হৃদয়ের_ওপারে_তুমি #গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু) #লেখিকা_রিয়া_খান #পর্ব_২০

0
498

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_২০
পেছন থেকে ফুল ডাক দিলো,
-শুনুন!
অভ্র পেছনে ঘুরে তাকালো,
-মানবতার খাতিরে যাওয়ার আগে একটা কাজ করে দিয়ে যান প্লিজ,কিছু মনে করবেন না।
অভ্র শান্তস্বরে উত্তর দিলো,
বলো কি লাগবে।

-অই যে চেয়ারের উপর জরজেট ওড়না ওটা একটু এদিকে বাড়িয়ে দিন না।আপনি তো ওদিক দিয়ে যাচ্ছেন ই। তাই আমি আর উঠবো না।

অভ্র ওড়না টা হাতে নিয়ে ফুলের কাছে গিয়ে ওর হাতে দিয়ে চলে যেতে লাগলো,দরজার কাছে গিয়ে ফুলের দিকে ফিরে বললো,
-যদি পারো প্রতিদিন ভোর বেলা কালোজিরা আর মধু খেয়ে দেখো পেট ব্যাথাটা কমে যাবে ইনশাআল্লাহ। আর এসময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হয়। খেয়াল করে দেখেছি তুমি পানি খুব কম খাও।বেশি বেশি পানি খাবে।এসময় ঠান্ডা পানি থেকে শুরু করে কোনো খাবার,শশা এগুলো খাবে না।

ফুল একটু বিব্রতভাবে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিতে যাবে তার আগেই ফুলের উত্তর শুনার অপেক্ষা না করে অভ্র কথা শেষ করেই চলে গেলো

রুম থেকে বের হতেই কবিতার সামনে পড়তে হলো।অভ্র কবিতাকে বললো,ভেতরে ফুল ডেকে পাঠিয়েছে এই বলেই চলে গেলো।

কবিতা ফুলের রুমে আসতেই দেখে ফুল পেটে টাইড করে ওড়না বেঁধে বাঁকা হয়ে বসে আছে। অভ্র রুম থেকে চলে যাওয়ার পর ফুল খানিকটা কমফোর্টেবল ফিল করতে লাগলো, সমস্যাটা বুঝতে পেরেই অভ্র চলে গেছে।কবিতা ফুলের অবস্থা দেখে কোনো প্রশ্ন না করে বেরিয়ে খাবার এনে ফুলকে খাইয়ে দিলো।এতো বেলা হয়েছে এখনো পানি অব্ধিও খায় নি।

আকাশের রুমে আসতে না আসতেই কাব্য প্রশ্ন করে বসলো
কিরে এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি? কথা শেষ?
-হুম।
-কি কথা বললিরে?
-তোকে বলবো কেনো?
-বিয়ে করলি না তার আগেই এতো প্রাইভেসি হয়ে গেছে তোর?
অভ্র বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
-আবার জিগায়।এগুলো তো ট্রেইলার রে। বাকিটা তো ইতিহাস হবে!
-থাক দিন আমাদেরও আসবে, শুধু মেয়ে পাবার অপেক্ষা।
-অই চল তো বাইরে দিয়ে ঘুরে আসি।ভালোলাগছে না।
-সন্তোষ যাবি?
-যাওয়া যায় চল, বাকিদেরও বল।

কাব্য উঠে অন্য রুমে গিয়ে বাকিদের জানালো বের হওয়ার কথা বলে, মেয়েরা গেলো না, শুধু ওরা ছেলেরাই বেরিয়ে গেলো।

দুদিন কেটে গেলো অভ্রর সাথে ফুলের তেমন কোনো কথাবার্তাও হয় নি।ফুল অভ্রর সামনে যেতে খুব লজ্জা পায়,এ দুদিন বাড়ি থেকেই বের হয় নি। ফুল এখনো জানে না, ওর যে ওর আপাততো আকদটাই হবে তাও নিজের বাড়িতে। অভ্র জানাতে না করেছে,এটা ফুলের জন্য সারপ্রাইজ রেখেছে।

ফুল চুপচাপ একা একা সন্ধ্যে বেলা ছাদে বসে আছে , মনটা খারাপ। বাপের বাড়ি থাকার সময়টা ফুরিয়ে আসছে ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছে।
-একা একা এভাবে চুল ছেড়ে ছাদে বসে আছো ভূতে ধরবে তো!

