হৃদয়ের_ওপারে_তুমি #গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু) #লেখিকা_রিয়া_খান #পর্ব_১৩

0
489

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_১৩

-তাহলে অবশেষে আমার সাথেই যাচ্ছো।
-হুম যাচ্ছি,তবে আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন সেখানে না। আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে?
-কিভাবে?
-ডিরেকশন বলা অফ করলে সামনে এগুতে পারবেন?
-তো কি হয়েছে, সব রোডেই একবার করে যাবো।একটা সময় আসলটাই ও চলে যাবো।
-সন্ধ্যা হয়ে গেলে কোথা থেকে এসেছি সেটাও চিনবেন না।
-ল্যাম্পপোস্ট আছে কিসের জন্য?
-আপনি এতো তাতলামো করেন কেনো?
-ওটা আমার স্বভাব।বংশগত রোগ।

ফুল কুল মুডে বললো,
-ওহে রাজপুত্র ওরফে মিস্টার খান,
বাইক টা বাঁ দিকে ঘুরান।
এতো প্যারা নেয়ার দরকার নাই।

অভ্র বাইক বাঁ দিকে ঘুরাতেই অই রোডটাতে চলে এলো,কিছু সময় বাইক চালিয়ে মাঝ রাস্তা বরাবর বাইক থামালো।ফুল এখানেই থামাতে বললো ।
দুজনে নেমে রাস্তায় দাঁড়ালো।

-হুম তোমার কথা অনুযায়ী রাস্তাটা আসলেই খুব সুন্দর।

অভ্র পকেটে হাত দিয়ে ঘুরে ঘুরে চারপাশটা দেখছে,একটু পর ডান দিকে কিছুটা দূরে একটা প্রাসাদের মতো দেখতে পেয়ে ফুলকে জিজ্ঞেস করলো,
-আচ্ছা এখানেও কি কোনো জমিদার বাড়ি আছে?
-না তো।
-তাহলে অই প্রাসাদ টা কিসের?
ফুল উপুর হয়ে পায়ে থেকে জুতো খুলতে খুলতে উত্তর দিলো,
-ওটা প্রাসাদ না পার্ক। আর কিছুক্ষণ সোজা গেলেই একটা বড় পার্ক আছে।পার্কেরই অংশ ওটা।
-ওহ তাই নাকি, চলো পার্কের ভেতরে যাই ঘুরে আসি?

ফুল হকচকিয়ে উত্তর দিলো,
-না না না,কক্ষনো না।
-কেনো?
-আমার বয়স হয় নি।
অভ্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো,
-বুঝলাম না তোমার কথা,
-সব কিছু বুঝতে হয় না।
– পায়ের জুতো খুলছো কেনো তুমি?
-বুঝতে হবে না আপনার।জুতো খুলে এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ভালো লাগে। কংক্রিট গুলো কত্ত ঠান্ডা আর পায়ে ময়লা লাগার তো কোনো প্রশ্নই আসে না, কত পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন না? চাইলে একটা বালিশ রেখেও এখানে ঘুমানো যাবে।
-ঠিক আছে তাহলে আমিও খুলি।

ফুল অভ্রর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।অভ্র সাথে সাথে পায়ের জুতো খুলে বাইকের কাছে জুতো রেখে দুজনে রাস্তার মাঝখান দিয়ে খালি পায়ে হাঁটছে।অভ্র খেয়াল করলো,কিছুক্ষণ পর পর কিছু কিছু কাপল পার্কের দিকে যাচ্ছে, আবার পার্কের ওদিক থেকে ফিরছে। এতোক্ষণে অভ্রর মাথায় ব্যাপারটা খেললো।

রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর কথা বলছে, অভ্র একটু পর পর ফুলের দিকে নজর দিচ্ছে।তবে বাজে নজর নয়, হুট করে ধপাস ধপাস খাওয়া ফুলের যে একটা ডিএনএ গত সমস্যা এটা অভ্রর কাছে স্পষ্ট।গত কয়দিনে যতবার ফুল পড়ে গিয়েছে, ওর জায়গায় কোনো বয়ষ্ক মানুষ হলে হাড় গুঁড়ো হয়ে ভেঙে থাকতো। যে পরিমাণে ধপাস ধপাস পড়ে যায় সে অনুযায়ী ফুল সুস্থই আছে। মনে হয় অভ্যাস হয়ে গেছে বলে ব্যাথা পায় না।
ওর দিকে তাকাচ্ছে যেনো পড়ে যাওয়ার আগেই ধরতে পারে ফুলকে।

