#নয়নতারা
পর্ব ৭
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
মিষ্টিদের বাড়ির গেটের সামনে আসতেই চেঁচামেচির শব্দ পেল নাফিজ আর মিষ্টি।
—-দেখলেন তো।আপনাকে বলেছিলাম না আপনার ঐ মেয়ে আমার কোনো কথা শুনে না।খুঁজে তো এলাম।নাফিজদের বাড়িতেও গেছি।সে নাকি নাফিজের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে।কোথায় গেছে তাও জানি না।এখন যদি কোনো বিপদ আপদ হয় সে দায় আমাকে দিতে আসবেন না।
—-শোনো বউ তুমার অতো মোর ছেইলেরে কানপড়া দিতি হবে না।তুমি আর তোমার সোয়ামী যাও।ঘরে গিয়া নাকে তেল দিয়া ঘুমাও।নাফিজের লগে যহন গেছে নাফিজই ওরে দিয়া যাইমু।হে আমি নিশ্চিন্তে কইতে পারি ।
বাইরে থেকে রাহেলা বেগম আর তানিয়ার সব কথাই শোনা যাচ্ছে।
—-আমি বাড়ি যাব না নাফিজ ভাইয়া। নতুন মা আমাকে আজ খুব মারবে।
মিষ্টি ভয়ে কুঁকড়ে নাফিজের হাত শক্ত করে ধরে আছে।
—-কিছু হবে না।চল তো।
নাফিজ মিষ্টিকে এক প্রকার টেনে নিয়েই বাড়ির গেট খুলে ভেতরে ঢুকলো।
—-ও দাদী।এই নাও তোমার মিষ্টি বুড়ি।
হঠাৎ নাফিজের গলা পেয়ে দরজার দিকে তাকিয়েই নিজের মনকে শান্ত করলেন রাহেলা বেগম।
—-দেখছিস নাফিজ।মুই কইতেছিলাম হেরে এতক্ষণ যে হামার নাফিজ ঠিক মিষ্টিরে আগায় দিয়ে যাইমু।
—-কিন্তু এই মিষ্টি তোর জামা ছিড়লো কেমনে?
তানিয়ার প্রশ্ন শুনে মিষ্টি একবার তানিয়ার দিকে তাকাচ্ছে একবার নাফিজের দিকে।মিষ্টির ভয়ার্ত চাহনি দেখে নাফিজ ইশারায় মিষ্টিকে শান্ত হতে বললো।
—-ও খেলতে গিয়ে পড়ে গেছিল।তাই ওর হাঁটু তে ছিলে গেছে।আর ছোটো ছোটো গাছ ছিল তো সেখানে।ডালে বেধে ওর জামা ছিড়ে গেছে।
—-তাই বলে এভাবে?
—-এই বউ তুমি এট্টু চুপ করবা।যাও দেহি এহান থেইকা।আইসেন উনি আলগা পিরিত দেখাইতে।ও নাফিজ আয় হামার ঘরে আয়।
রাহেলা বেগমের কথা শুনে তানিয়া মুখ বেকিয়ে ভেতরে চলে গেল।
—-না দাদী।আমার বিকেলে প্রাইভেট পড়তে যেতে হবে।এখন বাড়ি যাব।তুমি একটু ওরে ওষুধ লাগিয়ে দিও।আমি আসি।
—-আইচ্ছা পরে আবার আসিস।
—-আচ্ছা।মিষ্টি আমি যাচ্ছি।
নাফিজের কথা শুনে মিষ্টি মাথা নাড়লো।নাফিজ মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল।
—-ও মিষ্টি আয় তো।দেহি কোনহানে ব্যথা পাইছোস।চল গা গোসল কিছু দিস নাই এহনো।চল গোসল টোসল দিয়া খাইয়া ঘুমাবি।চল।
রাহেলা বেগম মিষ্টিকে নিয়ে ঘরে চলে গেলেন।
;;;;;
—-কি বলছিস তুই এসব?ঐ শেখর চাচা এতো নোংরা লোক?
—-হ্যাঁ মা।মিষ্টিকে ঐ ভরদুপুরে একা নিয়ে জঙ্গলে গেছিল।কতোটা জঘন্য তুমি বলো।
নাফিজের কথা শুনে শিউরে উঠছেন লতিফা বেগম।
সত্যি তো প্রতিনিয়ত তো এমন অনেক ঘটনা ঘটছে।খবরের কাগজ খুললে এখন তো প্রায়ই দেখা যায় এতো বছরের বাচ্চাকে ধরষন।জানোয়ার গুলো এখন বাচ্চা বুড়ি কিছু মানে না।এসব ভাবতে ভাবতে আরো শিউরে উঠছেন লতিফা।
—-মা কি ভাবছো?
—-তুই এলাকার লোক কেন ডাকলি না।ওকে তো পুলিশে দেওয়া দরকার।
—-তা ঠিক বলেছো।পুলিশে দেওয়া দরকার।কিন্তু মা একটা কথা কি জানো, “জোর যার মুল্লুক তার”।শেখর বুড়ো এলাকায় যথেষ্ট গনমান্য ব্যক্তি।আর ওখানে আমি আর মিষ্টি ছাড়া আর কেউ ছিল না যে এটা দেখেছে।আর মিষ্টি ছোট।ওর কথা তে কেউ পাত্তা দেবে বলে কি তোমার মনে হয়?আর আমার একার কথায় কি কেউ বিশ্বাস করবে?
