#নয়নতারা
পর্ব ২
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
—-একটা কথা কি জানেন ফজলে ভাই।”মা মরলে বাপ হয় তাওই”।লোকমুখে কথাটা খুব প্রচলিত হলেও আসলেই এটা বাস্তব।
লতিফার সোজাসাপ্টা কথাগুলো ফজলে শেখের গায়ে লাগছে।ভেতরে ভেতরে রাগের আগ্নেয়গিরি থেকে যেন ক্রমশ অগ্ন্যুত্পাত হচ্ছে।শুধু সেটা বাইরে দেখা যাচ্ছে না।
—-ভাবী আপনি বাড়ি যান।আমি মিষ্টিকে দেখে রাখব।তানিয়া আর কিছু করলে ওর খবর করে দেব আমি।
—-তানিয়ার খবর করা লাগবে না।ওকে একটু মা হতে শেখান।পরের মেয়েকে যখন নিজের করে দেখতেই পারবে না তাহলে জেনে শুনে এখানে এসেছে কেন।
মিষ্টি দাদীর পেছনে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।একটু পর পর রাহেলা বেগমের শাড়ি আঁকড়ে ধরে উঁকি দিচ্ছে আবার ভয়ে লুকিয়ে পড়ছে।
—-শোনো তানিয়া এই তোমাকে ও শেষবারের মতো বলছি।মিষ্টির গায়ে যদি তুমি আর হাত দেও না তোমার কি অবস্থা করি দেখে নিও।প্রতিবেশী বলে যে কিছু করতে পারব না এটা ভেব না।ওরা জন্ম থেকে ওকে দেখে আসছি আমি।ওর মা নাই থাকতে পারে।ওর কাকী মরে নি।দেশে আইন বলে ও কিছু আছে মাথায় রেখো।
লতিফা তানিয়াকে শাসিয়ে দিয়ে মিষ্টিকে টেনে ওর দাদীর পেছন থেকে বের করলো।
—-আমাকে তোমার কাছে নিয়ে চলো কাকিমা।বাবাই আমাকে মারবে।খুব মারবে।
—-কিছু করবে না।এরপর কিছু করলে আমাকে গিয়ে বলবি।ঠিকাছে।
মিষ্টি মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
—-খালাম্মা আসি।ওকে আপনিও একটু দেখে রাখবেন।ছোটো মানুষ।এরকম মার খেলে কবে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাবে।
—-আইচ্ছা মা তুমি যাও গা।
লতিফা মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হলেন।
;;;;;
—-কি রে মিষ্টি কুমড়ো সকাল সকাল এসে হাজির যে তুই?
—-উহ নাফিজ ভাইয়া তুমি একদম আমাকে ঐ পচা কথা বলবে না বলে দিলাম।
—-তা কি বলবো?তুই যেরকম গুলুমুলু তোর নামের সাথে ঐ মিষ্টি কুমড়োই ভালো খাটে।আমি তো মাঝে মাঝে ভাবি তোর নাম কুমড়ো না রেখে মিষ্টি কেন রেখেছিল?
নাফিজের কথায় গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি।নাফিজ মুচকি হেসে মিষ্টির চুলের ঝুঁটি ধরে টান দিল।
—-সকাল সকাল এখানে কেন এসেছেন রাগপরী।এবার বলেন।
—-দেখো নাফিজ ভাইয়া,বাবাই না আমাকে কাল একটা নতুন বউ পুতুল কিনে এনে দিয়েছে।
নিজের হাতের পুতুলটা উচিয়ে দেখালো মিষ্টি।
—-বাহ খুব সুন্দর হয়েছে।তা পুরানো টাকেও সাথে এনেছিস কেন?ওটা তো দেখেছি।
—-আমি তো ওটা নিয়েই খেলব তাই নিয়ে এসেছি।আর এই নতুন পুতুলটা তোমার।
—-আমি পুতুল নিয়ে কি করব?
—-খেলবে।দুটো বউ পুতুল আমি কি করব?