পেছন থেকে এই শব্দধ্বনি কানে আসতেই ফুল ফিরে তাকিয়ে দেখে অভ্র এসেছে তাতে ফুল কোনো সাড়া দিলো না ।অভ্র ফুলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো।
-বসতে পারি?
-হুম বসুন।
-একা একা কি করছো?
-বসে আছি।
-তোমার গ্যাং ছাড়া তোমাকে একা একা মানায় না।
-হুম।
-মন খারাপ?
-নাহ।
-সরি।
-কিসের জন্য?
-আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার মন খারাপ, তারপরেও অবুঝের মতো প্রশ্ন করলাম।আর তুমি ফর্মালিটি রক্ষার্থে মিথ্যে উত্তর দিলে।সুতরাং আমার জন্য তোমার মিথ্যে কথা বলতে হলো।
-আচ্ছা আমি আমার মিথ্যে ফিরিয়ে নিচ্ছি, হ্যাঁ আমার মন খারাপ।
-কারণটা হয়তো জানি,তাই জিজ্ঞেস করলাম না। কিছু করার নেই,সব ঠিক হয়ে যাবে।

ফুল চুপ করে রইলো,কিছুক্ষণ পর মাথা নিচু করে বললো,
-আমি বিয়ের পর কোথাও যাবো না।এখানেই থাকবো।

অভ্র খানিক টা কড়া স্বরে বললো,
-এটা কেমন কথা আবার! বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি না গিয়ে বাপের বাড়ি থাকবে এটা কি করে সম্ভব ।এগুলো কি মেনে নেয়ার মতো কথা!
-তাহলে আমি বিয়ে করবোই না
– তুমি না চাইলেও কিছু করার নেই,এবাড়ির মানুষ তোমার কথা শুনবে না জোর করেই আমার কাছে দিয়ে দেবে।ফুল রাণী তালিবালি না করে ভদ্র লোকের মতো বিয়ের পর আমার সাথে চলে যাবেন।
ফুল কাঁদো কাঁদো কন্ঠস্বরে বললো,
-এমন করে বলছেন কেনো? মনে হচ্ছে এবাড়ি থেকে বিয়ে না দিলেও জোর করেই নিয়ে যাবেন।আর নিয়ে যাবেন ঠিক আছে একটু ভালো করে বললেই হতো।
-আসলে আমি না এমনই।এখন থেকেই সহ্য করতে শেখো। বিয়ের পরও সব সময় আমি এভাবেই কথা বলবো।
-কিহহ! এমন কেনো আপনি? এতোদিন মুখোশ পড়ে ছিলেন!কাল রাতেও অনু আপনার নামে কত ভালো ভালো কথা বলছিলো।অনু সব সময় আপনার গুণের প্রশংসা করে।
-অনু হলো আমার বোন।আমার বোন আমার নামে সুনাম করবে না তো তোমার নামে করবে?
ফুল কপাল কুঁচকে উত্তর দিলো।
-কি চামাড় আপনি!পচা লোক।আমাকে চেনেন না তো আমি কি জিনিস। একদম সাইজ করে দিবো।
-দেখা যাবে কে কাকে সাইজ করে।
-আপনি আসলেই কি পচা?
-যে যেরকম আমি তার কাছে সে রকম।
-কখনোই না,আমি পচা না।
-আমি কি একটা বারও বলেছি এ কথা?
ফুল ধমকের স্বরে বললো,
-আপনি কথা বলবেন না তো চুপ করে থাকুন।
-এখন ধমক দিচ্ছো দাও, বিয়ের পর আমার গলার আওয়াজের উপর তোমার আওয়াজ উঠা যাবে না সেরকম ভাবে থাকতে হবে।একদম শান্তস্বরে কথা বার্তা চালাতে হবে।
-কি বিয়ে বিয়ে করছেন আমি আপনাকে
বিয়ে করবো না।
-এই সামান্য কারণে তুমি বিয়েই করবে না?
-এটা সামান্য কারণ? বিয়ের পর যদি ধরে ধরে মারধোর করেন?আবার যদি একদম মেরে আমাকে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখেন?
-না না এতোটা খারাপ না আমি।মারধোর করতে পারি কিন্তু মেরে ফেলবো না।তুমি যদি মার খাওয়ার মতো কাজ করো তাহলে তো মার খাবেই।

