#নয়নতারা
পর্ব ৫৩
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
;;;;;
(প্রথমেই বলে দেই,আজকের পর্ব আমি সম্পূর্ণ দুজন গারো থেকেই সব শুনে ইনফরমেশন নিয়ে লিখেছি।
মমনী সিমসাং আর গাসুয়া মাংসাং।শুধু উপন্যাস এর চরিত্র হলেও দুজন ই বাস্তবে আছেন)
;;;;;
পথের চারপাশ দিয়ে উঁচু নিচু পাহাড় দেখা যাচ্ছে।সবুজের সমারোহ চারপাশে।পাহাড়ের ছোটো ছোটো পথ।পাহাড়গুলো দেখে মনে হচ্ছে গাড়ির সাথে সাথে তারাও পথ চলছে।মাঝে মাঝে রাস্তায় লোকজন ও দেখা যাচ্ছে।সবার চেহারা অন্য রকম।আদিবাসী হলে যেটা হয় আর কি।বাঙালিও দেখা যাচ্ছে।বেশ ধীরেই এগিয়ে চলছে প্রাইভেট কারটা।
তারা গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দৃশ্য উপভোগ করছে।ড্রাইভারের পাশে সৈকত বসা।পেছনে আব্রাহাম সাহেব আর মাহমুদা বেগম।তার পেছনে তারা আর নাফিজ।
তিন টা বছর কেটে গেছে।
আজ সবাই মিলে ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্য এ যাচ্ছে।আজ গাসুর বিয়ে।
নাফিজের বেশ রাগ লাগছে তারার প্রতি।বাইরের দিকে তাকিয়েই বসে আছে।নাফিজের দিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই তার।নাফিজ তারার গায়ের সাথে আরো ঘেষে বসলো।তারা একটু চমকে উঠলো।জানালা ছেড়ে পেছনে তাকালো।
ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—-কি?
নাফিজ তারার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
—-বউ সোনা তুমি কি মাঝে মাঝে ভুলে যাও তোমার একটা বর আছে।
—-আজব!ভুলব কেন?
—-তাহলে পাত্তা দিচ্ছো না কেন?
—-পাত্তার প্রশ্ন আসছে কেন!
—-আসবেই তো।আমার বড্ড হিংসে হচ্ছে ঐ পাহাড় গুলোকে দেখে।আরো ঐ গাছগুলোকে।
—-কেন?
—-ওদের জন্য আমার বউ সোনা আমার দিকে মনোযোগ ই দিচ্ছে না।
নাফিজ কথা গুলো বলে মুখ টা গোমড়া করে একটু দূরে সরে বসলো।তারার বেশ রাগ হচ্ছে।নাফিজ সব সময় এই এক কাজ করবে।তারার মনে হয় বউ পাগলদের জন্য যদি কোনো নোবেল দেওয়া হতো নাফিজ নিশ্চিত সেটা পেত।উঠতে বসতে তারার আঁচল ঝুলে থাকবে।
—-আপনি ও না!একটু ও বদলালেন না।
—-বদলানো প্রেমিক পুরুষের ধর্ম নয় প্রিয়তমা।প্রেমিক পুরুষের শুধু ভালোবাসতে হয় প্রয়োজনে ভালোবাসা টাকে প্রতি মিনিটে বাড়াতে হয়।প্রবল করতে হয়।তীব্র থেকে তীব্রতর।বদলে যাওয়া সে তো গিরগিটির কাজ।প্রেমিক পুরুষের বদলানো কখনো সুখ দেয় না প্রিয়তমা।
—-আসলেই আপনার সাথে পেরে উঠব না আমি।
—-গাসুর তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।তোমার কষ্ট হবে না?
—-হবে।খুব কষ্ট হবে।ওকে আমি আমার বোনের মতো ভালোবাসি।কিন্তু আমি চাই ও ভালো থাকুক।
—-ওকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিচ্ছে কেন বলোতো?
—-কি করবে?ওর পরিবার যথেষ্ট গরীব।আর পড়াশোনা তো ওর কি বলবো।
—-কিন্তু আমি তো জানতাম গারোদের মেয়েরাই বাইরে কাজ করে।ওরা মাতৃতান্ত্রিক ।গাসু ওর বর কে খাওয়াবে কি?
