—-দেখো নাফিজ ভাইয়া নতুন মা আমাকে আজ কতো আদর করেছে।আমার পায়ে না খুব ব্যথা করছে।পিঠে মনে হচ্ছে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।খুব জ্বলছে জানোতো।
জামা উঠিয়ে নিজের পিঠটা নাফিজকে দেখালো পাঁচ বছরের ছোট্ট মিষ্টি।
—-এ কি অবস্থা হয়েছে তোর মিষ্টি পাখি!আর তুই বলছিস আদর করেছে!
ছোট্ট মিষ্টির পিঠের দিকে তাকিয়েই আঁতকে উঠলো নাফিজ।ধবধবে সাদা চামড়ার পিঠে হাতের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।গাঢ় লাল হয়ে গেছে।রক্ত ফুটে উঠেছে।
—-এদিকে আয়।চল আমার সাথে চল।
—-না না ভাইয়া।নতুন মা খুব বকবে।আগের দিন তুমি আমাকে চকলেট দিয়েছিলে না ওটা দেখে মা না বাবাইকে নালিশ করে দিয়েছিল।জানো বাবাই না আমাকে খুব মেরেছিল।আমার হাতটা এতো ফুলেছিল আমি তো ভেবেছিলাম ঐ তমা আপুর মতো মোটা হয়ে যাব না খেয়ে।হি হি।
মিষ্টি খিলখিলিয়ে হেসে দিল।নাফিজ মিষ্টি কে কোলে নিয়ে তাদের বাড়ির দিকে গেল।
;;;;;
—-কোথায় গেল এই মেয়েটা?জ্বালিয়ে খাচ্ছে পুরো।এর মা টা তো গেছে।একে যে কেন রেখে গেছে আল্লাহ জানে।আসুক আজ ওর খবর আছে।
ঝাটা টা হাত থেকে ফেলে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে তানিয়া।
—-ও বৌমা কই তুমি?এট্টু শুইনবার যাও দেহি।
ঘরের মধ্যে থেকে রাহেলা বেগমের গলা শুনে আরো মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তানিয়ার।
—-আসছি মা।এই হলো আরেক জ্বালাতন।একটু যদি বসতে দেয় শান্তিতে।ষাট পেরোতে চললো এখনো বুড়ির মরার নাম নেই।
শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে শাশুড়ির ঘরের দিকে পা বাড়ালো তানিয়া।
—-বৌমা হামার মিষ্টি বুড়ি কই?ওরে যে দেখতাছি না।
—-কই সেটা আপনার পুতনিকেই জিজ্ঞাসা করবেন মা।এইটুকু মেয়ে একটা কথা শুনে না আমার।সকাল বেলা বারবার বলে দিয়েছি ঘর থেকে বের হবি না কিন্তু দেখুন ঠিকই লুকিয়ে চলে গেছে।
—-কি আর করবে হুনি।ছোটো মানুষ।হেরে কি চাইলেই তুমি আটকার পারবা।বাচ্চা পোলাপান এহন এই বয়সে খেলবো না তো কহন খেলবো।তুমি হেতিরে সব সময় খালি মাইর লাগাও।কেন হুনি দেহি।
—-ও এবার বুঝেছি আসল কথা।সকালে আপনার নাতনিকে মেরেছি এজন্য খুব কষ্ট লাগছে তাই না।মেরেছি বেশ করেছি।একটু জোরে কিছু বললেই ড্যাঙ ড্যাঙ করে বাপের কাছে নালিশ দিতে যায়।
—-নালিশ দিবে নাতো কি করবে।সব সময় ঐ টুকুন মাইয়াডারে ঐ রাম কইরা মারো তুমি।বলি হের মা মরছে।এট্টু দয়া মায়া নাই তোমার। মা মরা মাইয়াডার লগে সব সময় খ্যাক ম্যাক করো ক্যান।
—-কি করবেন?আপনি কি ভেবেছেন বুঝতে পারিনি কেন আমাকে ডেকেছেন।আজকেও আপনার ছেলের কাছে আমার নামে লম্বা নালিশের লিস্টি দিবেন।করুন গিয়ে নালিশ।আপনারে আমি ভয় পাই না।
মুখ বেকিয়ে তানিয়া গটগট করে চলে গেল তানিয়া।রাহেলা বেগম দরজার দিকে তাকিয়ে আছেন।
—-তা আর ডরাইবা ক্যান।মোর পোলাতো এহন তোমার কথায় ওঠে আর বসে।নতুন বউ পাইয়া হের কি আর মনে আছে হের আগের বৌয়ের কথা।সেদিন একটা বছর পুরা হইয়া গেলো বৌডা মরছে।হেতি তো বৌডার জন্যি এট্টা মিলাদ ও দেলোনা।মাইয়াডার কপালে যে কি আছে কে জানে?
