#নয়নতারা
পর্ব ৩৭
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।
আশা করছি ইনশাহআল্লাহ নয়নতারা আবেদিতার কাছে কিছুই নয়।আপনাদের আরো বেশি ভালো লাগবে।
;;;;;
রাত হয়েছে।
খাবার খেয়ে এসে নাফিজ সবে বিছানায় শুয়েছে।তখনই ফোনটা বেজে উঠলো।ফোনের আওয়াজ শুনে বেশ বিরক্ত বোধ করলো নাফিজ।
—-উহ!এখন এতো রাতে আবার কে?
বিরক্তি নিয়ে নাফিজ ফোনটা হাতে নিল।আননোন নাম্বার।এতো রাতে কে হতে পারে এটাই ভাবছে নাফিজ।এর মধ্যে কল টা কেটে গেল।
—-যাক।যে হবে হোক।দরকার পড়লে আবার নিজেই কল দেবে।
নাফিজের ভাবনার মাঝেই আবার ফোনের স্ক্রিনে আলো জ্বলে উঠলো।আবার সেই আননোন নাম্বার।নাফিজ এবার ফোন টা রিসিভ করলো।
—-হ্যালো।
—-আসসালামু আলাইকুম।
নাফিজ তো সালাম শুনে এক প্রকার লাফ দিয়ে উঠে বসলো।নাফিজের মুখে এক বিজয়ী হাসি।এ কন্ঠ যে আর কারোর না তার তারার।
—-তারা আপনি?
—-সালাম দেওয়া সুন্নত।আর উওর দেওয়া ওয়াজিব।
—-ওহ।দুঃখিত।ওয়ালাইকুম আসসালাম।
—-আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ক্যাপ্টেন?
—-না।কেবল শুধু এসে শুয়ে পড়েছি।
—-বাপি আজ সন্ধ্যায় আমাকে নিয়ে গিয়ে নতুন ফোন কিনে দিয়েছে।এটা নতুন নাম্বার।
—-হ্যাঁ তা তো বুঝেছি।কিন্তু আমার নাম্বার টা কোথায় পেলেন?
—-মুখস্থ ছিল।
—-মুখস্থ!
—-হুম।
মুখস্থ কথাটা বেশ অদ্ভুত লাগল নাফিজের।লাগবে নাই বা কেন?কাছের মানুষ ছাড়া আর কারো নাম্বার তো সাধারণত কেউ মুখস্থ করে না।তবে কি নাফিজ হতে পেরেছে নাকি সত্যি হয়ে গেছে তারার কাছের কেউ?
ভেবে চলেছে নাফিজ।এপাশে যে তারা কথা বলছে সেদিকে ও হুশ নেই তার।
—-ক্যাপ্টেন, ক্যাপ্টেন আপনি কি লাইনে আছেন?ক্যাপ্টেন।
—-হুম।আছি আছি।
তারার ডাকে হুশ ফিরলো নাফিজের।
—-কথা বলছেন না কেন?
—-ওই না কিছু না।একটা কথা বলব?
—-কি?
—-হঠাৎ আমার নাম্বার টা মুখস্থ করলেন যে?
নাফিজের প্রশ্নে তারা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।আসলেই তো সে কেন নাফিজের নাম্বার টা মুখস্থ করেছে?
—-তারা।
—-হুম।
—-বললেন না যে।
—-এমনি মনে ছিল।তাই।
—-শুধুই কি এমনি ?
—-এমনি ছাড়া আর কি হবে?আপনি এতো কথা ধরেন কেন বলুন তো?
—-আরে রাগছেন কেন?আচ্ছা শুনুন।
—-কি?
—-সকালে খাতায় যেটা লিখে ছিলাম পড়েছেন?
—-ওহ হো।একদম ভুলে গেছি।
—-পড়েন নি?
—-না।আমার একটুও মনে ছিল না।
—-এখন কি শুয়ে পড়েছেন?
—-হ্যাঁ।মশারির ভেতরে আছি।
—-আচ্ছা ঠিকাছে।কাল সকালে হাঁটতে আসবেন তো?
—-আল্লাহ বাঁচালে ইনশাহআল্লাহ যাব।
—-ঠিকাছে।তখন পড়ে তারপর আসবেন।আমি আপনার উওরের অপেক্ষা তে থাকব।
—-কি এমন লিখেছেন আপনি?
—-তেমন কিছুই না। শুধু আপনি থেকে তুমি তে যাওয়ার ছোট্ট যাত্রা শুরু করেছি।
—-মানে?
