হৃদয়ের_ওপারে_তুমি #গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু) #লেখিকা_রিয়া_খান #পর্ব_২৫

0
462

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_২৫
গ্যালারী শুরুটাই ফুলের কয়েকটা বিচ্ছিরি স্মৃতিময় ছবি,শুরুতেই দেখা যাচ্ছে সেদিন হলুদের অনুষ্ঠানে সবার সামনে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য, কান্না করার দৃশ্য। তারপর সেই বিকেলেই সবাই মিলে ছবি তোলা একটা ছবি,যেখানে সবাই সুন্দর করে তাকিয়ে আছে আর ফুল চোখ বন্ধ করে ঘুমোচ্ছে ছবিতে!

হাঁচি দেয়া থেকে শুরু করে টিস্যু দিয়ে নাক মুছার দৃশ্য অব্ধি বাদ যায় নি। এগুলো দেখে ফুল হাসবে না কাঁদবে দিশে পাচ্ছে না।
কিন্তু একটা ছবি দেখে হাসি আটকে রাখতে পারলো না,সালমা বানুর পেয়ারা গাছে উঠার দৃশ্যটাও বন্দী আছে ফোনের গ্যালারীতে।

বেশ কয়েকটা ছবি দেখে হাসি আর থামে না , মুখ ভর্তি খাবার থাকা অবস্থায় একটা ছবি,গাল দুটো ফুটবলের মতো লাগছে।রাতে জানালা দিয়ে ফুল উঁকি মারতো সেই ছবি দেখে ফুল লজ্জায় শেষ,
-এগুলো কখন তুললো উনি!আল্লাহ উনি এতো চালাক কেনো ! আমি জানিই না কিছু!

হাসতে হাসতে কিছুক্ষণ পর দেখতে পেলো, যেদিন ফুল ওর গ্যাং নিয়ে প্রেম রোডে গিয়েছিলো বৃষ্টিতে ভিজতে সেই ছবি গুলো,ফুল অনেকটা অবাক হয়ে যায় অভ্র এই ছবি কখন তুললো!

ছবি গুলো তুলে অভ্রও বুঝতে পারে নি এগুলোতে ফুল ছিলো,DSLR থেকে ট্রান্সফার করে মোবাইলে আনার পর জুম করে দেখে এগুলো তাঁর হুরপরী।

তারপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার বিভিন্ন মুহুর্তের ছবি।ফুল বসে বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে।
ছবি গুলো দেখে ভেতর থেকে অভ্র চলে যাওয়ার কষ্টটা ভুলতে লাগলো।মনেই হচ্ছে না অভ্র চলে গেছে,উল্টো মনে হচ্ছে অভ্র ওর আশে পাশেই আছে।আড়াল থেকে দেখছে ফুলকে।

গ্যালারীর প্রতিটা ছবি দেখে দেখে সেই সময় গুলোতে হারিয়ে যাচ্ছে যে সময় গুলোতে অভ্রর সাথে ছিলো কত মজা করছে ওর সাথে।একসাথে দুষ্টুমি, বাঁদরামি করে কাটিয়েছে।

মাথার নিচে বালিশ দিয়ে ছবি দেখছিলো এমন সময় আয়েশা বেগম রুমে এলো।
-পরীমা!
মায়ের শব্দ পেয়ে ফুল মোবাইলটা রেখে উঠে বসলো,
-কার ফোন এটা?
-উনি যাওয়ার আগে দিয়ে গেলো এটা।
-অভ্র দিয়েছে?
-হুম!

আয়েশা বেগম ঠোঁটে মলিন হাসি নিয়ে ফুলের পাশে বসলো, ওর মাথা হাতিয়ে হাতিয়ে বললো,
-দেখতে দেখতে আমার ছোট্ট পরীটা কত বড় হয়ে গেছে। বিয়েও হয়ে গেছে, শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে একদিন।

মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলো,ফুল চুপচাপ শান্ত মেয়ের মতো মায়ের বুকে মাথা রেখে বসে রইলো।
-আচ্ছা পরী তোর শ্বশুর বাড়ির লোক নাকি তোকে অনেক কিছু গিফট দিয়েছে।সবাইকে দেখিয়েছিস মাকে দেখাবি না?
-দেখাবো না কেনো!সবাই তো দেখতে এসেছিলো তাই দেখিয়েছি, তুমি আসো নি তাই দেখানো হয় নি।
-কত্ত কাজের চাপ ছিলো বল মা। আমার মেয়ের কাছেই তো আসা হয় নি।
-আচ্ছা দেখাচ্ছি ওয়েট,
ফুল উঠে গিয়ে ওয়াল কেবিনেট থেকে একটা বক্স বের করে আনলো, প্রথমে ওর পায়ে থাকা নূপুরটা মাকে দেখিয়ে বাকি গুলো বক্স থেকে বের করে দেখাতে লাগলো,
– এই যে পায়ের নূপুর এটা উনি দিয়েছে এটা কিন্তু রূপার না,প্লাটিনামের । আর এই হাতের ব্রেসলেট এটা নিশাত বউমণি দিয়েছে,আর জিয়াদ ভাইয়া আমাকে একটা খাম দিয়ে বলেছে,এটাতে চকলেট আছে।আমি তো অবাক এই খামে কেমন চকলেট! পরে খুলে দেখি ভেতরে বিশ হাজার টাকা, ভাইয়া হয়তো ইন্ডাইরেক্টলি বুঝিয়েছে এই টাকা দিয়ে চকলেট খেতে । তারপর আমার শাশুড়ি এই যে পেন্ডেন্ট নেকলেস টা দিয়েছে।কাব্য ভাইয়ার মা আমার কানের দুল খুলে এই গুলো কানের দুল পড়িয়ে দিয়েছিলো । অয়নী আপুর মা আংটি দিয়েছেন।আর কাল বিয়ের পর শাশুড়িমা তো হাতে চুড়ি নাকি বালা কি এটা পড়িয়ে দিলো দেখলেই।

ফুল একে একে সব দেখাতে লাগলো মাকে, কে কি কি দিয়ে ওর মুখ দেখেছে।বিয়ের আগেই সবাই এতো বেশি আয়োজন করে মুখ দেখেছে, অবশ্য এই গিফট গুলো বার্থডে গিফট হিসেবেই দিয়েছে। কাল বিয়ের আগে ফুলকে যেসব গহনা দিয়ে সাজানো হয়েছে সবটা অভ্রর ফ্যামিলি থেকে দেয়া ছিলো । তবে খুব বেশি গহনা দিতে দেয় নি অভ্র। ও চায় যেদিন ও নিজে যোগ্য হয়ে ফুলকে নিজের করে তুলে নিয়ে যাবে সেদিন ই ফুলকে সাজিয়ে গা ভরে গহনা পড়িয়ে নিয়ে যাবে।

একটা সময় ফুলের বাপের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবতেই আয়েশা বেগমের
চোখ গড়িয়ে পানি পড়লো। মেয়েটাই বা তাদের ছেড়ে থাকবে কি করে!

-অনেক কিছু দিয়েছে দেখছি।আমার কি মনে হয় জানিস পরী?ওবাড়ির মানুষ আমাদের থেকে বেশি ভালোবাসবে তোকে।

ফুল ছলছল চোখে মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কান্না করে দিয়ে মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মেয়ের চোখের পানি দেখে আয়েশা বেগমের চোখের পানি বেরিয়ে পড়লো।

সময় কাটছেনা কোনো মতেই, কারো সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। এবেলা ঘরের ভেতর শুয়ে বসে কাটাচ্ছে ফুল। অস্বস্তিকর লাগছে সব কিছু কখন অভ্র ফোন দিবে।

-কাব্য নানা ও কাব্য নানা!
-তোর আবার কি হলো রে?
-মোবাইলটা একটু দাও না,বউয়ের সাথে কথা বলতে মন চাইছে।
-তোরটা?
-আমারটা বউয়ের কাছে।
-বাবারে বাবা পিরিত রে ভাউ।কবে জানি শুনবো নিজের কিডনি টাও দিয়ে দিয়েছিস ওকে।
-প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই দেবো ভাইয়া।
-হ্যাঁ কবে জানি এটাও শুনবো, তুই পড়াশুনা বাদ দিয়ে বউয়ের আঁচলের নিচে পড়ে আছিস।
-কি যে বলো কাব্য নানা বউতো শাড়ীই পড়ে না। আঁচল পাবো কোথায়?আর পড়াশুনা বাদ দিবো না প্রয়োজনে বউকে নিয়ে পড়াশুনা করবো,বউ আমাকে আদর করবে আর আমি পড়বো।এখন মোবাইল দে, জ্যামে পড়ে বোর লাগছে জানিনা কতক্ষণে পৌঁছাবো।

