#নয়নতারা
পর্ব ৪২
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।
আশা করছি ইনশাহআল্লাহ নয়নতারা আবেদিতার কাছে কিছুই নয়।আপনাদের আরো বেশি ভালো লাগবে।
;;;;;
নাফিজকে নিজের সামনে দেখে তারার বুকটা কেঁপে উঠলো।তারার চাহনি শুধু নাফিজের দিকে।নাফিজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারার দিকে।যেন কতকাল পরে সে দেখছে তারাকে।এক প্রকার চোখের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত নাফিজ।
বৃষ্টিতে নাফিজের খাড়া চুলগুলো ও ভিজে গেছে।সামনের দিকে কপালের সাথে লেপ্টে গেছে কিছু চুল।মুখেও পানির ফোটা।তারার হার্টবিট যেন বেড়েই যাচ্ছে।নাফিজ তারার একদম কাছেই দাড়িয়ে আছে।
—-কি মনে আছে কি কাউকে?কেউ ছিল সেটাও কি ভুলে গেছো?তোমাকে আজ আচ্ছা মতো বোঝাবো এই কেউটাকে ভোলার পরিণাম।
নাফিজের কথা শুনে কেঁপে উঠলো তারা।তারার কাঁপুনি দেখে নাফিজ আরো শক্ত করে তারার বাহু ধরলো।তারা যেন আরো একবার বিদ্যুৎ এ শক খাওয়ার মতো কেঁপে উঠলো।
—-ক্যাপ্টেন আপনি এখানে!
—- ওহ যাক একদম ভুনা করে লেবু দিয়ে মেখে খেয়ে ফেলো নি।হাড্ডি গুলো চিবুনোর জন্য এখনো অবশিষ্ট রেখেছো।
নাফিজের কথা শুনে তারা বেশ অবাক হলো।এরকম উদ্ভট টাইপের কথা অবাক হওয়ারই কথা।নাফিজের চোখের দিকে তাকিয়ে আবার ঢোক গিললো তারা।নাফিজের চোখে স্পষ্ট রাগ,চাপা অভিমান সব যেন ফুটে উঠেছে।
—-কি হলো কথা বলছো না কেন?
—-আপনি এখানে কি করে এলেন?
—-তুমি কি ভুলে যাচ্ছো আমি একজন আর্মি অফিসার।উপরে ওঠা ওপর থেকে লাফ দেওয়া এগুলো আমার কাছে কিছুই নয়।
—-কেন এসেছেন এখানে?যান এখান থেকে।বাপি মা চলে আসবে।
—-আসুক।তাতে আমার কি?
—-হাত ছাড়ুন আমার।আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন।
—-লিমিট কিছুই ক্রস করিনি।কিন্তু এখন করব।এমনভাবে করব আমার খাচা ছাড়া আর কোথাও তোমার জায়গা হবে না বলে দিলাম।
—-পাগল হয়ে গেছেন আপনি?
—-অনেক আগেই হয়েছি।এখন শুধু তোমাকে নিয়ে পাবনা যাওয়া বাকি।
—-কিহ!
—-আমাকে বিয়ে করবে কি না বলো?
—-মানে?
—-তোমাকে আমার তিন নম্বর বাচ্চার মেজ ভাইয়ের বড় বোনের মা বানাব।
নাফিজের কথা শুনে তারা হা হয়ে নাফিজের দিকে তাকিয়ে আছে।
—-হা করে আমার রূপ দেখতে বলিনি।হ্যাঁ কি অবশ্যই হ্যাঁ এটা বলো।
—-এটা আবার কোন ধরনের ফাজলামি?
—-ফাজলামি এতোদিন অনেক করেছো।আজ তোমার খবর আছে।
—-আপনি আমার হাত ছাড়ুন বলছি।না হলে কিন্তু আমি চেঁচিয়ে বাপি মা কে ডেকে আনব।
—-বিয়ে করবে কি না বলো?