;;;;;
—-দেখেছো মা ঐ তানিয়া কাকি কিভাবে মেরেছে ওকে?
—-তাই তো দেখছি।ও কি মানুষ?এইটুকু বাচ্চাকে কেউ এভাবে মারে।দেখি মা এদিকে ঘোর তো।
লতিফা মিষ্টির গায়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।আর একটু পর পর ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছে ছোট্ট মিষ্টি।
—-এভাবে আর কতোদিন বলোতো মা।ঐ তানিয়া কাকি তো ওকে মারতে মারতে একদম মেরেই ফেলবে।
—-আজ তো এর একটা বিহিত করতেই হবে।বড্ড বাড় বেড়েছে ঐ তানিয়া।আজকে ফজলে ভাইকে বলেই দেব হয় ওকে ঠিকভাবে মানুষ করতে পারলে করুক না হলে এরকম মারধোর না দিয়ে ওর নানা বাড়ি পাঠিয়ে দিক।শুধু শুধু নিজের কাছে রেখে বাইরের লোককে এটা দেখানোর কোনো দরকার নেই যে আমার বউ মরেছে তাতে কি আমার মেয়েকে আমি ফেলে দেইনি।
মিষ্টিকে জামা পড়িয়ে কোলে নিয়ে রাফাদ শেখের বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলেন লতিফা।
;;;;;
—-মেয়েকে যদি দেখতেই না পারেন তাহলে ওকে এতিম খানাতে দিয়ে আসেন ফজলে ভাই।আর তা না পারলে একেবারে গলা টিপে মেরে ফেলুন।প্রতিদিন এইটুকু বাচ্চাকে তিলে তিলে না মেরে একচটে মেরে ফেলুন তাতে ও মনে হয় ওর এতো,কষ্ট হবে না।
—-ওরে কইয়া লাভ নাইরে লতিফা।হের ঐ বউ হের সামনে ঐ মাইয়াডারে মারে হে কিছু কয় না।মুখে একদম কুলুপ আইটা বইসা থাকে।
—-এসব কি ফজলে ভাই।রুবি ভাবী মরেছে কিন্তু আপনি তো আর মরেন নি।বাপ থাকতে এই মেয়েটাকে অনাথের মতো অত্যাচার সহ্য করতে হবে কেন।
ফজলে শেখ কটমট করে তানিয়া দিকে তাকিয়ে আছে।যেন চোখ দিয়েই গিলে ফেলবে তানিয়াকে।তানিয়া তো রাফিদের তাকানো দেখে ঢোক গিলছে।
—-দেখুন আমি,,,,,,,,
—-চুপ কর শয়তান মেয়ে।তোর জন্য আজ বাইরের মানুষ বাড়ি বয়ে এসে আমাকে অপমান করে যাচ্ছে।আমার মেয়েকে মানুষ করার জন্য এনেছি তোকে।তোর রূপ দেখার জন্য আনিনি।
#নয়নতারা
পর্ব ১
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
পরবর্তী সকল পর্বের লিংক এখানে
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=347144366662482&id=100116084698646