কাব্য নিজের ফোনটা অভ্রকে বাড়িয়ে দিলো।অভ্র সাথে সাথে কল দিলো নিজের নাম্বারে। রিসিভ করেই ফুল বলে উঠলো,
-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম ।
অভ্র শান্তস্বরে উত্তর নিলো,
-ওয়ালাইকুম আসসালাম
ফুল অভ্রর ভয়েসটা ফোনে চিনতে না পেরে বলে উঠলো,
-কাব্য নানা উনার ফোনটা তো আমাকে দিয়ে গেছে।তোমরা কি ঢাকা পৌঁছে গেছো?আর তুমি অন্য কারো নাম্বারে কল করে উনার খোঁজ নাও।
অভ্র হাল্কা গলায় কাশি দিয়ে, কুল মুডে বললো,
-বলছিলাম কি আমি কাব্য নানা না, আমি উনি বলছিলাম।ভয়েসটা কি চেনা যাচ্ছে না?
-ওহ সরি, বুঝতে পারি নি আপনি এটা, একটু অন্য রকম লাগছিলো।
-ইট’স ওকে।সরি বলার কিছু নেই।কি করছো?
-আপনি বাড়িতে পৌঁছেছেন?
-না গো, আশুলিয়া এক ঘন্টা ধরে জ্যামে পড়ে আছি।
-জানি না এ মাসে জ্যাম ছাড়বে কিনা।এতো সকাল সকাল বেরিয়ে এলাম তাও জ্যামে পড়তে হলো।
-অনু কি আপনার পাশে?
-নাহ কাব্যর পাশে ওর কাঁধে হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছে,রাতে নাকি তুমি ঘুমাও নি তোমরা ।ওকে দরকার কি?
-নাহ এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।মিস করছিলাম ওকে,
-শুধু ওকেই মিস করছিলে?আর কাউকে করছো না?
-নাহ।
-সত্যিটা জানতে চেয়েছি।
-করছিলাম, সবাইকেই খুব মিস করছিলাম।
-সব থেকে বেশি কাকে?
-নিয়ানা আর অনুকে।
-আবার মিথ্যে বললে।
-আপনি জানলেন কি করে মিথ্যে বললাম আমি?
-কারণ মিথ্যে বলছো তুমি তাই জেনেছি।
-তারমানে তো আপনি সত্যিটা জানেন।ন্যাকামো করে জিজ্ঞেস করার কি হলো?

কাব্যর ফোনের ব্যালেন্স শেষ না হওয়া অব্ধি কথা বলেই গেলো অভ্র, ততোক্ষণে রাস্তার জ্যাম ও ছেড়ে দিয়েছে , গাড়ি তীব্র গতীতে ঢাকার দিকে যাচ্ছে।

অভ্রর সাথে কথা বলে মনটা অনেক হাল্কা লাগছে।সব কিছু দমবন্ধকর থেকে স্বস্তিময়ে কনভার্ট হয়ে গেছে।

বর্ষাকে নিয়ে ফুল বসে বসে মোবাইলে থাকা কিছু ভিডিও দেখছে, যেখানে অভ্র গিটার বাজিয়ে কয়েকটা গান রেকর্ড করে রেখেছে। চোখ বন্ধ করে গানের প্রতিটি লাইনে হারিয়ে যাচ্ছে। অভ্ররা চলে যাওয়ার পর বাড়িটা আস্তে আস্তে খালি হতে লাগছে, বাড়ির বউরা বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছে।
বউদের মধ্যে একমাত্র অবন্তী আছে আর বাকি চার বউ দুপুরের পর বাপের বাড়ি রওনা হয়ে গেছে।অবন্তীও দুই একের মধ্যে চলে যাবে।
বাড়িটা একদম খালি খালি লাগছে।

ঢাকা ফিরতেই বাড়িতে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা ছেড়ে দিলো অভ্র।টায়ার্ড লাগছে খুব বেশি।