—-আপনি অনেক বড় ভুল করছেন।
—-কিসের ভুল?নিজে তো খুব বলতে পারো আমার মতো মেয়েকে কেউ ভালোবাসতে পারে না।ঠিকাছে মানলাম পারে না।কিন্তু কেউ বাসলে সেটাকে কেন অস্বীকার করছো?
—-আপনি চলে যান এখান থেকে।
—-আমি তো এখানে আসিনি।তুমি আমাকে ডেকে এনেছো?
—-কখনো না।আমি কখন আপনাকে ডাকলাম!
নাফিজ এবার নিজের একহাত দিয়ে তারার গালে স্পর্শ করলো।তারার কাপুনিটা আরো বেড়ে গেল।তারা চোখ বুজে ফেললো সাথে সাথে।এর মধ্যে নাফিজ হাত নামিয়ে ফেললো।
—-তোমার মনে আছে তারা।আমি বলেছিলাম না তুমি নিজে মুখে আমাকে ডাকবে না।কিন্তু ঠিক ডাকবে।সত্যি বলোতো প্রতিদিন সকালে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দূরের মেহগনি গাছের দিকে তাকিয়ে কেন চোখের পানি ফেলতে?কেন উদাস হয়ে থাকো সব সময়?কেন ফোনে আজো আমার দেওয়া মেসেজ গুলো রেখেছো।কেন প্রতি রাতে মেসেজ গুলো পড়ে আরেকবার চোখ ভেজাও।আর আজ কেন কলেজে ঐ ভাবে তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে?বলো।
তারা এবার চোখ খুলে নাফিজের দিকে তাকালো।নাফিজের চোখে পানি এসেই গেছে।তারার চোখ দুটো ও ছলছল করে উঠলো।
—-তুমি কি অস্বীকার করতে পারবে তারা আমার জন্য কোনো অনুভূতি নেই তোমার মনে ?কি হলো বলো?
—-আপনি চলে যান ক্যাপ্টেন।
—-আমি আমার উওর চাইছি তারা।
—-চলে যান আপনি।বললাম না শোনেন না আপনি।কেন নিজের জীবন টা নষ্ট করতে চাইছেন?
—-এতক্ষণ ধরে অনেক ভালো ভাবে বোঝালাম তারা।কিন্তু তুমি শুনলে না।এখন আমিও নিরুপায়।এখন যেটা করতে চাইছিলাম না সেটাই করতে হবে আমাকে।
—-মানে!কি করবেন আপনি?
—-একটা ভয়ঙ্কর কাজ।এর পরে তুমি আর না করতে পারবে না।তোমাকে আমার ই হতে হবে।
কথা গুলো বলেই নাফিজ শক্ত করে তারার দুই বাহু আবার চেপে ধরলো।তারা ছটফট করছে ছাড়ানোর জন্য।নাফিজ ক্রমশ ই এগিয়ে যাচ্ছে সামনে থাকা গোলাপের পাপড়ি দুটোর দিকে।
—-ক্যাপ্টেন থামুন বলছি।আপনি এমন কিছু করবেন না।ক্যাপ্টেন!
;;;;;
বৃষ্টি থেমে গেছে।আসরের আজান দিয়ে দিয়েছে।আব্রাহাম সাহেব ঘুম থেকে উঠতেই মাহমুদা বেগম সৈকতকে নিয়ে ঘরে আসলেন।
—-শোনো।
—-হুম বলো।
—-কোথায় যাচ্ছো?
—-নামাজ পড়তে হবে না।ওজু করতে যাচ্ছি।
—-একটু পরে যাও।
—-কেন?
—-সৈকত কি বলবে নাকি আমাদের।সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে।তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে।
—-কি রে সৈকত কি বলবি?
সৈকত গিয়ে খাটের ওপর বসলো।মাহমুদা বেগম ও ঘরের কোনের চেয়ারটা টেনে বসলেন।
—-চাচু চাচিমা শোনো আগে খুব ভালো করে আমার কথা শুনবে।তারপর উওয দেবে।অযথা রাগ করবে না।
—-কেন?কি এমন বলবি যে রাখ করব আমরা!