রাস্তা টা এতোটা নিরিবিলি যে, গড়ে প্রতি পাঁচ মিনিটে একটা করে কাপল যাচ্ছে পার্কের দিকে,বিকেল বলে হয়তো এদের আনাগোনা একটু কম কম ই দেখা যাচ্ছে।আর প্রতি দশ মিনিটে একটা করে সেনাবাহিনীদের গাড়ি যাচ্ছে,কোনো কোনো কর্মী আবার সাইকেল নিয়ে আসা যাওয়া করছে। সাইকেল যাত্রী গুলোই বেশি।পুলিশ বা সেনাবাহিনীদের ক্যাম্পাসের ভেতর সাধারণত সাইকেল নিয়েই বেশি চলাচল করতে দেখা যায়।

ওরা দুজনে আপন মনে খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে।পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজটা খুব বেশি চাঞ্চল্যকর বেগে ছুটাছুটি করছে।পর্যাপ্ত গাছ পালা থাকার কারণে পাখিদের আনাগোনাও পর্যাপ্ত পরিমাণে ।

কিছু দূর হেঁটে আবার উল্টো ঘুরে এদিকে এসে বাইকের কাছে দাঁড়ালো।
-সত্যি করে বলুন তো কেমন লাগছে জায়গা টা?
অভ্র খানিকটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
-বেশ ভালো, তবে পার্কের ভেতরটাতে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো, যেতে পারলে ভালো লাগতো।
-আরে ওদিকে যাওয়া যাবে না বললাম তো!
-কেনো?
-আমার বয়স কম আপনার বয়স বেশি,ওখানে যাওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট বয়স আছে যেটা আদের দুজনের মধ্যে কারোর ই নেই।
-উনারা কি জেনে রেখেছে আমাদের বয়স কত?
-না
-তাহলে কি সমস্যা?
-না আমি যাবো না,আপনি গেলে একা একা ঘুরে আসুন।
-না থাক তাহলে যেতে হবে না, কিছু ইচ্ছা অপূর্ণ থাকাই মঙ্গল।
-গুড বয়, সহজ কথা সহজ ভাবে বুঝেছেন।

অভ্র বাইকের মধ্যে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ফুল অভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। এমন সময় এক লোক সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলো ওদের সামনে দিয়ে,লোকটা অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ভাই ভিতরে যান, ভেতরে জায়গা ভালো আছে ”

সাইকেল চালাতে চালাতে লোকটা কথাটা বলে, ওদের ক্রস করে চলে গেলো।

লোকটার কথা শুনে অভ্র আর ফুল দম ধরে থেকে দুজনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে ফিক করে হেসে দিলো।
অভ্র হাসতে হাসতে বললো,
-লোকটা এটা কি বললো!
-বেশ করেছে আপনি যেমন সব সময় আমাকে বলেন” আমার সাথে যাবে আমার সাথে যাবে”কাকতালীয়ভাবে সেরকমটা হলো আপনার সাথেও, এটাকে বলে রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার!
-হা হা হা। মজা লাগছে,লোকটা মেবি আমাদের অন্য কিছু ভাবছিলো তাই এই কথা বলছে!

ফুলও ব্যাপারটা কল্পনা করে হেসেই যাচ্ছে।

প্রায় সন্ধ্যা ৭ টা বাজে, সবাই একটা ইঞ্জিন চালিতো বড় নৌকার মধ্যে, মনে হচ্ছে একটা পিকনিকের মতো, একটা চুলা এনে নৌকাতেই রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা হলে বেশ জমে উঠতো ব্যাপারটা। আকাশে ভরা চাঁদ জ্বলজ্বল করছে, পূর্ণিমা চলে গেছে, এখন এই ভরা চাঁদ টা প্রতি রাতে একটু একটু করে বিলিন হয়ে যাবে।

