#নয়নতারা
পর্ব ২৬
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
Suvhan Arag’s Storys
মানুষের জীবনটা একদম কচু পাতার ওপরে থাকা বৃষ্টির পানির মতো।এই আছে এই নেই।হোক সে জীবন বা সুখ বা দুঃখ।
আজ তানিয়ার জীবনটা ঠিক সেই পানির ফোঁটার মতো।তার জীবনের সুখটা এভাবেই কচু পাতা থেকে ঝড়ে পড়ে গেছে।
—-তোর ঐ ন্যাকা কান্না আর কাদবি না।আমার মিষ্টির আর কতো খারাপ চাইবি তুই!
নামাজের মধ্যে ফজলে শেখের কথা শুনে আরো ডুকরে কেঁদে উঠলো তানিয়া।
;;;;;
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা “।আশা করি নয়নতারা উপন্যাসের মতো সেটাও আপনাদের আরো ভালো লাগবে।”আবেদিতা” উপন্যাসে ও আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আরেক বাস্তবতা।
;;;;;
—-শীতের আকাশটা দেখেছেন?কুয়াশা ঢাকা।সব কিছু কেমন ঝাপসা। যেন রঙতুলিতে আঁকা ছবি।
নাফিজের কথায় আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল তারা।খোলা জায়গায় তারা দাড়িয়ে আছে।একপাশে নাফিজ তার একটু দূরত্ব বজায় রেখে তারা।গাসু এদিক ওদিক ঘুরছে আর মেহগনি ফল খুটছে।
—-এতে দেখার কি আছে?শীতকালে তো কুয়াশা থাকবেই।
—-আমিও সেটাই ভাবছি এতে দেখার কি আছে?
নাফিজের কথায় আরো বিস্মিত হলো তারা।তারার অবাক চাহনি দেখে নাফিজ মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো।
—-আপনি হাসছেন কেন ক্যাপ্টেন?
—-আপনি সেই কখন থেকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে।এজন্য বললাম।
—-ওহ।
—-কি দেখছিলেন এতো মনোযোগ দিয়ে?
—-দেখছিলাম না।
—-তাহলে?
—-খুঁজছিলাম।
—-কি খুঁজছিলেন?
—-রংধনুর রেখা।
—-রংধনু এরকম কুয়াশার মধ্যে!
—-সম্ভব না তাই তো।
—-অনেকটা।
—-আমার জীবনটা না এই কুয়াশার মতো ঝাপসা।কিছুই পরিষ্কার নয়।আমি অপেক্ষা করি এক রংধনুর।যেটা এই কুয়াশা ভেদ করবে তার সাত রং এর রেখা তুলবে।
—-পেয়েছেন কি সেই রংধনু?
—-না পাইনি।তবে কেন জানি মনে হয় পেয়ে যাব।আল্লাহ খালি হাতে আমাকে ফেরাবেন না।
—-বুঝলাম না আপনার কথা।
—-এক রংধনুর দেখা পেয়েছি।কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না এটা সেই রংধনু কি না যার আলো দেখবার অপেক্ষা আমি করি।আমি যে হারিয়ে ফেলেছি সব কিছু।শুধু একটা শব্দ ই মনে আছে।রংধনুর রং।আর সব ভুলে গেছি।জানি না চিনতে পারব কি না।আর সে ও আসবে কি না।
তারার কথা শুনে নাফিজের ভেতরে একটা চিন চিন ব্যথা অনুভব হলো।কার অপেক্ষা করে তারা?কোন রংধনু?নাফিজ কি আরেকবার হারাবে নয়নতারা বাগানের রানীকে!
—-আপনার কথা বুঝতে পারছি না তারাননুম।
—-জীবন।আমার না অনেক স্বপ্ন আছে জানেন।স্কুলে সবাই যখন দৌড় প্রতিযোগীতা তে নাম দিত আমার ও ইচ্ছে হত আমি ও দৌড়ে যাই ওদের সাথে।ছিনিয়ে আনি ট্রফি।কিন্তু দেখুন আমি তো তা পারব না।হাঁটতেই পারিনা ঠিকমতো দৌড় তো বাদ ই দিলাম।এরকম ইচ্ছের কথা বলছি।রংধনুর মতো আমার জীবনের সব কুয়াশা কাটিয়ে যদি এই স্বপ্ন গুলোকে ছুঁতে পারতাম।
—-ওহ!আমি ভাবলাম!
—-কি?
—-কিছু না।
—-হুম।
—-আপনার আর কি কি স্বপ্ন আছে?
—-স্বপ্ন তো অনেক আছে।প্রশস্ত রাস্তা হবে।চারপাশে ধানক্ষেত।আমি সাইকেল চালাব।সামনে থাকবে ছোট্ট ঝুড়ি।ঝুড়ি ভর্তি ফুল থাকবে।
—-আর?
—-আপনি বাসায় যাবেন না?
—-যাব।কিন্তু যেতে মন চাইছে না।
—-নয়টা বেজে গেছে।সেই কোন ভোরে এখানে এসেছেন।
—-নয়টা?এতো সময় হয়ে গেছে।
—-হ্যাঁ।
—-এতো তাড়াতাড়ি সময় টা যাওয়ার কি খুব দরকার ছিল?