—-না তুই খেল।তোর আগের পুতুলটা তো পুরানো হয়ে গেছে ওটা ফেলে দে।নতুন টা নিয়ে খেল।
—-না না নাফিজ ভাইয়া।পুরানো জিনিস অনেক ভালো।নতুন জিনিস না একটুও ভালো হয় না।আর নতুন বউ পুতুল গুলো তো আরো পচা হয়।আমি এটা নেব না।তুমি নিয়ে নেও।
—-নিবি না কেন?তোকে কে বলেছে নতুন জিনিস ভালো হয় না।
—-না ভাইয়া সত্যি ভালো হয়না।দেখো না নতুন মা আমাকে কতো মারে।আমার পুরানো মা তো আমাকে মারত না।পুরানো জিনিসই ভালো।
ছোট্ট মিষ্টির দুটো কথার মর্মার্থ নাফিজের চোখদুটোকে ভিজিয়ে দিল।
—-তোকে আবার তানিয়া কাকি মেরেছে তাই না।
—-না না আমাকে মারেনি নাফিজ ভাইয়া।আমাকে মারেনি।আমি কোনো নালিশ করিনি।
মিষ্টি নাফিজের দিকে একবার তাকিয়ে ভয়ে দৌড় দিল।
;;;;;
—-নতুন মা নতুন মা আমাকেও একটু নুডুলস দেও না।অনেকদিন খাই না।খুব খিদে পেয়েছে।
হাত থেকে নুডুলসের বাটিটা টেবিলের ওপর রেখে ঠাস করে মিষ্টির গালে চড় বসিয়ে দিল তানিয়া।
—-শয়তান মেয়ে একটা।সব সময় খালি খাই খাই।যেই একটু খেতে বসেছি ওমনি শুরু করলি তো।আল্লাহ এই মেয়ে তো এবার আমার খাবারে নজর দিয়েই আমাকে মেরে দেবে।
—-ও নতুন মা একটু দেও না।সেই দুপুরে ভাত খেয়েছি।খুব খিদে পেয়েছে।
—-খিদে পেয়েছে।দাঁড়া তোকে জনমের গেলা গেলাচ্ছি আমি।
তানিয়া মিষ্টির গলা ধরে ওর গালের ভেতর খালি কাটা চামচ ঢুকিয়ে দিল।
—-আআআ আ ব্যথা লাগছে।নতুন মা ছাড়ো।
—-ছাড়বো কেন?গেল জনমের মতো গেল।এক টু খেতে বসেও তোর জ্বালায় শান্তি নেই।
—-আ আ।
মিষ্টির কান্না শুনে ও ঘর থেকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে এলেন রাহেলা বেগম।
—-আয় আল্লাহ এই বউ এই তুই কি করতাছোস।
রাহেলা বেগম টেনে হিচড়ে মিষ্টিকে তানিয়ার থেকে ছাড়ালেন।
কাটা চামচের কোনার আঘাতে মিষ্টির মুখের ভেতর ছিলে গেছে।দাঁতের গোড়ায় লেগে রক্ত বের হচ্ছে।
—-তুই কি মানুষ না ডাইনি?এইটুকুন বাচ্চারে কেউ এইভাবে মারে।আমি না আইলে তো মইরাই যাইতো মাইয়াডা।
—-বেশ করেছি।মরে না কেন ও।ওর জন্য আগের দিন উনি আমাকে এতো কথা শুনিয়েছেন।গায়ে হাত তুলতে গেছেন।শয়তান টা মরতে পারিস না তুই।
—-খবরদার মুখ সাইমলে কথা কইবা কইয়া দিলাম বউ।তোমারে গায়ে হাত তোলা ক্যান ঘাড় ধইরা যদি হামার পোলা বাইর কইরা দিত তাইলেই খুশি হইতাম।কাল নাগিনী একখান।আইসেই হামার সংসার ডারে পুরো জারা জারা কইরা ফেলতাছে।
মিষ্টি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদেই চলেছে।
—-থামো বুগো।থামো।আমি আছি না।চলো আমি তুমারে রাইনদা দিমুনে এর থেইকা ভালো খাওন।ওসব খাওনের দরকার নাই।
রাহেলা বেগম মিষ্টিকে থামানোর চেষ্টা করছে।তানিয়া দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত কিড়মিড় করছে।
এর মধ্যে মিষ্টি রাহেলা বেগমের থেকে সরে গিয়ে দৌড়ে গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে নুডুলসের বাটিটা নিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিল।
—–তোকে তো আজকে আমি,,,,,,
—-তুমি পচা খুব পচা ।তুমি খুব বাজে নতুন মা।
—–দাঁড়া আজ তোকে মেরেই ফেলব আমি।
চলবে——-
দুঃখিত।গত পার্ট এ একটা ভুল হয়েছিল।ফজলে শেখের জায়গায় আমি এক জায়গায় রাফাদ নাম দিয়ে ফেলে ছিলাম।পরে পড়ে দেখিনি।তাই এডিট করা হয়নি।