—-আগে এমন ছিল।এখন সব বদলেছে।ছেলেরাও কাজ করে।চাষ করা বা চাকরি করা বলুন।গাসুর হবু স্বামী ও তো চাকরি করে।আপনাকে তো বলেছিলাম আমি।
—-ও।ভুলে গেছি।
—-গাসুর কিন্তু এটা প্রেমের বিয়ে।
—-তাই নাকি?
—-হুম।হৃদ জেডেন আরেং মানে ওর যে বর তার সাথে ছোট থেকেই ওনার কাহিনী ছিল।
—-ওরে নাম!
—-হুম।আমিও তো ওদের বাড়িতে গেছি কয়েকবার।খুব অতিথিপরায়ণ ওরা।তখন ও দেখতাম গাসু সুযোগ পেলে একটু ঘোরাঘুরি করতে যেত।
—-বাপরে!ঐটুক মেয়ে এতো কিছু!
—-হুম।
—-কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কিছু।
—-কি?
—-ওর মতো হাফ মেন্টাল কে ঐ কি যেন নাম বললে ও ভালোবাসলো কি করে!
—-আপনি আমাকে কিভাবে ভালোবেসেছেন?
তারার প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুচকে তাকালো নাফিজ।
—-মানে?
—-ভালোবাসার সংজ্ঞা লাগে না,কারণ লাগে না।অকারণেই এসে যায়।হুট করে।
কথা বলতে বলতে তারা নাফিজের হাত এর ভাজে নিজের হাত রেখে কাঁধে মাথা রেখে বাইরের দিকে মনোযোগ দিল।নাফিজ মুচকি হেসে নিজেও তাকালো বাইরের দিকে।
;;;;;
গাসুদের বাড়ির সামনে এসে নামলো প্রাইভেট কার।দূর থেকে একটা গারো বাচ্চা তাদের দেখে জোরে চিল্লিয়ে তাদের ভাষায় কি যেন বললো।হয়তো সবাইকে ডাকছে।
একটু পরেই গাসুর মা বাবা বোন গাসু চলে আসলো।গাসু দৌড়ে এসে তারাকে জড়িয়ে ধরলো।
—-আফা।
—-কেমন আছো গাসু?
—-ভালা না।আপনার জন্য কষ্ট লাগে।
—-আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
গাসুকে সরিয়ে দিয়ে গাসুর বোন মমনী মাংসাং এগিয়ে আসলো তারার দিকে।তারার চিনতে কষ্ট হলো না।এর আগেও এখানে এসেছে সে।
—-তারা আপা।
—-কেমন আছো মমনী?
—-খুব ভালা।আপনে?
—-আমিও।
পেছন থেকে গাসুর মা তাদের ভাষায় ওনাদের ভেতরে নিয়ে যেতে বললেন।গাসুদের বাড়ি একদম সাধারণ বাড়ি ঘরের মতোই।আধুনিকতা সব জায়গায় ছেয়ে গেছে।এখন আদিবাসীরাও উন্নত হয়েছে।তাদের ঘর বাড়ি চাষ পদ্ধতি কিছু কিছু জিনিস বেশ পরিবর্তন করেছে তারা।
ভেতরে ঢুকতেই মমনী তারা আর নাফিজকে একটা ঘরে নিয়ে বসতে দিল।গাসুর বিয়ে তাই তাকে লাফালাফি কম করতে দেওয়া হচ্ছে।মমনী সব কাজ করছে।
—-আপা আপনারা বসেন এখানে।
—-মমনী শোনো?
—-হ আপা।
—-তোমার বিয়ে না দিয়ে আগে গাসুর বিয়ে হচ্ছে যে?
—-আপা আমি সন্ন্যাসিনী হতে চাই।আমি মানুষের সেবার কাজে যেতে চাই।মাদার তেরেসার মতো।এজন্য গাসুটার বিয়ে হচ্ছে।
—-ও আচ্ছা।
—-আপনারা বিশ্রাম করুন।ও আরেকটা জিনিস ভুলে গেছি।
—-কি?
মমনী ঘরের বাইরে গেল।একটু পর আবার আসলো।হাতে কিছু কাপড় নিয়ে।নিয়ে তারার হাতে দিল।
—-এগুলো কি?
