#নয়নতারা
পর্ব ২১
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
Suvhan Arag’s Storys
পরম আদরের সাথে ফুল গুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে কবিতা আওড়ে যাচ্ছে তারা।
—-তারা,তারা মা ভেতরে এসো।আর বাইরে থাকা যাবে না।
মাহমুদা বেগমের গলা শুনে তারা ক্রাচ নিয়ে খুব সাবধানে উঠে দাড়ালো।
—-গাসু,চলো।আর বেশিক্ষণ থাকলে মা বকবে।
—-হ আফা চলেন।
তারার এক হাত ধরে গাসু তারাকে নিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেল।
—-এতো তাড়াতাড়ি যাওয়ার কি ছিল?আরেকটু বাইরে থাকতেন।সময় টা যদি এখানে থেমে যেত,আমি আরো কিছুক্ষণ দেখতাম জ্বলন্ত পরী কে।
আচমকা নাফিজের মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে গেল।নিজেই নিজের কাছে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো নাফিজ।
—-ধ্যাত কি ভাবছি, কি বলছি আমি।অফিসে যেতে হবে।দেরী হয়ে গেল।
সাইকেল টা উঠিয়ে নিয়ে নাফিজ কুয়াটারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
;;;;;
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা “।আশা করি #নয়নতারা উপন্যাসের মতো সেটাও আপনাদের ভালো লাগবে।
;;;;;
—-মা আর খাব না।তুমি দেখো পেট ফুলে ঢোল হয়ে গেছে।
—-তারা একদম দুষ্টুমি করবে না।হা কর।
—-মা সত্যি বলছি।তুমি সব সময় এই বাচ্চাদের মতো আমাকে খাইয়ে দেও কেন বলোতো?আমি তো বড় হয়ে গেছি।
—-তুমি বড় হও আর যাই হও আমার কাছে সেই বাচ্চাটিই আছো।শোনো টিফিন রেডি করে দিয়েছি ব্রেক টাইমে খেয়ে নেবে।আর ওষুধ ও খেয়ে নিও।
—-আবার টিফিন!
—-হ্যাঁ।আমি যেন বক্স খালি পাই বাড়ি এসে।আর হ্যাঁ কাউকে দান করতে যেও না।খাওয়ার ভয়ে তো তুমি একদম টিফিন দান করে বেড়াও।
মাহমুদা বেগমের কথা শুনে তারা মুখ গোমড়া করে খাবার টেবিলে বসে আছে।এদিকে পাশে বসে গাসু মুখে খাবার পুরছে আর মিটমিট করে হাসছে।
—-যাই কন ম্যাডাম,আফা কিন্তু হেব্বি ইন্টিজিন্ট।
—-ইন্টিজেন্ট!সেটা আবার কি গাসু?
—-ওহ ম্যাডাম আপনে বুঝলেন না।বুদ্ধিমান।
—-ওটা ইন্টেলিজেন্ট।তোমাদের দুটোকে নিয়ে আমি পাগল হয়ে যাব।একজনের দুষ্টুমি আর তোমার ইংলিশ।উহ!
—-পাগল হলে আগে ভাগে বলো ডা:মাহমুদা।তোমার জন্য পাবনায় একটা সিট বুক করে ফেলি।কি বলো?
আব্রাহাম সাহেবের গলা শুনে সামনে রাগি দৃষ্টিতে তাকালেন মাহমুদা বেগম।আব্রাহাম সাহেবের কথা শুনে গাসু আর তারা হেসেই যাচ্ছে।
—-এই এলেন আরেকজন।এমনিতেই এই দুটোকে নিয়ে পারিনা।তুমি এসেছো আগুনে ঘি ঢালতে।
—-যাই বল তারা মা,তোর মাকে পাগলা গারদে দেখলে কেমন লাগবে বলতো।আমি বরং একটু চোখ বুজে কল্পনা করে নেই।
তারার পাশের চেয়ারটা তে বসতে বসতে কথাগুলো বললেন আব্রাহাম সাহেব।
—-তা যা বলেছো বাপি।মাকে কিন্তু হেব্বি লাগবে।
—-হ মেজর সাব।হেব্বি লাগতো।
—-তোদের দুটোর আজকে খবর আছে।আর তোমার ও।আমাকে নিয়ে মজা হচ্ছে তাই না।
—-তাহলে কাকে নিয়ে করব গিন্নি?