-এক্ষুণি আমি নিচে গিয়ে সবাইকে বলবো আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।
-ঠিক আছে বলে দেখো, কিন্তু বলে রাখছি কেউ শুনবে না তোমার কথা।
-কেনো শুনবে না কেনো?
-কারণ আমি আগেই সবার ব্রেইন ওয়াশ করে দিয়েছি।এখন তোমার কথা শুনবে তো দূরে থাক কেউ কানেও নিবে না।
– একশো বার শুনবে।আমি একটা কথা বলবো আর সেটা এবাড়ির মানুষ শুনবে না এরকমটা হতেই পারে না।
-ওকে ট্রাই করে দেখো।বেস্ট অফ লাক!
-না শুনলেও আমি আপনার মতো বজ্জাত চামার লোককে বিয়ে করবো না।

রাগ দেখিয়ে ফুল উঠে চলে গেলো।একটা বার অভ্রর দিকে ফিরেও তাকালো না। অভ্রও আর ফুলকে আটকালো না, উল্টো দোলনাতে পায়ের উপর পা তুলে বসে শয়তানি হাসি হেসে যাচ্ছে।

নিচে যেতেই ফুল বাবাকে পেলো, বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-বাবা তোমার সাথে কথা আছে আমার।
-বলো মা কি বলবে।
-আমি এই বিয়ে করবো না, তুমি ক্যান্সেল করে দাও সব।আমি বিয়ে করবো না।
-কি বলছো মা, কথাবার্তা সব পাকাপোক্ত করা হয়ে গেছে,এখন এ বিয়ে ভেঙে দিলে মানসম্মান ধুলোয় মিশে যাবে।এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না মা। তুমি নিজেকে মানিয়ে নাও সবটার সাথে।জেদ করো না এটা নিয়ে।এসব ব্যাপারে জেদ মানায় না।

কড়াস্বরে কথাটা বলেই নাজমুল শিকদার ফুলকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।ফুল পুরো আসমান ভেঙে পড়লো,মেয়ের জীবনের থেকে মানসম্মান বড়!

ফুল ওর মাকে খুঁজতে লাগলো। রান্না ঘরে রিনা খালা, কবিতা, অবন্তী,আর ফুলের মা। রান্না ঘর থেকে শব্দ পেয়ে ফুল সেখানে গিয়ে সোজাসুজি বললো,
-মা বাবাকে বলো না, আমি এই বিয়ে করবো না।

ফুলের এই কথা শুনে আয়েশা বেগমের চোখ কপালে উঠে গেলো।
-কি বলছিস কি তুই! বিয়ে করবি না মানে।কি সমস্যা?
-আমার অভ্র ভাইয়াকে ভালো লাগে না। আমি উনাকে করবো না বিয়ে।
-এসব এখন বলে কোনো লাভ নেই, সব পাকাপোক্ত হয়ে গেছে।আজ বাদে কাল বিয়ে, এই মেয়ে কি বলে এসব!আর বিয়ে করবি না কেনো?অভ্র দেখতে খারাপ?নাকি ওর চরিত্র খারাপ? ফ্যামিলি ভালো না?কোন দিক দিয়ে কম আছে ওর? ঢাকা মেডিকেলে পড়ে ছেলে, আজ বাদে কাল বড় ডাক্তার হয়ে বের হবে। এমন ছেলেকে ও বিয়ে করবে না বলছে!
-তোমরা কেনো এমন করছো?আমার কথা বুঝতে পারছো না কেনো?আমাকে কি এখন বিয়ে দেয়াটা জরুরীই?আমার বয়স হয়েছে?

আয়েশা বেগম কিছু একটা বলতে যাবে তখন কবিতা ফুলের মাথা হাতিয়ে হাতিয়ে বললো,
-পুতুল,বোন শুনো। আগে হোক পরে হোক সব মেয়েরই পরের বাড়ি যেতে হয়।তুমি হয়তো আমাদের ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে বিয়েটা করতে চাইছো না, কিন্তু দেখো বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।বিয়ের আগে আমাদেরও এমন মনে হতো যে নিজের পরিবার ছেড়ে পরের বাড়ি থাকবো কি করে!কিন্তু দেখো বিয়ের পর দিব্যি ভালো আছি সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিচ্ছি।এই যে অবন্তীকে দেখো,কদিন হয়েছে ওর বিয়ের?
অথচ দেখো এমন ভাবে মিশে আছে আমাদের সাথে,যেনো কত হাজার বছর ধরে আমাদের সাথে ছিলো ও।ঠিক আমাদের মতো তুমিও পারবে বোন।তুমি রুমে গিয়ে ভেবে দেখো ব্যাপারটা, সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।আমি আজকে তোমার পছন্দের একটা খাবার বানাচ্ছি গেস করো তো কি হতে পারে?