—-আমাদের মহিলাদের জাতীয় পোশাক।দকমান্দা আর দকশাড়ি।আর এটা পুরুষদের
ধুতি।আপনাকে আগে কখনো তো দেই নি।বিয়ে উপলক্ষে উপহার এটা আপনার জন্য।পছন্দ হলে পড়বেন।
—-আচ্ছা।
মমনী চলে গেল।নাফিজ বসে বসে ঘরের চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে।তারা কাপড় গুলো নিয়ে বিছানার ওপর রাখলো।
—-রাখলে কেন?পড়বে না?
—-পাগল আপনি!আমি ওরকম করে শাড়ি পড়ে বের হব!এদের কালচার এটা।আমার তো না।
—-তাহলে নিলে যে?
—-খুশি হয়ে দিয়েছে।নিলাম।
—-যাই বলো।পড়লে তোমাকে বেশ লাগবে।
নাফিজ তারা দিকে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো।
;;;;;
দুপুর হয়েছে।
মাহমুদা বেগম আর আব্রাহাম সাহেব বাইরে বেরিয়ে ঘুরে দেখছেন।
কয়জন মহিলারা একসাথে এক জায়গায় বসে কাটাকুটি করছে।পেয়াজ রসুন কাটছে।ওপাশে ছোট ছেলেমেয়েরা ছোটাছুটি করছে।বয়স্ক রা এদিকে বড় বড় পাতিলে রান্না বসিয়েছে।একদল ছেলে কলার পাতা কেটে এনেছে।সেগুলোকে কেটে ছোট করছে।
দুপুর গড়িয়ে বেশ বেলা হয়ে গেছে।সবাই খেতে বসেছে।অতিথি দের জন্য আলাদা প্যান্ডেল করা।গারোরা মানুষকে খুব সহজে আপন করে নেয়।আশে পাশের মুসলিম প্রতিবেশী দের ও তারা দাওয়াত দিয়েছে।তাদের খাবারের আয়োজন,তাদের প্যান্ডেল সব কিছু আলাদা।বেশ সম্প্রীতি বজায় রেখে চলে গারোরা।
মমনী তারা সহ সবাইকে নিয়ে প্যান্ডেলে বসিয়ে দিয়ে এসেছে।
—-কলার পাতায় খেতে হবে?
—-হ্যাঁ আপা।আমাদের এখানে প্লেটে ও দেওয়া হয়।কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান।কলাপাতার ঐতিহ্য ই আলাদা।অনুষ্ঠানে অন্তত এটা থাকবেই।
তারা তো একবার কলাপাতার দিকে তাকাচ্ছে।একবার খাবারের দিকে।কলা পাতায় কিভাবে খাবে সে এটাই বুঝতে পারছে না।নাফিজ হুট করে তারার হাতের ওপর হাত রাখলো।তারা নাফিজের দিকে তাকাতেই নাফিজ ইশারায় চুপ থাকতে বললো।
—-মমনী তুমি যাও।আমরাও আজ উপভোগ করব তোমাদের এই ঐতিহ্য।
—-আচ্ছা জামাইবাবু।
মমনী চলে গেল।এদিকে আব্রাহাম সাহেব আর মাহমুদা বেগম ও বেশ ব্রিবত বোধ করছেন।সবজি আর ভাত নিয়েছেন তারা পাতার ওপর।ধরতেই পারছেন না ঠিকমতো।তার মধ্যে আবার তরকারির ঝোল কলাপাতা একটু কাত হওয়ার কারণে চুয়ে পড়ছে।নাফিজ তরকারি তুলে ভাত দিয়ে মেখে তারার মুখের সামনে ধরলো।
—-আমাকে দিচ্ছেন কেন?
—-তোমার কষ্ট করতে হবে না।চুপচাপ খাও।
—-সবাই দেখছে তো।মা বাপি আছে।
—-থাকুক গে।আমার বউকে আমি খাওয়াচ্ছি।তো?