বিকেলের দিকে ঘুম থেকে উঠে মনে পড়লো বাড়ি ফিরে ফুলকে জানানো হয় নি। সাথে সাথে মোবাইল চার্জার প্লাগ থেকে সরিয়ে ওয়ালেট থেকে সিম কার্ড বের করে মোবাইলে ভরে ফুলকে কল দিলো।দুই বার কল দিলো কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না।হয়তো রাগ করে ফোন রিসিভ করছে না ফুল, এটা ভেবে বেশ কয়েকবার কল করলো।
আকাশকে কল করলো সাথে সাথে,কিন্তু আকাশ বাড়িতে না।

খানিকটা চিন্তিতো হয়ে পড়লো ফুলের অভিমান কি করে ভাঙাবে।
কিন্তু ফুল ফোন পাশেই রেখে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।

সন্ধ্যার একটু আগে ঘুম ভাঙতেই ফুল উঠে বসলো,অভ্র কল দিয়েছে কিনা সেটা দেখার জন্য ফোন হাতে নিতেই দেখে
Sim 2 নামের একটা নাম্বার থেকে কল এসেছে। এটা অভ্রই হবে বুঝা গেলো,ফুল কল ব্যাক করার আগেই আবার কল এলো নাম্বারটা থেকে,রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠস্বরে সালাম দিলো,
-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম,তুমি কি ঘুমিয়েছিলে?
-হ্যাঁ মাত্র উঠলাম,সরি ঘুমিয়েছিলাম বলে কল রিসিভ করতে পারি নি,
-ইট’স ওকে।বাট আমি ভয় পেয়েছিলাম।বাড়ি ফিরে তোমাকে ফোন করার কথা ছিলো আমার খেয়ালই ছিলো না তোমাকে জানাতে হবে।
-সমস্যা নেই অনু আমাকে কল দিয়ে বলেছে আপনারা পৌঁছে গেছেন।

ভালোবাসাটা আস্তে আস্তে মোবাইল নামক যন্ত্রটাতে বন্দী হচ্ছে। দুজন দুজনের সাথে কথা বলা দেখা করা সবটা এই যন্ত্রের মাধ্যমেই।যখন ইচ্ছে তখন কল দিয়ে কথা বলা, দেখতে মন চাইলে ভিডিও কল এভাবেই যাচ্ছিলো সময়।

স্কুল কলেজ সব পুনরায় চলতে থাকে আগের মতো।ফুলের কলেজ যাওয়া পড়াশুনা চলতে থাকে।
আর এদিকে মেডিকেলের স্টুডেন্টগুলো
গা ছেড়ে ভাসিয়ে এতোদিন পার করার পর আগের অবস্থায় ফিরে আসে সবার পড়াশুনার জগতে।
কাব্য ঢাকা থেকে ফিরে আসে দুদিন পর আসার সময় ফুলের জন্য এতো এতো গিফট পাঠিয়ে দেয় অভ্র।

অভ্রর টাইম প্যাটার্নে কোন কোন সময় ফুলের সাথে কথা বলবে সেটা তার ডেইলি রুটিনের মধ্যে মার্ক করে রাখে।

মাঝে মাঝে ফুলকে ঠান্ডা মাথায় বুঝায় ঠিক মতো পড়াশুনা করতে, আবার পরক্ষণেই বলে উঠে” সমস্যা নেই, তোমার
ইচ্ছে করলে পড়াশুনা করো,না করলে না করো।তোমার যেটা ভালো লাগে সেটাই করো।যদিও পড়াশুনাটা জরুরী সবার জীবনে। বাট ইট’স ওকে তোমার যা মন চায় করো, তুমি ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো।”
এতে ফুল ধরে নেয় অভ্র ইন্ডাইরেক্টলি পড়াশুনা করতেই বলছে,তবে কোনো এইম ইন লাইফ নিয়ে পড়ার কথা বলছে না, বলছে শুধু মাত্র শিক্ষিত হওয়ার জন্য পড়াশুনা জরুরী এটাই বুঝিয়েছে।

ফোনে ফোনে যান্ত্রিক প্রেমের মাঝে সময়
চলে যাচ্ছিলো দুজনের।যতদিন যাচ্ছে ফুল একটু একটু করে ম্যাচিউরিটি নামক সিঁড়িতে পা রাখছে।অভিমানিনী হুরের সাথে অভ্র বেশ তাল মিলিয়ে খাপ খাইয়ে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে।