—-হুহ,বুড়ো হয়ে গেল ঢঙ গেল না।
আব্রাহাম সাহেবের দিকে মুখ ঘুরিয়ে খাবার বাড়তে শুরু করলেন মাহমুদা বেগম।
;;;;;
—-আমার ঘরে আমার বিছানায় তুই কি করছিস নীলা?
নীলা মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।নাফিজ রক্তচক্ষু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
—-সেটাই তো।নীলা এটা কোন ধরনের অসভ্যতা।তুই নাফিজের ঘরে কি করছিস?
—- মা আমি তো খেয়াল ই করিনি।গোসল করে বেরিয়েই দেখি বিছানায় নীলা,,,,,ছি।এতো নোংরা মানসিকতা তোর।
নীলা লাফ মেরে গিয়ে নাফিজকে জড়িয়ে ধরতে গেলে ধাক্কা দিয়ে নাফিজ নীলা কে ফেলে দেয়।
—-আআআ।
—-অসভ্য মেয়ে।তুই আমার বোন ভাবতেও ঘেন্না লাগছে আমার।
—-আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি নাফিজ ভাইয়া।তুমি কি দেখতে পাও না।সব সময় আমার সাথে এক ব্যবহার কর।আর কি আছে ঐ ছোট্ট মেয়ে টার মধ্যে।ঐ বাচ্চাটার জন্য তুমি ফিরেও দেখো না আমাকে।
—-একদম চুপ।মিষ্টিকে এর মধ্যে টানবি না একদম।
—-তা কি করব।ঐ মরা বাচ্চাটার জন্য এত দরদ কেন তোমার?
—-নীলা,,,,
নাফিজ নীলার দিকে তেড়ে যেতে গেলে লতিফা আটকে দেয়।
—-মা ওকে তো আমি আজকে মেরেই ফেলব।ওর সাহস কি করে হয় আমার মিষ্টিকে মৃত বলে।
—-মরা কে মরা বলবো নাতো কি বলব।
—-নীলা চুপ কর তুই।
—-মা আজকেই তোমার এই ভাইঝি কে এই বাড়ি থেকে বের করবে।না হলে অফিস থেকে এসে যদি দেখি ওকে আমি নিজেই ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব বলে দিলাম।
;;;;;
“এগারো মাসের বাচ্চাকে ধরষন করলো সাতাশ বছরের যুবক”।
খবরের কাগজে হেডলাইন টা দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো নাফিজের।ব্রেক টাইমে খবরের পাতা উল্টাচ্ছিল সে।এরকম একটা খবর দেখবে কল্পনা ও করতে পারেনি সে।তার কাছে সব অবিশ্বাস্য লাগছে।আদৌ খবরটা সত্যি তো।সত্যতা পরখ করার জন্য নাফিজ ফোন থেকে ইন্টারনেটে ঢুকলো সার্চ দিতে।
ইন্টারনেটের ছবি দেখে আরো আৎকে উঠলো নাফিজ।এবার আর অবিশ্বাসের কিছুই নেই।ছোট্ট বাচ্চাটির ভেজাইনার রক্তাক্ত ছবি টা তো আর মিথ্যা হতে পারে না।ছবিটা দেখার সাথেই ফোন লক করে দিল নাফিজ।
—-এরা মানুষ নাকি জানোয়ার।ছিহ!আচ্ছা আমার মিষ্টি কার হাতে পড়েছিল।ও ঠিকাছে তো?