তারা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।এতক্ষণে আব্রাহাম সাহেব মাহমুদা বেগম সৈকত ও বিষয় টা খেয়াল করে মিটমিট করে হাসছে।তাতে নাফিজের কি?সে দিব্যি ভাতের লোকমা নিয়ে তারার মুখের সামনে ধরে বসে আছে।তারা লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে হা করলো।এদিকে যে তার খুব খিদেও পেয়েছে।
কয়েকজন লোক বার বার বড় গামলা নিয়ে সকলের সামনে ঘোরাফেরা করছে।কেউ ভাত তরকারি কিছু নেবে কিনা সেটা দেখছে।
;;;;;
রাতের বেলা।একদল গারো মহিলা ঘিরে রেখেছে গাসুকে।গাসু ও দকমান্দা পড়েছে।গাসুকে এখন গায়ে হলুদ দেওয়া হবে।গারোদের এই নিয়ম।তারা মূলত দুই নিয়মে বিয়েটা করে।দুটোই প্রায় একই।রাতের বেলা মেয়ের গায়ে হলুদ হবে।পরের দিন সকালে বরের বাড়ি থেকে লোক আসবে।গাসুকে নিয়ে যাবে।
পরের দিন সকাল বেলা।
রাতে তেমন একটা ঘুম হয়নি তারার।অনুষ্ঠান দেখছিল সে।নাফিজ অনেক আগেই ঘরে চলে এসেছিল।এখন আবার বাইরে চেঁচামেচির আওয়াজ।বরপক্ষ এসেছে।
মমনী এসে তারা নাফিজ সবাইকে বাইরে নিয়ে গেল।
বর পক্ষ এসেছে।বর কে দেখতে বেরিয়ে এলো সবাই।নাক বোচা, চুল খাড়া খাড়া,ফর্সা গায়ের রঙ।
একটু পর গাসুকে বেশ সাজিয়ে আনা হলো।তাকে হৃদ জোডেন আরেং এর পাশে বসানো হলো।গাসুরা খ্রিষ্টীয় ধর্মের অনুসারী।এজন্য ফাদার (খ্রিস্টীয় ধর্ম যাজক) আসলেন।তিনি আসার পর দুজনকে আশীর্বাদ করলেন।গাসু আর হৃদের মালা বদল হলো।আংটি পড়ালো দুজন দুজনকে।সবাই একে একে আশীর্বাদ করলো দুজনকে।এই অনুষ্ঠান টা অনেকটা এংগেজমেন্ট এর মতো।এর কথা তারা আগেও শুনেছিল গাসুর মুখে।
একটু পর একটা মেয়ে একটা থালা নিয়ে আসলো।থালা ভর্তি পান।তারপর আরেকজন চিনি আনলো।সবাইকে বিতরণ করছে তারা।মমনী তারাদের কাছে একটা থালা নিয়ে আসলো।তাতেও পান একপাশে অপর পাশে চিনি রাখা।
—-এগুলো কি জন্য মমনী?
—-আপা এই অনুষ্ঠান টাকে আমরা পানচিনি বলি।বর বউয়ের মালাবদল আংটি বদলের পর পানচিনি মুখ করা হয়।পান না খেলেও চিনি সবাইকে মুখে দিতে হবেই।
—-আচ্ছা দেও।
মমনী সকলকে পান চিনি দিয়ে চলে গেল।তারা নাফিজ সবাই বসে বসে পান চিবুতে চিবুতে অনুষ্ঠান দেখছে।বর পক্ষ উপহার বিতরণ করছে।আসার সময় তারা পরিবারের বয়স্কদের জন্য শাড়ি,ধুতি সহ বিভিন্ন উপহার নিয়ে এসেছে।
সব অনুষ্ঠান শেষ করতে করতে দুপুর গড়িয়ে গেল।বরপক্ষ খাওয়া দাওয়ার পর গাসুকে নিয়ে গেছে।আজ তারা সেখানেই থাকবে রাতে।রাতে বরপক্ষের বাড়িতে নাচ গান সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে।ছোট রা কবিতা আবৃতি করে।যুবক যুবতীরা নাচ গান করে।বর কনে চাইলে ঘুমাতে ও পারে।কিন্তু বেশিরভাগ সময় সবার জোর জবরদস্তি তে সারারাত জেগে অনুষ্ঠান দেখতে হয় তাদের।
দুপুর বেলা খাওয়ার পর আরেক কান্ড।