রাত ঘিরে আসার সাথে সাথে যমুনা সেতুর ল্যাম্পপোস্ট গুলো পর্যায়ক্রমে জ্বলে উঠে যা দেখার মতো দৃশ্য। যতদূর চোখ যায় শুধু গোল গোল আলো এক সারিতে সাজানো, ব্রিজের এপাশ ওপাশ।যমুনা সেতুর প্রকৃত সুন্দর্য্যটা রাতের বেলাতেই ফুটে উঠে। মনে হয় আকাশ থেকে তারা গুলো ব্রিজের উপর দুই পাশে পর্যায়ক্রমে ঝুলে পড়েছে, যা ল্যাম্পপোস্ট নামে পরিচিত।

অনেক্ষণ নৌকা ভ্রমণের পর ৮ টার দিকে সবাই যমুনা রেসোর্টে গেলো। সুমাইয়া আর নিজাম ওদের আগে সন্ধ্যার দিকে এখানে এসেছে, ক্লান্তি লাগছিলো বলে সুমাইয়া রেস্ট নিচ্ছিলো, আর নিজাম ওর সাথেই ছিলো।এখন সবাই এসেছে ডিনার করে বাড়ির দিকে ফিরবে।

যথারীতি ডিনার করে বাড়ি ফেরার উদ্দ্যেশে দল বেঁধে সবাই বেরিয়ে পড়লো।

প্রায় রাত সাড়ে দশটার মতো বাজে এমন সময় সবাই বাড়ি পৌঁছালো।

আজকের মতো এখন শুধু একটা কাজ বাকি,সবার শুধু অপেক্ষা রাতটা কখন ১২ টা পেরুবে,আর শহরটা নির্জনতা লাভ করে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাবে। আজকে সবাই আকাশের রুমে, তবে আজ ফুলের সাথে শুধু মিনা আছে বাকি তিনজন ঘুমিয়ে গেছে। আর আকাশের ফ্রেন্ড সার্কেল পুরোটা,অনুতো আছেই।কিছু একটা কুকর্মের প্রস্তুতি চলছে এখানে। সবাই খুব নার্ভাস মুডে আছে এরা গভীর রাতেই কোনো এক অপারেশনের উদ্দ্যেশে বেরুবে বলে মনে হচ্ছে।

-ভাইয়া সাড়ে বারোটার বেশি বাজে প্রায় একটার কাছাকাছি এখন মেবি বের হওয়া যায়।
-নাহ আর এক ঘন্টা ওয়েট করতে হবে।এখনকার যুগে বারোটা একটা ব্যাপার নাহ। তাই ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়।
-অভ্র ভাইয়া ঠিক বলেছে অনু আর কিছুক্ষণ ওয়েট করা যাক।রাস্তায় গিয়ে মশার কামড় খেয়ে অপেক্ষা করার থেকে,বাড়িতে বসে রিল্যাক্সে চা খেয়ে অপেক্ষা করাটাই বেটার।
-আমার কেমন জানি ঘুম ঘুম পাচ্ছে, ধেত আজকেই এমন হচ্ছে কেনো!
খানিকটা ঘুমের উপর বিরক্তি নিয়ে অনু কথাটা বললো,
কাব্য অনুকে বললো,
-আয় আমি তোকে কয়টা চিমটি কেটে দেই ঘুম চলে যাবে।
-তোমার মাথায় যত আজাইরা প্যাঁচাল ঘুরে।
-টোটকাটা যে মন্দ না সেটা কিন্তু ভালো করেই জানিস।
অনু মুখ ভেংচি দিলো, কাব্য অভ্রর দিকে ফিরে বললো,
-অভ্র তোর মনে আছে? ছোটো বেলাই একবার তোদের বাড়িতে ফাইনাল এক্সামের আগে দিয়ে তুই আমি অয়ন অয়নী গ্রুপ স্টাডি করছিলাম আর রাতে প্রচুর ঘুম পাচ্ছিলো,তখন জিয়াদ ভাইয়া এসে সবাইকে একটা করে চিমটি কেটে ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছিলো।
অভ্র হেসে দিয়ে উত্তর দিলো,
-হ্যাঁ মনে থাকবে না আবার,শুধু একটা কারণেই মনে আছে অয়নের জন্য।সবার ঘুম ভাঙলেও ওর ঘুম কাটছিলো না চোখে থেকে। ভাইয়া তখন ওকে কোলে তুলে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে বাথটাবে ছেড়ে দিয়েছিলো।