নাফিজের কথায় ভড়কে গেল তারা।
—-মানে?
—-কিছু না।চলুন আপনি ও বাসায় যাবেন না?
—-হুম।
—-তারা একটা কথা ছিল।
—-বলুন।
—-আপনি কি প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হবেন?মানে এ কদিন তো শুধু বাড়ির সামনে ঘুরতেন।
—-হ্যাঁ।ডাক্তার বলেছে হাঁটাহাটি করতে।ধীরে ধীরে পায়ের আরো ইমপ্রুভ হবে।এজন্য মা ও আর নিষেধ করেনি।
—-আমি কি আপনার সাথে আসতে পারি?
—-আপনি?কেন?
—-এমনি।হাঁটতে ভালো লাগবে।আর একা হাঁটতে কেমন লাগে তাই।
নাফিজের কথার উওরে তারা শুধু নাফিজের দিকে এক পলক তাকালো।আর কিছু বললো না।তারা গাসুকে ডাক দিল।
—-গাসু, গাসু,,,।
—-হ্যাঁ আফা।
—-চলো আমরা বাসায় যাই।
—-আইতেছি।
গাসু তারার কথায় দৌড়ে চলে এলো।
—-আপনি কিন্তু বললেন না তারা?
—-কি বলবো?
—-আমি কি আসতে পারি আপনাদের সাথে?
—-এতোদিন কি বাড়ির সামনে অনুমতি নিয়ে উঁকি দিতেন?
তারার কথায় নাফিজ ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেল।তারা মুচকি হেসে গাসু কে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।
;;;;;
রাতের বেলা খাওয়ার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে নাফিজ আর তার পরিবার।
—-নাফিজ।
—-বলো বাবা।
—-এবার কি করবে ভেবেছো?
—-কিসের কি?
—-দেখো আমাদের বাড়ি টা তো পড়ে আছে।কেউ থাকি না।এভাবে কোয়াটারে থাকতে আমার ভালো লাগে না।তুমি তো জানো আমি এতোদিন বাইরে বাইরে চাকরি করেছি।অবসরের সময় টা খোলা হাওয়ায় কাটাতে চাই।
—-বাবা তোমার কথা বুঝছি না?
—-তুমি এইবার একটা বিয়ে কর।সংসার শুরু কর।তোমাকে রেখে তাহলে নিশ্চিন্তে আমি আর তোমার মা আমাদের ভিটে তে ফিরে যেতে পারব।বুঝেছো?
—-হ্যাঁ বাবা।
খাওয়া শেষ করে নাফিজের বাবা উঠে চলে গেলেন।নাফিজ বসে বসে প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করছে।লতিফা আড়চোখে দেখছে ছেলের কান্ড।
—-নাফিজ।
—-বলো।
—-খাচ্ছিস না কেন?
—-খাচ্ছি তো।
—-একটা কথা বল তো।
—-কি?
—-ঐ সিএম এইচ এ তোর এক স্যারের সাথে দেখা হয়েছিল না।
—-হ্যাঁ।
—-ওনার মেয়ে নাম কি যেন?
—-তারা।
—-তারার প্রতি তোর দৃষ্টি আমার স্বাভাবিক লাগল না।
মায়ের কথা শুনে ধরফরিয়ে নড়েচড়ে বসলো নাফিজ।
—-মানে?
—-মানে তুই ভালো করে জানিস।যাই করবি ভেবে করবি।শুধু বলব তোর অতীত টাকে আর আঁকড়ে থাকিস না।একটা সামান্য আশা নিয়ে নিজের জীবনটা এভাবে কাটিয়ে দিস না।
—-আমি কি করছি জানিনা মা।শুধু এইটুকু বলতে পারি আমি নতুন পথের সন্ধান খুজছি।আমি সেই পথেই পা দিয়েছি।জানিনা কি হবে।নিয়তি কি আমাকে আবার পিছলে ফেলে দেবে নাকি দাঁড় করাবে।
;;;;;
টেবিলে বইয়ের ওপর মুখ গোমড়া করে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে তারা।
—-কি হয়েছে তারা?
মাহমুদা বেগমের কথাতে মাথা তুললো তারা।
—-কিছু না মা।
—-সকাল থেকে দেখছি অন্যমনস্ক হয়ে আছো।
—-কিছু না।
—-শোনো সামনের শুক্রবার বিনোদিয়া পার্কে পিকনিক ইউনিট থেকে।
—-ও।সবাই থাকবে।
—-হ্যাঁ ফ্যামিলি ম্যানদের তো সবাই থাকে।
—-ও।
—-খেতে এসো।আমি কি এখানে খাবার দেব?
—-না তুমি যাও। আমি আসছি।
—-আচ্ছা।
মাহমুদা বেগম চলে গেলে তারার মাথায় অন্য প্রশ্ন ঘুরছে।
—-আচ্ছা ক্যাপ্টেন ও কি থাকবে ?উনি আসবে তো?
চলবে————