ফুল উত্তর না দিয়ে মুখ শুকনো করে কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো।মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।

বুদ্ধি করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একে একে সবার কাছে গিয়ে বলতে লাগলো মামী, চাচী,ফুপি,ভাবীদের।কেউ ই পাত্তা দিলো না ফুলের কথায়।ফুল সবাইকে বুঝাতে বুঝাতে হতাশ হয়ে গেলো।

রাতে ভাইয়েরা বাড়ি ফিরতেই ভাইদের কাছেও একই কথা বললো ফুল,কিন্তু উত্তরে শুনতে হলো
“কি বলছিস পরী! মাথা ঠিক আছে তোর?সব কিছু পাকাপোক্ত হওয়ার পর এখন মত বদলাচ্ছিস তুই!আমরা তো আগেই তোর মত নিয়ে তারপর এগিয়েছি কথাবার্তা। তোকে বার বার বলেছি তুই রাজি কি না,তখন তো কিছু বললি না!

আর তুই রাজি না হলেও আমাদের আর কিছু করার নেই এখন,তোকে এই বিয়ে করতেই হবে।এমন ঘর আর এমন ছেলে আমরা প্রতিদিন প্রতিদিন পাবো না।অভ্র আমাদের চেনা জানার মধ্যে, ওখানে তুই অনেক ভালো থাকবি।তোর ভালোর জন্য আমাদের এইটুকু মানিয়ে নিতেই হবে।”

-কেউ কথা শুনছে না আমার!সবার হলোটা কি?এতো না ভালোবাসে এরা আমায়!আর এখন এদের কারো চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি না।কেউ ভালোবাসে না আমায়,সব দোষ অই ভীনদেশী ছদ্মবেশী চামার লোকটার। অই লোকটার জন্য আমার বাড়ির মানুষ আমাকে বিদায় দিতে চাচ্ছে!অই লোকটা এবাড়িতে না এলে এতো কিছু ঘটতোই না।
ধুর আমি এবাড়িতে থাকবোই না।হেঁটে হেঁটে অনেক দূর চলে যাবো। কেউ খুঁজে পাবে না, তখন বুঝবে মজা।আমাকে হারিয়ে সবার শিক্ষা হবে।

নানান কথা চিন্তা করে ফুল অভিমান করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। রাগ করে রাতে খাবারও খেলো না।অনবরত অভিমানি অশ্রুজল ফেলে যাচ্ছে।

একটা সময় ফুল অভিমান চেপে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে এলো।সে এখনি নিরুদ্দেশ পারি দেবে।

চোখের পানি মুছতে মুছতে ফুল বেপরোয়া গতীতে হাঁটতে লাগলো।এদিকে বাড়ির লোকজন জানেও না ফুল যে বাড়িতে নেই।হয়তো সবার অজান্তেই আসতে চলেছে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঝড়।বাড়ির কেউ যদি একটু টের পেতো ফুল বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে,তাহলে এতোক্ষণে সবাই ওকে খুঁজতে বেরিয়ে যেতো,আর কোনো না কোনো ভাবে ফুলকে পেয়ে যেতো সাথে সাথে।

রাত এগারোটা বাজে, ফুল এখনো বেপরোয়া গতীতেই ছুটছে।এতোক্ষণ ধরে হাঁটছে পা দুটো ব্যাথাও করছে না মনে হচ্ছে।কোন ঘোরে যাচ্ছে ও নিজেও জানে না। কান্নাটাও থামাতে পারছে না।

কাঁদতে কাঁদতে ফুল কোথায় এসে গেছে নিজেও জানে না,কোন গলিতে ঢুকেছে সেটা চিনতেও পারছে না।সামনে কয়েকটা ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলছে না বলে সেটুকু রাস্তা অন্ধকার দেখে ফুলের হুঁশ ফিরলো, এখন ভেতরে ভয় বিরাজ করলো।কোথায় এসেছে? কিভাবে বাড়ি ফিরে যাবে এখন?দিনের বেলা হলেও একটা কথা ছিলো।প্রচন্ড পরিমাণে ভূতের ভয় পাচ্ছে ফুল।সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না , আবার পিছিয়ে যাওয়ারও সাহস পাচ্ছে না।