মেডিকেলের স্টুডেন্টদের জন্য প্রেম শব্দটাই যেখানে হারাম সেখানে অভ্র খুব কুল মুডে পড়াশুনার পাশাপাশি নিজের মোবাইলে থাকা সংসারটা মেইনটেইন করে যাচ্ছে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে,ক্লাস চলাকালীন মাঝে মাঝে না চাইতেও মন ফুলের ঘোরে বিভোর হয়ে অমনোযোগী হয়ে যায় ক্লাসে।

পড়াশুনার বাইরে যতক্ষণ সময় অভ্র ফ্রি থাকে তাঁর ৯০% সময়ই অভ্র ফুলের জন্য নির্ধারণ করে রাখে।

আর এদিকে ফুল তো পড়াশুনা না করেই গ্র‍্যাজুয়েট কন্যা। বিয়ের পর তার পড়াশুনার পরিস্থিতি আরো বেশি উচ্ছন্নে গেছে।এতে বাড়ির কেউ কিছু না বললেও ফুলের মা প্রায় রাগারাগি করে পড়াশুনা না করার জন্য।
মায়ের মস্তিষ্ক ঠান্ডা করার জন্য , ফুল সামনে বই খাতা নিয়ে পড়তে বসার ভং ধরে শো অফ করে।

বইয়ের ভেতরে মোবাইল রেখে এমন অভিনয় করে সে যেনো পড়তে পড়তে বইয়ের পাতা খোলাসা করে দিচ্ছে।

কিন্তু ফুলের মা সেটা ভালোভাবেই বুঝতে পারে।একবুক হতাশা নিয়ে নিরুপায় হয়ে অবশেষে একটা বুদ্ধি আটলো, তার এই দুর্দিনে একজন কার্যকরী মানুষ আছে,সেটা অভ্র।আয়েশা বেগম নিজের রুমে গিয়ে অভ্রকে কল দিলো,
-আসসালামু আলাইকুম মা,
-ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা কেমন আছো তুমি?
-আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ অনেক ভালো রেখেছে। আপনারা কেমন আছেন?
-আমরাও অনেক ভালো আছি।অভ্র বাবা তুমি কি ফ্রি আছো?একটু জরুরী কথা ছিলো।
-হ্যাঁ মা, ফ্রি আছি বলুন কি বলবেন।

আয়েশা বেগম চিন্তিতো স্বরে বলতে লাগলো,
-বাবা অভ্র তুমি পরীকে কিসের মোবাইল দিয়ে গেছো,সারাটা দিন মেয়ে শুধু ফোন টিপে।ওর পড়াশুনা সব ছিকেই তুলেছে।কারো কোনো কথা শুনে না, মেয়ের বিয়ে তো হয় নি যেনো পাখা গজিয়েছে।ওর প্রাইভেট টিউটর রোজ বিচার দিয়ে যায়, যে ও পড়াশুনা করে না ঠিক মতো,পড়ানোর সময় অমনোযোগী হয়ে থাকে। সামনেই ওর অর্ধ বার্ষিকী পরিক্ষা। এভাবে চলতে থাকলে কি ভাবে কি হবে বাবা বলো দেখি!এই মেয়েকে কি করে বুঝাই পড়াশুনাটা কতটা জরুরী!

তুমিই বলো বাবা তোমাদের ফ্যামিলি এমন হাই এডুকেটেড, তাদের বাড়ির বউ যদি একরম মূর্খ হয় এটা কি তোমাদের সমাজ মেনে নিবে?
আজ বাদে কাল যখন তুমি বড় ডক্টর হয়ে বের হবে, তখন কি মানাবে তোমার পাশে ওকে? মানুষকি শুধু এর রূপই দেখবে, গুণ দেখবে না?