গারোদের কৃষ্টি হলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চু (মদ) খাওয়া। (এটা গারো মহিলারা ভাত পচিয়ে কিভাবে যেন বানায়।রংও সাদা হয়। কিছু কিছু হালকা খয়েরি না লালচে বর্ণের হয়। কিছু তিতা, কিছু কিছু পুরা জুসের মত মিষ্টি। সাদা গুলা বেশির ভাগই পানসে সাদবাত না)সবার খাওয়া শেষে বয়স্ক, যোয়ান, পুরুষেরা চু নিয়ে বসেছে। এরও একটা ধরন দেখা যাচ্ছে। চেয়ার সুন্দর করে গোল করে বসানো বা চারকুনাইচ্চা। মাঝের জন নিজের কাছে ডিকথম (যেখানে ভাতসহ চু থাকে সেটা ডিকথম) রেখেছে। তার সামনে তিন চারটা ডিকথন আছে। সে বোতল বা বাঁশের তৈরি বোতলের মত গোল একটা জিনিস দিয়ে নাড়াচ্ছে। বোতলের শেষপ্রান্তে ছিদ্র করে নেওয়া হয়েছে। সেটা দিয়া ঐ ডিকথমের ভেতরে থেকে চু নাড়িয়ে জগে ঢালা হচ্ছে। জগভর্তি করে পাশ করে করে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের প্রাপ্ত বয়স্ক প্প্রায় সবাই আছে প্রায় মানুষ । অতিথি’দেরও দেওয়া হচ্ছে।কেউ না খেলে তাকে আর সেধে দেওয়া হচ্ছে না।
রাত পেরোলেই পরের দিন সকালে গাসুর বিয়ে হবে চার্চে।গারো মেয়েদের বিয়ের সময় মেয়ে ও ছেলে উভয়ের পাশে একটি করে চেয়ার থাকে।সেখানে যার যার পক্ষের সাক্ষী থাকে।এরপর বিয়ে হয়।বিয়ের সময় বর কেন চাইলে তাদের ঐতিহ্য বাহী পোশাক ও পড়তে পারে।চাইলে অন্য পোশাক ও।
;;;;
বিকেল বেলা ।
গারোরা যেহেতু মাতৃতান্ত্রিক ।সকাল বেলা চার্চে বিয়ের পর গাসু তার জামাইকে নিয়ে নিজ বাড়িতে এসেছে।এখন গাসু তার পরিবার রাস্তার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।তারা দের বিদায় দেবে বলে।
—-সাকি ভাই।আপনের বিয়েতে কিন্তু মুই যামু।আমারে যেন ভুইলা যাইয়েন না।
—-না গাসু।তুমি অবশ্যই যাবে।তারা যদি যায় তবে তুমি ও যাবে।
—-আইচ্ছা।
সবার সাথে কথা বলে গাসু এবার তারার সামনে আসলো।তারা তো বার বার চোখ মুছছে।চোখের পানি আটকাতে পারছে না।গাসু এসেই তারাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।
—-এই গাসু।কাদছো কেন?
—-আমি আপনারে রাইখা কেমনে থাকব আফা।
—-আমার ও কষ্ট হবে গাসু।তুমি যাবে তো।তোমার বর কে নিয়ে যাবে ওখানে।
—-আপনে ভুইলা যাবেন নাতো আমারে?
—-না গাসু।তোমাকে কি ভোলা যায়?
—-আপনে যাইয়েন না আফা।
—-গাসু শোনো।
—-হ আফা।
—-আংআ নাংখো নাম্মিনিগ্গিংআ।(আমি তোমাকে ভালোবাসি)
—-আপনেও শিখে গেছেন আফা!
—-তুমি আমার জন্য অনেক কিছু শিখেছো।আমি এটা পারব না!
গাসু আবার কেঁদে তারাকে জড়িয়ে ধরলো।
—-আংআ নাংখো নাম্মিনিগ্গিংআ আফা।
(এই পর্ব টা অনেকের ভালো নাও লাগতে পারে।আসলে আমি এখানে গারো মেয়ের চরিত্র দিয়েছিলাম।তার সাথে তারার সম্পর্ক টা ও অন্য রকম।তাই এটা মনে হলো দেওয়া ভালো হবে)
চলবে————
আর মাত্র ২ পর্ব 🙃
PC by Afifa Jannat Maysha