এদিক ওদিক তাকাতাকি করতেই দু চারটা ছেলেকে দেখতে পাওয়া গেলো,
সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে কেমন যেনো এঁকে বেঁকে হেঁটে এদিকে আসছে।বুঝায় যাচ্ছে এরা কোনো সাধারণ কোনো সমাজের মানুষ না। ফুলকে দেখতে পেয়ে ছেলে গুলো যেনো কি কি বলা বলি করতে লাগলো!

ফুল ভয়ে কুঁচকে গেলো । ছেলে চারটা ফুলের সামনে এসে দাঁড়ালো।
-ওয়াও! গভীর রাতে রাজপথ দিয়া পরী হাঁটাচলা করতাছে!
-হ মামা,চলো আইজক্যা পরী নিয়া আমাগো চিকেন ডিনার হবো।
একটা ছেলে ফুলের উদ্দ্যেশে জিজ্ঞেস করলো,
-তুমি কি আসল পরী নাকি মানুষ পরী গো সুন্দরী?
ফুল ভয়ে মাথা ঘুরিয়ে পরে যাওয়ার উপক্রম!
-আরে মামা, আসল পরী হইলে তো পেছনে পাখা থাকতো এইডা মানুষ পরী।
-তা মানুষ পরী,এতো রাতে একা একা রাস্তা দিয়ে কি করো?শহর প্রদক্ষিণ নাকি রাস্তা হারাইয়া ফালাইছো?

সব কটা মিলে কিটকিটে হাসি দিলো,ফুল আরো ভয় পেয়ে গেলো। সাহস করে উল্টো ঘুরে, ফুল দৌড়াতে লাগলো।
-আরে ধর ধর আমাগো পরী পলাইলো রে।

যদিও ফুল দৌড়ে এক্সপার্ট, কিন্তু এই মুহুর্তে ভয়ে ওর দ্বারা দৌড় আসছে না।মনে হচ্ছে রাস্তার কংক্রিটের সাথে পা দুটো লেগে আসছে।

দৌড়ে কোনো ভাবেই পেরে উঠছিলো না ছেলে গুলোর সাথে।অবশেষে ফুলকে ধরেই ফেললো ছেলেরা। ফুল চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই ওর মুখ আটকে ধরা হলো। একটা রুমাল দিয়ে মুখটা এমন ভাবে বেঁধে দিলো যেনো চিৎকার করতে না পারে। আর কিছু একটা দিয়ে ওর হাত দুটো পেছনে নিয়ে বেঁধে দেয়া হলো।
ফুল নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে ব্যর্থ চেষ্টা টা করে যাচ্ছে নিজেকে ছাড়ানোর। কিন্তু এই ছেলেগুলোর থেকে নিজেকে ছাড়ানোটা অসম্ভব। এখন শুধু নিজের সাথে হওয়া অন্যায় গুলো মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই।

একটা ছেলে গিয়ে অটো ডেকে নিয়ে এলো,আর তাতে ফুলকে উঠানো হলো,সাথে ছেলে গুলোও উঠলো।সবার ঠোঁটে এমন হাসি লেগে আছে যেনো অনেক দিন পেতে রাখা ফাঁদের সামনে বসে অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য্য হওয়ার পরিক্রম ঠিক সেই সময় অভুক্ত রা তাদের দখলে শিকার পেতে সক্ষম হয়েছে।

ফুলের জানা নেই পরবর্তী মিনিটে কি হতে যাচ্ছে ওর সাথে।তবে এই টুকু স্পষ্ট কোনো এক অপ্রত্যাশিত সর্বনাশের পর মৃত্যু নিশ্চিত । চোখের সামনে বাড়ির লোক গুলোর চেহারা স্পষ্ট ভেসে উঠছে।কষ্ট হচ্ছে সেই কথা ভেবে যখন বাড়ির মানুষ গুলো ফুলের মৃত্যুর খবর টা পাবে।

কেমন লাগবে তাদের যখন একদল পুলিশ মৃত লাশটাকে সামনে রাখবে।

হয়তো কালকের খবরের প্রচারে নিজের নামটাই লিখাতে যাচ্ছে।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here