-তোরা তো ফ্রিতে মজা নিয়েছিলিস আমার অবস্থা দেখে,আমার যে কেমন লেগেছিল আমিই জানি।শীতের দিন বলে কথা,দুচোখ জুড়ে ঘুম আর ঘুম। ঘুম ভাঙতেই দেখি আমি ঠান্ডা পানিতে ভাসছি।
এখনো মনে হলে আমার গায়ে শীত লাগে প্রচুর।

কথায় কথায় একেক জনের ছোটো বেলার গল্প শুরু করলো,একেক জনের জব্দ হওয়ার কাহিনী শুনে সবাই একটু একটু করে নিজের জীবনে ছোটো বেলার মজার ঘটনা গুলো বলছে।বেশ মজাই লাগছে শুনতে।তবে ফুলের ছোটো বেলায় আলাদা কোনো কাহিনী মনে নেই,ওর ধারণা ও ছোটো বেলায় যেমন ছিলো এখনো তেমনই আছে।আর ও যে দুষ্টুমি ছাড়া কিছু বুঝে না।তাই সবার টা মন দিয়ে শুনছে।
মীরা ফুলের দিকে আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো,
-ফুল সবাই তাদের ছোটো বেলার ভয়াবহ ঘটনা শেয়ার করছে তুমিও কিছু বলো না, শুনি।আই থিংক তোমার টা সব থেকে বেশি ইন্টারেস্টিং হবে ।
-আমার আসলে তেমন কোনো ঘটনা নেই আমি কারো কাছে জব্দ হই নি কোনো দিন, তবে জব্দ করেছি অনেক বার।
-আচ্ছা সেখান থেকেই একটা বলো,শুনবো আমরা।
-আমার তো মনেই নেই তেমন কিছু তবে একটা মনে আছে ক্লাস সেভেনের ঘটনা।
ফুল এই কথাটা বলার সাথেই সাথেই আকাশের চেহারার গঠন বদলে গেলো ও জানে ফুল এখন কোন ঘটনার কথা বলবে, প্রেজটিজ হারানোর ভয়ে আগেই ফুলের কাছে কাকুতিমিনতি করতে লাগলো,
-পুতুল বোন আমার প্লিজ বলিস না ওটা।একদম শেষ হয়ে যাবো,
ফুল আকাশের দিকে তাকিয়ে ডেভিল স্মাইল দিলো। আকাশ বারণ করায় বাকিদের কৌতুহল বেড়ে গেলো কি এমন ঘটনা ফুল বলার আগেই ওকে বারণ করা হচ্ছে।
-ফুল তুমি আকাশের কথায় কান দিও না। বিনা দ্বিধায় তুমি বলতে পারো।
-না পুতুল বলিস না প্লিজ,তোকে অনেক গুলো চকলেট কিনে দেবো।
সমুদ্র ফুলকে বললো,
-ফুল তোমাকে আমি চকলেটের কোম্পানি কিনে দেবো, আকাশের কথায় কান দিও না। বলো তুমি।
ফুল আকাশের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বললো,
-বলি নানাভাই?
আকাশ কিছু বলতে নেবে তাঁর আগেই বৃষ্টি আকাশের মুখ চেপে ধরে বললো,
-ফুল তুমি বলো তো, ওর কথায় কান দিও না।