—-এতো মানে মানে করতে হবে না।ঘুমিয়ে পড়ুন।
—-আচ্ছা।আল্লাহ হাফেজ।
—-আল্লাহ হাফেজ।
তারা ফোন কেটে দিল।নাফিজ ফোন অফ করতে যাবে তার আগেই ভেসে উঠলো স্ক্রিনে থাকা বউ সেজে বসে থাকা ছোট্ট মিষ্টির ছবি।
নাফিজের বুকের ভেতরটা যেন কামড় দিয়ে উঠলো।ফোনটাকে বুকের বা পাশে রাখল নাফিজ।
—-কেন চলে গেলি মিষ্টি পাখি?আমাকে বড্ড একা করে গেছিস তুই।এতোটা কষ্ট কেন দিলি আমাকে?তোর নাফিজ ভাইয়াকে এতো বড় কষ্ট দিতে পারলি?
বুকের ভেতরে র ব্যথাটা যেন আবার বেড়ে উঠলো নাফিজের।
“অপেক্ষা যে বড় যন্ত্রণা দায়ক।শুধু পোড়ায়, দগ্ধ করে,কিন্তু ঝলসে যায় না শরীর টা,দেখা যায় না তার তীব্রতা,শুধু অনুভবে থেকে যায়।”
আচ্ছা কখনো যদি এমন হয় ,মিষ্টি ফিরে এসেছে তার নাফিজ ভাইয়ার কাছে।কিন্তু তার আগে তারা চলে এসেছে নাফিজের নয়নতারা বাগানে।কি হবে তখন?
ভাবতেই নাফিজ উঠে বসলো।সত্যি তো এটা তো সে ভেবে দেখেনি।
—-না আমি পারব না তারাকে ভুলতে।আমি পারব না ওকে ছাড়তে।কিন্তু আমি যে তোকে ও ছাড়তে পারব না মিষ্টি।
জোরে জোরে দম নিচ্ছে নাফিজ।সত্যি তো যদি কখনো এমন হয় তখন কি করবে সে? বর্তমানকেই উচিত ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকা।
সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল নাফিজ।
—-আমি তারাকে ভালোবাসি।খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।আমার বিশ্বাস তারার মনেও আমার জন্য এক টুকরো হলেও অনুভূতি আছে।নাহলে কেন ই বা সেও আমার অপেক্ষা তে থাকবে।যেই সময় টা আমার তোকে একান্ত প্রয়োজন ছিল মিষ্টি সে সময় টা আমি তোকে পাইনি।কদিন আগেও এক রাত ঘুমোতে পারতাম না আমি নিশ্চিন্তে।কিন্তু আজ।আজ আমার স্বস্তি ফেলার মতো জায়গা আছে।আমার স্বস্তি আমি খুঁজে পাই ঐ ছোট্ট তারার মাঝে।হতে পারে ও অপূর্ণ।কিন্তু ও যে আমাকে নিজের অজান্তেই পূর্ণ করেছে।
“আমি পারব না তাকে ছাড়তে যে আমার অসময়ে ছিল,
আমি পারব না তাকে ছাড়তে যার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাহনি,
যার ক্ষুদ্র বিচরণ আমাকে জাগিয়ে দিয়েছিল,
আমাকে গ্রহণ করতে শিখিয়েছিল নতুন করে জীবনের আনন্দ টাকে,
তার জন্য যদি অতীত আমার পিছুটান হয় হোক,
সেই অতীত আমি ছাড়ব,
কিন্তু অসময় কে ছাড়তে পারব না সু সময়ের স্রোতে।”
ভবিষ্যত মানুষের অজানা।তবুও প্রস্তুতি নিতে হয়।নাফিজ ও প্রস্তুত এরকম অনাকাঙিক্ষত ভবিষ্যতের জন্য।
;;;;;
রাত দুটো বাজে।
তারার চোখে ঘুম নেই।সে যে শুয়ে শুয়ে আরেক গভীর চিন্তায় মগ্ন।
—-আচ্ছা ক্যাপ্টেন,আপনার সাথে আমার কেন এতো সংযোগ বলতে পারেন?আমাদের মাঝে না আছে বন্ধুত্ব,না আছে আত্মীয়তা।কিন্তু আছে এক অদৃশ্য সম্পর্ক।কিন্তু সেটা কিসের।
ভাবতে ভাবতে আবার চোখ বুজলো তারা।কিন্তু আর বেশিক্ষণ থাকতে পারল না।তার আগে আবার চোখ খুলে ফেললো।
—-উহ।সেই এক স্বপ্ন।কেন বার বার তাড়া করে আমাকে?আমি তো পাই না তাকে।কিভাবে পাব?আমি জানিনা সে কোথায়?সে কেমন আছে?তার কি আদৌ মনে আছে আমার কথা?আমি শুধু একবার চাই আল্লাহ।শুধু একবার শেষবারের জন্য হলেও আমার একমাত্র বন্ধু টার সাথে সাক্ষাত করতে।আমি যে আজ ও পারিনা আর কাউকে বন্ধু ভাবতে।
;;;;;
সকাল বেলা।
নাফিজ সবে সাইকেল নিয়ে তারা দের বাড়ির সামনে আসছে।হঠাৎ করে সামনে থাকা মানুষ টিকে দেখে নাফিজের মুখে হাসি ফুটলো।
আজ তারা নাফিজের আগে চলে এসেছে।নাফিজ মুচকি হেসে তারার পাশে গিয়ে সাইকেল দাঁড় করালো।
—-আজ দেখি লেডিস ফারসট।
—-হুম।আপনি আজ ফেল্টু করেছেন?