—-আছে চাচিমা।
—-আহ মাহমুদা।বলতে দেও ওকে।
—-নে বল।
—-আচ্ছা চাচু তারার জন্য কিছুদিন আগে একটা ছেলে নিজে প্রস্তাব এনেছিল না।মনে আছে তোমার?ঐ যে ক্যাপ্টেন নাফিজ।
—-হ্যাঁ কেন?কি হয়েছে?
—-তোমরা মেনে নিলে না কেন বলতে পারো আমাকে?
সৈকতের কথা শুনে আব্রাহাম সাহেব আর মাহমুদা বেগম একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন।
—-কেন কি হয়েছে?
—-আগে আমার কথার উওর তো দেও।
—-দেখ তারা রাজী না।আর তার চেয়ে বড় কথা তারার মতো অসুস্থ মেয়েকে ও কেন প্রস্তাব দেবে বলতো?
—-অসুস্থ মেয়েকে প্রস্তাব না দেওয়াটা দোষের।দেওয়াটাকেও কেন দোষের বলছো?
সৈকতের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন আব্রাহাম সাহেব।
—-দেখ সৈকত ছেলেটার বয়স দেখেছিস!তারার থেকে কত বড়।
—-কত আবার দশ বছরের বড়।তো?ওকে দেখলে কি মনে হয়?আর মেয়ে র বিয়ে দিতে গেলে তো সব সময় ভালো এসটাবলিশ ছেলে চাও তোমরা।তাহলে?অনার্স পাশ করে বেরোলেই কিন্তু সবাই একটা ভালো চাকরি পায় না।একটা ভালো পজিশনে যেতে গেলেও অনেক কষ্ট যেমন করতে হয় তেমন বয়স ও বেড়ে যায়।এই দেখোতো আমার নিজের ই তো সাতাশ চলছে।তাহলে?ছেলে এসটাবলিশ দেখবে আবার বয়স পচিশের কোঠায় চাইবে এটা কিভাবে সম্ভব বলো?
—-সেটা ঠিক।
—-তাহলে?আর চাচু তুমি নিজেই একজন আর্মি অফিসার।একটা ভালো পর্যায়ে যেতে গেলে তো বয়স বেশি হবেই।
—-সব তো বুঝলাম।কিন্তু তুই এই কথা কেন বলছিস ?
—-তারার দিকটা দেখেছো?কদিন ধরে না ঠিক মতো খায় না পড়াশোনা করে।সব সময় জানালার ধারে উদাস হয়ে দাড়িয়ে থাকে।কেন বোঝো?
—-কেন?
—-চাচু তোমার মেয়ে প্রতিদিন সকালে জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে।চোখের পানি ফেলে।ঐ রাস্তা দিয়ে তো এ কদিন সকাল বেলা ঐ ক্যাপ্টেনের সাথে চলাফেরা করতো।তারার ও না ঐ নাফিজকে নিয়ে মনে কিছু আছে।না হলে তুমি বলো পরীক্ষা তে তাই সে টেনে টুনে পাশ করছে।কোন পর্যায়ে গেছে ও!
—-কিন্তু তারার যদি নাফিজকে ভালো লেগেই থাকে তাহলে ও এতো দিন জানায়নি কেন?
—-চাচিমা তোমার বিয়ের সময় কি তুমি তোমার বাবা কে বলতে পেরেছিলে তুমি বিয়ে তে রাজী কিনা?
—-এত দূর গড়িয়েছে অনেক আগেই আন্দাজ করেছি আমি।আমার মেয়েটা দিন দিন শুধু মন মরা হয়ে থাকে।
—-শোনো আজ নাফিজ আসবে।
—-কেন?
—-আমি আসতে বলেছি।উনি নিজেও তো ভালো নেই।আমার থেকে তো প্রতিদিন তারার খোঁজ নিত।
—-তোর থেকে!