আকাশ চোখের ইশারায় না করেই যাচ্ছে।
ফুল বাঁধ না মেনে বলা শুরু করলো,
-আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখনকার ঘটনা,ছোটো নানা তখন মেবি SSC দিয়েছে। রুমে বসে আমাকে পড়াচ্ছিলো পড়ার সময় আমার ব্যাগে থেকে বই বের করতে গিয়ে একটা বার্মিজ আচারের প্যাকেট পাই।আমার অভ্যেস ছিলো সব সময় বার্মিজ আচারের প্যাকেটে পানি দিয়ে ভিজিয়ে ওটা খাওয়া।তো প্যাকেট টা আমি ব্যাগ থেকে বের করে হাতে নিই তখন দেখি নানা আমার বার্মিজের প্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে বললো,
“পুতুল দে না রে, এগুলো কত বছর ধরে খাই না,ছোটো বেলায় অনেক খেতাম.”
আমি বললাম “ঠিক আছে দাঁড়াও আমি এটাতে পানি দিয়ে নিয়ে আসি দুজনে খাবো এটা।”
তারপর আমি রুম থেকে বেরিয়ে যাই, আর বের হওয়ার পর আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি কাজ করলো, বার্মিজের প্যাকেটে পানি না দিয়ে থুথু দিয়ে ভরে দেই,মুখে একটু পানি নিয়ে কুলকুচি করে প্যাকেট ভর্তি করি,দেখে মনে হচ্ছিলো ওটাতে পানিই ভরা হয়েছে। তারপর রুমে এসে আমি থুথু মিশ্রিত বার্মিজের আচারটার প্যাকেট টেবিলে দাঁড়া করিয়ে বলি,
“আর একটু ওয়েট করো আমি টিস্যু আনছি”।নানা প্রশ্ন চোখে নিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করলো,
“টিস্যু লাগবে কেনো?”আমি বললাম
“তুমি হাতে নিয়ে খাওয়ার পর তো লেগে থাকবে , মুছতে হবে তো।”
এই বলেই আমি খাটের সাইড বক্স থেকে টিস্যু বের করে হাতে নিয়ে পিছু ঘুরে তাকিয়ে দেখি টেবিলে বার্মিজের প্যাকেটটা নেই আর নানা মুখে থেকে বার্মিজের প্যাকেট টা বের করে ফেলে দিয়ে আচারটা চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে আর আমার দিকে দাঁত কেলিয়ে হাসছে।বেচারা আমাকে জব্দ করতে গিয়ে নিজেই জব্দ হয়ে গেছে সেটা বুঝতেও পারলো না।

ফুল কিটকিট করে হেসে যাচ্ছে গল্পটা বলতে বলতে, সবাই আকাশের মুখের দিকে তাকালো, বৃষ্টি আকাশের মুখ ছাপিয়ে ধরে রেখেছিলো গল্প চলা কালিন, লাস্টের ঘটনা শুনে গা ঘিনঘিন করতে লাগলো , সাথে সাথে আকাশের মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো। অনুর আকাশে থুথু খাওয়ার ঘটনা হজম করতে না পেরে বমি বমি ভাব এসে গেলো।বাকিদের তেমন ঘৃণা লা লাগলেও আকাশের দিকে সেই যে তাকিয়ে আছে তো আছেই,আকাশের চেহারায় নির্লিপ্ততা বিরাজ করেছে। সবার পালাক্রমে নিরবতা পালন শেষে এমন জোরে অট্টহাসি দিয়ে উঠলো একসাথে। পুরো বাড়ি যেনো ওদের হাসির আওয়াজে কাঁপছে।

ফুল তো সেই কখন থেকে হেসেই যাচ্ছে।
অভ্র ফুলকে জিজ্ঞেস করলো,
-আচ্ছা ফুল এটা বলো, পুরো থুথু মিশ্রিত আচারটা আকাশের মুখে দেখার পর তুমি কি করলে? বলে দিয়েছিলে?
-নাহ চুপচাপ ছিলাম। যখন পুরোটা খেয়ে নানা ঢোক গিললো তখন আমার হাসি দেখে কে! নানা খুব জিজ্ঞেস করছিলো হাসছি কেনো,আমি হাসি থামাতেই পারছিলাম না বলবো কি,পরের দিন বলেছিলাম ঘটনা আসলে কি ঘটেছিলো।
-এটা কিন্তু খুবই ভালো কাজ করেছো, ওকে সাথে সাথে না জানিয়ে।

কাব্য আকাশের সামনে গিয়ে বসে হাতটা মাইকের মতো করে ওর সামনে ধরে বলে,
-আকাশ নানা ফুলের থুথু আর কুলকুচি করা পানিটা খেতে কেমন টেস্ট ছিলো?

কাব্যর প্রশ্নে সবার হাসির বেগ আরো বেড়ে গেলো। আকাশ অসহায়ের মতো সবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে শুধু।

রাত প্রায় দুটো বাজে , সবাই গল্প গুজব থামিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে এই মাঝ রাতে বেরিয়ে পড়লো অভ্রর প্ল্যানিংয়ের অপারেশনের উদ্দ্যেশে।কিছু একটা ঘটনা যে ঘটাবে সব কটা, সেটা ভালোমতো আন্দাজ করা যাচ্ছে।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here