—-আফা এই ফুলচোর ডার ও কি কাল পাতিহাঁস পরীক্ষা ছিল?
গাসুর কথা শুনে নাফিজের হাসি নিমিষেই উধাও হয়ে গেল।।তারা ভ্রু কুচকে গাসুর দিকে তাকালো।
—-গাসু হচ্ছে টা কি?কিসের সাথে কি মিলাচ্ছো?
—-তারা গাসু কি বলছেন?
—-কি আর বলবে?সব সময় এর ওর টা দেখে লিখবে।তাতে টেনে টুনে জেএসসি পাশ করে ছিল।এখন আল্লাহ জানে কি করবে এই মেয়ে।কাল ইতিহাস পরীক্ষা তে ফেল্টু মারছে।
—-না আফা।আমি ফেল করিনাই।
—-কিভাবে?
—-স্যার তো আমার খাতা দেখে খুব খুশি হয়েছিল।তাই তো দেখি স্যার খাতার ওপর দুটো রসগোল্লা একেছেন।স্যার খুশিতে মিষ্টি খাইতে চাইছিল বোধ হয়।
গাসু নিজের মতো বকে এদিক ওদিক লাফ ঝাঁপ দিচ্ছে।গাসুর কথা শুনে তারা আর নাফিজ হেসেই যাচ্ছে।
—-তারা।
—-হুম।
—-খাতা পড়েছিলেন?
—-উহ।মনে নেই।সরি।
—-আচ্ছা আজ এখান থেকে গিয়ে পড়বেন বলে দিলাম।
—-ঠিকাছে।চলুন হাটি।
—-চলুন।
;;;;;
সকাল বেলা কিছু কাপড় চোপড় ইস্ত্রি করতে বসেছেন মাহমুদা বেগম।
—-তারা কোথায় মাহমুদা?
—-ও তো গাসুকে নিয়ে মর্নিং ওয়ালক এ গেছে।
—-ও।সৈকত ওঠেনি?
—-না।ঘুমোচ্ছে মনে হয়।তাই ডাকিনি।শোনো তোমার শার্ট দু টো ইস্ত্রি করেছি।আর কিছূ থাকলে দিও।আমার তারা র জামা দুটো ওর ঘরে দিয়ে আসি।
—-আচ্ছা।
মাহমুদা বেগম তারার জামা নিয়ে তারার ঘরে গেলেন।জামা দুটো আলমারিতে রাখলেন।
—-দেখোতো মেয়ের কাজ।পড়ার টেবিল টা এলোমেলো করে রেখেছে কেমন?
মাহমুদা বেগম তারার টেবিলের ওপর থেকে বই খাতা সব গুছিয়ে দিচ্ছেন।
—-দেখো অবস্থা।খাতায় মাত্র দুই পৃষ্ঠা আছে।এখনো বলেনি মেয়েটা যে খাতা শেষের পথে।একে নিয়ে পারি না।দেখি সব খাতা গুলোর পৃষ্ঠার অবস্থা।
মাহমুদা বেগম তারার সব খাতা গুলো উল্টে পাল্টে দেখছেন।যে গুলো শেষের পথে সেগুলো আলাদা করছেন।হঠাৎ করেই তার চোখ আটকে গেল একটা খাতার মাঝে।
—-আরে।এটা কার হাতের লেখা!এটা তো তারা র নয়।আর কি সব লেখা এটা।প্রেয়সী!
পুরোটা পড়ে মাহমুদা বেগম বেশ অবাক হলেন।আরো নিচে লেখা ক্যাপ্টেন নাফিজ।
চলবে———-
মিষ্টির বেচে থাকা না থাকা সেটা ইনশাহআল্লাহ ৫ অথবা ৭ পার্ট পরে আপনাদের সামনে আনব।