—-তা ঠিক বলেছিস।উল্টে তোকে মাঝখান থেকে কালপিট হতে হতো।
—-সেটাই।আর মিষ্টির যে মা হয়েছে।এমনিতেই সব সময় ওকে একদম দাঁতের পরে রাখে।আর এসব শুনলে তো মেয়েটার কপালে যে কি হতো।
—-এভাবেই তো ঐ শেখরের মতো লোকজন পার পেয়ে যায়।
লতিফার ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।নাফিজ বসে বসে ভাবছে।সত্যি কি তার মিষ্টির ঐরকম ক্ষতি যে করতে চেয়েছিল সে এতো সহজে পার পেয়ে যাবে। আজ সে বয়সে ছোটো বলে কিছুই করতে পারবে না।নাহ এটা সে হতে দিতে পারে না।
কথাগুলো ভেবেই নাফিজ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
—-মা আমি যাচ্ছি।ফিরতে দেরি হবে।
—-কোথায় যাচ্ছিস?তোর না প্রাইভেট আছে আজ।
—-প্রাইভেটেই তো যাচ্ছি।সেখান থেকে একটু নিলয়দের বাড়ি যেতে হবে।কিছু নোটস নেওয়ার আছে।
—-সাবধানে যাস।
;;;;;
রাতের বেলা ফজলে শেখ কপালে হাত রেখে বিছানায় শুয়ে আছেন।তানিয়া মশারি টাঙানো শেষ করে ফজলে শেখের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
—-শুনুন।
—-বলো।
—-আপনাকে কি বলেছিলাম মনে আছে?
—-কি?
—-আমাদের কথা।
তানিয়ার কথার অর্থ বুঝতে পেরে ফজলে শেখ কিছু না বলে তানিয়ার উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লেন।
—-দেখো তানিয়া সারাদিন অফিসে এতো কাজকর্ম করতে হয়।আর বাড়ি তে আসলে রোজ রোজ মিষ্টি আর তোমার এ ও ঝামেলা নালিশ।এখন একটু ঘুমোতে দেও তো।
—-আপনি আমার কোনো কথাতেই কখনো গুরুত্ব দেন না।
—-সব গুরুত্বই দেই।তুমি যদি দেখেও না দেখে বসে থাকো তাহলে আমার কি করার আছে।
—-শুনুন।আরেকটা কথা আছে।
—-কি?
—-আমার মা তো অনেকদিন এ বাড়ি আসেন না ।ভাবছি মা কে আসতে বলব।আপনি কি বলেন?
—-তোমার যা ইচ্ছা করো।এখন আর কথা বাড়িও না।আমার ঘুম পাচ্ছে।
ফজলে শেখ চোখ বুজলেন।তানিয়া এপাশে শুয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।
—-ঐ মিষ্টি নামক আগাছাটা যে কবে বিদায় হবে।ওটা বিদায় না হওয়া অবধি শান্তি পাচ্ছি না।ওকে দেখলেই শুধু মনে হয় আমি সতীনের ঘর করছি।মা টা মরেছে ছা টাকে কেন রেখে গেছে আল্লাহ জানে।
নিজের সাথে বোঝাপড়া করে তানিয়া ও ঘুমে মগ্ন হলো।
;;;;;
—-এবারের মতো আমাকে ছেড়ে দেও।আমি তোমাদের দাদু হই।তোমরা তো আমার নাতনির মতো বলো।
—-মিষ্টি ও তো তোমার নাতনির মতোই ছিল।তাই না।
শেখর বুড়ো কাতরাচ্ছে।জঙ্গলের ভেতরে একটা গাছের নিচে বিষ পিপড়া বাসা বেধেছে।নাফিজ নিলয় আর কজন বন্ধু মিলে শেখর বুড়োকে গাছের সাথে বেধে রেখেছে।পায়ের কাছে বিষ পিপড়ার কামড় তার সাথে জঙ্গলের ভেতর মশার কামড় তো ফ্রি ফ্রি আছেই।
—-তুই সেই সময় আমাদের কেন খবর দিস নি নাফিজ।তখন ই এসে এই বুড়োকে আচ্ছা ধোলাই দিতাম।আজ মিষ্টির ক্ষতি করতে গেছে।কাল তো অন্য বাচ্চা মেয়ে দেখলেও এই কাজ করবে।
—-তখন দিলে লোকে আমাদের উল্টে ধরতো।এখন রাতে কেউ কিছু টের পাবে না।
—-আরে তোরা দাঁড়িয়ে না বকে চল বুড়োকে আরো দু ঘা দিই।তারপর বাড়ি যাব।
—-থাক।এমনিতেই বুড়ো মানুষ।আমাদের কাছে লাঠির বাড়ি খেয়েছে।বাদ দে।
—-আরে কিসের বুড়ো দেখছিস তুই।এর বয়স দেখে আমরা কি করব।ওর মনে ছিল না মিষ্টির বয়স কতো।আর বয়স দিয়ে কি করব।ওর সাহস হয় কি করে কোনো মেয়ের এভাবে ক্ষতি করার।
রাফিন নাফিজের থেকে লাঠি নিয়ে আরো এক বাড়ি দিল শেখর বুড়োকে।
—-আআআ ছেড়ে দেও আমাকে ।আর জীবনে এমন পাপ কাজ করব না।তোমার চাইলে কান ধরে উঠবস করছি।আর মেরো না।পিপড়ার কামড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি।
চলবে——-