বাবা আমরা ওকে বুঝাতে বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি,এখন তুমিই একমাত্র সম্বল ওকে বুঝানোর।ওকে একটু বুঝাও, পড়াশুনা করতে বলো ঠিক মতো।

-মা আপনি চিন্তা করবেন না, আমি ওকে যা বুঝানোর বুঝিয়ে বলছি। আপনি একদম ই চিন্তা করবেন না। আমি এখনি ওকে বুঝাচ্ছি, এরপরেও যদি দেখেন পড়াশুনা করছে না আপনি আমায় বলবেন।
-ঠিক আছে বাবা, এখন তুমিই ভরসা। যা ভালো বুঝো তুমি করো।দিন শেষে ও তোমারই বউ।
-জ্বী মা আমি দেখছি।
অভ্র ফুলের মায়ের সাথে কথা শেষ করে ফুলকে কল দিলো,

-আসসালামু আলাইকুম।

অভ্র মিষ্টি স্বরে উত্তর নিয়ে বললো,
-ওয়ালাইকুম আসসালাম,আমার হুর কি করে?
-আপনার হুর পড়ালেখা করে।
-হুরটা এমন মিথ্যেবাদী কেনো?
-সত্যিটা যখন জানেনই জিজ্ঞেস ই বা করেন কেনো?
অভ্র কঠিন স্বরে বললো,
-হয় বই বন্ধ করো না হয় মোবাইল বন্ধ করো।
-কেনো?
-বইটা খোলা রেখে না পড়াশুনা করছো ঠিক মতো,আর বইয়ের ভেতর মোবাইল নিয়ে না শান্তিতে মোবাইল টিপতে পারছো, একটু পর পর চেক দিতে হয় ঘরে কেউ এসে দেখলো কিনা।
-আপনি জানলেন কিভাবে আমার বইয়ের ভেতর মোবাইল?
-এক্সপ্লেইন করতে হবে?
-হুম।
-প্রথমত তোমাকে কল দেয়ার ন্যানো সেকেন্ডে তুমি ফোন রিসিভ করেছো,তার মানে মোবাইলটা তোমার হাতের সংস্পর্শতে ছিলো, দ্বিতীয়ত শুরুতেই তোমাকে জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে বললে পড়ালেখা করছো,বারান্দায় বসে থেকে অবশ্যই তুমি এই উত্তর দিবে না আমাকে তাই না?
আমার ধারণা গুলো কি প্রমাণিত?
-বুদ্ধির মহা সাগর আপনি।ঠিক ধরেছেন,আপনার ধারণা প্রমাণিত ।
-এখন বলো আমার লক্ষ্মী হুর বউটাকে আমি কিছু বেদনাদায়ক কথা বলবো, সেকি অভিমান করবে আমার উপর?আমি কি অনুমতি পেতে পারি বলার জন্য?
-বলুন রাজপুত্র, আমি প্রস্তুত।
-তোমার এক্সাম কবে?
-সামনের মাসে।
-প্রিপারেশন কেমন?
-পড়িই না আর তো প্রিপারেশন!
-হুর তুমি কি চাও তোমার বাড়ির মানুষ আমাকে ভুল বুঝোক?
-একদমই না, ভুল বুঝবে কেনো?
-তোমার বাড়ি থেকে আমার কাছে কমপ্লেইন এসেছে তুমি একদম ই পড়াশুনা করো না, তোমার প্রাইভেট টিউটর তোমার নামে বিচার দিয়ে যায়,ইশ কি কষ্টকর নিউজ এটা।তুমি সারাদিন ফোন টিপাও সবাই ভাবে আমার সাথে কথা বলো, সবার ধারণা আমার সাথে বিয়ের পর থেকে তুমি পড়াশুনা টোটালি বাদ দিয়েছো,যদি আমার সাথে বিয়ে না হতো তাহলে তোমার এই করুণ পরিণতি হতো না! এখন সব দোষ আমার আর এই বিয়ের?কত বড় অপমান দেখেছো?তোমার কি মনে হয় না এর প্রতিশোধ নেয়া দরকার?তোমার ঠিকমতো পড়াশুনা না করার জন্য তোমার রাজপুত্রকে বিয়ের খোঁটা দেয়া হয়েছে তোমার বাড়ি থেকে ।

-অবশ্যই প্রতিশোধ নিতে হবে,ঘোর প্রতিশোধ হবে।তলে তলে আমার বাড়ির লোক গুলো ষড়যন্ত্র করছে আমার রাজপুত্রের নামে!
-এখন কি করে নেবে এই অপমানের প্রতিশোধ?
-নেবো নেবো, ভাবতে দিন আমাকে,
-ভাবো ভাবো মন প্রাণ দিয়ে ভাবো,কিভাবে প্রতিশোধটা নেয়া যায়!আর সবার মুখ সালমা বানুর মতো হ্যাং হয়ে যায়।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here