মিষ্টির কথা মনে পড়তেই বুকটা কেঁপে উঠলো নাফিজের।তার মিষ্টি ও যে ছোটো ছিল।মিষ্টি ঠিকাছে তো।মিষ্টির কোনো ক্ষতি কেউ করেনি তো।মিষ্টি বেচে আছে তো?আজ নাফিজ বড্ড চিন্তিত হয়ে আছে মিষ্টিকে নিয়ে।
আসলেই তো শুধু কি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, আজ তো একটা মেয়ে শিশু ও নিরাপদ নেই।ছোটো বাচ্চা দেখলে যে কেউ কোলে নিতে চাইবে আদর করতে চাইবে এটা ঠিক।কিন্তু কে জানে কারোর মনে এরকম ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটিকে নিয়েও এরকম পরিকল্পনা চিন্তা ভাবনা থাকতে পারে।
আপনি কার কাছে আপনার মেয়ে বাচ্চাটিকে তুলে দিচ্ছেন?খেয়াল রাখছেন তো?ও সে তো ওর চাচা,অমুক তমুক আংকেল।তাতে কি হয়েছে?পুরুষ তো।আপনি কি দেখেন না প্রায়ই এরকম অমুক তমুক আত্মীয়ের দ্বারাই প্রতিনিয়ত কতো শিশু কতো মেয়ে ধরষনের শিকার হচ্ছে।কতজনের খবর পাই আমরা?সবার খবর তো আর খবরের কাগজে উঠে আসে না।কিছু খবর খড়ের গাদার মতো নিচেই চাপা পড়ে যায়।
আদৌ কি সম্ভব হচ্ছে একটা মেয়ে বা মেয়ে শিশুর নিরাপত্তা দেওয়া?সম্ভব সেদিন হবে যেদিন পাল্টাবে আমার মানসিকতা,আমাদের সমাজ।সমাজকে কেউ বদলাতে পারে না।সমাজকে বদলাতে হলে আগে বদলাতে হবে নিজেদের।আমি যদি সচেতন হই তাহলে দেখবেন এই সচেতনতা একটা মেয়ে শিশুর নিরাপত্তা হলেও নিশ্চিত করবে।
চুলায় রান্নার কাজ,অমুক তমুক কাজ সব করার জন্য নিজের বাচ্চাকে কার হাতে তুলে দিচ্ছেন ভুলে যাবেন না।কথায় আছে,”নিজের দাঁত কে ও বিশ্বাস নেই।সুযোগ পেলে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।” আমি এটাও বলব না আত্মীয় রা খারাপ।সবাই এক নয়।হ্যাঁ আসলেই সবাই এক নয়।আপনার বাচ্চাটাকে যেই আত্মীয়ের কাছে তুলে দিচ্ছেন দেখা গেল তার এরকম কোনো খারাপ মানসিকতা নেই।কিন্তু ঐ বাচ্চাটি! ওর ক্ষেত্রে কি বলবেন আপনি?
সে যত কাছের মানুষ ই হোক না কেন।নিজের বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য হলেও তার তদারকি আপনাকে করতে হবে।চোখে চোখে রাখতে হবে আপনার বাচ্চাটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?হতে পারে এই সামান্য সচেতনতা একটু হলেও কমাতে পারে এরকম নৃশংস পাশবিক ঘটনার হার।দিতে পারে আপনার মা,বোন,মেয়ের,আমার নিরাপত্তা ।
বসে বসে এসব চিন্তা ভাবনা করে যাচ্ছে নাফিজ।
—-আসতে পারি ক্যাপ্টেন নাফিজ?
হঠাৎ করে মেয়েলি কন্ঠ শুনে ধ্যান ভাঙলো নাফিজের।সামনে তাকিয়ে দেখে হাসিমুখ নিয়ে ক্যাপ্টেন তানহা দাঁড়িয়ে আছে।
—-জি আসুন।
না চাইতে ও ভদ্রতার খাতিরে ক্যাপ্টেন তানহাকে ভেতরে আসতে বললো নাফিজ।প্রয়োজন ছাড়া কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে একটুও পছন্দ করেনা নাফিজ।যদি এটা ভাবা হয় সে ঘৃনা করে তবে সেটা ভুল।মেয়েদের অনেক সম্মান করে সে।কিন্তু ঐ যে সেই ছোট্ট মিষ্টির মুখ নাফিজকে সবকিছু থেকে আটকে রাখে।
—-কি ভাবছিলেন?
—-আমি?
—-হ্যাঁ।আসলে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম দরজার কাছে আপনার কোনো সাড়া দেখলাম না।তাই ভাবলাম।
—-ওহ।
—-আপনার সাথে একটা কথা ছিল।
—-বলুন।
—-ওরিয়েন্টেশনের দিন আপনি বললেন না আপনি কাউকে খুঁজছেন?
—-হুম।
—-আচ্ছা সে যদি আপনার সামনে সত্যি সত্যি আসে আপনি কি করবেন?
তানহার কথা শুনে নাফিজের বিরক্তি দূর হয়ে যেন চেহারায় কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ভেসে উঠলো।
—-আপনি কি জানেন কোথায় পাব মিষ্টিকে?
—-জানিনা।এমনি জিজ্ঞাসা করলাম?
