্রিদ আগে নামে। তারপর মিলিয়া কে নামায় হাত ধরে। মিলিয়ার চোখে আলতো করে হাত রাখে –
-” হুশশশ কথা বলো না কুইন। চুপ থাকো।
মিলিয়া চুপ করে আছে। মাথায় অনেক প্রশ্ন কিলবিল করলেও আদ্রিদ বলেছে চুপ থাকতে তাই সে চুপ। আদ্রিদ একটু পরেই চোখ ছেড়ে দেয়। মিলিয়া আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়। লেকের উপরের টেবিলে রঙিন মোমবাতি জ্বলছে অনেকগুলো। মিলিয়া ঐদিকে দুপা এগিয়ে যেতেই তার মাথায় গোলাপের পাপড়ির বর্ষন শুরু হয়। মিলিয়া দুই হাত দিয়ে ফুলগুলো ধরতে থাকে আহ কি সুন্দর সেই দৃশ্য। আদ্রিদ দাড়িয়ে দেখতে থাকে তার রানী কে। তার ভালোবাসা। যাকে সে সারাজীবন হৃদয়ে রেখেছে। মিলিয়ার খিলখিল হাসির শব্দে মুখরিত হচ্ছে চারপাশ। আদ্রিদ এগিয়ে যায়। মিলিয়াকে নিয়ে টেবিলে বসায়। তারপর হাঁটু গেড়ে বসে একটা রিং ধরে-
-‘ প্রিন্সেস উইল ইউ লাভ মি? আই লাভ ইউ সো মাচ।
মিলিয়া অবাক হয়ে যায়। তাদের তো বিয়ে হয়েছেই। তারপরেও আদ্রিদ পাগলামি করছে, তার খুব ভালো লাগে আদ্রিদের পাগলামি গুলো। আস্তে নিজের হাতটা এগিয়ে দেয়। আদ্রিদ যত্নের সাথে আংটিটা পড়িয়ে দেয়। তারপর আবার কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। গাড়িতে আর কথা হয়নি দুজনেই মৌনতা পালন করেছে। আদ্রিদ নিজের বাসার সামনে গাড়ি থামায়। পুরো বাসা লাইটিং করা। অন্যরকম মোহনীয় লাগছে সবকিছুই। আদ্রিদ মিলিয়াকে আবারো কোলে করে নিয়ে যায়। তাদের রুমের সামনে নামিয়ে দেয়। মিলিয়া আস্তে আস্তে রুমে ঢোকে। রুমটা পুরো ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো। বিছানায় ফুল দিয়ে সাজানো। আদ্রিদ মিলিয়া কে পাশ থেকে বলে-
-” ম্যাডাম সব দেখা হয়ে গেলে এবার ফ্রেশ হয়ে ব্লু রঙের শাড়িটা পড়ে নাও। দাঁড়াও গহনাগুলো আমি খুলে দেই।
আদ্রিদ গহনাগুলো খুলে দেয় সব। মিলিয়া আদ্রিদের দিকে তাকি মোহনীয় একটা হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। প্রায় ৩০ মিনিট পর সাওয়ার শেষ করে বেড়িয়ে আসে। আদ্রিদ তরিৎ গতিতে নিজেও ফ্রেশ হতে চলে যায়। আদ্রিদ ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে মিলিয়াকে ঘরে দেখতে পায়না। তোয়ালে টা বেলকনিতে মেলে দিতে যায় সে। গিয়ে এক অপূর্ব দৃশ্য তাকে থমকে দেয়। মিলিয়া ভেজা চুলে নীল শাড়িতে দাড়িয়ে আছে। চাঁদের আলো এসে পড়েছে মুখে। ঠোঁটে তার ভূবন ভোলানো হাসি। আদ্রিদ তোয়ালেটা রেখে মিলিয়ার কাঁধ ঘেসে দাড়ায়। মিলিয়া বিনা বাক্যব্যয়ে আদ্রিদের কাধে নিজের মাথাটা এলিয়ে দেয়। আদ্রিদ দু হাতে মিলিয়াকে জড়িয়ে নেয়।
-” আদ্র!
মিলিয়ার ডাকে আদ্রিদের ঘোর ভাঙে-
-” হ্যা বলো মিলি।
-” আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তাই না!
-” আরে না বোকা। তোমার দেয়া কষ্টগুলো আমার মনেই থাকেনা। মনে থাকে তোমার সাথে কাটানো সুন্দর স্মৃতিগুলো। মিলি তোমার মুখে হাসি দেখলেই আমার আর কষ্ট থাকেনা।
মিলিয়া আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে-
-” খুব ভালোবাসো আমায় তাইনা!
আদ্রিদ মিলিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-
-” কোন সন্দেহ!
-” উঁহু। আমায় হারানোর ব্যাথা সইতে পারবে তো। আমি মরে গেলে কিভাবে থাকবে। বিয়েটা না করাই বোধহয় ভালো ছিল।
আদ্রিদ মিলিয়ার কথায় হাতের বাঁধন আরো দৃঢ় করে-
-” কিছু হবেনা তোমার। তোমাকে আমি আমার সাথে বেঁধে রাখবো। তুমি শুধু এবং শুধুই আমার।
মিলিয়া আদ্রিদের মুখের দিকে তাকায় –
-” আমার না একটা ছোট আদ্র চাই!
-” সরি জান! এতে তোমার জীবনের ঝুঁকি আছে। আমি তোমাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাইনা।
-” জীবন যার আছে মৃত্যু তার অবধারিত। তাই ভেবে কি তুমি বাবা হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে?
-” হলে হবো! আমার তোমাকে পেলে আর কিছু লাগবেনা।
-” না নাহ ছোট্ট আদ্র চাই চাই চাইইইইইইইইইইইইই।
মিলিয়া বাচ্চাদের মতো বায়না ধরে। কিন্তু আদ্রিদ কিছু বলেনা আর তর্ক করে লাভ নেই। কিন্তু বেবি নিবে না সে মিলিয়ার সাথে দিনগুলো সে সুন্দর করে কাটাতে চায়-
-” উফফ তুমি তো এখনো জিদ্দি আছো আগের মতোই।
-” তুমিও কম জেদি নও আদ্র। এই যে জেদ দেখিয়ে বিয়ে করে নিলে। তার বেলা।
-” হয়েছে বাবা আজ আমার বাসর রাত তুমি দেখি ঝগড়া করেই কাটানোর প্ল্যান করছো।
-” তো কি হয়েছে?
আদ্রিদ দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে-
-” কিছু হয়নি বাট আই টেষ্ট সামথিং সুইট।
মিলিয়া চোখ গোল গোল করে আদ্রিদের দিকে তাকায়-
-” কিহহহহহ
-” আই ওয়ান্ট টু কিস ইউ!
মিলিয়া লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়-
-” অশ্লীল। ঠোঁটকাটা।
আদ্রিদ মিলিয়া কে দু হাতে জড়িয়ে নেয়।
#চলবে