—-হ্যাঁ।
—-আমি ও তো দেখি নাফিজ অফিসেও কেমন অন্যমনস্ক হয়ে থাকে।
—-চাচু আমার মনে হয় এগোনো উচিত।ছেলেটা সত্যি তারাকে ভালোবাসে।আমি নিজেই তো শুনেছি তারার থেকে ছেলেটা কতো কেয়ার করে তারার।
—-আমার যে ভয় হয় সৈকত।আমার মেয়েটাকে যদি ও কষ্ট দেয়।ছোট থেকেই এমনিতেই না জানি কতো কষ্ট পেয়েছে।যেদিন ওকে পেয়েছিলাম ওর শরীরের মারের দাগ দেখে বুক কেপে উঠেছিল আমার।আজ ও যেন আমার চোখের সামনে ভাসা ছোট্ট হাত পায়ের ঐ দাগ গুলো।সেই থেকে আজ অবধি কখনো ওকে মারা তো দূরে থাক জোরে কথা বলিনা আমি ওর সাথে।
—-চাচু তুমি তো কাছ থেকেই দেখো ঐ ছেলেটাকে।তুমি বলো ও কেমন?
—-নাফিজ ছেলেটা সত্যি অনেক ভালো।ইউনিটে যেমন নামডাক আছে তার থেকেও অনেক বেশি ভালো।এতো মেয়ে কলিগদের সাথে কাজ করে কখনো দেখি না কাজের বাইরে কারোর সাথে কথা বলে।আর বড়দের ও যথেষ্ট সম্মান করে।আজান শুনলেই হলো কাজ ফেলে আগে নামাজে ছুটে।ও সত্যি অনেক ভালো ছেলে।
—-তাহলে সমস্যা কোথায়?
—-আমার তারা সুখি হবে তো?
—-চাচু সুখের কথা আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারে না।তারা ছোট থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছে।এখনো পাচ্ছে।ঠিকমতো চলতে পারে না।আল্লাহ নিশ্চয়ই এতো টা অসুখী ওকে করবেন না।আজ নাফিজ আসবে।তোমরা কথা বলবে ওর সাথে।
—-কিন্তু তারা?
—-ও রাজী হয়ে বসে আছে।
—-কিভাবে?
—-ওতো ভেবো না তো।তোমার মেয়ে যথেষ্ট জেদী।সামনে জেদ দেখাবে আর তলে তলে দেখো একদম এক আর্মিকে পটিয়ে বসে আছে।
—-আচ্ছা ঠিকাছে।
—-তাহলে একটু গোছগাছ করো।
—-ও কি ওর মা বাবাকে নিয়ে আসবে?
—-হ্যাঁ।আজ একদম প্রস্তুত হয়েই আসবে ওরা।
—-আচ্ছা।দেখি তাহলে একটু নাস্তা বানাতে হবে তো।আগের দিন তো ছেলেটাকে কিছু মুখেও দিতে দেইনি।
—-যাও যাও।
মাহমুদা বেগম উঠে গেলেন।সৈকত ও উঠে পিছু পিছু গেল।
;;;;;
ভেজা জামা কাপড় বদলে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে তারা।বিকেলের কথা মনে পড়তেই আবার কেপে উঠছে সে।
—-আমি তো সামান্য কথাই বললাম তারা।তুমি তো দেখছি নিজে নিজেই প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছো।করব নাকি ভয়ঙ্কর কিছু।
নাফিজের বলা কথাগুলো এখনো বাজছে তারা কানে।
না নাফিজ কোনো ভয়ঙ্কর কাজ করেনি।সে তো চায়না এভাবে তার প্রেয়সীকে পেতে।প্রেয়সীকে নিজের করে একদম তিন কলমা পড়ে পাওয়ার জন্য সে আরো অপেক্ষা করতে রাজী।
চলবে————-
বাড়িতে অনুষ্ঠান দু দিন ধরে।সরি ফর লেট।