তানহার কথা শুনে নাফিজের মুখটা যেন অমাবস্যার চাঁদের মতো হয়ে গেল।
—-আচ্ছা আপনাকে যদি বলি আমি,,,,,,,,,
তানহা কথা শেষ করতে পারল না তার আগেই টেলিফোন বেজে উঠলো।নাফিজ ফোন টা কানে নিল।
—-ক্যাপ্টেন নাফিজ বলছি।
—-,,,,,,,,,
—-ওকে স্যার।আমি আসছি।
নাফিজ ফোন রেখে উঠে দাড়ালো।
—-কি হলো?
—-আমাকে স্যার ডাকছেন।আসি।
নাফিজ বেরিয়ে গেল।তানহার মুড টাই খারাপ হয়ে গেল যেন।
;;;;;
—-আরে তারা মামোনি, কেমন আছো?
মেজর ইমরানের কথায় পিছে ঘুরলো তারা।
—-জি আংকেল আলহামদুলিল্লাহ।আপনি কেমন আছেন?
—-এই তো।অনেকদিন পর ইউনিটে এলে।আংকেল দের কে ভুলে গেছো নাকি?
—-না আংকেল।এমনি আসা হয়নি।কলেজ তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিল তাই ভাবলাম বাপির কাছ থেকে ঘুরে যাই।
—-ভালো করেছো।কি খাবে তাই বল?
—-না আংকেল।কিছু খাব না।
—-আরে বলোতো।
—-ও এতোক্খন বসে বসে চারটা রসমালাই খেয়েছে।এখন আর ওকে খাওয়ানোর চিন্তা করো না ইমরান।
মেজর আব্রাহামের কথায় সামনে তাকালেন ইমরান সাহেব।
—-আরে আব্রাহাম।কতোদিন পরে অফিসে জয়েন করেছো তুমি।সকাল থেকে তো দেখাই হলো না।
-‐–এসেই তো একটা কাছে গিয়েছিলাম তাই দেখা হয়নি।
—-বাপি মারিয়া আপু কোথায় ?
—-ওহ।ক্যাপ্টেন মারিয়ার সাথে তোমার তো অনেক ভাব তারা মামোনি। যাও ও নিজের অফিসেই আছে।
—-আচ্ছা আংকেল।
—-সাবধানে যেও মা।
—-আচ্ছা বাপি।
তারা ক্রাচ নিয়ে উঠে দাড়িয়ে মারিয়ার কেবিনের দিকে যেতে লাগল।
কাজ শেষ করে নিজের কেবিনেই ঢুকছিল নাফিজ।কিন্তু একজন কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।
নাফিজের কেবিনে উল্টা দিকে ঘুরে কেউ একজন কাউকে খুঁজছে মনে হয়।ব্যক্তিটি আর কেউ নয় তারা।হাতের ক্রাচ দেখে নাফিজের চিনতে অসুবিধা হলো না।
—-আপনি আমার কেবিনে কি করছেন তারা?
পুরুষ কন্ঠ শুনে ঘুরে তাকালো তারা।
—-আপনি?
—-হ্যাঁ আমার কেবিনে আমি ছাড়া কে থাকবে?
—-আপনার কেবিন?
—-হ্যাঁ।
—-এটা না মারিয়া আপু মানে ক্যাপ্টেন মারিয়ার কেবিন?
—-ও।আপনি ওনাকে খুঁজছেন?
—-হ্যাঁ।
—-আসলে এটা আগে ওনার ছিল।আমি আসার পর ওনাকে বাম পাশের বিল্ডিং এ শিফট করা হয়েছে।এটা এখন আমার কেবিন।আপনি বাইরে নেমপ্লেট দেখেননি?
—- দুঃখিত স্যার।আমি আসলে দেখিনি।
—-স্যার?আপনি আমাকে স্যার বলছেন কেন?আমি আপনার বাবাকে স্যার বলি।
—-তাহলে কি বলবো।আংকেল?
—-আংকেল!
—-হ্যাঁ। বাপির কলিগদের তো আমি আংকেল বলি।তাই আপনাকেও আজ থেকে আংকেল বলব।
—-তাই বলে আংকেল!
নাফিজের যেন কান্না পাচ্ছে তারার কথা শুনে।শেষমেশ কি না তার মতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলেকে তারা আংকেল বলে সম্বোধন করলো।
চলবে—————–
আজকে ধরষনে র বিষয়টা আমি কখনোই তুলতাম না।তুলেছি এজন্য যে আমার ঐ দুটো কথাও যদি দুজন মানুষের মনে একটু সচেতনতা সৃষ্টি করে তবে সেটাই আমার লেখালেখির সার্থকতা।